ইসলামী জীবন ব্যবস্থা
আল্লাহ্ তাআলা সবকিছু সৃষ্টি করেছেন একটি মূল থেকে। এরশাদ হচ্ছে—
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ
( أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهَِّ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللهََّ عَلِيمٌ خَبِيرٌ ﴿ ١٣ ﴾ (سورة الحجرات : ١٣
‘হে লোকসকল ! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী হতে সৃষ্টি
করেছি, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিনড়ব জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা
একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মাঝে যে অধিক মুত্তাকী সে-
ই আল্লাহ্র নিকট অধিক সম্মানিত। আল্লাহ্ তাআলা সবকিছু জানেন এবং
সবকিছুর খবর রাখেন।১
রসুল(সঃ) মক্কা বিজয়ে ঘোষণা করে বলেন, হে
কোরাইশ সম্প্রদায় ! আল্লাহ্ তাআলা জাহেলী অহমিকা ও বাপ-দাদার বড়াই
মিটিয়ে দিয়েছেন। সকল মানুষ আদম সন্তান, আর আদম মাটির সৃষ্টি।
আল্লাহ্ তাআলা মানুষ সৃষ্টি করে তাঁকে চেনার মত যোগ্যতা দিয়েছেন। সাথে
সাথে তিনি রব ও উপাস্য হওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন
করেছেন, যেগুলো মানুষের বিবেক, অনুভূতি ও আত্মাকে সম্বোধন করে।
মানুষকে তাঁর পরিচয় লাভ না করার কারণে শাস্তি প্রদানের জন্যে এতটুকুর
উপরই ক্ষান্ত হননি ; বরং রাসূল প্রেরণ করে কিতাব নাযিল করেছেন, যাতে
মানব প্রকৃতিকে সম্বোধন করে সঠিক ধারণার বীজ বপন করা যায়। এ বিষয়ে
প্রচুর আয়াত রয়েছে। এরশাদ হচ্ছে—
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا فِطْرَةَ اللهَِّ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لخَِلْقِ اللهَِّ ذَلِكَ
الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ﴿ ٣٠ ﴾ مُنِيبِينَ إِلَيْهِ وَاتَّقُوهُ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ
(٣١− وَلَا تَكُونُوا مِنَ المُْشْرِكِينَ ﴿ ٣١ ﴾.(الروم: ٣٠
তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত কর। আল্লাহ্ তাআলার
প্রকৃতির অনুসরণ কর, যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, আল্লাহ্
তাআলার সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটা সহজ-সরল দ্বীন, কিন্তু অধম মানুষ
জানে না। বিশুদ্ধ চিত্তে তার অভিমুখী হয়ে তাকে ভয় কর, তোমরা নামায কায়েম
কর, এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।২
১ হুজুরাত : ১৩
২ সূর আর Ñরূম : ৩০-৩১
আল্লাহ্ তাআলা মানুষের নিকট এরকমই চেয়েছেন। কিন্তু মানুষ সংকীর্ণ
বিবেক ও কুপ্রবৃত্তির কারণে এদিক-সেদিক ছুটোছুটি করে, বিভ্রান্ত হয়ে নানা পথ
ও পন্থা অবলম্বন করে। আল্লাহ্ তাআলা মানুষকে আকল-বুদ্ধি-বিবেক ও আত্মা
দিয়েছেন। যে ব্যক্তি এক দিককে অপরটির উপর প্রাধান্য দেবে, সে সঠিক রাস্তা
থেকে সরে যাবে।
ইসলামী ব্যক্তিত্বের গুণ-বৈশিষ্ট্য
আল্লাহ্ তাআলা মুসলমানের জন্য এমন কিছু গুণাবলী নির্ধারণ করেছেন,
যেগুলোর মাধ্যমে তাদের সহজেই অন্যদের থেকে পৃক করা যায়।
(১) মুসলমান আকীদা ও বিশ্বাসে দৃঢ় :—
মুসলিম আল্লাহ্কে প্রভু, ইসলামকে ধর্ম ও মোহাম্মদ (সঃ)
কে নবী ও রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করে। আল্লাহ্, তদীয় ফেরেশতাকুল,
কিতাব, রাসূলগণ, আখেরাত ও ভাল-মন্দ তাকদীরের উপর বিশ্বাস রাখে।
ঈমানের ভিত্তির উপর একজন মুসলমান জীবনকে পরিচালিত করে, যা তাকে
আচার-ব্যবহার, চলাফেরা, উদ্দেশ্য-লক্ষ্য ও লেনদেনে দিক নির্দেশনা দেবে। এর
উপরই প্রতিষ্ঠিত হবে তার জীবন-জীবিকা ও সময়। নির্ধারিত হবে তার দৃষ্টিভঙ্গি
এবং তার কাজকর্ম চলবে সুস্পষ্ট প্রামাণ্যতার উপর, যাতে কোন প্রকার
পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও চিন্তা-বিভ্রান্তি থাকবে না।
ইসলাম এ বিষয়টির উপরই বিশেষ জোর দিয়েছে ; কেননা এ জীবনে
মানুষের চলার সূচনা কি হবে সেটা একমাত্র ইসলামই নির্ধারণ করতে পারে।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهَُّ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالمُْؤْمِنَاتِ ﴿ ١٩ ﴾ (سورة
( محمد: ١٩
‘সুতরাং তুমি জেনে রাখ, আল্লাহ্ ছাড়া (প্রকৃত) কোন মাবুদ নেই, ক্ষমা
প্রার্থনা কর তোমার এবং মুমিন নর-নারীদের ত্র“টির জন্যে।’৩
আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
آَمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالمُْؤْمِنُونَ كُلٌّ آَمَنَ بِاللهَِّ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا
نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ المَْصِيرُ
( ٢٨٥ ﴾ (سورة البقرة : ٢٨٥ ﴿
৩ মুহাম্মদ : ১৯
‘রাসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তার পালনকর্তার পক্ষ
থেকে তার নিকট অবতীর্ণ হয়েছে, এবং মুসলমানরাও। সবাই বিশ্বাস রাখে
আল্লাহ্র প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, গ্রন্থসমূহের প্রতি এবং তার
পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে : আমরা তাঁর রাসূলগণের মাঝে কোন তারতম্য
করি না। তারা বলে : আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি, আমরা তোমার ক্ষমা
চাই হে আমাদের পালনকর্তা। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’৪
আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন—
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللهََّ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ فَمِنْهُمْ مَنْ هَدَى اللهَُّ
وَمِنْهُمْ مَنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلَالَةُ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ
( المُْكَذِّبِينَ ﴿ ٣٦ ﴾ (سورة النحل : ٣٦
‘আমি প্রত্যেক উম্মতের মাঝেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা
আল্লাহ্র এবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। অতঃপর তাদের মাঝে
কিছু সংখ্যককে আল্লাহ্ হেদায়েত দান করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্য
বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেছে।সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং
দেখ মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে।’৫
(২) মুসলমান এবাদতে দৃঢ়
আল্লাহ্র এবাদত করাই হল মুসলমানের জীবন, তাদের কাজকর্ম চলবে
নীতিবদ্ধতা, শৃঙ্খলা, ভারসাম্যের উপর। সে এ ধরনের এবাদতে অঙ্গীকারাবদ্ধ,
যাতে জীবনের সকল দিক অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
( وَمَا خَلَقْتُ الجِْنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ﴿ ٥٦ ﴾ (سورة الذاريات: ٥٦
‘আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি’।৬
আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন—
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمحَْيَايَ وَممََاتِي للهَِِّ رَبِّ الْعَالمَِينَ ﴿ ١٦٢ ﴾ لَا شَرِيكَ لَهُ
(١٦٣− وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ المُْسْلِمِينَ ﴿ ١٦٣ ﴾ ( سورة الأنعام : ١٦٢
‘হে নবী ! আপনি বলুন : আমার নামায, আমার কোরবানী এবং আমার
জীবন-মৃত্যু বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ্রই জন্য। তার কোন অংশীদার নেই। আমি
তা-ই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রম আনুগত্য পোষণকারী।’৭
৪ বাকারা : ২৮৫
৫ নাহল : ৩৬
৬ যারিয়াত : ৫৬
তার উপর ভিত্তি করেই মুসলমান একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্র এবাদত করে।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
( وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهََّ مخُْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ ﴿ ٥﴾ (سورة البينة : ٥
‘তাদেরকে এ ছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে
একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্র এবাদত করবে।’৮
আর তাতে রসুল(সঃ)-এর অনুসরণও থাকতে
হবে। যেমন হাদীসে রসুল(সঃ) বলেছেন—
( من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد. (رواه مسلم: ٣٢٤٣
যে ব্যক্তি এমন আমল করল যাতে আমার কোন নির্দেশ নেই তা
প্রত্যাখ্যাত।৯
(৩) মুমিন উত্তম চরিত্রের অধিকারী :—
একজন মুসলমানের ব্যক্তিত্বের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো উত্তম আখলাক ও
সুন্দর ব্যবহার। আর এ ক্ষেত্রে একমাত্র অনুসরণ করবে প্রম আদর্শ মহানবী
(সঃ)-এর, যার প্রশংসা করেছেন স্বয়ং রাব্বুল
আলামীন। এরশাদ হচ্ছে—
( وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ ﴿ ٤﴾ (سورة القلم : ٤
‘নিশ্চয় আপনি উত্তম চরিত্রের অধিকারী।’১০
আয়েশা সিদ্দীকা রা.-কে তাঁর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি
বলেন―
( كان خلقه القرآن. (رواه أحمد : ٢٣٤٦٠
‘কোরআনই ছিল তার চরিত্র।’১১
তিনি সর্বদাই উম্মতকে উত্তম চরিত্র গ্রহণ করার আদেশ দিতেন। তিনি
বলেন―
( أكمل المؤمنين إيمانا أحسنهم خلقاً. (رواه الترمذي : ١٠٨٢
‘সবচেয়ে পরিপূর্ণ মুমিন ঐ ব্যক্তি যে সবচেয়ে চরিত্রবান।’১২
৭ আনআম : ১৬২- ১৬৩
৮ বাইয়্যেনাহ : ৫
৯ মুসলিম : ৩২৪৩
১০ কলম : ৪
১১ মুসনাদে আহমদ : ২৩৪৬০
১২ তিরমিযী : ১০৮২
জনৈক ব্যক্তি তাঁর নিকট অসিয়ত তলব করলে তিনি বলেন―
اتق الله حيثما كنت, وأتبع السيئة الحسنة تمحها, وخالق الناس بخلق حسن. (رواه
( الترمذي : ١٩١٠
‘তুমি যেখানেই থাক আল্লাহ্কে ভয় কর। গুনাহ হয়ে গেলে সাথে সাথে
একটি নেক আমল করে ফেল, তা সেটি মিটিয়ে দিবে। আর মানুষের সাথে ভাল
ব্যবহার কর।’১৩
ইসলাম এবাদতের সাথে আখলাককে মিলিয়ে দিয়েছে। একজন প্রকৃত
আবেদ এবাদতের মাধ্যমে তার চরিত্র সংশোধন করে নিবে। এরশাদ হচ্ছে―
( إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالمُْنْكَرِ (سورة العنكبوت : ٤٥
‘নিশ্চয় সালাত অন্যায় ও অশালীন কাজ থেকে (আদায়কারীকে) বিরত
রাখে।’১৪
সিয়াম সম্পর্কে রসুল(সঃ) বলেন―
إذاكان يوم صوم أحدكم فلا يرفث ولا يصخب, فإن سابه أحد أوشاتمه فليقل إني
( صائم. (رواه البخاري : ١٧٨١
‘তোমরা সিয়াম পালনের দিনগুলোতে অশালীন কাজ ও শোরগোল কর না।
যদি কেউ গালি দেয় অথবা ঝগড়া করে, তাহলে বলবে―আমি রোজাদার।’১৫
হজের ব্যাপারে আল্লাহ্ তাআলা বলেন―
( فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الحَْجِّ. (سورة البقرة: ١٩٧
‘তবে সে হজের মাঝে সহবাস, দুষ্কর্ম ও কলহ করতে পারবে না।’১৬
‘এমনিভাবে উত্তম আখলাকের গুরুত্ব সম্পর্কে শরীয়তের অনেক দলীল
প্রমাণ রয়েছে। একজন প্রকৃত মুমিন উত্তম চরিত্র ও প্রশংসিত গুণাবলির অধিকারী
হবে―এটি স্বাভাবিক। উত্তম গুণসমূহ যেমন―সততা, বদান্যতা, বিনম্র আচরণ,
খারাপ বস্তু থেকে দৃষ্টি সংরক্ষণ, অশালীন কাজ থেকে দূরে থাকা, ধৈর্য,
লজ্জা―প্রভৃতি।’
১৩ তিরমিযী : ১৯১০
১৪ আনকাবুত : ৪৫
১৫ বুখারী : ১৭৮১
১৬ বাকারাহ্ : ১৯৭
(৪) মুসলমান ইলম ও প্রজ্ঞার উপর জীবন অতিবাহিত করে :―
সে অন্যদের সাথে এমন ব্যবহার করে, যেমন ব্যবহার অন্যদের থেকে আশা
করে। অন্যদের ভালোবাসে এবং তাদের কল্যাণ কামনা করে। তাদের জন্যে
দোয়া করে এবং আহ্বান করে এমন কাজের প্রতি যা তাদের জন্যে দুনিয়া ও
আখেরাতের কল্যাণ বয়ে আনে।
মুসলিম এমন স্বার্থপর হবে না যে, শুধু নিজের কল্যাণ কামনা করে, অন্যের
নেয়ামত কুক্ষিগত করার আশা করে। কখনও সে অন্যের অমঙ্গল চাইতে পারে
না। রসুল(সঃ) ও তার দাওয়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত
হয়েই একজন প্রকৃত মুসলিম মানুষকে হেদায়েত ও দিক-নির্দেশনা দেবে।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন―
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالمَْعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ المُْنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللهَِّ
( ١١٠ ﴾ (سورة آل عمران : ١١٠ ﴿
‘তোমরা সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। তোমাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্যে বের করা
হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে। এবং অসৎ কাজে বাধা
প্রদান করবে। আর আল্লাহ্র উপর ঈমান রাখবে।’১৭
আল্লাহ্ তাআলা কাজের উৎসাহ প্রদান লক্ষ্যে বলেন―
﴾ وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا ممَِّنْ دَعَا إِلَى اللهَِّ وَعَمِلَ صَالحًِا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ المُْسْلِمِينَ ﴿ ٣٣
( (سورة فصلت : ٣٣
‘ঐ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যিনি মানুষকে আল্লাহ্র
দিকে আহ্বান করে এবং নিজেও নেক আমল করে, আর বলে আমি মুসলমানদের
একজন।১৮
বিশেষত্বের ফলাফল :—
(১) অন্তরের প্রশান্তি ও অস্থিরতার ফলেই পার্থিব জীবনে প্রতিটি মানুষ সুখ-
দুঃখের সম্মুখীন হয়। মুসলিম সর্বাবস্থায় মানসিক শান্তিতে থাকে, সতত নিজেকে
আবিস্কার করে এক অনাবিল স্থিরতা ও প্রশান্তিতে।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন―
১৭ আলে ইমরান : ১১০
১৮ ফুসসিলাম : ৩৩
الَّذِينَ آَمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللهَِّ أَلَا بِذِكْرِ اللهَِّ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ ﴿ ٢٨ ﴾ (سورة
( الرعد : ٢٨
‘যারা মুমিন এবং যাদের অন্তর আল্লাহ্র জিকিরে প্রশান্তি লাভ করে। শোন!
আল্লাহ্র জিকিরেই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে থাকে।’১৯
আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন—
أَفَمَنْ شَرَحَ اللهَُّ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ فَهُوَ عَلَى نُورٍ مِنْ رَبِّهِ فَوَيْلٌ لِلْقَاسِيَةِ قُلُوبُهُمْ مِنْ ذِكْرِ
( اللهَِّ أُولَئِكَ فِي ضَلَالٍ مُبِينٍ ﴿ ٢٢ ﴾. (سورة الزمر : ٢٢
‘যে ব্যক্তির অন্তরকে আল্লাহ্ তাআলা ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দিয়েছেন
এবং সে রবের পক্ষ থেকে নূরের উপর রয়েছে।যাদের অন্তর আল্লাহ্র স্মরণের
ব্যাপারে কঠোর ,তাদের জন্যে দুর্ভোগ। তারা সুস্পষ্ট গোমরাহীতে রয়েছে’২০
অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে—
هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ السَّكِينَةَ فِي قُلُوبِ المُْؤْمِنِينَ لِيَزْدَادُوا إِيمَانًا مَعَ إِيمَانهِِمْ﴿ ٤﴾ (سورة
( الفتح : ٤
‘তিনি এমন সত্তা যিনি মুমিনগণের অন্তরে বিশেষ শান্তি দিয়েছেন। যেন
তাদের ঈমানের সাথে আরো ঈমান বেড়ে যায়।’২১
১৯ রা’দ : ২৮
২০ যুমার : ২২
২১ ফাতহ : ৪
(২) পৃথিবীতে আল্লাহ্র দাসত্বের বাস্তবায়ন :—
আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
( وَمَا خَلَقْتُ الجِْنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ﴿ ٥٦ ﴾ (الذاريات : ٥٦
‘আমি জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার এবাদতের লক্ষ্যে।’২২
তিনি আরো বলেন—
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمحَْيَايَ وَممََاتِي للهَِِّ رَبِّ الْعَالمَِينَ ﴿ ١٦٢ ﴾ لَا شَرِيكَ لَهُ
(١٦٣− وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ المُْسْلِمِينَ ﴿ ١٦٣ ﴾ (سورة الأنعام : ١٦٢
‘আপনি বলুন : আমার সালাত, কোরবানি, জীবন, মরণ সবই বিশ্ব
প্রতিপালক আল্লাহ্র জন্যে। তার কোন শরীক নেই। আমি এ মর্মেই আদিষ্ট
হয়েছি আর আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।’২৩
(৩) স্থিতিশীলতা : আল্লাহ্র পথে চলার মাধ্যমে নিরাপত্তা ও স্থিরতা অর্জিত
হয়। এরই মাধ্যমে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা যায়। আর বিপরীত পথে উল্টো ক্ষতি
হয়।
(৪) সম্মান, সাহায্য ও পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা লাভ : আল্লাহ্ বলেন—
( إِنْ تَنْصُرُوا اللهََّ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ ﴿ ٧﴾ (سورة محمد : ٧
যদি তোমরা আল্লাহ্কে সাহায্য কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে সাহায্য
করবেন এবং তোমাদের পদসমূহ দৃঢ় রাখবেন।২৪
(৫) চূড়ান্ত লক্ষ্যের বাস্তবায়ন : তা হচ্ছে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভ ও জানড়বাতে
প্রবেশ। আল্লাহ্ বলেন―
﴾ إِنَّ الَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالحَِاتِ كَانَتْ لهَُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا ﴿ ١٠٧
( (سورة الكهف : ١٠٧
‘নিশ্চয় যারা ঈমান এনে নেক আমল করে তাদের জন্য মেহমানদারিরূপে
রয়েছে জানড়বাতুল ফিরদাউস। ২৫
২২ যারিয়াত : ৫৬
২৩ আনআম : ১৬২-১৬৩
২৪ মুহাম্মদ : ৭
২৫ কাহাফ : ১০৭
সত্যবাদিতা
الصدق : আরবিতে صدق বলা হয়― مطابقة الخبر للواقع অর্থাৎ বাস্তব
অনুযায়ী সংবাদ দেয়া صدق তথা সত্যবাদিতা।
এর বিপরীতে রয়েছে الكذب তথা মিথ্যাবাদিতা। আর তা হলো বাস্তবতার
উল্টো সংবাদ দেয়া।
সত্যবাদিতার মর্যাদা :—এটি একটি মহৎ গুণ। শরিয়ত যে সকল চারিত্রিক
দিকের ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছে সেগুলোর মাঝে সত্যবাদিতা অন্যতম। এটি
একটি সুউচ্চ আদর্শ। মহামানবগণই এ গুণটি অর্জন করেন। আর অপদার্থরা এ
থেকে পিছিয়ে থাকে। এ কারণেই এটি ছিল সমস্ত নবীগণের অবিচ্ছিনড়ব গুণ। ঠিক
এর উল্টো ছিল মুনাফেকদের অবস্থা। এ বিষয়ে উৎসাহ দেয় এমন অনেক দলিল
প্রমাণ রয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন―
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللهََّ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ ﴿ ١١٩ ﴾. (سورة التوبة :
(١١٩
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।’র
আব্দুলহ ইবনে মাসঊদ থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল−াল−াহু আলাইহি
ওয়াসাল−াম বলেন―
عليكم بالصدق, فإن الصدق يهدي إلى البر, وإن البر يهدي إلى الجنة, وما
يزال الرجل يصدق ويتحرى الصدق حتى يكتب عند الله صديقاً, وإياكم والكذب,
فإن الكذب يهدي إلى الفجور, وإن الفجور يهدي إلى النار, وما يزال الرجل
( يكذب ويتحرى الكذب حتى يكتب عند الله كذاباً. (رواه مسلم : ٤٧٢١
‘তোমরা সত্যবাদিতা হও। কেননা সত্য মানুষকে পুণ্যের পথ দেখায় আর
পুণ্য জানড়বাতের পথ দেখায়। বান্দা সত্য কথাকে আঁকড়ে ধরলে এক সময় সে
আল্লাহ্র নিকট সিদ্দিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তোমরা মিথ্যা বর্জন কর।
কেননা মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে ধাবিত করে আর পাপ জাহানড়বামের দিকে
নিয়ে যায়। বান্দা মিথ্যার আশ্রয় নিতে থাকলে একসময় আল্লাহ্র দরবারে
মিথ্যাবাদী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।’
সত্যবাদিতার প্রকারভেদ :
সত্যবাদিতা তিন প্রকার।
( الصدق بالقلب ( ১ অন্তরের সততা : মোমিন বান্দা ঈমানের ক্ষেত্রে আন্ত
রিক ভাবে সত্যবাদী হবে, যাতে করে বাহ্যিক রূপ ভিতর গত অবস্থার বিপরীত
না হয় এবং আমল যেন দৃঢ় বিশ্বাসের বিপরীত না হয়।
( الصدق بالأفعال ( ২ কর্মের সততা : এটি বান্দা ও আল্লাহ্র মাঝে হতে
পারে, আবার বান্দা ও মাখলুকের মাঝেও হতে পারে। মোমিন ব্যক্তি আল্লাহ্
তাআলার হুকুমের বাস্তবায়ন ঘটাবে এবং ধোঁকা দেবে না। আর ওয়াদা করলে তা
ভঙ্গ করবে না। আল্লাহ্ বলেন―
مِنَ المُْؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللهََّ عَلَيْهِ ﴿ ٢٣ ﴾ (سورة الأحزاب :
(٢٣
মোমিনদের মাঝে এমন কতিপয় মহাপুরুষ রয়েছে যারা আল্লাহ্র সাথে কৃত
অঙ্গীকার বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।
( الصدق بالأقوال ( ৩ কথায় সততা : কোন ব্যক্তি বা¯ব— তার বিপরীত সংবাদ
না দেয়া, আর কথা ও কাজে অমিল না হওয়া। আল্লাহ্ বলেন―
﴾ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لمَِ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ ﴿ ٢
হে ঈমানদার বান্দাগণ, তোমরা যা কর না তা কেন বল ? আল্লাহ্র নিকট
কঠিন অপরাধ হলো যা তোমরা কর না, তা সম্পর্কে তোমাদের বলা।রর
সত্যের ফলাফল
সত্যের ফলাফল অনেক। তন্মধ্যে―
(১) সত্য নেক আমলের দিকে ধাবিত করে আর নেক আমল জানড়বাতের পথ
দেখায়।
(২) সত্যবাদী আল্লাহ্ তাআলা ও মানুষের নিকট প্রিয়।
(৩) সত্য মানুষকে ইহকাল ও পরকালের ক্ষতি থেকে সংরক্ষণ করে।
সত্যের বিপরীত মিথ্যা
মিথ্যা এমন একটি কাজ যা ইচ্ছাকৃত ও উপহাস―উভয় অবস্থাতেই
নিষিদ্ধ।
প্রকারভেদ : এটি বিভিনড়বভাবে হতে পারে। যেমন :―
(১) আল্লাহ্র উপর মিথ্যা-রোপ : যেমন―আল্লাহ্ তাআলার দ্বীনের ব্যাপারে
না জেনে কথা বলা, অথবা আল্লাহ্ বলেননি এমন কিছু সম্পর্কে একথা বলা যে
আল্লাহ্ তাআলা এটি বলেছেন। অথবা এভাবে বলা যে, আল্লাহ্ জানেন আমি এ
কাজটি করেছি অথচ সে কাজটি করেনি―ইত্যাদি ইত্যাদি। এহেন কাজ
মারাত্মক অপরাধ সন্দেহ নেই। আল্লাহ্ বলেন―
( قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ (سورة الأعراف: ٣٣
আপনি বলুন, আমার প্রভু প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সর্বপ্রকার অশালীন কাজ
হারাম করেছেন।ররর এরশাদ হয়েছে―
( وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللهَِّ مَا لَا تَعْلَمُونَ ﴿ ٣٣ ﴾ (سورة الأعراف : ٣٣
আর আল্লাহ্ সম্পর্কে তোমাদের না জেনে কথা বলা।’রা আল্লাহ্ তাআলা
অন্যত্র বলেন ―
( إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللهَِّ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ ﴿ ١١٦ ﴾. (سورة النحل : ١١٦
‘নিশ্চয় যারা আল্লাহ্র ওপর মিথ্যা-রোপ করে তারা সফল হবে না।’
(২) রাসূলের ওপর মিথ্যা-রোপ : এটিও মারাত্মক মিথ্যা। রসূল(সঃ)
আলাইহি ওয়াসাল−াম বলেন―
إنّ كذباً علي ليس ككذب على أحد, فمن كذب علي متعمداً فليتبوأ مقعده من
( النار. (رواه البخاري : ١٢٠٩
আমার ওপর মিথ্যা-রোপ করা অন্য সাধারণ লোকের উপর মিথ্যা-রোপ
করার মত নয়। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার ওপর মিথ্যা বলল সে যেন তার
ঠিকানা জাহানড়বামে স্থাপন করে নেয়।
(৩) মিথ্যা সাক্ষ্য : অতএব দৃঢ়তার সাথে না জেনে কোন ব্যাপারে সাক্ষ্য
প্রদান করা উচিত নয়।
( اليمين الغموس ( ৪ : ইয়ামিনে গুমুস বলা হয় অতীতের কোন ঘটনার
ব্যাপারে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়াকে।
(৫) ভিত্তিহীন কাহিনি তৈরি করা : অন্যকে হাসানো অথবা অবসর সময়
কাটানোর জন্য এ ধরনের কাহিনি তৈরি করা হয়। উলে−খিত উদ্দেশ্য হাসিলের
জন্যে সত্য ঘটনা বলাই যথেষ্ট।
(৬) না দেখে কোন কিছু দেখার দাবি করা। রাসূল (সঃ) বলেন―
إن أفرى الفرى أن يري الرجل عينيه ما لم تر.
সবচেয়ে কঠিন মিথ্যা হলো কোন ব্যক্তি স্বীয় চোখকে এমন কিছু দেখানোর চেষ্টা
করল যা চোখে দেখেনি।
(৭) স্বপড়ব না দেখে মিথ্যা স্বপেড়বর দাবি করা। নবী (সঃ) বলেন —
من تحلم بحلم لم يره كلف أن يعقد بين شعيرتين ولن يفعل.
যে ব্যক্তি কিছু না দেখে মিথ্যা স্বপেড়বর দাবি করে, পরকালে তাকে দুটি চুলের
মাঝে গিরা দিতে বলা হবে। অথচ সে তা পারবে না। এটি তার মিথ্যার শাস্তি।
ইমাম আহমদ রহ.-এর রেওয়ায়েতে আছে― عذب يوم القيامة কিয়ামতের
দিবসে তার শাস্তিস্বরূপ দুটি চুলকে গিরা দিতে বলা হবে। কিন্তু সে তা পারবে
না।
মিথ্যার শাস্তি : মিথ্যার শাস্তি প্রসঙ্গে অনেক প্রমাণ রয়েছে। সামুরা ইবনে
জুনদুব রা. রসুল(সঃ)-এর স্বপড়ব বর্ণনা করছেন। তার
বর্ণনা নিুরূপ—
إنه آتاني اللية آتيان, وإنهما قالا لي : انطلق … , قال : فانطلقنا فأتينا على
رجل مستلق لقفاه, وإذا آخر قائم عليه بكلوب من حديد, وإذا هو يأتي أحد شقي
وجهه فيشرشر شدقه إلى قفاه, ومنخره إلى قفاه, وعينه إلى قفاه ثم يتحول إلى
الجانب الآخر فيفعل به مثل ما فعل بالجانب الأول, فما يفرغ من ذلك الجانب
حتى يصح ذلك الجانب كما كان, ثم يعود عليه فيفعل مثل ما فعل في المرة
( الأولى. (رواه البخاري : ٦٥٢٥
রাত্রিকালে আমার নিকট দুইজন আগন্তুক এসে বললেন, চলুন। অতঃপর
আমরা চলতে চলতে চিৎ হয়ে শায়িত এক ব্যক্তির নিকট পৌঁছলাম, আরেক
ব্যক্তি তার কাছে লোহার হুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে শায়িত ব্যক্তির চেহারার
একপার্শ্বে এসে চোয়াল, নাক ও চক্ষু হুক দ্বারা ঘাড়ের পিছনে টেনে নিয়ে যায়।
অতঃপর অপর পার্শ্বে গিয়ে এমনটিই করে। অপর পার্শ্ব শেষ করার পূর্বেই প্রম
পার্শ্ব ঠিক হয়ে যায়। অতঃপর আগের মত আবার শুরু করে। নবিজি বলেন :
আমি বললাম ‘‘সুবহানাল−াহ’’ এরা দু’ জন কারা ? ফেরেশতারা বললেন : আমরা
অচিরেই এদের সম্পর্কে আপনাকে বলব। শুনুন―যে ব্যক্তির চোয়াল, নাক ও
চক্ষু টেনে উঠিয়ে ঘাড় পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয়েছে, সে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হয়ে
একটি মিথ্যা কথা প্রচার করে দেয়। ফলে তা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে।ার
يشرشر শব্দের অর্থ يقطع অর্থাৎ টুকরা টুকরা করে কেটে ফেলা।
মিথ্যার ভয়াল পরিণতি :
মিথ্যার খারাপ পরিণতি অনেক। তন্মধ্যে―
(১) মিথ্যা মোনাফেকদের খাসলত বা অভ্যাস।
(২) মিথ্যা যে ব্যক্তির অভ্যাসে পরিণত হয় আল্লাহ্র নিকট তার নাম
মিথ্যাবাদীদের কাতারে লেখা হয়। এটি অত্যন্ত খারাপ দিক। কোন ব্যক্তি তার
পরিবার অথবা সঙ্গীদের নিকট মিথ্যাবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হতে চায় না।
অতএব সে কীভাবে তার খালেকের নিকট এমনটি হতে চায় ?
(৩) মিথ্যাবাদীর সাক্ষ্য অগ্রহণযোগ্য।
(৪) কখনো কখনো দেখা সে সত্য বললেও তা গ্রহণ করা হয় না। কেননা
লোকজন তার কথার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। ইবনে মুবারক রহ. বলেন :
মিথ্যার সর্বপ্রম শাস্তি হলো তার সত্য কথাও গ্রহণ না করা।
মিথ্যা থেকে নিষ্কৃতির উপকরণ:
মিথ্যা থেকে মুক্তি লাভের অনেক পথ রয়েছে। নিমেড়ব কয়েকটি উলেখ করা
হল:
(১) এহেন মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্যে আল্লাহ্র নিকট সাহায্য
প্রার্থনা।
(২) মিথ্যাবাদীর ভয়ানক পরিণতির কথা চিন্তা করা।
(৩) আল্লাহ্ তাআলাকে পর্যবেক্ষক মনে করে এ কথা চিন্তা করা যে, তার
ফেরেশতা বান্দাদের সবকিছু লিপিবদ্ধ করেন।
(৪) ভবিষ্যতে মিথ্যাবাদীর সর্বপ্রকার কথা ও কাজ অগ্রহণযোগ্য বলে
বিবেচিত হওয়ার বিষয়টি অনুধাবন করা। সাথে সাথে মানুষের নিকট হেয়
প্রতিপনড়ব হওয়ার দিকটিও বিবেচনা করা।
(৫) একথা চিন্তা করা যে, প্রকৃত শান্তি ও মুক্তি একমাত্র সত্যের মাঝেই।
চাই তা দুনিয়াতে হোক কিংবা আখেরাতে, যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে মিথ্যার মাঝে
মুক্তি দেখা যায়।
(৬) মিথ্যার দিকে আহ্বানকারী সকল কাজ থেকে দূরে থাকা। সে কাজগুলো
নিুরূপ : অশালীন কাজে জড়িয়ে পড়া, যা তাকে মিথ্যা বলে ওজর পেশ করতে
বাধ্য করে। অধিক পরিমাণে অঙ্গীকার করা, যা তাকে অঙ্গীকার ভঙ্গ করার
ব্যাপারে সাহায্য করবে। মিথ্যাবাদী বন্ধুদের সাথে উঠা-বসা করা। অথবা ঐ
সকল লোকদের সাথে চলা যারা তাকে মিথ্যার প্রতি উৎসাহ দান করে অথবা
তার মিথ্যা কথা শুনে।
ধৈর্য
ধৈর্য ব্যতীত কোন ব্যক্তি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। ইহকাল ও
পরকালের কল্যাণ অর্জনে সে ধৈর্যের মুখাপেক্ষী। কেননা আমল অল্প হোক কিংবা
বেশি, তা আদায় করতে হলে উপযুক্ত ধৈর্যের প্রয়োজন। তাইতো এর প্রতি
উৎসাহ দিয়ে অনেক আয়াত ও হাদীস বর্ণিত হয়েছে ।
ইবনে মাসঊদ রা. বলেন—
الصبر نصف الإيمان.
ধৈর্য ঈমানের অর্ধেক।
আলেমগণ বলেন, ঈমানের অর্ধেক ধৈর্য ও বাকি অর্ধেক শুকরিয়া।
صبر শব্দের আভিধানিক অর্থ حبس (আটকানো) كف (ফিরানো) منع (বাধা
প্রদান)
শরিয়তের পরিভাষায় صبر (ধৈর্য) পাঁচ ভাগে বিভক্ত।
(১) ওয়াজিব ধৈর্য : এটি আবার তিন প্রকার।
(ক) আলাহর আনুগত্যে ধৈর্যধারণ। অর্থাৎ আলাহর হুকুম বাস্তবায়নে
নিজেকে নিবেদিত রাখা। যেমন, মুসলিমদের সাথে জামাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত
আদায় করা। যাকাত আদায় ও পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা।
(খ) গুনাহ থেকে ধৈর্যধারণ। অর্থাৎ পাপে জড়িত হওয়া থেকে নিজেকে
নিয়ন্ত্রণ করা। যেমন হারাম দৃষ্টি থেকে ধৈর্যধারণ, অবৈধ সম্পদ ছেড়ে দেয়া।
গীবত ও খারাপ বন্ধু-বান্ধব পরিত্যাগ―ইত্যাদি।
(গ) আলাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিপদাপদের উপর ধৈর্যধারণ। সর্ব সম্মতি
μমে এটি ওয়াজিব। অর্থাৎ হতাশা ও নৈরাশ্য প্রকাশ করা থেকে নিজেকে
সংরক্ষণ করা। কোন-রূপ অভিযোগ পেশ করা থেকে জিহ্বাকে এবং আলাহর
অসন্তুষ্টির কারণ হয় এমন কাজ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হেফাজত করা। যেমন―গাল
চাপটানো , জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলা প্রভৃতি। আত্মীয়Ñস্বজন কিংবা সম্পদ
হারানো এবং অসুস্থতার উপর ধৈর্যধারণ এ প্রকারের অন্তর্ভুক্ত, মানুষের কষ্ট
দেয়াও এর আওতাভুক্ত।
صبر তথা ধৈর্যের বিপরীত হলো― تسخط তথা রাগ প্রকাশ করা, অভিযোগ
করা, আলাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়া এবং উৎকন্ঠা ও নৈরাশ্য ব্যক্ত
করা। এর কারণে প্রতিদান নষ্ট হয়ে যায় , বিপদ Ñ মুসীবত আরো বেড়ে যায়
এবং ঈমান হ্রাস পায়।
নেক কাজ করা ও অন্যায় Ñ অসৎ কাজ থেকে ফিরে থাকা সম্পর্কিত ধৈর্য
বিপদ-আপদের উপর ধৈর্য থেকে উত্তম। এ অভিমত প্রকাশ করেছেন সাইদ
ইবনে জোবায়ের, মাইমূন ইবনে মেহরান প্রমুখ। ভাল কাজে ধৈর্যধারণ হারাম
থেকে বেঁচে থাকার ধৈর্য থেকে উত্তম।
(২) মোস্তাহাব ধৈর্য : এটি হচ্ছে মাকরূহ কাজ ছেড়ে দেয়া ও মোস্তাহাব
আমলের ধৈর্য। যেমন―অপরাধীর মোকাবেলায় তার অনুরূপ অপরাধ না করা।
(৩) হারাম ধৈর্য : যেমন―মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত খানা-পিনা পরিত্যাগ করা,
ধ্বংসাত্মক বস্তুর উপর ধৈর্যধারণ। যেমন―আগুন অথবা পরিবারের কেউ অশীল
কাজ করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ ।
(৪) মাকরূহ ধৈর্যধারণ: মাকরূহ কাজে অথবা মোস্তাহাব ছেড়ে দেয়ার উপর
ধৈর্যধারণ।
(৫) মুবাহ (জায়েজ) ধৈর্য : ক্ষতি হয় না এ পরিমাণ সময় খাবার গ্রহণ না
করা অথবা কিছু সময় ঠান্ডার উপর ধৈর্যধারণ।
ধৈর্যের ফযীলত :
ধৈর্য ধারণের ফজিলত অনেক। নিমেড়ব কয়েকটি উলেখ করা হল :―
(১) ধৈর্যের প্রতিদান অসীম। আলাহ তাআলা বলেন―
( إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ ﴿ ١٠ ﴾ (سورة الزمر : ١٠
‘একমাত্র ধৈর্যশীলদের প্রতিদান হিসাব ছাড়া দেয়া হবে।’২৬
যেহেতু সিয়াম ধৈর্যের অন্তর্ভুক্ত, তাই এর প্রতিদানও বিনা হিসেবে দেয়া
হবে।
নবী করিম সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন, বনী আদমের প্রতিটি
আমলের প্রতিদান দশগুণ থেকে সাত শত গুন দেয়া হবে। আলাহ বলেন: সিয়াম
ব্যতীত। কেননা সেটি আমার জন্যে, আর এর প্রতিদান আমিই দেব।
(২) ধৈর্যশীলদের জন্যে মহা সুসংবাদ : আলাহ বলেন―
وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ ﴿ ١٥٥ ﴾ الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا للهَِِّ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
﴾ ١٥٦ ﴾ أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحمَْةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ المُْهْتَدُونَ ﴿ ١٥٧ ﴿
١٥٧− (سورة البقرة : ١٥٥
‘আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন, যারা মুসীবতে আক্রান্ত হরে বলে― إنا
لله وإنا إليه راجعون অর্থাৎ আমরা আলাহর জন্যেই এবং পরিশেষে তার কাছেই
২৬ যুমার: ১০
ফিরে যাব। প্রভুর পক্ষ থেকে তাদের উপর শান্তি ও রহমত রয়েছে এবং তারাই
হেদায়েত প্রাপ্ত।’২৭
(৩) আলাহর বিশেষ সঙ্গ ও ভালোবাসা : আলাহ বলেন―
( وَاصْبِرُوا إِنَّ اللهََّ مَعَ الصَّابِرِينَ ﴿ ٤٦ ﴾ (سورة الأنفال: ٤٦
‘তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আলাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’২৮ মহান আলাহ
তাআলা আরো বলেন:
﴾ وَاللهَُّ يحُِبُّ الصَّابِرِينَ ﴿ ١٤٦
আলাহ তাআলা ধৈর্যশীলদের পছন্দ করেন।২৯
(৪) ধৈর্য উত্তম সম্পদ। আলাহ বলেন―
( وَلَئِنْ صَبَرْتُمْ لهَُوَ خَيْرٌ لِلصَّابِرِينَ ﴿ ١٢٦ ﴾ (سورة النحل : ١٢٦
আর যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর তাহলে তা ধৈর্যশীলদের জন্য উত্তম।৩০
রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন―
( وما أعطي أحد عطاء خيراً وأوسع من الصبر. (رواه البخاري : ١٣٧٦
কোন বান্দাকে ধৈর্যের মত উত্তম সম্পদ অন্য কিছু দেয়া হয়নি।৩১
(৫) আলাহ তাআলা ধৈর্যশীলদের উত্তম প্রতিদানের ওয়াদা করেছেন। তিনি
বলেন―
وَلَنَجْزِيَنَّ الَّذِينَ صَبَرُوا أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿ ٩٦ ﴾. (سورة
( النحل : ٩٦
অবশ্যই ধৈর্যশীলদের আমলের চেয়েও উত্তম প্রতিদান দেয়া হবে।৩২
সিয়াম সাধনায় ধৈর্যের অনুশীলন :
ধৈর্যের প্রকারসমূহের মাঝে সিয়াম সাধনা অন্যতম। কেননা এর মাঝে তিন
প্রকার ধৈর্যই বিদ্যমান। এটি আলাহর আনুগত্যের উপর ধৈর্য ধারণের প্রকৃত
স্বরূপ। আবার বান্দা নফ্সের চাহিদার বিপরীত অবস্থান নেয় ফলে এটি গুনাহ
থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে সবরের স্বরূপ।পাশাপাশি নির্ধারিত কষ্ট-মুসীবতের
উপর ধৈর্যধারণও এর মাঝে পাওয়া যায়। কেননা রোযাদারকে ক্ষুধা ও তৃষ্ণার
কষ্ট সহ্য করতে হয়। এ কারণে নবী সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম সিয়ামের
২৭ বাকারা : ১৫৫-১৫৭
২৮আনফাল : ৪৬
২৯ আল ইমরান : ১৪৬
৩০ নাহল : ১২৬
৩১ বুখারী : ১৩৭৬
৩২ নাহল : ৯৬
মাসকে সবরের মাস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত
নবী সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন―
صوم شهر الصبر وثلاثة أيام من كل شهر صوم الدهر. (رواه أبو داؤد :
(٢٠٧٣
‘সবর মাস তথা রমযান মাসের রোযা এবং প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখা পূর্ণ
এক বছর রোযার সমতুল্য।’ ৩৩
ধৈর্য অর্জনে মুজাহাদার প্রয়োজন :
ধৈর্যের জন্যে মোজাহাদা ও অনুশীলনের প্রয়োজন। ভাল কাজ করা, খারাপ
কাজ ছেড়ে দেয়া, দুঃখ-বেদনা ও মুসীবতের সময় এবং মানুষ কষ্টে আμান্ত
হলে―সর্বক্ষেত্রে এটি প্রয়োজন। অবশ্যই এ সমস্ত কাজে মানুষকে কষ্ট করতে
হয়। কিন্তু ধৈর্যের পথ অবলম্বন করার স্বরূপ আলাহ তাআলা তাকে সাহায্য
করেন। অতঃপর দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম পরিণতি লাভ করে। রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম বলেন―
( ومن يتصبر يصبره الله. (رواه البخاري : ١٣٧٦
যে ব্যক্তি ধৈর্যের অনুশীলন করে, আলাহ তাকে ধৈর্যধারণের তৌফিক দিয়ে
দেন।৩৪
ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্যে আলাহ তাআলার নিকট সাহায্য প্রার্থনা
করা প্রয়োজন। কেননা তিনি ধৈর্যদানকারী ও সাহায্যকারী। আলাহ বলেন―
( وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللهَِّ (سورة النحل : ١٢٧
তুমি ধৈর্যধারণ কর। আলাহর ইচ্ছাই তোমার ধৈর্যধারণের শক্তি। ৩৫
আলাহ তাআলা আপন জাতির প্রতি মুসা আ.-এর বক্তব্য নকল করে
বলেন—
( اسْتَعِينُوا بِاللهَِّ وَاصْبِرُوا ﴿ ١٢٨ ﴾ (سورة الأعراف : ١٢٨
‘তোমরা আলাহর সাহায্য কামনা কর এবং ধৈর্য ধারণ কর।’৩৬
ভাল মানুষের ধৈর্য ও মন্দ লোকের ধৈর্যের মাঝে পার্থক্য :
ভাল মানুষ আলাহর আনুগত্যে ধৈর্য ধারণকরে। আর মন্দ মানুষ শয়তানের
আনুগত্যে ধৈর্য ধরে। মন্দ লোকেরা কুপ্রবৃত্তির পিছনে অধিক ধৈর্য ধরে। আর
আলাহর আনুগত্যে খুব কম সময় ধৈর্য ধরে। তারা শয়তানের আনুগত্যে সবকিছু
৩৩ আবু দাউদ : ২০৭৩
৩৪ বুখারী : ১৩৭৬
৩৫ নহল : ১২৭
৩৬ আ’রাফ : ১২৮
প্রচুর পরিমাণে খরচ করে। কিন্তু আলাহর পথে সামান্য বস্তুও খরচ করার উপর
ধৈর্যধারণ করে না। নফ্সের চাহিদা পূরণ করতে অনেক কষ্ট সহ্য করে, কিন্তু
আলাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনে কোন কষ্ট করতে চায় না।
নেয়ামতের উপর ধৈর্যধারণ :
অনেকে মনে করে ধৈর্য কষ্টদায়ক বিষয়ের সাথেই সংশিষ্ট। এটি সম্পূর্ণ ভুল
ধারণা। যেভাবে কষ্টের উপর ধৈর্য ধরতে হয়, ঠিক তেমনিভাবে নেয়ামত ও
আনন্দদায়ক বিষয়ের উপর ধৈর্য ধারণ করতে হয়। বরং এ ব্যাপারে ধৈর্যধারণ
কষ্টের সময়ের ধৈর্যের চেয়ে বেশি কঠিন। আর এ কারণেই সত্যবাদীগণ এ গুণে
গুণান্বিত হয় এবং অন্যরা এর থেকে গাফেল থাকে। কারণ নেয়ামতের উপর
সবর করার বিষয়টি শক্তি সামর্থ্যরে সাথে সম্পৃক্ত। শায়খুল ইসলাম ইবনে
তাইমিয়া রহ. বলেন―
والعبد مأمور بالصبر في السراء أعظم من الصبر في الضراء
মানুষের সুসময়ে ধৈর্যধারণ মুসীবতে ধৈর্যধারণের চেয়ে আরো অধিক
গুরুত্বপূর্ণ। আলাহ তাআলা বলেন―
وَلَئِنْ أَذَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنَّا رَحمَْةً ثُمَّ نَزَعْنَاهَا مِنْهُ إِنَّهُ لَيَئُوسٌ كَفُورٌ ﴿ ٩﴾ وَلَئِنْ أَذَقْنَاهُ
نَعْمَاءَ بَعْدَ ضَرَّاءَ مَسَّتْهُ لَيَقُولَنَّ ذَهَبَ السَّيِّئَاتُ عَنِّي إِنَّهُ لَفَرِحٌ فَخُورٌ ﴿ ١٠ ﴾ إِلَّا الَّذِينَ
صَبَرُوا وَعَمِلُوا الصَّالحَِاتِ أُولَئِكَ لهَُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ ﴿ ١١ ﴾. (سورة هود :
(١١−٩
আমি মানুষকে অনুগ্রহ করার পর আবার তা ছিনিয়ে নিয়ে গেলে সে নিরাশ
ও অকৃতজ্ঞ হয়ে যায়। আর মুসীবতের পর নেয়ামত প্রদান করলে সে বলে, আমা
থেকে দূরাবস্থা চলে গেল। সে খুশি হয় এবং গর্ব করে। তবে যারা ধৈর্যধারণ
করে এবং নেক আমল করে তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহান প্রতিদান।৩৭
সুদিনে নেয়ামতের উপর ধৈর্যের দিক সমূহ :
(১) নেয়ামতের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না হওয়া এবং তা পেয়ে ধোঁকায়
না পড়া। গর্ব ও অহংকার না করা। অকৃতজ্ঞ না হওয়া এবং এমনভাবে খুশি না
হওয়া, যা দেখে আলাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হন।
৩৭ হুদ : ৯-১১
(২) নেয়ামত অর্জনে সম্পূর্ণ ডুবে না পড়া। যার ফলে অন্যান্য দিকসমূহ
থেকে গাফেল হয়ে হক ও বাতিলের পার্থক্য না করে তাতে ডুবে থাকা হয়।
(৩) আলাহ তাআলার হক আদায়ে ধৈর্যধারণ।
(৪) হারাম কাজে তা খরচ করা থেকে নিজেকে আঁকড়ে রাখা। নিজের
নফ্সকে এমনভাবে প্রবৃত্তির পিছনে ছেড়ে না দেয়া, যা তাকে হারাম পথে ধাবিত
করে।
ধৈর্যের আদব সমূহ :
ধৈর্যধারণের অনেক আদব রয়েছে।
(১) মুসীবত আসার প্রম ধাপেই ধৈর্যধারণ। নবী করিম সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম বলেন :―
( إنما الصبر عند الصدمة الأولى. (رواه البخاري : ١٢٠٣
প্রম আঘাতের ধৈর্যধারণই প্রকৃত ধৈর্যধারণ।৩৮
(২) মুসীবতের সময় “ইনড়বালিলাহ” পড়া। আলাহ তাআলা বলেন―
( ﴿الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا للهَِِّ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ ﴾ (سورة البقرة : ١٥٦
“যখন তাদের উপর মুসীবত আসে তখন তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আলাহর
জন্য এবং আমরা তার দিকেই ফিরে যাব।৩৯
উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত নবী করিম সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম
বলেন―কোন মুসলিম মুসীবতে পড়লে যদি আলাহর নিদের্শ অনযু ায়ী إنا لله وإنا
إليه راجعون এবং নিুোক্ত দোয়া পাঠ করে তাহলে আলাহ তাকে উত্তম বস্তু দান
করবেন। اللهم أجرني في مصيبتي واخلف لي خيراً منها উম্মে সালামা বলেন,
যখন আবু সালামা ইন্তেকাল করলেন তখন আমি বললাম মুসলিমদের মাঝে আবু
সালামার চেয়ে উত্তম আর কে-ই বা আছে ? অল্প সময়ের মাঝেই আলাহ তাআলা
আমার জন্যে রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামকে নির্ধারণ করলেন।
(৩) মুসীবতের সময় জবান ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ স্থির থাকা। তবে উঁচু আওয়াজ
ও চিৎকার-চেঁচামেচি না করে কাঁদা বৈধ।
১ বুখারী : ১২০৩
২ বাকারাহ্ : ১৫৬
সচ্চরিত্র
عفة অর্থ হারাম ও অসুন্দর কাজ থেকে নিজেকে সংরক্ষণ করা।
রসুল(সঃ) সাহাবাগণকে সচ্চরিত্রবান হওয়ার
আদেশ করতেন। আবু সুফিয়ান রা. থেকে বর্ণিত, হিরাক্ল বাদশা তাকে নবী
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, নবী তোমাদেরকে কি করার আদেশ দেয় ? আমি
বললাম তিনি বলেন―‘তোমরা এক আল্লাহ্র এবাদত কর, তার সাথে কাউকে
শরিক করো না। তোমাদের পূর্বপুরুষ যা বলতেন তোমরা তা ছেড়ে দাও। আর
আমাদেরকে সালাত, সততা ও সচ্চরিত্র ও আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার আদেশ
করেন।’
নবী করিম সাল−াল−াহু আলাইহি ওয়াসাল−াম প্রভুর নিকট দোয়া করতেন—
( اللهم إنى أسألك الهدى والتقى والعفاف والغنى. (رواه مسلم : ٤٨٩٨
হে আল্লাহ্ আমি আপনার নিকট হেদায়েত, তাকওয়া, সচ্চরিত্র ও অভাবমুি
ক্তর প্রার্থনা করছি।
সচ্চরিত্রের প্রকার সমূহ :
(১) হারাম খাওয়া থেকে বিরত থাকা : এটি ওয়াজিব। এর উপকারিতা
হলো জাহানড়বাম থেকে মুক্তি। কেননা, যে দেহ হারাম দ্বারা লালিত হয় তার জন্য
জাহানড়বামই উপযুক্ত স্থান। হারাম খাদ্য থেকে বেঁচে থাকলে দোয়া কবুল হয়।
এবং আল্লাহ্ বিশেষভাবে তাকে হেফাজত করেন।
(২) ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত থাকা : আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
( لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلحَْافًا (سورة البقرة : ٢٧٣
তারা মানুষের কাছে কাকুতি-মিনতি করে ভিক্ষা চায় না।াররর
আউফ ইবনে মালেক রহ. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল−াল−াহু আলাইহি
ওয়াসাল−াম তাকে সহ কয়েকজন সাহাবিকে বললেন : ? ألا تبايعون তোমরা
কেন বাইআত গ্রহণ করনা? সাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল আমরা তো
বাইআত গ্রহণ করেছি। নতুন করে কোন বিষয়ে আপনার হাতে বাইআত গ্রহণ
করব ? তিনি বললেন, তোমরা মানুষের নিকট কিছু চেওনা।
উপকারিতা :
ক্স আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো কাছে আশ্রয় না নেয়া।
ক্স তাঁর উপর সত্যিকারার্থে ভরসা করা।
ক্স নিজের সম্মান রক্ষা করা।
ক্স মাখলুকের নিকট ভিক্ষা করার লাঞ্ছনা থেকে নিজেকে হেফাজত করা।
এক্ষেত্রে মানুষ কয়েক ভাগে বিভক্ত।
সকলে এক পর্যায়ের নয়। কারো ক্ষেত্রে ভিক্ষা না করা ওয়াজিব। যেমন
প্রয়োজন না হলে সম্পদ না চাওয়া। রসুল(সঃ) বলেন,
যে ব্যক্তি সম্পদ বাড়ানোর জন্যে মানুষের নিকট ভিক্ষা চায়, সে যেন আগুনের
জ্বলন্ত কয়লা চাইল। অতএব, তা কম করুক বা বেশি করুক সেটা তার ইচ্ছা।
কারো কারো ক্ষেত্রে ভিক্ষা ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব নয়। তাদের ক্ষেত্রে ভিক্ষা
ছেড়ে দেয়া মর্যাদার বিষয়। যেমন ইতিপূর্বে উলে−খিত আউফ ইবনে মালেকের
রেওয়ায়েতে আছে―
فلقد رأيت بعض أولئك النفر يسقط سوط أحدهم فما يسأل أحداً يناوله إياه.
( (رواه مسلم : ١٧٢٩
আমি তাদের কাউকে কাউকে দেখেছি ঘোড়ায় আরোহিত অবস্থায় হাতের
লাঠি পড়ে গেলে, তা উঠিয়ে দেয়ার জন্যে অন্য কাউকে বলতেন না।রী
(৩) গোপনাঙ্গের পবিত্রতা : এর উদ্দেশ্য হচ্ছে অশ্লীল কাজ ও উপকরণ
থেকে গোপনাঙ্গ সংরক্ষণ করা। এটি ওয়াজিব। আল্লাহ্ বলেন―
( وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِينَ لَا يجَِدُونَ نِكَاحًا (سورة النور: ٣٣
যারা বিবাহ করতে পারে না, তারা যেন নিজেদেরকে হেফাজত করে।ী তিনি
আরো বলেন―
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيحَْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لهَُمْ إِنَّ اللهََّ
( خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ ﴿ ٣٠ ﴾ (سورة النور : ٣٠
(হে নবী) আপনি মোমিন পুরুষদের বলেন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি নিচু
করে রাখে এবং তাদের গোপনাঙ্গ হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্যে পবিত্র
পন্থা। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাআলা তাদের কর্ম সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত।ীর
উপকারিতা :
ক্স গোপনাঙ্গের হেফাজতকারীকে আল্লাহ্ তাআলা আরশের নীচে ছায়া
দেবেন : রসুল(সঃ) বলেন―
سبعة يظلهم الله في ظله يوم لا ظل إلا ظله …. ورجل دعته امرأة ذات منصب
( وجمال, فقال : إني أخاف الله. (رواه البخاري : ١٣٣٤
সাত প্রকার ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তাআলা আরশের নীচে ছায়া দেবেন। তাদের
মাঝে ঐ ব্যক্তিও অন্তর্ভুক্ত যাকে কোন সুন্দরী সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারী কু-কর্মের
দিকে আহ্বান করলে সে বলে, إني أخاف الله অর্থাৎ, আমি আল্লাহ্কে ভয়
করি।ীরর
ক্স জানড়বাতে প্রবেশের মাধ্যম : নবী করিম সাল−াল−াহু আলাইহি ওয়াসাল−াম
বলেন, যে ব্যক্তি দুই চোয়ালের মধ্যকার মুখ ও দুই পায়ের মধ্যকার গুপ্তাঙ্গ
হেফাজতের জিম্মাদার হলো, আমি তার জানড়বাতে প্রবেশের দায়িত্ব নিলাম।
গোপনাঙ্গ হেফাজতের উপকরণসমূহ :
ক্স দৃষ্টির হেফাজত।
ক্স যৌবনে পদার্পণের সাথে সাথে দ্রুত বিবাহ।
ক্স বিবাহে অপারগ হলে সিয়াম সাধনা।
ক্স নারীর পূর্ণ হিজাব গ্রহণ।
ক্স বেশির ভাগ সময় ঘরে অবস্থান। আল্লাহ্ তাআলা বলেন :―
( وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الجَْاهِلِيَّةِ الْأُولَى. (سورة الأحزاب : ٣٣
আর তোমরা (নারীরা) ঘরে অবস্থান কর এবং জাহেলী যুগের নারীদের মত
খোলামেলা চলাফেরা কর না। অপরিচিত নারীর সাথে নির্জনে অবস্থান না করা। রসূল(সঃ)
বলেন : إياكم والدخول على النساء “তোমরা নারীদের
নিকট প্রবেশ করার ব্যাপারে সতর্ক থাক।”
ক্স কোন নারীর সাথে মুসাফাহা না করা। রসূল(সঃ) আলাইহি
ওয়াসাল−াম বলেন : إني لا أصافح النساء “আমি নারীর সাথে মুসাফাহা করি
না।”
ক্স পুরুষ-নারী একসাথে মেলামেশা না করা।
ক্স অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করে এমন সকল কথা ও কাজ থেকে দূরে থাকা।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
( وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا. (سورة بني إسرائيل : ٣٢
‘আর তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না।’
অশ্লীল কথা বা কাজের কথা শোনা, অশালীন বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত, অশ্লীল
ছবি বা সিনেমা দেখা, অশ্লীল কিছু পাঠ করা―এ সবই আয়াতের নিষেধাজ্ঞার
আওতাভুক্ত।
পবিত্রতা দুর্বল হওয়ার কারণসমূহ :
(১) অভিভাবক ও মুরব্বীগনের তরবিয়ত ও নজরদারি দুর্বল হওয়া।
(২) হারাম বস্তুর প্রতি অবাধে দৃষ্টিপাত। এটি ফিতনার সবচেয়ে বড়
কারণ। রসুল(সঃ) বলেন : فزنا العينين النظر ‘চোখের
ব্যভিচার হলো দৃষ্টিপাত।’
জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন, আমি রসূল(সঃ) কে আকস্মিক দৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে
তাৎক্ষণিকভাবে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে বললেন।
বুরাইদা রা. থেকে বর্ণিত, রসূল(সঃ) বলেন :
হে আলী, তুমি প্রম দৃষ্টির পর দ্বিতীয়বার দৃষ্টি দিয়ো না। প্র মটি তোমার জন্যে
জায়েজ বটে, কিন্তু দ্বিতীয়টির অধিকার নেই।
(৩) যুবক-যুবতীদের দেরি করে বিবাহ দেয়া।
(৪) এমন দেশে ভ্রমণ করা, যেখানে বেহায়া ও উলঙ্গপনার সয়লাব
রয়েছে।
(৫) অপরিচিত নারীর সাথে মেলামেশা ও নির্জনবাসের ব্যাপারে অবহেলা
করা। পূর্বসুরীগণ এ ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক করতেন। উবাদা ইবনে সামেত রা.
ছিলেন একজন বয়োজ্যাষ্ঠ আনসারী সাহাবি। তিনি বলেন―তোমরা দেখ না
আমি অন্যের সাহায্য ব্যতীত দাঁড়াতে পারি না এবং নরম খাবার ব্যতীত খেতে
পারি না। আমার সাথি (পুরুষাঙ্গ) অনেকদিন হল মরে গিয়েছে। সারা পৃথিবীর
বিনিময়ে হলেও কোন অপরিচিত নারীর সাথে নির্জনে থাকা আমার পছন্দ হয়
না। কেননা শয়তান হয়তোবা আমার জিনিসটিকে নাড়া দিতে পারে।
(৬) যে ব্যক্তি নিজে পবিত্র থাকতে চায় না এবং সমাজকে কলুষমুক্ত
রাখতে চায় না এমন লোকের সাথে উঠা-বসা করা। অতএব, এ ধরনের
লোকদের সঙ্গ ত্যাগ করে ভালো লোকদের সঙ্গ তালাশ করা উচিত।
(৭) অধিক অবসর। তাই দ্বীন-দুনিয়ার উপকার হয়, এমন কাজে নিজেকে
সর্বদা নিয়োজিত রাখা উচিত। যাতে শয়তানি চিন্তা-ভাবনা আμমণ করতে না
পারে।
(৮) সর্বশেষ কথা হলো শরিয়তের হুকুম আহকাম ছেড়ে দেয়াই হলো
চারিত্রিক দুর্বলতার সবচেয়ে বড় কারণ।
গোপনাঙ্গ সংরক্ষণের সু-ফল :
(১) চরিত্রবান ব্যক্তির জানড়বাতে প্রবেশের দায়িত্ব রসূল(সঃ) এর।
(২) কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহ্ তাআলার ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ।
(৩) ব্যক্তির পবিত্রতা তার পরিবার ও মাহরাম আত্মীয়দের পবিত্রতার
কারণ। যে ব্যক্তি হারামে লিপ্ত হয়, তার নিজের ও পরিবারের উপর
যে কোন সময় এর খারাপ পরিণতি নেমে আসতে পারে।
(৪) ধ্বংসাত্মক রোগ, ফাসাদ, আপদ-বিপদ ও অনিষ্ট থেকে সমাজ
নিরাপদ থাকার বড় মাধ্যম হলো চারিত্রিক পবিত্রতা।
(৫) সাধারণ ও বিশেষ শাস্তি এবং আল্লাহ্র অসন্তুষ্টি থেকে দূরে থাকার
মাধ্যম পবিত্রতা।
বদান্যতা ও পরার্থপরতা
দান করার বিষয়টি উদার মনে সম্পদ ব্যয় করার উপরই সীমাবদ্ধ নয়। এটি
একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ, যার অনেক স্তর ও শ্রেণী বিন্যাস রয়েছে।
বদান্যতার সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে―আলাহর পথে নিজের জীবন উৎসর্গ করা। কবি
বলেন―
يجود بالنفس إذ ضن البخيل بها ! والجود بالنفس أقصى غاية الجود
তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করছেন, যদিও কৃপণ ব্যক্তি আপন জীবন দান
করতে চায় না, মূলত: জীবন উৎসর্গ করাই হলো উঁচু পর্যায়ের বদান্যতা।
বদান্যতার আরেকটি স্তর হচ্ছে মুমিনদের কল্যাণে সময় দান করা এবং
শিক্ষার্থী ও প্রশড়বকারীর জন্যে ইলম বণ্টন করা।
সকল মানুষের মাঝে সাহাবীগণই ছিলেন সবচেয়ে বেশি দানশীল।
সাহাবাদের জীবন উৎসর্গের নমুনা :
যে ব্যক্তি সাহাবীগণের জীবন−চরিত অধ্যয়ন করে, সে আলাহর রাহে
সাহাবীগণের জীবন উৎসর্গের অনেক বিস্ময়কর ঘটনা দেখতে পাবে। নিমেড়ব
কয়েকটি ঘটনা উলেখ করা হল।
(১) আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বদর
যুদ্ধে বলেন :―
قوموا إلي جنة عرضها السموات والأرض, فقال عمير بن الحمام الأنصاري رضي
الله عنه : يا رسول الله , جنة عرضها السموات و الأرض? قال : نعم, قال بخ بخ,
فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ما يحملك على قولك : بخ بخ , قال : لا
والله يا رسول الله إلا رجاء أن أكون من أهلها, قال : فإنك من أهلها, فأخرج
تمرات من قرنه , فجعل يأ كل منهن , ثم قال : لئن أنا حييت حتى آكل تمراتي
هذه إنها لحياة طويلة , قال : فرمى بما كان معه من التمر , ثم قاتلهم حتى قتل.
( (رواه مسلم : ٣٥٢٠
তোমরা উঠ এবং জানড়বাতের দিকে অগ্রসর হও, যার প্রশস্ততা আসমান ও
যমীন বরাবর বিস্তৃত। একথা শুনে উমাইর ইবনে হামাম রা. বললেন―হে আলাহর
রাসূল, জানড়বাতের প্রশস্ততা আসমান ও যমীন বরাবর ? রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম বললেন : হ্যাঁ। তিনি বললেন―বাখ! বাখ! রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম বললেন, তুমি কি জন্যে বাখ! বাখ! শব্দ উচ্চারণ করলে ?
বললেন, হে আলাহর রাসূল, আমি এ জানড়বাতের অধিবাসী হওয়ার আশায় এমনটি
বলেছি। রাসূল বললেন, তুমি জানড়বাতের অধিবাসী। তিনি তখন তার ব্যাগ থেকে
কয়েকটি খেজুর বের করলেন এবং খেতে শুরু করলেন। অতঃপর বললেন আমি
যদি সবগুলো খেজুর খাওয়া পর্যন্ত জীবিত থাকি তাহলে তা অনেক দীর্ঘ জীবন।
পরে তিনি অবশিষ্ট খেজুরগুলো নিক্ষেপ করে যুদ্ধে নেমে গেলেন এবং শহীদ হয়ে
গেলেন।৪০
(২) কোন এক যুদ্ধে আবু মূসা আশআরী রা. অংশগ্রহণ করেন। তিনি
বললেন―রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেছেন :
( إن أبواب الجنة تحت ظلال السيوف… (رواه مسلم : ٣٥٢١
‘নিশ্চয় জানড়বাতের দরজাসমূহ তলোয়ারের ছায়ার নীচে আছে।’ একথা শুনে
অগোছালো পোশাক নিয়ে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেল এবং বলল হে আবু মূসা ;
তুমি একথা রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম থেকে শুনেছ ? আবু মুসা রা.
বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর সে সঙ্গীদের নিকট ফিরে গেল এবং বলল أقرأ عليكم
السلام আমি তোমাদেরকে সালাম করছি। অতঃপর তরবারির খাপ উন্মুক্ত করে
শত্র“র উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং শহীদ হয়ে গেল।৪১
আলাহর রাহে সম্পদ উৎসর্গ করার দৃষ্টান্ত :
(১) উমর রা. ৪০০ (চার শত) দিনার হাতে নিয়ে তার গোলামকে বললেন,
এগুলো আবু উবাইদার নিকট নিয়ে যাও। অতঃপর দূরে সরে থেকে লক্ষ্য কর
তিনি সেগুলো কি করেন ? গোলাম সেগুলো নিয়ে তার নিকট গিয়ে বললেন,
আমীরুল মুমিনীন এগুলো গ্রহণ করতে বলেছেন। তিনি (আবু উবাইদা) বললেন,
আলাহ তার উপর দয়া করুক। অতঃপর তার বাঁদীকে বললেন, যাও সাতটি
দিনার নিয়ে অমুকের নিকট যাও, আর এই পাঁচটি অমুকের নিকট নিয়ে যাও। ঐ
মজলিসে বসেই তিনি সবগুলো দিনার শেষ করে ফেললেন। অতঃপর গোলাম
উমর রা. এর নিকট ফিরে আসল এবং পূর্ণ ঘটনা খুলে বলল। এদিকে উমর রা.
ঐ পরিমাণ দিনার মুয়ায ইবনে জাবাল রা.-এর জন্যে গণনা করে রাখলেন এবং
সেগুলোও পাঠিয়ে দিলেন। মুয়ায রা. বললেন, আলাহ তার সাথে সম্পর্ক ঠিক
রাখুক। হে বাঁদী অমুক ব্যক্তির ঘরে এ পরিমাণ নিয়ে যাও। আর অমুক ঘরেও
৪০ মুসলিম : ৩৫২০
৪১ মুসলিম : ৩৫২১
দিয়ে আস। মুয়ায রা.-এর স্ত্রী জানতে পেরে বললেন, আলাহর কসম আমরাও
মিসকীনÑদারিদ্রক্লিষ্ট। অতএব, আমাদেরও কিছু দিন। তখন পাত্রে মাত্র দুই
দিনার অবশিষ্ট ছিল। তিনি মাত্র দুই দিনারই স্ত্রীর হাতে তুলে দিলেন। গোলাম
এসে উমর রা.-কে ঘটনা শোনালে তিনি খুশি হলেন এবং বললেন তারা সকলে
ভাই ভাই। সবাই সবার উপকারে এগিয়ে আসে।
(২) তালহা ইবনে উবাইদুলাহ রা.-এর দানের কাহিনি উলেখযোগ্য। তাকে
বলা হত طلحة الجود (দানবীর তালহা) ও طلحة الفيّاض (পরোপকারী তালহা)
একবার হাযরামাওত থেকে তার নিকট কিছু মাল আসল। পরিমাণ সাত হাজার।
তিনি ঐ রাতে খুব পেরেশান অবস্থায় ছিলেন। তার স্ত্রী তাঁকে বললেন আপনার
কি হলো ? রাত থেকে কি যেন চিন্তা করছেন ? তালহা রা. বললেন : ঐ ব্যক্তির
রব সম্পর্কে তার কি ধারণা যে এতগুলো মাল ঘরে রেখে রাত্রিযাপন করে ? তার
স্ত্রী বললেন―আপনার বন্ধুদের পথ ধরে চলতে পারেন না ? যখন আপনি
সকালে উপনীত হবেন তখন মালগুলো বণ্টন করে ফেলবেন। তিনি স্ত্রীকে
বললেন আলাহ তোমাকে তৌফিক দান করুক। তুমি তৌফিক প্রাপ্তের মেয়ে
তৌফিকপ্রাপ্তা। (অর্থাৎ আবু বকরের মেয়ে উম্মে কুলছুম।) সকাল হলে তিনি সব
সম্পদ মুহাজির ও আনসারগণের মাঝে বণ্টন করে দিলেন। স্ত্রী তাকে
বললেন―আমরা কি এ মালের কোন অংশ পাই না ? তিনি বললেন তুমি
সারাদিন কোথায় ছিলে ? এখন যা বাকি আছে তা তুমি নিয়ে নাও। থলের মাঝে
তখন মাত্র এক হাজার দিরহাম অবশিষ্ট ছিল।
পরার্থপরতা ও অপরকে প্রাধান্য দেয়া :
إيثار এর মাঝে جود এর অর্থ বিদ্যমান। বরং তাতে দানের অর্থ আরো
বেশি লুক্কায়িত আছে। কেননা, إيثار এর অর্থ হচ্ছে নিজের প্রয়োজন থাকা
সত্ত্বেও অপরকে প্রাধান্য দেয়া। এর অনেকগুলো স্তর রয়েছে।
(১) সব কিছুর উপর আলাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেয়া। দুনিয়ার উপর
আখেরাতকে এবং ধ্বংসযোগ্য অস্থায়ী জিনিসের উপর স্থায়ী জিনিসকে প্রাধান্য
দেয়া। এটি সর্বোচ্চ স্তর।
(২) আলাহর সৃষ্টিকে প্রাধান্য দেয়া। অর্থাৎ নিজের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও
অন্যকে দান করা। আর এসব কিছুই হতে হবে আলাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করার
লক্ষ্যে। প্রশংসা কিংবা পদ-লাভের উদ্দেশ্যে নয়।
এ প্রকারের সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে―অপরের জন্যে নিজের জীবন উৎসর্গ করা।
কোন কোন সাহাবী রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামকে বলতেন―
نفسي فداك، ونحري دون نحرك.
আমার জীবন আপনার জন্যে উৎসর্গ করলাম। আরো একটি স্তর
হচ্ছে―সম্পদের দ্বারা অপরকে প্রাধান্য দেয়া। আলাহ আনসারদের প্রশংসা
করেছেন যখন তারা মুহাজির ভাইদেরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দিয়েছে―
وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يحُِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يجَِدُونَ فِي
صُدُورِهِمْ حَاجَةً ممَِّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ
( شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ المُْفْلِحُونَ ﴿ ٩﴾ (سورة الحشر : ٩
‘যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদিনায় বসবাস করেছিল এবং ঈমান
আনয়ন করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালোবাসে। মুহাজিরদের যা দেয়া হয়েছে
তজ্জন্যে তারা অন্তরে ঈর্ষা পোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও
তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত তারাই
সফলকাম।’৪২
নবী সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ও সাহাবাগণ অপরকে প্রাধান্য দেয়ার
ক্ষেত্রে সকল উম্মত অপেক্ষা অগ্রগামী ছিলেন।
(১) সাহল ইবনে সা’দ রা. বলেন : নবী কারীম সালালাহু আলাইহি
ওয়াসালাম-এর নিকট একজন মহিলা একটি চাদর নিয়ে আসল। এসে বলল :
হে আলাহর রাসূল ! আপনাকে আমি এই চাদরটি পরাতে চাই। রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম খুব আগ্রহ সহকারে চাদরটি গ্রহণ করে পরিধান করলেন।
এক সাহাবী রাসূলের গায়ে চাদরটি দেখে বললেন―চাদরটি কতই না সুন্দর।
এটি আমাকে পরিয়ে দিন। নবী কারীম সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বললেন,
নাও। নবী করিম সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম মজলিস থেকে চলে গেলে
উপস্থিত সাহাবীগণ লোকটিকে তিরস্কার করতে লাগলেন। তারা বললেন, তুমি
যখন দেখলে রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম আগ্রহ সহকারে চাদরটি
পরিধান করেছেন তখন তোমার জন্যে তাঁর চাদরটি চাওয়া ঠিক হয়নি। তুমি তো
ভাল করেই জান কেউ কিছু চাইলে তিনি কখনও না বলেন না। তিনি বললেন,
আমি রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম-এর পরিধেয় বস্ত্রের বরকত অর্জন
করতে চেয়েছি, আমার আশা এটি যেন আমার কাফন হয়।
(২) আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল সালালাহু আলাইহি
ওয়াসালাম-এর নিকট এসে বলল, হে আলাহর রাসূল ক্ষুধার কারণে আমার খুব
কষ্ট হচ্ছে। রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বিবিগণের নিকট পাঠিয়ে কিছুই
৪২ হাশর-৯
পেলেন না। অতঃপর রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বললেন, এমন কে
আছে, যিনি আজকের রাতে এ ব্যক্তির মেহমানদারী করতে পারবে ? আলাহ তার
উপর রহম করুক। একজন আনসারী সাহাবী দাঁড়িয়ে বললেন, আমি পারব।
তিনি ঐ ব্যক্তিকে নিজ বাড়িতে নিয়ে গেলেন এবং স্ত্রীকে বললেন রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম-এর মেহমান। অতএব কোন কিছু তাকে না দিয়ে রেখে
দিও না। স্ত্রী বললেন, আমার নিকট বাচ্চাদের খাবার ব্যতীত অতিরিক্ত কিছুই
নেই। সাহাবী বললেন, রাতে যখন বাচ্চারা খাবার চাইবে তখন তাদেরকে ঘুম
পাড়িয়ে দেবে। আর তুমি বাতি নিভিয়ে ফেলবে। আমরা আমাদের পেট আজ
রাতে বেধে রাখব। স্ত্রী তা-ই করলেন। সাহাবী সকাল বেলা রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম-এর নিকট উপস্থিত হলে রাসূল সালালাহু আলাইহি
ওয়াসালাম বললেন, আলাহ তাআলা অমুক স্বামী ও স্ত্রীর কাজ দেখে আশ্চর্য
হয়েছেন অথবা হেসেছেন।
মসজিদের আদব
মসজিদের অবস্থান
মানুষের জীবনে মসজিদের গুরুত্ব অপরিসীম, তার অবস্থান অনেক উপরে ,
এর সংক্ষিপ্ত কিছু বিষয় নিমেড়ব উলেখ করছি।
১. মসজিদ আলাহ তাআলার ঘর, রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম
বলেন—
( ما اجتمع قوم فى بيت من بيوت الله… (رواه مسلم : ٤٨٦٧
কোন সম্প্রদায় যখন আলাহর ঘর সমূহের মধ্য থেকে কোন এক ঘরে
একত্রিত হয়…।
আলাহ তাআলা বলেন—
( وَأَنَّ المَْسَاجِدَ للهَِِّ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللهَِّ أَحَدًا. (سورة الجن : ١٨
এবং এই যে মসজিদসমূহ আলাহরই জন্য। সুতরাং আলাহর সাথে তোমরা
অন্য কাউকে ডেকো না।
উলামায়ে কেরাম বলেন : উলেখিত হাদীস ও আয়াতে মসজিদকে আলাহর
দিকে সম্বন্ধযুক্ত করে উলেখ করার মাধ্যমে মূলত মসজিদের মর্যাদা ও গুরুত্ব
ফুটে উঠেছে।
২. মসজিদ পৃথিবীতে সর্বোত্তম জায়গা এবং আলাহ তাআলার সবচেয়ে প্রিয়
স্থান। রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন―
أحب البلاد إلى الله مساجدها, وأبغض البلاد إلى الله أسواقها. (رواه مسلم :
(١٠٧٦
আলাহর নিকট সর্বোত্তম জায়গা মসজিদ এবং সর্ব-নিকৃষ্ট জায়গা বাজার।ীার
৩. মসজিদ ইসলামের দ্বিতীয় ভিত্তি ফরজ নামাজ আদায়ের স্থান ।
৪. মসজিদ মুসলমানদের সমবেত হওয়া , পরিচয় লাভ করা এবং সম্পর্ক
তৈরি করার স্থান। সেখানে কোরআন পাঠের ক্লাস হয় এবং জ্ঞান-শিক্ষার পাঠ
দান করা হয়।
৫. মসজিদের গুরুত্ব এবং মর্যাদার আরো একটি প্রমাণ হল, রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম হিজরত করার পর সর্বপ্রম মসজিদ বানানোর দিকে
দৃষ্টি দিয়েছেন। আর মদিনাতে আগমনের পর সেটাই তার সর্বপ্রম কাজ।
মসজিদ আবাদ করার ফজিলত:
মসজিদ আবাদ দুই প্রকার:
(ক) বাহ্যিক আবাদ তথা নির্মাণ করা, আর এর অনেক ফজিলত রয়েছে।
আলাহর রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন―
من بنى مسجدا يبتغي به وجه الله بنى الله له مثله فى الجنة. (رواه الترمذي :
(٢٩٢
যে আলাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ তৈরি করবে, আলাহ তাআলা জানড়বাতে
তার জন্য অনুরূপ একটি ঘর তৈরি করে দেবেন।
হাদীসে সঠিক নিয়তে মসজিদ নির্মাণকারীর জন্যে জানড়বাতে প্রবেশের শুভ
সংবাদ আছে।কারণ জানড়বাতে আলাহ তাআলার ঘর নির্মাণ করাই প্রমাণ করে যে
সে ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে।
(খ)এতো গেল বাহ্যিকভাবে মসজিদ আবাদের কথা। মসজিদ আবাদের
আরেকটি দিক রয়েছে যা প্রকৃত অর্থে আবাদ করা ,আর সেটি এভাবে যে,
সেখানে নামাজ পড়া, জিকির করা, কোরআন তেলাওয়াত করা এবং অন্যান্য
এবাদত করা ; এর জন্য অগণিত পুরস্কার আছে মর্মে বহু আয়াত ও হাদীস বর্ণিত
হয়েছে।
যেমন রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন :
من غدا إلى المسجد أو راح أعدّ الله له في الجنة نزلا كلما غدا أو راح.
যে সকাল বিকাল মসজিদে গমনাগমন করবে, প্রত্যেকবার যাতায়াতের
বিনিময়ে আলাহ তাআলা তার জন্য জানড়বাতে মেহমানদারির ব্যবস্থা করবেন।
আবাদের উভয় দিক শামিল হয় আলাহ তাআলার নিমেড়বাক্ত বাণী: এরশাদ
হচ্ছে―
إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهَِّ مَنْ آَمَنَ بِاللهَِّ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآَتَى الزَّكَاةَ وَلمَْ
( يخَْشَ إِلَّا اللهََّ فَعَسَى أُولَئِكَ أَنْ يَكُونُوا مِنَ المُْهْتَدِينَ ﴿ ١٨ ﴾. (سورة التوبة : ١٨
নি:সন্দেহে তারাইতো আলাহর মসজিদ আবাদ করবে, যারা ঈমান আনে
আলাহ ও আখেরাতের প্রতি এবং সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আলাহ
ব্যতীত অন্য কাউকেই ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা
সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
মসজিদ সম্পর্কিত বিধানাবলী:
মসজিদের অনেক আদব ও বিধান রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিমেড়ব উলেখ
করা হল :
১. কারুকার্য বাদ দিয়ে সুন্দর করে বিল্ডিং বানানো, কেননা কারুকার্য করা
বেদআত। এতে নামাজির মনোযোগ নষ্ট হয় এবং প্রতিযোগিতা ও অহংকারের
দরজা খুলে যায়। ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুলাহ সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম এরশাদ করেন, আমাকে মসজিদ সাজাতে নির্দেশ দেয়া
হয়নি। ইবনে আব্বাস বলেন, তারা অবশ্যই মসজিদসমূহ সাজাবে, যেমন ইহুদি
ও খ্রিস্টানরা সাজাতো।
ইমাম বোখারি রহ. বলেন, উমর রা. মসজিদ বানাতে নির্দেশ দিলেন এবং
বললেন, আমি মানুষকে বৃষ্টি থেকে হেফাজত করছি। সাবধান! লাল ও হলুদ রং
ব্যবহার করবে না। মানুষ ধাঁধাঁয় পড়ে যাবে। আনাস রা. বলেন, মসজিদ নিয়ে
মানুষ গর্ব ও প্রতিযোগিতা করবে, কিন্তু খুব কম লোকই মসজিদ আবাদ করবে।
২. কবরের উপর মসজিদ তৈরি করা কিংবা মসজিদে কবর বানানো
হারাম। কেননা এটি মূলত কবরের সম্মান প্রদর্শণ এবং আলাহ তাআলা ব্যতীত
কবরের এবাদত করার মাধ্যমে শিরকের রাস্তা তৈরি করে ।
রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম এরশাদ করেন:
( لعن الله اليهود والنصارى, اتخذوا قبور أنبيائهم مساجد. (رواه مسلم : ٨٢٥
ইহুদি ও খ্রিস্টানদের উপর আলাহ তাআলার অভিশাপ। তারা তাদের
নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে। জুন্দুব রা. রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি
ওয়াসালামের মৃত্যুর পূর্বে পাঁচটি অসিয়ত শুনেছেন, তিনি রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালামকে বলতে শুনেছেন:―
…وإن من كان قبلكم كانوا يتخذون قبور أنبيائهم وصالحيهم مساجد, ألا فلا
( تتخذوا القبور مساجد, فإني أنهاكم عن ذلك. (رواه مسلم : ٨٢٧
…তোমাদের পূর্ববর্তীরা নবী ও সৎ লোকদের কবরকে মসজিদ বানাতো।
সাবধান! তোমরা কবরকে মসজিদ বানিও না। আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে
নিষেধ করছি। কবরস্থানে জানাযার নামাজ ছাড়া অন্য কোন নামাজ বৈধ নয়।
৩. মসজিদ সর্বদা পরিচ্ছনড়ব রাখা। অপবিত্র করা বা কষ্টদায়ক জিনিস
সেখানে রাখা হারাম। রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম এরশাদ
করেন―
( البصاق فى المسجد خطيئة وكفارتها دفنها. (رواه النسائي : ٧١٥
মসজিদে থুতু ফেলা অন্যায়, তার কাফ্ফারা হল পুতে ফেলা।ীীর
পুতে ফেলা সম্ভব না হলে, অন্যভাবে পরিষ্কার করতে হবে। যেমন, রাসূল
সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম মসজিদের দেয়াল থেকে থুতু সরিয়ে
ফেলেছিলেন।
৪. মসজিদে নম্রতা ও স্থিরতার সাথে যাওয়া। তাড়াতাড়ি বা দৌঁড়িয়ে না
যাওয়া। রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম এরশাদ করেন—
وإذا أتيتم الصلاة فعليكم بالسكينة, فما أدركتم فصلوا وما فاتكم فأتموا.
( (رواه البخاري : ٥٩٩
যখন তোমরা নামাজে আসবে অবশ্যই ধীর-স্থিরতার সাথে আসবে। যতটুকু
পাবে, আদায় করবে। আর যতটুকু ছুটে যাবে, পূর্ণ করবে।
৫. মসজিদে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা ও বাম পা দিয়ে বের হওয়া। আনাস
রা. বলেন―সুনড়বত হল যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, ডান পা দিয়ে প্রবেশ
করবে। আর যখন বের হবে বাম পা দিয়ে বের হবে।
প্রবেশ এবং বের হবার দোয়া পড়বে। রাসূলের নির্দেশ :―
إذا دخل أحدكم المسجد فليقل اللهم افتح لي أبواب رحمتك, وإذا خرج
فليقل اللهم إنى أسألك من فضلك.
যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে তখন বলবে :
اللهم افتح لي أبواب رحمتك.
আর যখন বের হবে তখন বলবে : اللهم إني أسألك من فضلك
৬.মসজিদে আগে আগে যাওয়া এবং প্রম কাতারে নামাজ পড়ার প্রতি
আগ্রহী থাকা―রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম-এর প্রতি উদ্বুদ্ধ
করেছেন। তিনি বলেন―
لو يعلم الناس ما في النداء والصف الأول ثم لم يجدوا إلا أن يستهموا عليه
لاستهموا على ذلك, ولو يعلمون ما في التهجير لا سبقوا إليه. (رواه البخاري :
(٥٨٠
যদি মানুষ জানতে পারত, আজান দেয়া এবং প্রম কাতারে নামাজ পড়ার
মাঝে কি আছে, আর লটারি ব্যতীত সেটি পাওয়া সম্ভব হত না, তাহলে অবশ্যই
তার জন্য লটারির ব্যবস্থা করত। এবং যদি জানতে পারত মসজিদে আগে
আসার মাঝে কি ফজিলত আছে, তাহলে তার জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও
আসত।
আর যিনি মসজিদে আগে আসবেন, কোন কারণ ছাড়া তার প্রম কাতার
বাদ দিয়ে পিছনে বসা উচিত নয়। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, ‘যে
ব্যক্তি আগে আসল এবং কোর ওজর ব্যতীতই প্রম কাতার ছাড়া অন্য জায়গায়
বসল, সে শরীয়তের বিধান লঙ্ঘন করল। পিছনে হটে থাকার দরুন সে অনেক
গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করল। রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি
ওয়াসালাম এরশাদ করেন―
تقدموا, فائتموا بي, وليأتم بكم من بعدكم, لا يزال قوم يتأخرون حتى
( يؤخرهم الله. (رواه مسلم : ٦٦٢
তোমরা সামনের দিকে অগ্রসর হও এবং আমার এক্তেদা কর। আর
তোমাদের পরবর্তীগণ তোমাদের এক্তেদা করবে। একটি সম্প্রদায় সব সময়
পিছনে থাকবে এক পর্যায়ে আলাহ তাআলা তাদেরকে পিছনে ঠেলে দেবেন।ীীরা
মসজিদে আগে আসার মাঝে অনেক উপকার। যথা―জামাতের শুরু থেকে
অংশগ্রহণ, কোরআন পড়ার সুযোগ, নফল আদায় করার সুযোগ, ফেরেশতারা
তার জন্য ক্ষমার দোয়া করতে থাকে।যতক্ষন নামাজের অপেক্ষায় থাকবে
ততক্ষন নামাজরত আছে বলে ধরা হবে এবং প্রম কাতার পাওয়া―ইত্যাদি।
৭.মসজিদে প্রবেশকারী দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় ব্যতীত
বসবে না। আবু কাতাদাহ আনসারী রা. বলেন, রাসূল সালালাহু আলাইহি
ওয়াসালাম এরশাদ করেন,
إذا دخل أحدكم المسجد فلا يجلسنّ حتى يصلي ركعتين. (رواه البخاري :
(١٠٩٧
তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দুই রাকাত না পড়া ব্যতীত
কখনোই বসবে না।ইমাম সাহেব জুমার নামাজে খুতবা দানরত থাকা অবস্থায়
প্রবেশ করলেও এ’দুই রাকাত আদায় করবে তবে একটু সংক্ষিপ্তাকারে আদায়
করবে। জাবের রা. রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম থেকে বর্ণনা করেন―
إذا جاء أحدكم يوم الجمعة والإمام يخطب فليصل ركعتين ويتجوز فيهما.
( (رواه أبو داؤد : ٩٤٢
ইমামের খুতবা চলা অবস্থায় তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে,
তখন সংক্ষেপে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে।
৮. মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বলা, নামাজি বা তেলাওয়াতকারীকে বিরক্ত করা
মাকরূহ। চাই তা সাধারণ কথা হোক বা উচ্চস্বরে কোরআর পাঠ করা হোক।
পাশের লোককে কষ্ট দেয়া নিষেধ। রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম এরশাদ
করেন,
إن المصلي يناجي ربه فلينظر بما يناجيه, ولا يجهر بعضكم على بعض
( بالقرآن. (رواه مالك في المؤطأ : ١٦٣
নামাজি ব্যক্তি তার প্রভুর সাথে গোপনে কথা বলে। তার খেয়াল রাখা উচিত
যে, সে কি বলছে। তোমরা কোরআন শরীফ তেলাওয়াতের মাধ্যমে একে অন্যের
উপর শব্দ কর না।
৯. মুক্তাদী সর্বদা ইমামের অনুসরণ করবে, প্রত্যেক আমল তার পর পরই
সাথে সাথে আদায় করবে। ইমামের আদায়ের আগে করবে না, সাথেও
করবে না। আবার ইমাম থেকে অনেক দেরিতেও না। রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম এরশাদ করেন―
إنما جعل الإمام ليؤتم به, فلا تختلفوا عليه, فإذا كبر فكبروا, وإذا ركع
فاركعوا, وإذا قال سمع الله لمن حمده فقولوا -اللهم ربنا ولك الحمد―وإذا
سجد فاسجدوا, وإذا صلى جالسا فصلوا جلوسا أجمعون. (رواه البخاري :
(٦٨٠
ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে তাঁর অনুসরণের জন্য, তোমরা তার সাথে বিরোধ
কর না। তিনি যখন আলাহু আকবার বলবেন, তখন তোমরা আলাহু আকবার
বলবে, আর যখন রুকু করবেন, তোমরা রুকু করবে, যখন سمع الله لمن حمده
বলবেন, তোমরা اللهم ربنا ولك الحمد বলবে, যখন সেজদা করবেন, তোমরা
সেজদা করবে, যখন তিনি বসে নামাজ আদায় করবেন তখন তোমরা সবাই বসে
নামাজ আদায় করবে। ইমামের পূর্বে কোন কাজ করা হারাম হওয়া সম্পর্কে
রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন―
أما يخشى الذي يرفع رأسه قبل الإمام أن يحول الله رأسه رأس حمار أو
( صورته صورة حمار. (رواه أبو داؤد : ٥٢٨
যে ব্যক্তি নামাজে ইমামের পূর্বে মাথা উঠায় তার কি ভয় হয় না যে, আলাহ
তাআলা তার মাথাকে গাধার মাথা বানিয়ে দেবেন কিংবা তার আকৃতিকে গাধার
আকৃতি বানিয়ে দেবেন।
মাতা-পিতার অধিকার
মাতা-পিতার অনেক অধিকার রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু অধিকার নিমেড়ব উলেখ করা
হল :
১. মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার : আলাহ তাআলা তাদের সাথে ভাল
আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আলাহ বলেন―
( وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا. (سورة بني إسرائيل : ٢٣
তোমার পালনকর্তা আদেশ করছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারো এবাদত
করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর।৪৩
রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম পিতা-মাতার আনুগত্যকে সর্বোত্তম
আমল এবং আলাহর নিকট অধিক প্রিয় আমলের মাঝে গণ্য করেছেন। সাহাবি
ইবনে মাসঊদ রা. নবী করিম সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামকে জিজ্ঞেস
করলেন―
أيّ العمل أحب إلى الله? قال الصلاة على وقتها, قال ثم أيّ? قال بر الوالدين قال
( ثم أيّ? قال الجهاد في سبيل الله. (رواه البخاري : ٥٥١٣
আলাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল কোনটি? তিনি বললেন, সময় মত
নামাজ পড়া। তিনি বললেন, অত:পর কোনটি? বললেন, পিতা-মাতার আনুগত্য
করা। তিনি আবার প্রশড়ব করলেন, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, আলাহর রাস্তায় জিহাদ করা। পবিত্র কোরআন এবং রাসূলের হাদিস পিতা-মাতার প্রতি
সুন্দর আচরণের নির্দেশ দেয়। আলাহ তাআলা এরশাদ করেন―
( وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا. (سورة لقمان : ١٥
এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহ অবস্থান করবে। ৪৫ নবী সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালামকে প্রশড়ব করা হল―
من أحق الناس بحسن صحابتي? قال أمّك قال ثم من? قال أمّك, قال ثم من? قال
( أمّك, قال ثم من? قال أبوك. (رواه البخاري : ٥٥١٤
আমার উত্তম ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি কে ? তিনি বললেন,
তোমার মা। অত:পর কে ? তিনি বললেন, তোমার মা। তারপর কে ? তিনি
৪৩ আল-ইসরা : ২৩
৪৪ বুখারী: ৫৫১৩
৪৫ লুকমান : ১৫
বললেন: তোমার মা, তিনি আবারো জিজ্ঞেস করলেন : তারপর কে? রাসূলুলাহ
বললেন: তোমার পিতা।৪৬
নবী সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম মাতা-পিতার অবাধ্য হতে বারণ
করেছেন এবং বলেছেন এটি কবিরা গোনাহ। নবী সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম
বলেন:―
ألا أنبئكم بأكبر الكبائر? قلنا بلى يا رسول الله, قال الإشراك بالله, وعقوق
الوالدين وكان متكئاً فجلس فقال: ألا وقول الزور، وشهادة الزور… (رواه
( البخاري : ٥٥١٩
আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে সংবাদ দেব না ?
আমরা বললাম, হে আলাহর রাসূল ! বলুন। তিনি বললেন, আলাহর সাথে শরিক
করা এবং মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া। রাসূল এতক্ষণ হেলান দিয়ে বসা ছিলেন।
অতঃপর সোজা হয়ে বসে বললেন, সাবধান ! আর মিথ্যা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য
দেয়া…।৪৭
পিতা-মাতার অবাধ্যতা যেমন তাদের উপর রাগ করা, তাদের আনুগত্য না
করা, তাদের কথায় মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, তাদেরকে ধমক দেওয়া, তাদের
প্রয়োজন প্রকাশ করলে এবং কোন কথা বললে উফ বলে বিরক্তি প্রকাশ করা।
২. তাদের আনুগত্য করা :
তাদের আদেশ-নিষেধ মানা। কিন্তু তা নিুোক্ত শর্তসাপেক্ষে :
ক) আলাহর অবাধ্য হওয়ার নির্দেশ না দেয়া।
খ) আদেশ মান্য করার উপর সন্তানের সামর্থ্য এবং শক্তি থাকা।
৩. তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বলা :
কোন অবস্থায় চিৎকার-চেচামেচি করা যাবে না। যখন তারা কথা বলবে অথবা
কিছু চাইবে তখন উঁহু বলা যাবে না। পিতা-মাতা বার্ধক্যে উপনীত হলে এই
অধিকারটির প্রতি বিশেষ যতড়ববান হতে হয়। আলাহ বলেন—
﴿إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهمَُا أَوْ كِلَاهمَُا فَلَا تَقُلْ لهَُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهمَُا وَقُلْ
( لهَُمَا قَوْلًا كَرِيمًا ﴾ (سورة الإسراء : ٢٣
৪৬ বুখারী: ৫৫১৪
৪৭ বুখারী: ৫৫১৯
তাদের মধ্য কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত
হয়, তবে তাদেরকে উফ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিওনা বরং
তাদেরকে শিষ্টচার পূর্ণ কথা বল ।৪৮
৪. পিতা-মাতার সাথে নম্র ব্যবহার এবং তাদের সামনে সংযত আচরণ :
কোন বিশেষ জ্ঞান, সম্পদ অথবা কোন পদ লাভ করার কারণে নিজেকে
তাদের থেকে উঁচু মনে না করা। বরং সর্বদা মনে করবে আমি সেই ছোট সন্তান
যাকে তারা কোলে তুলে নিত এবং যার ময়লা পরিষ্কার করত এবং যাকে
খাওয়াত যখন সে নিজে খেতে পারত না। সে কি করে তাদের উপর বড়ত্বের
দাবি করতে পারে? আলাহ তাআলা এরশাদ করেন—
( ﴿وَاخْفِضْ لهَُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحمَْةِ ﴾ (سورة الإسراء : ٢٤
তাদের সামনে ভালোবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও।৪৯
৫. পিতা-মাতার জন্য দোয়া করা :
সন্তানের কর্তব্য হল তাঁদের জন্য জীবিত অবস্থায় এবং মৃত্যুর পর দোয়া
করা। আলাহ বলেন―
( وَقُلْ رَبِّ ارْحمَْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا. (سورة الإسراء : ٢٤
এবং বল : হে পালনকর্তা! তাঁদের উভয়ের প্রতি রহম কর যেমন তারা
আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।৫০ আর নবী সালালাহু আলাইহি
ওয়াসালাম বলেন―
إذا مات الإنسان انقطع عنه عمله إلا من ثلاثة: إلا من صدقة جارية, أو علم ينتفع
( به, أو ولد صالح يدعو له. (رواه مسلم : ٣٠٨٤
মানুষ যখন মারা যায় তিনটি আমল ছাড়া সমস্ত আমলের পথ বন্ধ হয়ে যায়।
চলমান দান, অথবা উপকারী ইলম, অথবা সৎ সন্তান―যে তার জন্য দোয়া
করতে থাকে।৫১
৬. পিতা-মাতাকে অভিশপ্তকরনের কারণ না হওয়া :
কাউকে অভিশাপ দেয়া এমনিতেই হারাম ও অবৈধ আর এ অবৈধতার মাত্রা
আরো বেড়ে যায় যদিএ অভিশাপ প্রদান , পিতা- মাতাকে অভিশপ্ত করণের
কারণ হয়। নবী করিম সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন―
إن من أكبر الكبائر أن يلعن الرجل والديه, قيل يا رسول الله كيف يلعن الرجل
والديه? قال يسب أبا الرجل فيسب أباه و يسب أمه فيسب أمه. (رواه البخاري :
(٥٥١٦
৪৮ আল-ইসরা : ২৩
৪৯ আল-ইসরা : ২৪
৫০ আল-ইসরা : ২৪
৫১ মুসলিম : ৩০৮৪
সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হল কোন ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অভিশাপ
দেওয়া। বলা হল, হে আলাহর রাসূল ! কোন ব্যক্তি কীভাবে নিজ পিতা-মাতাকে
অভিশাপ দেয় ? রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন, কারো পিতাকে
গালি দিল , আর সে তার পিতাকে গালি দিল । কারো মাতাকে গালি দিল আর
সে তার মাকে গালি দিল।৫২
এ যদি হয় অবস্থা তাহলে সে ব্যক্তির অবস্থা কত মারাত্মক, যে সরাসরি নিজ
পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেয়। আলাহ তাআলা আমাদেরকে হেফাজত করুন।
৭. পিতা-মাতার আত্মীয়-স্বজন এবং সাথিদের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখা,
আর তাদেরকে সম্মান করা। পিতা-মাতার জীবদ্দশায় এবং তাদের মৃত্যুর পর:
নবী সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন―
( إن من أبر البر صلة الولد أهل ود أبيه. (رواه مسلم : ٤٦٣١
সবচেয়ে বড় সৎকর্ম হল সন্তান তার পিতার বন্ধুর সাথে সুসম্পর্ক বজায়
রাখে।৫৩
৮. তাদেরকে দাওয়াত দেওয়া এবং প্রয়োজনে শিক্ষা দেওয়া :
মানুষের মাঝে পিতা-মাতা সবচেয়ে বেশি অধিকার রাখে উপদেশ এবং
সাহায্য পাওয়ার। তাদের কোন অন্যায় যে দেখবে, সে নম্রতা ও আদবের সাথে
তাদেরকে সাবধান করবে। কেননা এর দ্বারা তারা শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে।
ইমাম আহমদ রহ. বলেন, যখন কোন সন্তান তার পিতাকে অপছন্দনীয়
কোন কাজে দেখবে, তাকে কঠোরতা এবং খারাপ ব্যবহার ছাড়া বোঝাবে এবং
কঠিন ভাষায় কথা বলবে না। নতুবা তিনি সন্তানের কথা শুনবেন না। তার সাথে
অপরিচিত ব্যক্তির ন্যায় আচরণ করা চলবে না।
তারপরও পিতা সন্তানের উপদেশ কখনও কখনও গ্রহণ না-ও করতে পারেন,
সে জন্যে উত্তম হল, পরোক্ষভাবে অন্যের মাধ্যমে উপদেশ দেওয়া। যেমন,
মসজিদের ইমামকে ঐ নির্দিষ্ট বিষয়ে কথা বলতে অনুরোধ করবে , যার প্রয়োজন
তার পিতার রয়েছে। অথবা পিতাকে এমন কিতাবের সন্ধান দেবে, যার মাঝে
তার ভুল শুধরে দেবার উপাদান রয়েছে। অথবা বইটি তার সামনে মেলে ধরবে,
কিন্তু তাকে সতর্ক করার কথা বুঝতে দেবে না। তাহলে তিনি হয়তো তা পড়া
এবং গ্রহণ করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। এছাড়া অন্য যে কোন মাধ্যম
অবলম্বন করতে পারে, যার দ্বারা তার উপকার হয়। কোন অবস্থায় সরাসরি তাকে
উদ্দেশ্য করবে না। কেননা এর দ্বারা হতে পারে তিনি দূরে সরে যাবেন।
৫২ বুখারী: ৫৫১৬
১ মুসলিম : ৪৬৩১
৯. তাদের সংগ ও সাহচর্য লাভ করা :
এটা সন্তান এবং পিতা-মাতার মাঝে সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির জন্যে কাম্য।
এর অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে। তার কিছু নিমেড়ব উলেখ করা হল।
ক) সর্বদা তাদের সাথে পরামর্শ করা এবং তাদের মতামত গ্রহণ করা।
খ) তাদেরকে উপহার দেওয়া। রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন,
( تهادوا تحابوا. (رواه مالك في المؤطأ : ١٤١٣
তোমরা পরস্পর উপহার বিনিময় কর, তাতে ভালোবাসা সুদৃঢ় হবে।৫৪
গ) ভ্রমণে তাদের সঙ্গ দেবে―ইত্যাদি। আর এটা আলাহ তাআলার এই
নির্দেশের মাঝে শামিল―
( وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا. (سورة لقمان : ١٥
এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহ অবস্থান করবে।৫৫
১০. কতিপয় জরুরি আদব :
সন্তানের উচিত পিতা-মাতার কাউকে নাম ধরে না ডাকা। তাঁদের বসার পূর্বে
না বসা, তাদের সামনে দিয়ে না হাঁটা। তবে যদি তারা সামনে বাড়িয়ে দেয়
তাদের কোন কষ্ট দূর করার জন্য, তাহলে কোন ক্ষতি নেই।
তাদের সেবা করবে, তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে, তাদের সাথে নম্রভাবে
কথা বলবে। তারা কথা বলার সময় কথা বলবে না, তাদের ভুল ধরবে না অথবা
বলবে না আপনি জানেন না। প্রত্যেক শরিয়তসম্মত এবং বৈধ বিষয়ে সর্বদা
পিতা-মাতাকে খুশী রাখার চেষ্টা করা উচিত। তারা সন্তানদেরকে নামাজি এবং
সৎ হিসাবে ভালোবাসবে এবং সৎ লোকদের সঙ্গী হিসাবে ভালোবাসবে এবং সন্ত
ানের শিক্ষা এবং উপরে উঠার মনোভাবকে ভালোবাসবে। বরং সন্তানকে নিয়ে
গর্ববোধ করবে। অতএব, উলেখিত গুণাবলি অর্জন করা পিতা-মাতার অনুগত
হওয়ার শামিল।
মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়ার পরিণতি
অবাধ্য সন্তানের দুনিয়া আখেরাত দুটিই ধ্বংস হয়ে যায়।
১. মাতা-পিতার অবাধ্যতা দোজখে প্রবেশের কারণ।
২. এতে দুনিয়া এবং আখেরাতের জীবন সংকটাপনড়ব হয়ে যায়।
৩. নিজ সন্তানও অনুরূপ অবাধ্য হয়।
৪. সমস্ত কাজে ও নিজ বয়সের বরকত নষ্ট হয়ে যায়।
৫৪ মুয়াত্তা মালেক : ১৪১৩
৫৫ লুকমান : ১৫
আত্মীয়তার সম্পর্ক
আল্লাহ্ তাআলা আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এরশাদ
হচ্ছে :―
( وَالَّذِينَ يَصِلُونَ مَا أَمَرَ اللهَُّ بِهِ أَنْ يُوصَلَ. (سورة الرعد : ٢١
এবং যারা বজায় রাখে ঐ সম্পর্ক, যা বজায় রাখতে আল্লাহ্ আদেশ
দিয়েছেন।ীীরী তিনি নিকট আত্মীয়দের অধিকার আদায়ে উৎসাহিত করেছেন।
আল্লাহ্ বলেন :
( وَآَتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ. (سورة الإسراء : ٢٦
আত্মীয়-স্বজনকে তার হক দান কর। আল্লাহ্ তাআলা হাদিসে কুদসীতে
‘সম্পর্ক’-কে লক্ষ্য করে বলেন :―
( من وصلك وصلته, ومن قطعك قطعته. (رواه البخاري : ٥٥٢٩
যে ব্যক্তি তোমাকে ঠিক রাখবে, আমি তাকে মিলিয়ে রাখব আর যে
তোমাকে ছিনড়ব করবে, আমি তাকে ছিনড়ব করব।আর সম্পর্ক ছিনড়ব করা থেকে খুব
সর্তক করেছেন এবং একে পৃথিবীতে বিঃশৃংখলা সৃষ্টি বলে সাব্যস্ত করেছেন ।
আল্লাহ্ বলেন:
( فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ (محمد: ٢٢
ক্ষমতা লাভ করলে সম্ভবত : তোমরা পৃথিবীতে বি:শৃংখলা সৃষ্টি করবে এবং
আত্মীয়তার বন্ধন ছিনড়ব করবে । (সূরা মুহাম্মাদ: ২২)
নবী করিম সাল−াল−াহু আলাইহি ওয়াসাল−াম বলেন :―
( لا يدخل الجنة قاطع. (رواه البخاري : ٥٥٢٥
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিনড়বকারী জানড়বাতে প্রবেশ করবে না।
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার ফজিলত :
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার অনেক ফজিলত রয়েছে। তন্মধ্যে কিছু
উলে−খ করা হল।
১. সম্পর্ক বজায় রাখা রিজিক বৃদ্ধি এবং দীর্ঘজীবী হবার কারণ এবং
উভয়ের মাঝে বরকতের কারণ। আনাস রা. রসূল(সঃ)
থেকে বর্ণনা করে বলেন—
من أحب أن يبسط له فى رزقه وينسأ له فى أثره فليصل رحمه. (رواه البخاري :
(٥٥٢٧
যে ব্যক্তি তার রিজিক প্রশস্ত হওয়া এবং মৃত্যুর সময় পিছিয়ে দেয়া কামনা
করে, তার উচিত আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা । (বোখারি: ৫৫২৭)
২. এ কাজ জানড়বাতে প্রবেশের কারণ হবে। আবু আইয়ুব আনসারী রা.
থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রসূল(সঃ) কে বলল, হে
আল্লাহ্র রাসূল ! আমাকে এমন আমল বলে দিন যা আমাকে জানড়বাতে প্রবেশ
করাবে। তখন রাসূল বললেন―
تعبد الله ولا تشرك به شيئاً وتقيم الصلوة وتؤتي الزكاة وتصل الرحم. (رواه
( البخاري : ١٣٠٩
আল্লাহ্র এবাদত কর, তার সাথে কোন কিছু শরিক করো না। নামাজ ভাল
করে আদায় কর এবং জাকাত দাও। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণড়ব রাখ।
৩. দুনিয়া এবং আখেরাতে সৌভাগ্য এবং তাওফীক পাওয়ার কারণ হল
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।
সম্পর্কের স্তর :
এ সম্পর্ক বজায় রাখার কিছু স্তর রয়েছে। সর্বোচ্চ স্তর হল : জান-মাল দ্বারা
সাহায্য করা। এবং কল্যাণ কামনা করা। আর সর্বনিু স্তর হল, সালাম দেয়া।
এই দুইটির মাঝখানে আরো অনেক স্তর রয়েছে। রসূল(সঃ) এরশাদ করেন—
بلوا أرحامكم ولو بالسلام.
সালাম-এর মাধ্যমে হলেও তোমরা তোমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ।
আর অপর দিকে এর উঁচু স্তর হল, যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিনড়ব করবে,
তুমি তার সাথে সম্পর্ক জুড়বে। রসূল(সঃ)
বলেন―
ليس الواصل بالمكافئ ولكن الواصل الذي إذا قطعت رحمه وصلها. (رواه
( البخاري : ٥٥٣٢
সমান সমান আচরণ দ্বারা সম্পর্ক স্থাপনকারী হওয়া যায় না। কিন্তু, তার
সাথে সম্পর্ক ছিনড়ব করা হলে, তখনও যদি সে সম্পর্ক ঠিক রাখে, তাহলেই তাকে
প্রকৃত সম্পর্ক স্থাপনকারী বলা যাবে। অর্থাৎ, আত্মীয়তার সম্পর্ক পূর্ণ বজায় রাখা
তখনই হবে, যখন কোন সম্পর্ক ছিনড়ব করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক জুড়ে
রাখা হবে।
সম্পর্কের সীমারেখা বা সংজ্ঞা :
আত্মীয়তার সম্পর্কের কোন নির্দিষ্ট সীমানা বা সংজ্ঞা নেই। প্রচলিত রীতি
অনুযায়ী তা নির্ধারিত হয়। প্রচলিত রীতি যেটাকে সম্পর্ক বজায় রাখা মনে করে
সেটা ধর্তব্য। আর যেটাকে সম্পর্ক ছিনড়ব করা মনে করে সেটা বর্জনীয়।
আত্মীয়তার পার্থক্য ও মর্যাদা অনুযায়ী সম্পর্কের মাঝে পার্থক্য হয়ে থাকে,
পিতার সম্পর্ক আর দূর সম্পর্কের চাচাত ভাইয়ের সম্পর্ক এক হয় না।
অবস্থা অনুযায়ী এ সম্পর্কের পার্থক্য ঘটে। রুগি এবং মুখাপেক্ষীর সম্পর্ক
ধনী এবং সুস্থের সমান হয় না। বড়-ছোটর সম্পর্কও এক হয় না। অনুরূপভাবে
স্থান অনুযায়ী সম্পর্কের মাঝে পার্থক্য ঘটে। যে দেশের মাঝে আছে আর যে
দেশের বাইরে আছে, তাদের সম্পর্ক এক রকম হয় না।
সম্পর্কের নিদর্শন হল পরস্পর সাক্ষাৎ এবং অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ খবর
নেয়া, সালাম দেয়া, ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা, পত্র লেখা ইত্যাদি।
স্বামী-স্ত্রীর অধিকার
বিবাহ স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একটি সুদৃঢ় বন্ধন। আল্লাহ্ তাআলা এর চির স্থায়িত্ব
পছন্দ করেন, বিচ্ছেদ অপছন্দ করেন। এরশাদ হচ্ছে―
وَكَيْفَ تَأْخُذُونَهُ وَقَدْ أَفْضَى بَعْضُكُمْ إِلَى بَعْضٍ وَأَخَذْنَ مِنْكُمْ مِيثَاقًا غَلِيظًا. ﴿النساء
﴾٢٠:
‘তোমরা কীভাবে তা (মোহরানা) ফেরত নিবে ? অথচ তোমরা পরস্পর
শয়ন সঙ্গী হয়েছ। সাথে সাথে তারা তোমাদের থেকে চির বন্ধনের সুদৃঢ়
অঙ্গিকারও নিয়েছে।’৫৬
এ চুক্তিপত্র ও মোহরানার কারণে ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে কতক
দায়দায়িত্ব ও অধিকার নিশ্চিত করেছে। যা বাস্তবায়নের ফলে দাম্পত্য জীবন
সুখী ও স্থায়ী হবে—সন্দেহ নেই। সে সব অধিকারের প্রায় সবগুলোই সংক্ষেপ
আকারে বর্ণিত হয়েছে কোরআনের নিুোক্ত আয়াতে—
وَلهَُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالمَْعْرُوفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ وَاللهَُّ عَزِيزٌ حَكِيمٌ. ﴿البقرة
﴾٢٢٧ :
‘যেমন নারীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমন তাদের জন্যও অধিকার
রয়েছে ন্যায্য-যুক্তিসংগত ও নীতি অনুসারে। তবে নারীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব
পুরুষদের। আল্লাহ্ পরাμমশালী, প্রজ্ঞাময়।’৫৭
আল্লাহ্ তাআলা এই আয়াতে বর্ণনা করেছেন যে, প্রত্যেকের উপর প্রত্যেকের
অধিকার রয়েছে। যদিও আনুগত্য এবং রক্ষনা-বেক্ষন ও অভিভাবকত্বের
বিবেচনায় শ্রেষ্ঠত্ব পুরুষদের।
এখানে আমরা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে বিরাজমান কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধিকার
স্তর ও মানের ভিত্তিতে উলে−খ করছি।
প্রমত: যে সব অধিকারের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সমান। দাম্পত্য জীবনে
পারস্পরিক সততা, বিশ্বস্ততা ও সদ্ভাব প্রদর্শন করা। যাদের মাঝে নিবিড় বন্ধুত্ব,
অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক, অধিক মেলামেশা, সবচেয়ে বেশি আদান-প্রদান তারাই স্বামী
এবং স্ত্রী। এ সম্পর্কের চিরস্থায়ী রূপ দিতে হলে ভাল চরিত্র, পরস্পর সম্মান,
নম্র-ভাব, হাসি-কৌতুক এবং অহরহ ঘটে যাওয়া ভুলচুক ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে
দেখা অবশ্যম্ভাবী। এবং এমন সব কাজ, কথা ও ব্যবহার পরিত্যাগ করা, যা
উভয়ের সম্পর্কে চির ধরে কিংবা মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। আল্লাহ্ বলেন—
৫৬ নিসা : ২০
৫৭ বাকারা : ২২৭
﴾ وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ سورة النساء. ﴿النساء : ١٨
‘তাদের সাথে তোমরা সদ্ভাবে আচরণ কর।’৫৮ রসূল(সঃ)
বলেন—
( خيركم خيركم لأهله وأنا خيركم لأهلي. ابن ماجه ( ١٩٦٧
‘তোমাদের মাঝে যে নিজের পরিবারের কাছে ভাল, সেই সর্বোত্তম। আমি
আমার পরিবারের কাছে ভাল।’৫৯ পরস্পর সদ্ভাবে জীবন যাপন একটি ব্যাপক
শব্দ। এর মাঝে সমস্ত অধিকার বিদ্যমান।
দ্বিতীয়ত: পরস্পর একে অপরকে উপভোগ করা। এর জন্য আনুষঙ্গিক
যাবতীয় প্রস্তুতি ও সকল উপকরণ গ্রহণ করা। যেমন সাজগোজ, সুগন্ধি ব্যবহার
এবং পরিষ্কার পরিচ্ছনড়বতাসহ দুর্গন্ধ ও ময়লা কাপড় পরিহার ইত্যাদি। স্বামীÑস্ত্রী
প্রত্যেকের এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা। অধিকন্তু এগুলো সদ্ভাবে জীবন
যাপনেরও অংশ। ইবনে আব্বাস রা. বলেন—
إني لأحب أن أتزين للمرأة كما أحب أن تتزين لي.
‘আমি যেমন আমার জন্য স্ত্রীর সাজগোজ কামনা করি, অনুরূপ তার জন্য
আমার নিজের সাজগোজও পছন্দ করি।’ তবে পরস্পর এ অধিকার নিশ্চিত
করার জন্য উভয়কেই হারাম সম্পর্ক ও নিষিদ্ধ বস্তু হতে বিরত থাকতে হবে।
তৃতীয়ত : বৈবাহিক সম্পর্কের গোপনীয়তা রক্ষা করা। সাংসারিক সমস্যা
নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা না করাই শ্রেয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে উপভোগ্য
বিষয়গুলো গোপন করা। রসুল(সঃ) বলেন—
إنّ من أشرّ الناس عند الله منزلة يوم القيامة: الرجل يفضي إلى امرأته و تفضي إليه ثم
( ينشر سرها. مسلم ( ٢٥٩٧
কিয়ামতের দিন আল্লাহ্র দরবারে সর্ব-নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে নিজের স্ত্রীর
সাথে মিলিত হয় এবং যার সাথে তার স্ত্রী মিলিত হয়, অতঃপর সে এর
গোপনীয়তা প্রকাশ করে বেড়ায়।৬০
চর্তুত : পরস্পর শুভ কামনা করা, সত্য ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়া। আল্লাহ্র
আনুগত্যের ব্যাপারে একে অপরকে সহযোগিতা করা। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একে
অপর থেকে উপদেশ পাওয়ার অধিক হকদার। দাম্পত্য জীবন রক্ষা করা
৫৮ নিসা : ১৮
৫৯ ইবনে মাজাহ : ১৯৬৭
৬০ মুসলিম : ২৫৯৭
উভয়েরই কর্তব্য।আর এর অন্তরভূক্ত হচ্ছে, পরস্পর নিজ আত্মীয়দের সাথে
সদ্ভাব বজায় রাখার ক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতা করা ।
সন্তানদের লালন-পালন ও সুশিক্ষার ব্যাপারে উভয়েই সমান, একে অপরের
সহযোগী। আল্লাহ্ তাআলা বলেন –
﴾ وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى. ﴿المائدة : ٢
‘তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ব্যপারে পরস্পরকে সহযোগিতা কর।’৬১
দ্বিতীয়ত : স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য। সুখকর দাম্পত্য জীবন, সুশৃঙ্খল
পরিবার, পরার্থপরতায় ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম
জীবন সঙ্গিনী স্ত্রীর উপর কতিপয় অধিকার আরোপ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি
এখানে প্রদত্ত হল।
১. স্বামীর আনুগত্য : স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর কর্তব্য। তবে যে কোন
আনুগত্যই নয়, বরং যেসব ক্ষেত্রে আনুগত্যের নিমড়ব বর্ণিত তিন শর্ত বিদ্যমান
থাকবে।
(ক) ভাল ও সৎ কাজ এবং আল্লাহ্র বিধান বিরোধী নয় এমন সকল বিষয়ে
স্বামীর আনুগত্য করা। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্র অবাধ্যতায় কোন সৃষ্টির আনুগত্য বৈধ
নয়।
(খ) স্ত্রীর সাধ্য ও সামর্থ্যরে উপযোগী বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা। কারণ
আল্লাহ্ তাআলা মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্বারোপ করেন না।
(গ) যে নির্দেশ কিংবা চাহিদা পূরণে কোন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, সে
ব্যাপারে স্বামীর আনুগত্য করা। আনুগত্য আবশ্যক করে পবিত্র কোরআনে
আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
﴾ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ. ﴿ البقرة : ٢٢٧
‘নারীদের উপর পুরুষগণ শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকারী।’৬২ আল্লাহ্ তাআলা
আরো বলেন—
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ
﴾ أَمْوَالِهِمْ. ﴿النساء : ٣٤
‘পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বকারী। কারণ আল্লাহ্ তাআলা-ই তাদের
মাঝে তারতম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের বিধান রেখেছেন। দ্বিতীয়ত পুরুষরাই ব্যয়-ভার গ্রহণ
৬১ মায়েদা : ২
৬২ বাকারা : ২২৭
করে।’৬৩ উপরন্তু এ আনুগত্যের দ্বারা বৈবাহিক জীবন স্থায়িত্ব পায়, পরিবার চলে
সঠিক পথে। নবী করিম সাল−াল−াহু আলাইহি ওয়া সাল−াম স্বামীর আনুগত্যকে
এবাদতের স্বীকৃতি প্রদান করে বলেন—
إذا صلت المرأة خمسها, وصامت شهرها, وحصنت فرجها, وأطاعت بعلها,
( دخلت من أى من أبواب الجنة شاءت. مسند أحمد ( ١٥٧٣
যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজান মাসের রোজা রাখে এবং নিজের
লজ্জাস্থান হেফাজত করে ও স্বীয় স্বামীর আনুগত্য করে, সে, নিজের ইচ্ছানুযায়ী
জানড়বাতের যে কোন দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবে।৬৪
স্বামীর কর্তব্য, এ সকল অধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে আল্লাহ্র বিধানের
অনুসরণ করা। স্ত্রীর মননশীলতা ও পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে সত্য-কল্যাণ ও
উত্তম চরিত্রের উপদেশ প্রদান করা কিংবা হিতাহিত বিবেচনায় বারণ
করা।উপদেশ প্রদান ও বারণ করার ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ ও উনড়বত মননশীলতার
পরিচয় দেয়া । এতে সানন্দ চিত্তে ও স্বাগ্রহে স্ত্রীর আনগত্য পেয়ে যাবে।
২. স্বামী-আলয়ে অবস্থান:
নেহায়েত প্রয়োজন ব্যতীত ও অনুমতি ছাড়া স্বামীর বাড়ি থেকে বের হওয়া
অনুচিত।মহান আল্লাহ্ তাআলা পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নারীদের ঘরে অবস্থানের
নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তাঁর রসূল(সঃ) আলাইহি ওয়া সাল−াম-এর স্ত্রীদের
সম্বোধন করে বলেন—সকল নারীই এর অন্তর্ভুক্ত—
﴾ وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى. ﴿الأحزاب : ٣٣
‘তোমরা স্ব স্ব গৃহে অবস্থান কর, প্রাচীন যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শনের মত
নিজেদের কে প্রদর্শন করে বেড়িও না। ’৬৫
স্ত্রীর উপকার নিহিত এবং যেখানে তারও কোন ক্ষতি নেই, এ ধরনের কাজে
স্বামীর বাধা সৃষ্টি না করা। যেমন পর্দার সাথে, সুগন্ধি ও সৌন্দর্য প্রদর্শন পরিহার
করে বাইরে কোথাও যেতে চাইলে বারণ না করা। ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেন,
রসূল(সঃ) আলাইহি ওয়া সাল−াম বলেছেন—
( لاتمنعوا إماء الله مساجد الله. البخاري ( ٨٤٩
আল্লাহ্র বান্দিদেরকে তোমরা আল্লাহ্র ঘরে যেতে বাধা দিয়ো না।৬৬
৬৩ নিসা : ৩৪
৬৪ আহমাদ : ১৫৭৩
৬৫ আহজাব : ৩৩
৬৬ বুখারী: ৮৪৯
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা: এর স্ত্রী যয়নব সাকাফী রা. বলেন, রাসূল(সঃ)
আমাদেরকে বলতেন—
( إذا شهدت إحداكن المسجد فلا تمس طيبا. مسلم ( ٦٧٤
তোমাদের কেউ মসজিদে যাওয়ার ইচ্ছে করলে সুগন্ধি ব্যবহার করবে না।৬৭
২. নিজের ঘর এবং সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখা। স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ
করা। স্বামীর সাধ্যের অতীত এমন কোন আবদার কিংবা প্রয়োজন পেশ না করা।
রসূল(সঃ)বলেন—
( والمرأة راعية فى بيت زوجها ومسؤولة عن رعيتها. البخاري ( ٢٥٤٦
‘স্ত্রী স্বীয় স্বামীর ঘরের জিম্মাদার। এ জিম্মাদারির ব্যাপারে তাকে
জবাবদেহিতার সম্মুখীন করা হবে।’৬৮
৩. নিজের সতীত্ব ও সম্মান রক্ষা করা। পূর্বের কোন এক আলোচনায়
আমরা রসূল(সঃ) আলাইহি ওয়া সাল−াম-এর একটি হাদিস এ মর্মে উলে−খ
করেছি যে, নিজেকে কখনো পরীক্ষা কিংবা ফেতনার সম্মুখীন না করা।
৪. স্বামীর অপছন্দনীয় এমন কাউকে তার ঘরে প্রবেশের অনুমতি না দেয়া।
হোক না সে নিকট আত্মীয় কিংবা আপনজন। যেমন ভাই-বেরাদার। রাসূল(সঃ)
বলেছেন―
( …ولكم عليهن أن لا يؤطئن فرشكم أحداً تكرهونه. مسلم ( ٢١٣٧
‘তোমাদের অপছন্দনীয় কাউকে বিছানায় জায়গা না দেয়া স্ত্রীদের কর্তব্য।’৬৯
স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত নফল রোজা না রাখা। কারণ,
রোজা নফল—আনুগত্য ফরজ। রসূল(সঃ) বলেন—
لا يحل للمرأة أن تصوم و زوجها شاهد إلا بأذنه, ولا تأذن فى بيته إلا باذنه.
( البخاري ( ٤٧٩٦
নারীর জন্য স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমতি ছাড়া রোজা রাখা বৈধ নয়। অনুরূপ
ভাবে অনুমতি ব্যতীত তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়াও বৈধ নয়।৭০
তৃতীয়ত : স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য, সুখকর দাম্পত্য জীবন, সুশৃঙ্খল পরিবার,
পরার্থপরতায় ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম জীবন
৬৭ মুসলিম : ৬৭৪
৬৮ বুখারী: ২৫৪৬
৬৯ মুসলিম : ২১৩৭
৭০ বুখারী : ৪৭৬৯
সঙ্গী স্বামীর উপর কতিপয় অধিকার আরোপ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এখানে
প্রদত্ত হল।
১. দেন মোহর
নারীর দেন মোহর পরিশোধ করা ফরজ। এ হক তার নিজের, পিতা-মাতা
কিংবা অন্য কারো নয়। আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
﴾ وَآَتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً. ﴿النساء : ٤
‘তোমরা প্রফুল− চিত্তে স্ত্রীদের মোহরানা দিয়ে দাও।’৭১
২. ভরন পোষণ:
সামর্থ্য ও প্রচলিত প্রা অনুযায়ী স্ত্রীর ভরন-পোষণ করা স্বামীর কর্তব্য। স্বামীর
সাধ্য ও স্ত্রীর মর্তবার ভিত্তিতে এ ভরন-পোষণ কম বেশি হতে পারে।অনুরূপ
ভাবে সময় ও স্থান ভেদে এর মাঝে তারতম্য হতে পারে।আল্লাহ্ তাআলা
বলেন—
لِيُنْفِقْ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنْفِقْ مِمَّا آَتَاهُ اللَّهُ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ
﴾ نَفْسًا إِلَّا مَا آَتَاهَا. ﴿الطلاق : ٧
বিত্তশালী স্বীয় বিত্তানুযায়ী ব্যয় করবে। আর যে সীমিত সম্পদের মালিক সে
আল্লাহ্ প্রদত্ত সীমিত সম্পদ হতেই ব্যয় করবে। আল্লাহ্ যাকে যে পরিমাণ
দিয়েছেন, তারচেয়ে’ বেশি ব্যয় করার আদেশ কাউকে প্রদান করেন না।৭২
৩. স্ত্রীর প্রতি øেহশীল ও দয়া-পরবশ থাকা। স্ত্রীর প্রতি রূঢ় আচরণ না
করা। তার সহনীয় ভুলচুকে ধৈর্যধারণ করা। স্বামী হিসেবে সকলের জানা উচিত,
নারীরা মর্যাদার সম্ভাব্য সবকটি আসনে অধিষ্ঠিত হলেও, পরিপূর্ণ রূপে সংশোধিত
হওয়া সম্ভব নয়। রসূল(সঃ) বলেন :
((… واستوصوا بالنساء خيرا , فإنهن خلقن من ضلع , وإن أعوج شيء في الضلع
أعلاه , فإن ذهبت تقيمه كسرته , وإن تركته لم يزل أعوج , فاستوصوا بالنساء خيرا
.((
তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী। কারণ, তারা পাঁজরের হাড় দ্বারা
সৃষ্ট। পাঁজরের উপরের হাড়টি সবচে’ বেশি বাঁকা। (যে হাড় দিয়ে নারীদের সৃষ্টি
করা হয়েছে) তুমি একে সোজা করতে চাইলে, ভেঙে ফেলবে। আবার এ অবস্থায়
৭১ নিসা : ৪
৭২ তালাক : ৭
রেখে দিলে, বাঁকা হয়েই থাকবে। তাই তোমরা তাদের কল্যাণকামী হও, এবং
তাদের ব্যাপারে সৎ-উপদেশ গ্রহণ কর।
৪. স্ত্রীর ব্যাপারে আত্মমর্যাদাশীল হওয়া। হাতে ধরে ধরে তাদেরকে
হেফাজত ও সুপথে পরিচালিত করা। কারণ, তারা সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল, স্বামীর যে
কোন উদাসীনতায় নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এ কারণে রসূল(সঃ) আলাইহি ওয়া সাল−াম নারীর ফেতনা হতে খুব
যতড়ব সহকারে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন—
( ما تركت بعد فتنة أضر على الرجال من النساء. البخاري ( ٤٧٠٦
‘আমার অবর্তমানে পুরুষদের জন্য নারীদের চে’ বেশি ক্ষতিকর কোন
ফেতনা রেখে আসিনি।’৭৩ নারীদের ব্যাপারে আত্মম্ভরিতার প্রতি লক্ষ্য করে রসূল(সঃ)বলেন—
( أتعجبون من غيرة سعد, أنا أغير منه, والله أغير منى. مسلم ( ٢٧٥٥
‘তোমরা সা’আদ এর আবেগ ও আত্মসম্মানবোধ দেখে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ।
আমি তার চে’ বেশি আত্মসম্মানবোধ করি, আবার আল্লাহ্ আমারচে’ বেশি
অহমিকা সম্পনড়ব।’৭৪
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, যার মাঝে আত্মমর্যাদাবোধ
নেই সে দাইয়ূছ (অসতী নারীর স্বামী, যে নিজ স্ত্রীর অপকর্ম সহ্য করে)। হাদিসে
এসেছে—
( لا يدخل الجنة ديوث. الدارمي ( ٣٣٩٧
‘দাইয়ূছ জানড়বাতে প্রবেশ করবে না।’৭৫
মানুষের সবচেয়ে বেশি আত্মমর্যাদার বিষয় নিজের পরিবার। এর ভেতর
অগ্রাধিকার প্রাপ্ত স্বীয় স্ত্রী। অতঃপর অন্যান্য আত্মীয়Ñস্বজন এবং অধীনস্থগণ।
পরিশেষে নির্ঘাত বাস্তবতার কথা স্বীকার করে বলতে হয়, কোন পরিবার
সমস্যাহীন কিংবা মতবিরোধ মুক্ত নয়। এটাই মানুষের প্রকৃতি ও মজ্জাগত
স্বভাব। এর বিপরীতে কেউ স্বীয় পরিবারকে নিষ্কণ্টক অথবা ঝামেলা মুক্ত কিংবা
ফ্রেশ মনে করলে, ভুল করবে। কারণ, এ ধরাতে সর্বোত্তম পরিবার কিংবা সুখী
ফ্যামিলির একমাত্র উদাহরণ আমাদের রসূল(সঃ) -এর
পরিবার ও ফ্যামিলি। সেখানেও আমরা মানবিক দোষ-ত্র“টির চিত্র দেখতে পাই,
অন্য পরিবারের পবিত্রতা কোথায় ?
৭৩ বুখারী:৪৭০৬
৭৪ মুসলিম : ২৭৫৫
৭৫ দারামি : ৩৩৯৭
জ্ঞানী-গুণীজনের স্বভাব ভেবে-চিন্তে কাজ করা, ত্বরা প্রবণতা পরিহার করা,
ক্রোধ ও প্রবৃত্তিকে সংযমশীলতার সাথে মোকাবিলা করা। কারণ, তারা জানে যে
কোন মুহূর্তে ক্রোধ ও শয়তানের প্ররোচনায় আত্মমর্যাদার ছদ্মাবরণে মারাত্মক ও
কঠিন গুনাহ হয়ে যেতে পারে। যার পরিণতি অনুসূচনা বৈকি? আবার এমনও নয়
যে, আল্লাহ্ তাআলা সমস্ত কল্যাণ ও সুপথ বান্দার নখদর্পে করে দিয়েছেন। তবে
অবশ্যই তাকে মেধা, কৌশল ও বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হবে।
ইসলামে নারীর অবস্থান
ইসলামে নারীর মর্যাদা , অবস্থান এবং নারীর অধিকার সম্পর্কে পুরোপুরি
ধারণা নিতে হলে ইসলাম পূর্বযুগে নারীর অবস্থা সম্পর্কে কিছু আলোচনা
জরুরি।
ইসলাম পূর্বযুগে নারী
আমাদের নবী (সঃ)-এর নবুওয়্যত লাভের
পূর্বে ধরা-পৃষ্ঠ ছিল মূর্খতা ও ঘোর অন্ধকারাচ্ছনড়ব। প্রতিটি বিষয় ও স্থানে ছিল
বিশৃঙ্খলার জয়জয়কার। আকীদা-বিশ্বাস, অভ্যাস-আচরণ, চরিত্র-মাধুর্য সকল
ক্ষেত্রেই ছিল অরাজকতা বিরাজমান । তথাকথিত কতিপয় প্র া, ব্যক্তি স্বার্থ বৈ
এমন কোন নীতি-আদর্শ বিদ্যমান ছিল না, যার উপর নির্ভরশীল হতে পারে
একটি সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা মানব গোষ্ঠী।
যার কিছু নগড়ব চিত্র, বাস্তব প্রতিচ্ছবি: নারীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের
ভেতরদিয়ে আমাদের গোচরীভূত হয়। দেখতে পাই নারীরা কেমন বেদনাদায়ক
পরিবেশে দিনাতিপাত করত। কোন অধিকার নেই, দায়িত্ব নেই, সামর্থ্যরে বাইরে
সামান্য প্রাপ্যও নেই। এরই কতিপয় নমুনা আমরা এখানে তুলে ধরছি।
(ক) জন্মের পর থেকেই নারী অপয়া। জন্মের পূর্বে পিতা অধীর আগ্রহে
অপেক্ষা করত, বিভিনড়ব পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত থাকত, পুত্র সন্তানের আগমনে
কীভাবে আনন্দ করবে, কোন ধরনের উৎসবের আয়োজন করবে ইত্যাদি বিষয়ে।
হঠাৎ কন্যা সন্তানের সংবাদ শুনলে মাথা নত হয়ে যেত। মন সংকীর্ণ হয়ে
আসতো। বিবর্ণ হয়ে যেত চেহারা। অন্ধকার মনে হত সূর্যালোকিত এ পৃথিবী।
অপমান আর লজ্জার গ−ানিতে লোকালয় পরিত্যাগ করত।
(খ) কেউ কেউ কন্যাসন্তান জনিত গ্লানী মুছতে জীবিত দাফন করে দিত
তাকে। আবার বাঁচিয়ে রাখলেও অপমান আর লাঞ্ছনার সাথে। স্বয়ং আল্লাহ্
তাআলা যার উলে−খ করছেন পবিত্র কুরআনে। এরশাদ হচ্ছে-
دا وَهُوَ كَظِيمٌ ﴿ ٥٨ ﴾ يَتَوَارَى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِالْأُنْثَى ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَ
﴾ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ أَيُمْسِكُهُ عَلَى هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ أَلَا سَاءَ مَا يحَْكُمُونَ ﴿ ٥٩
তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের শুভসংবাদ প্রদান করা হয়, তখন সাথে
সাথে তার মুখাবয়ব কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে।
প্রাপ্ত অশুভ সংবাদ শুনে স্বজাতি হতে মাথা লুকিয়ে নেয়। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে
যায় স্বীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে—কি করবে একে নিয়ে। অপমানসহ বাঁচিয়ে রাখবে, না
মাটির নীচে পূতে ফেলবে। জেনে নাও, তারা নেহায়েত নির্মম, নিষ্ঠুর ও অসুন্দর
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।৭৬ আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন-
﴾ وَإِذَا المَْوْءُودَةُ سُئِلَتْ ﴿ ٨
‘স্মরণ কর, যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কি অপরাধে
তাকে হত্যা করা হল?’৭৭
(গ) নারীর অর্থনৈতিক অধিকার ? সেও ছিল তথৈবচ। উত্তরাধিকার বলতে
কোন জিনিসই ছিল না তাদের ক্ষেত্রে।ব্যাপারটি এপর্যন্ত সীমিত থাকলে কথা ছিল
কিন্তু বাস্তব অবস্থা ছিল আরো অমানবিক আরো করুন ,স্বামীর মৃত্যুর পর তাকেই
বরং উত্তরাধিকার ও ভোগ্যপণ্য গণ্য করা হত ।
(ঘ) নারী যখন জায়া তখন সে কি তার দাম্পত্য অধিকার নিয়ে ভাবার প্রয়াস
পেত? এ চিন্তা ছিল কল্পনারও অতীত কারণ স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী ছিল
উত্তরাধিকার, স্বামীর অন্য পক্ষের সন্তান অথবা কোন নিকট আত্মীয় তাকে
উত্তরাধিকার হিসেবে নিয়ে নিত , যার ইচ্ছা বিয়ে করত আবার কেউ এমনিই
আবদ্ধ করে রেখে দিত। অন্যত্র বিবাহের কোন কল্পনা করাও ছিল নিষিদ্ধ। বরং
বাধার সৃষ্টি করত অন্যত্র বিবাহ করতে। শান্তির ধর্ম ইসলাম এসে তাদের এ
অবস্থা হতে মুক্ত করে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا يحَِلُّ لَكُمْ أَنْ تَرِثُوا النِّسَاءَ كَرْهًا وَلَا تَعْضُلُوهُنَّ لِتَذْهَبُوا
بِبَعْضِ مَا آَتَيْتُمُوهُنّ.
হে ঈমানদারগণ! জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকার হিসেবে গ্রহণ করা
তোমাদের জন্য বৈধ নয়। তোমাদের প্রদত্ত কিয়দংশ সম্পদ নিয়ে যাবে বলে,
তাদের আবদ্ধ করে রেখো না।৭৮ আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন-
وَلَا تَنْكِحُوا مَا نَكَحَ آَبَاؤُكُمْ مِنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَمَقْتًا وَسَاءَ
﴾ سَبِيلًا. ﴿النساء : ٢٢
যে সকল নারীদের তোমাদের পিতা-পিতামহ বিবাহ করেছে, তোমরা তাদের
বিবাহ করো না। তবে অতীত তো অতীতই। এটা অশ্লীল, শাস্তিযোগ্য ও নিকৃষ্ট
আচরণ।৭৯
৭৬ নাহাল : ৫৯
৭৭ তাকওয়ীর : ৮
৭৮ নিসা : ১৯
৭৯ নিাসাা : ২২
(ঙ) শ্রদ্ধা ও সম্মান এবং এ জাতীয় বিষয় নিয়ে নারীরা চিন্তাও করত
না।তাদের ক্ষেত্রে এগুলো ছিল কল্পনা বিলাস। নারী সে সময়ে! জীবন্ত প্রোথিত
হত শৈশবে, নাহয় -বেচে থাকলে- লাঞ্ছনার জীবন ও পণ্যত্ব বরণ। তার কোন
অধিকারই স্বীকৃত ছিল না।তাহলে ঐ নারী কেমন জীবন যাপন করত?!
ইসলামে নারী
নারীর এ হীনতর অবস্থায় ইসলাম জীবন তরী হয়ে আগমন করল। টেনে
তুলল ক্লান্ত-হাবুডুবুরত নারীকে বিস্তৃত-গহিন সমুদ্র হতে। উপহার দিল সুখকর
স্বাচ্ছন্দ্যময় একটি বর্নীল-কাংখিত জীবন। যেখানে রয়েছে শিশু-কিশোরীদের
স্নেহ-মমতা-আদর আর আদর। সাবালকত্বে রয়েছে পছন্দ-অপছন্দের সব
অধিকার। পূর্ণ বয়স্কাদের জন্য আছে বোনের মর্যাদা কিংবা স্ত্রীর সম্মান। অতঃপর
পরম শ্রদ্ধার্হ একজন মা।
নারীর ন্যায্য-যোগ্য-প্রাপ্য সব অধিকারই প্রদান করল ইসলাম। জন্ম থেকে
মৃত্যু পর্যন্ত সকল অধিকার নিশ্চিতও করল।এমনকি মৃত্যুর পরও। নিচে তার
সামান্য চিত্র প্রদত্ত হল।
(ক) আল্লাহ্ তাআলা মানবজাতি সৃষ্টি করেছেন সাথে সাথে তার আনুগত্য-
এবাদতের দায়িত্বও অর্পণ করেছেন। বিধান রেখেছেন জবাবদিহিতারও। নারীপুরু
ষ সকলেই সমান। শিষ্টের লালন-দুষ্টের দমন, ভালোর প্রতিদান এবং মন্দের
শাস্তির বিধানও রেখেছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন-
لَيْسَ بِأَمَانِيِّكُمْ وَلَا أَمَانِيِّ أَهْلِ الْكِتَابِ مَنْ يَعْمَلْ سُوءًا يجُْزَ بِهِ وَلَا يجَِدْ لَهُ مِنْ دُونِ
يا وَلَا نَصِيرًا ﴿ ١٢٣ ﴾ وَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالحَِاتِ مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ اللهَِّ وَلِ
{١٢٤− فَأُولَئِكَ يَدْخُلُونَ الجَْنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ نَقِيرً.{النساء: ١٢٣
‘যে মন্দ কাজ করবে, সে তার শাস্তি ভোগ করবে। আল্লাহ্ ছাড়া সে কোন
বন্ধু কিংবা সাহায্যকারীরও সন্ধান পাবে না। পুরুষ কিংবা নারী যে কেউ ঈমান
এনে সৎকর্ম করবে, সে জানড়বাতে প্রবেশ করবে। তারা তিল পরিমাণও প্রাপ্য হতে
বঞ্চিত হবে না।’
(খ) আল্লাহ্ তাআলা স্বীয় সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। সে জ্ঞান ও হিকমতের
ভিত্তিতে কতক জিনিসের ভেতর আলাদা বিশেষত্ব প্রদান করেছেন। যা তার
দায়িত্ব ও কাজ-কর্মে বিকশিত হয়। তেমনি কতক বিশেষত্বের অধিকারী নারী।
যেমন কোমলতা, নমনীয়তা ও দ্রুত প্রতিμিয়াশীলতা। এগুলো তাদের সৃষ্টিগত
স্বভাব। এর ভিত্তিতেই তার দায়িত্ব ও কর্তব্য বণ্টন করেছে মানুষিক স্বভাবের ধর্ম
ইসলাম। এজন্য আল্লাহ্ তাআলা তাদের সৃষ্টিগত বৈশিষ্টের সাথে সঙ্গতি রেখেই
দায়িত্ব দিয়েছেন, এমন কোন দায়িত্ব দেননি যা তার সাধ্যের বাইরে। আর
পুরুষকে নারীর উপর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দিয়েছেন,তার দায়িত্বের চাহিদা ও ঐ
বৈশিষ্টের কারণে যা তাকে আলাদা স্বাতন্ত্র দিয়েছে। আল্লাহ্ই সুউচ্চ কৌশলের
মালিক ।
(গ) মেয়েদেরকে ছোট অবস্থায় আদরের সাথে লালন পালন করার প্রতিদান
অধিক।
ইমাম মুসলিম র. আনাস রা. থেকে বর্ণনা করেন নবী করিম (সঃ)বলেন:
যে ব্যক্তি দুটি মেয়েকে পূর্ণ বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত ভালভাবে লালনÑপালন
করল, কেয়ামতের দিন সে আর আমি একত্রে আসব। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল
স. আঙুল একত্রে মিলিয়ে দেখালেন।
(ঘ) ইসলাম নারীদেরকে ছোট অবস্থা থেকেই ধর্মীয় শিক্ষা, উত্তম চরিত্র,
পবিত্রতা, সতীত্বরক্ষা… শিক্ষা দেওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার পথ দেখিয়েছে
। রসূল(সঃ) এরশাদ করেন―
مروا أولادكم بالصلاة لسبع, واضربوهم عليها لعشر, وفرقوا بينهم فى
المضاجع. أبو داود : ٤١٨
তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে উপনীত হলে নামাযের
আদেশ কর আর দশ বছর হয়ে গেলে তার জন্যে শাস্তি প্রয়োগ কর এবং বিছানা
আলাদা করে দাও।৮০
(ঙ) নারীকে স্বামীর সাথে জীবন যাপন করতে হবে এদিকের গুরুত্ব বিবেচনা
করে ইসলাম আদেশ দিয়েছে যে ইতিপূর্বে যারা তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছে
এদের মধ্যে কাকে তার জন্যে নির্বাচন করা যায় এবিষয়ে তার সাথে পরামর্শ
করতে হবে।সাথে সাথে কোন কোন গুনের বিবেচনায় পাত্র নির্বাচন করা হবে
তারও একটি দিকনির্দেশনা দিয়েছে। যেমন দ্বীনদারী এবং ভাল চরিত্র। নবী করিম (সঃ)এরশাদ করেন―
إذا أتاكم من ترضون دينه و خلقه فزوجوه إلا تفعلوا تكن فتنة في الأرض و فساد
عريض . أخرجه ابن ماجة : ١٩٥٧
যখন তোমাদের কাছে বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে আসে এমন লোক যার দ্বীন
এবং চরিত্র নিয়ে তোমরা সন্তুষ্ট, তাহলে তার সাথে বিবাহ দিয়ে দাও। এবং
ব্যতিμম করলে পৃথিবীতে অশান্তি এবং অধিক বিশৃঙ্খলা হবে।৮১
৮০ আবু দাউদ : ৪১৮
(চ)আল্লাহ্ তাআলা স্বামীকে স্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তার যতড়ব নেয়া এবং
সুন্দরভাবে দেখা-শোনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন হাদীসে নবী করিম (সঃ) এরশাদ করেন―
( خياركم خياركم لأهله, وأنا خياركم لأهلي. ابن ماجه ( ١٩٦٧
তোমাদের সর্বোত্তম সে যে তার পরিবারের কাছে সর্বোত্তম। আর আমি
আমার পরিবারের কাছে সর্বোত্তম।৮২ আল্লাহ্র রাসূল আরো বলেন―
( استوصوا بالنساء خيرا, فإن المرأة خلقت من ضلع أعوج. مسلم ( ٢٦٧١
তোমরা নারীর ব্যাপারে কল্যাণ কামী হও। কেননা, নারীকে সৃষ্টি করা
হয়েছে পাঁজরের বμ হাড় থেকে।৮৩
(ছ) নারী মা, এদিকটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইসলাম তার জন্যে এমন কিছু
অধিকার নিশ্চিত করেছে যে সম্পর্কে প্রাচীন বা আধুনিক মানব রচিত কোন
বিধানই কখনো চিন্তা করেনি।
তার সম্মানের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, আল্লাহ্ তাআলা নিজের অধিকারের
পর মাতাÑপিতার অধিকারকে স্থান দিয়েছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন―
وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهمَُا أَوْ
كِلَاهمَُا فَلَا تَقُلْ لهَُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهمَُا وَقُلْ لهَُمَا قَوْلًا كَرِيمًا ﴿ ٢٣ ﴾وَاخْفِضْ لهَُمَا
﴾ جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحمَْةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحمَْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا. ﴿الإسراء : ٢٢
আপনার পালনকর্তা আদেশ করছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত
করো না এবং মাতাÑপিতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মাঝে কেউ অথবা
উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের কে উফ
শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। এবং বল তাদেরকে শিষ্টচার
পূর্ণ কথা। তাদের সামনে নম্রতার সাথে মাথা পেতে দাও। এবং বল হে
পালনকর্তা ! তাঁদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবে
লালনÑপালন করেছে।৮৪
৮১ ইবনে মাজাহ : ১৯৫৭
৮২ ইবনে মাাজাহ : ১৯৬৭
৮৩ মুসলিম : ২৬৭১
৮৪ আল-ইসরা : ২২
মুসলিম নারীর বৈশিষ্ট্য:
ইসলাম নারীকে মর্যাদা দিয়েছে, দান করেছে তাদের এমন বৈশিষ্ট্য যার
মাধ্যমে তাদেরকে অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সেগুলো
সংরক্ষণের আদেশ দিয়েছে। সে বৈশিষ্টাবলীর কিছু নিমেড়ব প্রদান করা হল:
ক) নারীকে পর্দার বিধান দেয়া হয়েছে যে, নারীরা তাদের সমস্ত শরীর
অপরিচিত পুরুষ হতে ঢেকে রাখবে, যাতে করে তাকে গোপন তীর আঘাত
করতে না পারে। এবং তার সতীত্ব ও পবিত্রতা কালিমা যুক্ত না হয়ে যায়।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন―
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ المُْؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ
﴾ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللهَُّ غَفُورًا رَحِيمًا ﴿الأحزاب : ٥٩
হে নবী ! আপনি আপনার পতড়বী, কন্যা এবং মোমিনদের স্ত্রী-গণ কে বলুন,
তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে
চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম
দয়ালু।৮৫ আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন-
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيحَْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا
﴾ ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ. ﴿النور : ٣١
এবং ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে
এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।আর সাধারণত: যা প্রকাশমান, তাছাড়া তাদের
সৌন্দর্য যেন প্রদর্শন না করে। এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ-দেশে
ফেলে রাখে।৮৬
খ) ইসলাম পুরুষকে রক্তের সম্পর্কবিহীন নারীর সাথে একাকিত্বে সাক্ষাৎ
নিষিদ্ধ করেছে, যদিও সে নিকট আত্মীয় হয়। যেমন চাচাত ভাই, মামাত ভাই,
দেবর ইত্যাদি। রসুল(সঃ) বলেন―
( إياكم والدخول على النساء . الترمذي ( ١٠٩١
মহিলাদের নিকট প্রবেশ করা থেকে সাবধান!৮৭
আনসারদের একজন বললেন
৮৫ আল আহজাব : ৫৯
৮৬ নূর : ৩১
৮৭ তিরমিজি : ১০৯১
হে আল্লাহ্র রাসূল ! আপনি কি দেবরের কথা বলছেন ? নবী করিম (সঃ) বলেন-
( الحمو الموت. البخاري ( ٤٨٣١
দেবর হল মৃত্যু সমতুল্য।৮৮
গ) নারীর স্থান তার ঘরে। ঘরই তার কাজের ময়দান। ঘরই তার
দায়বদ্ধতার জায়গা, সেখানে তার দৃষ্টির হেফাজত হবে। সন্তানদেরকে
লালনÑপালন করবে। নিজ স্বামীর বিষয়াদি দেখবে।সহীহ হাদীসে এসেছে―
كلكم راع, وكلكم مسؤول عن رعيته , فالإمام راع ومسؤول عن رعيته ……
والمرأة فى بيت زوجها راعية ومسؤولة عن رعيتها, والخادم فى مال سيده راع و
( مسؤول عن رعيته. البخاري ( ٢٣٨٩
তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল, প্রত্যেককে তার অধিনস্ত সম্পর্কে প্রশড়ব করা
হবে। ইমাম দায়িত্বশীল এবং তাকে তার অধিনস্ত সম্পর্কে প্রশড়ব করা হবে।
…….নারী তার স্বামীর ঘরে দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশড়ব করা
হবে। সেবক তার মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশড়ব
করা হবে।৮৯ এবং আল্লাহ্ বলেন−
﴾ وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الجَْاهِلِيَّةِ الْأُولَى. ﴿الأحزاب : ٣٣
তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে, মূর্খতার যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে
প্রদর্শন করে বেড়াবে না।৯০
এর অর্থ এই নয় যে, নারীদের জন্য কোন কর্মই বৈধ নয় বরং তাদের নিজস্ব
পরিমন্ডলে সভ্রম বজায় রেখে কাজ করাতে কোন দোষ নেই। যেমন মেয়েদের
শিক্ষকতা করা, তাদের চিকিৎসা করা এবং সামাজিকভাবে তাদের দেখাশোনা
করা। এবং শরীয়তের নিয়মের ভিতরে থেকে এ জাতীয় যা করা যায়।
ঘ) নিজের ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সংশি−ষ্ট আদব রক্ষা করে বের হবে।
যেমন পর্দা রক্ষা করা, শরীর ভালভাবে ঢেকে নেয়া, গাম্ভির্য রক্ষা করা ইত্যাদি।
প্রয়োজন ছাড়া বের হবে না, সুগন্ধি লাগিয়ে সাজসজ্জা করে বের হবে না।
আবু দাউদ শরীফে এসেছে, রসূল(সঃ)
বলেন-
৮৮ বুখারী: ৪৮৩১
৮৯ বুখারী: ২৩৮৯
৯০ আল-আহজাব : ৩৩
إن المرأة إذا استعطرت فمرت بالمجلس فهى كذا وكذا.
নারী যখন সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন মজলিশের পাশ দিয়ে যায়, তখন
(তার সম্পর্কে বলাবলি হতে থাকে) সে এমন, এমন। অর্থাৎ ব্যভিচারিণী।৯১
আর এই সতর্কতা এই জন্যে যে, শয়তান যেন তার কিংবা পুরুষদের অন্তরে
প্রবেশ করতে না পারে।
ঙ) বেগানা পুরুষের সাথে অতি প্রয়োজন ছাড়া কোন কথা না বলা , যদি
কিছু বলার প্রয়োজন হয় তাহলে যথাযথ আদব ও সম্মানের সাথে নম্র ও
কোমলতা ছাড়া কথা বলবে। আল্লাহ্ বলেন-
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تخَْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي
﴾ قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا. ﴿الأحزاب : ٣٢
নবী পতড়বীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও, যদি তোমরা আল্লাহ্কে ভয়
কর, তবে পর-পুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। ফলে
সেই ব্যক্তি যার অন্তরে ব্যাধি আছে কু-বাসনা করে বসবে,এবং তোমরা সংগত
কথা বলবে।৯২
নারী-পুরুষের অবাধে মেলামেশার ক্ষতি
মুসলিম নারীর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বের ক্ষতি সাধন করার জন্য যতগুলি মাধ্যম
আছে, তার মাঝে সবচেয়ে ক্ষতিকর মাধ্যম হল, পর-পুরুষের সাথে অবাধে
মেলামেশা করা। বিশেষ করে নির্জনে মেলামেশা করা। বর্তমান যুগে অমুসলিম
নারীরা অবাধ মেলামেশার এই ফাসাদে এমন ভাবে পতিত হয়েছে যে মানুষ
নামের নেকড়ের সামনে এরা সস্তা পণ্যে পরিণত হয়েছে। মানব জাতীয় সম্মানকে
কর্দমাক্ত করে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রচার মাধ্যম হিসাবে নিজেদের প্রচার
করছে। নিজের পবিত্রতাকে শিল্পকারখানার ধুয়া দ্বারা কলুষিত করেছে। এমনকি
নিজের সতীত্বকে পয়সার বিনিময়ে বিলিয়ে দিয়েছে।
এই হল অমুসলিম নারীর সংক্ষিপ্ত অবস্থা। এর মূল কারণ হল আল্লাহ্র নিয়ম
পদ্ধতি থেকে দূরে থাকা এবং পর-পুরুষের সাথে কর্মস্থলে, কারখানায়, দোকানে
মেলামেশা করা। সংক্ষেপে অবাধে মেলামেশা অপকার এবং ক্ষতি এভাবে
নিরূপণ করতে পারি।
ক) আল্লাহ্ তাআলার বেধে দেয়া পথ ও পন্থা হতে বেন হয়ে আসা। কারণ
মহান আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নিজস্ব প্রজ্ঞানুযায়ী মানুষদের ভিনড়ব ভিনড়ব বৈশিষ্ট দিয়ে
৯২ আল-আহজাব : ৩২
নারী ও পুরুষ করে সৃষ্টি করেছেন । পুরুষ বাহিরে কাজ করবে ও নারী অন্দরে ।
এখন যদি নারী পুরুষ অবাধে মেলামেশা শুরু করে তাহলে প্রত্যেককে এমন
দায়িত্ব মাথায় নিতে হবে যা মূলত তার ক্ষমতার বাইরে। আর এতে করে
জীবনের গতি-শৃংখলাই ব্যহত হবে ।
খ) এতে কোন সন্দেহ নেই যে, নারী পুরুষ অবাধে মেলামেশার দ্বারা
যৌবনের তপ্ত বাসনা জাগ্রত হয়। খারাপ কামনার আগুনকে বাড়িয়ে দেয়। একে
অন্যকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে, তখন পাশবিকতার লাগাম এমনভাবে বিস্তার
লাভ করে যে তার কোন পরিসীমা থাকে না। তখন দুজনই কামনা বাসনা পূরণ
করার কাজে বন্দি হয়ে যায়।
গ) মানুষ যখনই অবৈধভাবে যৌন বাসনা পুরা করার পিছনে পড়ে যায়,
তখন তার চিন্তাশক্তি এবং বুদ্ধিলোপ পায়। এবং ভাল গুণাবলি ধ্বংস হয়ে যায়।
যেমন ধৈর্য, সহনশীলতা ইত্যাদি।
ঘ) অবাধে মেলামেশা নারী-পুরুষকে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের দিকে নিয়ে
যায়। আর এর থেকে সৃষ্টি হয় কঠিন রোগ এইডস, যার কোন চিকিৎসা নেই।
ঙ) মানুষ তার কামনার পিছনে দৌঁড়ালে যার সৃষ্টি সাধারণত: নারী-পুরুষের
অবাধে মেলামেশার দ্বারা হয়, সমাজ তখন আনন্দ-ফুর্তি, খেলাধুলা এবং অহেতুক
কাজের সমাজ হয়ে যায়।
চ) স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিরোধ এবং তালাকের প্রবনতা বৃদ্ধি পায়। কেননা
প্রত্যেকে অন্যত্র তার যৌন চাহিদা পূরণ করতে পারে। এতে কারো কোন দু:খ ও
মনস্তাপ হয়না কারন প্রত্যেকেরতো বিকল্প হিসাবে বন্ধু বান্ধবী আছে ।
ছ) অধিক হারে জারজ সন্তান জন্ম নেয়। এবং সমাজে এর খারাপ প্রভাব
পড়ে।
জ) পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হয়ে যায়, সন্তানের ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যায়,
তাদেরকে সুন্দরভাবে লালন-পালন করা যায় না। তাদের প্রতি কর্তব্যগুলি
সঠিকভাবে পালন করা হয় না।
সবশেষে মহান রাব্বুল আলামিনের প্রশংসা করি যিনি মুসলমানদেরকে সুন্দর
পথ প্রদর্শন করেছেন, যে পথে মান-সম্মান, ধর্ম, চরিত্র, বংশ মর্যাদা, সমস্ত কিছু
রক্ষা হয় এবং জীবনের সকল ক্ষেত্র সহজ-সরল হয়।
প্রতিবেশীর অধিকার
প্রতিবেশী মূলত বাড়ির আশে পাশে বসবাসকারীকে বলা হয়। কখনও
কখনও সফর অথবা কাজের সঙ্গীকে ও প্রতিবেশী বলা হয়। প্রতিবেশীই হচ্ছে
মানুষের সবচে নিকট জন , যিনি তার খবরা-খবর সম্পর্কে অন্যদের তুলনায়
বেশি জানেন।ইসলামী শরীয়ত প্রতিবেশীর অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছে এবং তার
অধিকারকে খুব বড় করে দেখেছে। মহান আলাহ তাআলা বলেন―
وَاعْبُدُوا اللهََّ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى
وَالمَْسَاكِينِ وَالجَْارِ ذِي الْقُرْبَى وَالجَْارِ الجُْنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالجَْنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ.
﴾ ﴿النساء : ٣٦
অর্থাৎ: উপাসনা কর আলাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে।
পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং সদয় ব্যবহার কর নিকটাত্মীয়,
এতীম- মিসকীন, এবং আত্মীয়-সম্পর্কীয় প্রতিবেশী, আত্মীয়তা বিহীন প্রতিবেশী
ও পার্শ্ববর্তী সহচরদের সাথে, এবং অসহায় মুসাফিরের সাথে ।৯৩
রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন :―
( مازال جبريل يوصيني بالجار حتى ظننت إنه سيورثه . البخاري ( ٥٥٥٥
জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে অনবরত অসীয়ত
করছিলেন,যে এক পর্যায়ে আমার ধারণা হয়েছিল যে, আলাহ তাআলা
প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী করে দেবেন।৯৪
শরীয়ত প্রতিবেশীকে এত অধিক গুরুত্ব দেওয়ার কারণ সম্ভবত এই হতে
পারে।
(১) যাতে করে মুসলমানদের মাঝে ভালোবাসা এবং মমত্ববোধের প্রসার
ঘটে, এর জন্য সর্বোত্তম মানুষ হল প্রতিবেশী।
(২) প্রতিবেশী সকলের চেয়ে অধিক সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার দাবী
রাখে, কারণ প্রতিবেশীই তার অতি নিকটে বসবাস করে এবং সে তার যাবতীয়
সমস্যা ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে অন্যদের চেয়ে বেশি জানে।
(৩) যাতে মুসলমানের নিজ জীবন, সন্তান, পরিবার এবং সম্পদের নিরাপত্তা
লাভ হয় ।
প্রতিবেশী কারা ? যাদের সম্পর্কে কোরআন হাদিসে গুরুত্ব দিতে বলা
হয়েছে, সেটি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে উলামাদের বিভিনড়ব মতামত রয়েছে।কেউ
৯৩ নিসা : ৩৬
৯৪ বুখারী: ৫৫৫৫
বলেছেন: প্রতিবেশীর সীমানা হল, চতুর দিক দিয়ে চলিশ ঘর, কেউ বলেন: যে
তোমার সাথে ফজর পড়ল সেই তোমার প্রতিবেশী, ইত্যাদি। আর এই সমস্ত
কথার মনে হয় কোন গ্রহণযোগ্য প্রমাণ নেই । সর্বোত্তম এবং সর্বাধিক
গ্রহণযোগ্য মতামত হচ্ছে ―প্রতিবেশী সে-ই, তার বাড়ির কাছাকাছি যার বাড়ি।
এবং যার বাড়ির সাথে তার বাড়ি মেলানো।সীমানা নির্ধারিত হবে প্রচলিত ধারা
অনুযায়ী, যে ব্যক্তি মানুষের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী প্রতিবেশী, সেই প্রতিবেশী।
আর এটা এই জন্য যে, শরীয়ত যে সমস্ত নামের উলেখ করেছে এবং তার অর্থ
নির্ধারণ করে দেয়নি, তার অর্থ জানার জন্য সঠিক প্রচলিত রীতির দিকেই
প্রত্যাবর্তন করতে হয়।
প্রতিবেশীর গুরুত্বের ভিনড়বতা আসবে নিকটবর্তী এবং দূরবতী প্রতিবেশী
হওয়ার দিক বিবেচনায়। নিকটবর্তী প্রতিবেশী কল্যাণ এবং সাহায্য পাওয়ার
ক্ষেত্রে দূরবর্তী প্রতিবেশীর চেয়ে অধিক গুরুত্ব পাবে, এর প্রমাণ হল: আয়েশা
রাদিয়ালাহু আনহা প্রশড়ব করেছিলেন―
فقالت : إن لي جارتين فإلى أيهما أهدي? قال صلى الله عليه وسلم: إلي
( أقربهمامنك باباً. البخاري ( ٢٠٩٩
তিনি বলেন : আমার দুইজন প্রতিবেশী আছে। তাদের মধ্য থেকে কাকে
আমি উপঢৌকন দেব? রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন: তোমার
দরজার অধিক নিকটবর্তী জনকে।৯৫
তাদের শ্রেণী ও মর্যাদার বিভিনড়বতার কারণেও গুরুত্বে ভিনড়বতা আসবে:
(১) এক ধরনের প্রতিবেশী আছে যার অধিকার হচ্ছে তিনটি, তিনি হলেন
নিকটাত্মীয়-মুসলমান প্রতিবেশী। তার অধিকার তিনটি হচ্ছে: আত্মীয়তা, ইসলাম
এবং প্রতিবেশিত্ব।
(২) আরেক প্রকার প্রতিবেশী যার অধিকার দুইটি: তিনি হলেন অনাত্মীয়
মুসলিম প্রতিবেশী, তার অধিকার দু’টি হচ্ছে: প্রতিবেশিত্ব ও ইসলাম ।
(৩) আর এক ধরনের প্রতিবেশী, যার অধিকার মাত্র একটি, তিনি হলেন
অমুসলিম প্রতিবেশী, তার অধিকার শুধু প্রতিবেশিত্বের।
প্রতিবেশী নির্বাচনের গুরুত্ব :
মুসলমানের কর্তব্য হল সব সময় সৎ প্রতিবেশী বেছে নেয়ার দিকে দৃষ্টি
দেবে, যে তার অধিকারগুলো আদায় করবে, এবং তাকে কষ্ট দেবে না, তার
হেফাজত করবে এবং তাকে সব কাজে সাহায্য করবে, মানুষ বলে
৯৫ বুখারী: ২০৯৯
اختر الجار قبل الدار) ) বাড়ি বানানোর পূর্বে প্রতিবেশী নির্বা চন করা, প্রকতৃ
পক্ষে এটাই সঠিক জিনিস। এর সপক্ষে পবিত্র কোরআন শরিফের ঐ আয়াত
পেশ করা যেতে পারে। যেখানে আলাহ তাআলা ফেরআউনের স্ত্রী সম্পর্কে
বলেছেন :―
﴾ رَبِّ ابْنِ ليِ عِنْدَكَ بَيْتًا فِي الجَْنَّةِ. ﴿التحريم : ١١
অর্থাৎ : হে আমার পালনকর্তা, আপনার সনিড়বকটে জানড়বাতে আমার জন্য
একটি গৃহ নির্মাণ করুন।৯৬
সঠিক প্রতিবেশী নির্বাচন করার গুরুত্ব একথা জানা থাকার মাধ্যমেও স্পষ্ট
হয় যে, প্রতিবেশী তার প্রতিবেশী এবং সন্তানদের মাঝে প্রভাব বিস্তার করে,
পরস্পর মেলা-মেশার কারণে, সে যদি সৎ হয়, তা হলে প্রতিবেশী তার ঘর এবং
পরিবারের ব্যাপারে নিরাপদ হয়ে যায়। আর যদি অসৎ হয়, তাহলে সে নিরাপদ
হতে পারে না।
ভাল প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীর গোপন বিষয় অবহিত হলে গোপন রাখে।
অসৎ প্রতিবেশী বরং সেটিকে প্রকাশ এবং প্রচার করে বেড়ায়। ভাল প্রতিবেশী
ভাল কাজে সাহায্য করে, তাকে সৎ উপদেশ দেয়। অসৎ প্রতিবেশী ধোঁকা দিয়ে
বিপদে ফেলার চেষ্টা করে।
প্রতিবেশীর অধিকারসমূহ :
প্রতিবেশীর অনেক অধিকার রয়েছে তার মধ্য থেকে নিমেড়ব কিছু উলেখ করা
হল।
(১) তাকে কষ্ট না দেওয়া :
হোক সে কষ্ট কথার মাধ্যমে, যেমন অভিশাপ দেওয়া, গালী দেওয়া, তার
গীবত করা, এমন কিছু তার সম্পর্কে বলা যার দ্বারা সে কষ্ট পায়, ইত্যাদি।
অথবা কাজের মাধ্যমে : যেমন তার বাড়ির সামনে আবর্জনা ফেলা, তাকে
বিরক্ত করা, ছেলে মেয়েদেরকে তার ঘরের জিনিস নষ্ট করতে উদ্বুদ্ধ করা বা বাধা
না দেওয়া। রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন :―
والله لا يؤمن‘ والله لا يؤمن والله لا يؤمن‘ قيل : من يا رسول الله? قال: والذي لا
( يأمن جاره بوائقه. البخاري ( ٥٥٥٧
অর্থাৎ : আলাহর কসম সে মুমিন নয়, আলাহর কসম সে মুমিন নয়, আলাহর
কসম সে মুমিন নয়, বলা হল কে সে হে আলাহর রাসূল ? তিনি বললেন :ঐ
৯৬ তাহরিম : ১১
ব্যক্তি যার কষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।৯৭ নবী সাললাহু আলাইহি
ওয়াসালাম আরও বলেন :
( لا يدخل الجنة من لا يأمن جاره بوائقه. أحمد ( ٨٥٠٠
অর্থাৎ : সে ব্যক্তি জানড়বাতে প্রবেশ করবে না যার প্রতিবেশী তার কষ্ট থেকে
মুক্ত নয়।৯৮ রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম অন্যত্র বলছেন :―
( من كان يؤمن بالله واليوم الأخر فلا يؤذ جاره. البخاري ( ٥٥٥٩
যে আলাহর প্রতি এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে
কষ্ট না দেয়।৯৯
প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়ার সবচেয়ে কঠিন প্রকার হল : তার সম্মান-সম্ভ্রম-এ
আঘাত আসে এমন বিষয়ে কষ্ট দেওয়া, যেমন প্রতিবেশীর স্ত্রী বা পর্দা করার মত
কারও খিয়ানত করা, দৃষ্টি দেয়ার মাধ্যমে হোক বা সরাসরি কথা বলার মাধ্যমে
অথবা অসৎ উদ্দেশ্যে ফোনে কথা বলার মাধ্যমে, অথবা যে কোন অশীল কাজের
মাধ্যমে ।
عن عبدالله بن مسعود رضي الله عنه قال : سألت النبي صلي الله عليه وسلم:
أي الذنب عندالله أكبر? قال: أن تجعل لله ندًا وهو خلقك. قلت : ثم أيّ? قال أن
تقتل ولدك خشية أن يطعم معك‘ قلت : ثم أيٌّ? قال أن تزاني بحليلة جارك.
( البخاري. ( ٥٥٤٣
অর্থাৎ : আব্দুলহ বিন মাসঊদ রাদিয়ালাহু আনহু বলেন : আমি রাসূলুলাহ
সাললাহু আলাইহি ওয়াসালামের নিকট জানতে চেয়েছি: আলাহ তাআলার নিকট
সব চেয়ে বড় গুনাহ কোনটি ? তিনি বললেন― কাউকে আলাহর সমকক্ষ নির্ধরণ
করা অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমি বললাম তার পরে কি ? বললেন
: তুমি তোমার সন্তানকে হত্যা করা তোমার সাথে খাওয়ার ভয়ে। আমি বললাম
এর পর কি ? তিনি বললেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে সম্মতির ভিত্তিতে
ব্যভিচার করা। অর্থাৎ তার প্রতিবেশীর স্ত্রীকে ফুসলিয়ে তাকে নিজের দিকে
আকৃষ্ট করে তার সাথে ব্যভিচার করা। কারো অসম্মতিতে জোর পূর্বক তার সাথে
ব্যভিচার করা থেকে এটা আরো বেশি অপরাধ।১০০
৯৭ বুখারী : ৫৫৫৭
৯৮ আহমাদ : ৫৮০০
৯৯ বুখারী: ৫৫৫৯
১০০ বুখারী: ৫৫৪৩
وفي حديث المقداد بن الأسود رضي الله عنه أن النبي صلي الله عليه وسلم قال : لأن
( يزني الرجل بعشر نسوة أيسر عليه من أن يزني بامرأة جاره. أحمد ( ٢٢٧٣٤
অর্থাৎ : মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রাদিয়ালাহু আনহু রাসূলুলাহ সাললাহু
আলাইহি ওয়াসালাম থেকে বর্ণনা করে বলেন: কোন ব্যক্তি তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর
সাথে ব্যভিচার করা দশ জন মহিলার সাথে ব্যভিচার করা থেকেও কঠিন
পাপ।১০১
প্রতিবেশীর এ বিষয়টি বড় করে দেখার কারণ :
(ক) এক প্রতিবেশী অপর প্রতিবেশীর নিকট আমানত স্বরূপ , এর সাথে
ব্যভিচার করা উক্ত আমানতের খিয়ানত।
(খ) প্রতিবেশী অপর প্রতিবেশীর যাবতীয় অবস্থা এবং তার উপস্থিতিঅনুপি
স্থতির সময় সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞাত, কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ
আলাদা।
(গ) সে যেহেতু তার নিকটেই থাকে এবং তার সাথে উঠা-বসা করে তাই
তার কষ্ট প্রতিবেশীর নিকট খুবদ্রুত এবং সহজেই পৌঁছে ।
(ঘ) আরেকটি কারণ হচ্ছে কেউ তাকে সন্দেহ করবে না।
প্রতিবেশীর প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করা :
নবী কারীম সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন :―
( من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليكرم جاره. البخاري ( ٥٥٥٩
অর্থাৎ : যে আলাহর প্রতি এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার
প্রতিবেশীকে সম্মান করে।
আর এটি ব্যাপক ভিত্তিক অধিকার, এর সাথে অনেকগুলো অধিকার এবং
বিষয় জড়িত।
(ক) তার প্রয়োজনে সাহায্য করা, ব্যবহারের জিনিস চাইলে দেয়া। কেননা
প্রতিবেশী কখনও প্রতিবেশীর কাছে মুখাপেক্ষী নয় এমন হতে পারে না। আলাহ
তাআলা ঐ সমস্ত লোকদের নিন্দা করেছেন যারা নিত্য ব্যবহার্য জিনিস চাইলে
বিমুখ করে। তাদের নিন্দা করে আলাহ বলেন :
﴾ وَيَمْنَعُونَ المَْاعُونَ ﴿الماعون : ٧
তারা নিত্য ব্যবহার্য জিনিস অন্যকে দেয় না।১০২
(খ) প্রতিবেশীকে হাদিয়া দেওয়া।তার বাড়িতে খাবার ইত্যাদি প্রেরণ করা।
১০১ আহমাদ : ২২৭৩৪
১০২ আল-মাউন : ৭
আবু যব রাদিয়ালাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম আমাকে অসীয়ত করেছেন :
إذا طبخت مرقًا فأكثر ماءه, ثم انظر أهل بيت من جيرانك فأصبهم منها بمعروف.
( مسلم ( ٤٧٥٩
অর্থাৎ. যখন তুমি তরকারী রানড়বা করবে তাতে বেশি করে পানি দেবে
অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর খবর নিয়ে তার থেকে তাদেরকে কিছু দেবে।১০৩
(গ) প্রতিবেশী ঋণ চাইলে তাকে ঋণ দেয়া, তার প্রয়োজনে তাকে সাহায্য
সহযোগিতা করে তার রক্ষনাবেক্ষণ করা।
রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন :―
ليس المؤمن الذي يشبع وجاره جائع
অর্থাৎ : সে মুমিন নয় যে পেট ভরে খায় অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।
(ঘ) প্রতিবেশীর ভাল কোন সংবাদ পেলে তাকে মোবারকবাদ জানানো,
এবং খুশি প্রকাশ করা, বিবাহ করলে অথবা সন্তান জন্ম নিলে, অথবা তার
সন্তান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে এবং এ জাতীয় উপলক্ষে তাকে মোবারকবাদ
জানানো এবং বরকতের দোয়া করা।
(৩) মুসলমানদের মাঝে পরস্পরে যে অধিকারগুলো আছে সেগুলো
প্রতিবেশীর ব্যাপারে আদায় করবে। কেননা সে-ই এর অধিকার বেশি রাখে,
যেমন তাকে সালাম দেওয়া, সালামের উত্তর দেয়া, অসুস্থ হলে তার সুস্রষা করা,
তার দাওয়াত গ্রহণ করা। তার সাথে সাক্ষাৎ হলে আলাহর প্রদত্ব ফরযগুলি
সংক্ষেপে স্মরণ করিয়ে দেয়া―ইত্যাদি।
১০৩ মুসলিম : ৪৭৫৯
ইসলামে অভিবাদন পদ্ধতি ও সালামের বিধান
আরবী ( التحية ) আত্ তাহিয়্যাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ হায়াতের জন্য
দোয়া করা―যেমন বলা হয়― حيّاك الله অর্থাৎ আল্লাহ্ তোমাকে জীবিত রাখুক।
অতঃপর তাহিয়্যাহ শব্দটি ব্যাপক ভাবে প্রত্যেক ঐ অর্থে ব্যবহৃত হয় যা মানুষ
দোআর জন্য ব্যবহার হয়।
তাহিয়্যাহ সালাম থেকে ব্যাপক। তাহিয়্যাহর অনেকগুলি পদ্ধতির একটি
হচ্ছে সালাম।
আল্লাহ্ এবং তার রাসূল আমাদের জন্য অভিবাদন জানানোর এমন একটি
পদ্ধতি অনুমোদন ও নির্ধারণ করে দিয়েছেন যা আমাদেরকে অন্যদের থেকে
স্বতন্ত্র করে দেয় এবং যা করলে আমাদের জন্য সাওয়াব লেখা হয়। বরং সেটিকে
এক মুসলমান ভাইয়ের প্রতি অপর মুসলমান ভাইয়ের অধিকার বানিয়ে
দিয়েছেন। এই অভিবাদন পদ্ধতিটি নিছক অভ্যাস থেকে একটি এমন আমলে
পরিবর্তিত হয়েছে যা বান্দা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভ এবং রাসূলের নির্দেশ পালনার্থে
করে। তাই এই মহান বরকতময় অভিবাদনকে পরিবর্তন করে অন্য কোন
সমঅর্থপূর্ণ শব্দাবলী দ্বারা অভিবাদন জানানো মুসলমানের জন্য কোনভাবেই শুদ্ধ
ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যেমন সু-প্রভাত, শুভ সন্ধ্যা, স্বাগতম―ইত্যাদি।
ইসলামের বরকতপূর্ণ অভিবাদন দ্বারা যা আদায় হয় অন্য কিছু দ্বারা তা আদায়
হবে না। অনেকে না জেনে অথবা ইচ্ছাকৃত ভাবে ইসলামের নির্ধারিত পদ্ধতির
অভিবাদন বাদ দিয়ে উপরোক্ত শব্দগুলি ব্যবহার করে থাকে যা কোন ভাবেই ঠিক
নয়।
ইসলামের অভিবাদন হলো :
السّلام عليكم ورحمة الله وبركاته
এটিই হল অভিবাদনের পরিপূর্ণরূপ। আর ন্যূনতম রূপ হচ্ছে
السّلام عليكم
ইসলামের এই অভিবাদনের অনেক ফজিলত রয়েছে।
১।
এটি ইসলামের উত্তম জিনিসের মধ্য থেকে একটি―হাদীসে এসেছে
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما أن رجلاً سأل رسول الله صلى
الله عليه وسلم أي الإسلام خير? قال إطعام الطعام وتقرأ السلام علي من عرفت
( ومن لم تعرف. البخاري ( ٢٧
অর্থাৎ : আব্দুল−াহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি
রসূল(সঃ)-কে প্রশড়ব করলেন ইসলামের কোন
কাজটি সবচে ভাল ? রসুল(সঃ) বললেন: খাবার
খাওয়ানো এবং সালাম দেয়া পরিচিত-অপরিচিত সকলকে।১০৪
২।
সালাম মুসলমানদের মাঝে ভালোবাসা এবং হৃদ্যতা সৃষ্টি ও বৃদ্ধির
কারণ, রসূল(সঃ) বলেন―
لا تدخلون الجنة حتى تؤمنوا ولا تؤمنوا حتى تحابوا‘ أولا أدلكم على شيء إذا
( فعلتموه تحاببتم? أفشوا السّلام بينكم. مسلم ( ٨١
অর্থাৎ : তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জানড়বাতে প্রবেশ করতে পারবে না,
আর ঈমানদার হতে পারবে না পরস্পরে ভালোবাসা না হলে, তোমাদেরকে কি
এমন একটি বিষয়ের কথা বলে দেব না, যা করলে তোমাদের পরস্পরে
ভালোবাসা সৃষ্টি হবে ? তোমরা পরস্পরের মাঝে সালামের প্রসার ঘটাও।১০৫
৩।
সালামের প্রত্যেক বাক্যে দশ নেকী, সালামে মোট তিনটি বাক্য আছে,
সুতরাং যে পূর্ণ সালাম দেবে তার ত্রিশটি নেকী অর্জন হবে।
عن عمران بن حصين رضي الله عنهما قال : جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه
وسلم فقال: السلام عليكم فرد عليه, ثم جلس, فقال النبي صلي الله عليه
وسلم(عشر), ثم جاء رجل آخر فقال: السلام عليكم ورحمة الله, فرد عليه, ثم
جلس فقال: (عشرون) ثم جاء آخر فقال: السلام عليكم ورحمة الله وبركاته فرد
( عليه وجلس فقال (ثلاثون). الدارمي ( ٢٥٢٦
অর্থাৎ : ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: এক ব্যক্তি
নবী করিম (সঃ)-এর নিকট আসল অতঃপর বলল:
আস্সালামু আলাইকুম, রাসূল তার উত্তর দিলেন, অতঃপর সে বসল। রাসূলুল−াহ
১০৪ বুখারী: ২৭
১০৫ মুসলিম : ৮১
স. বললেন ((দশ নেকী)), অতঃপর অন্য এক ব্যক্তি আসল, সে বলল:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, রাসূল স. উত্তর দিলেন, অতঃর সে
বসল। রাসূল স. বললেন ((বিশ নেকী))।
অতঃপর আর একজন আসল। সে
বলল : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। রাসূল স.
উত্তর দিলেন এবং সে বসল। রাসূল স. বললেন―(ত্রিশ নেকী)।১০৬
সালামের বিধান এবং তার পদ্ধতি
প্রমে সালাম দেয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সুনড়বত। উত্তর দেয়া ওয়াজিব, যখন
সালামের দ্বারা শুধুমাত্র এক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করা হয়। আর যদি সালামের দ্বারা
কোন দল বা জামাআতকে উদ্দেশ্য করা হয় তাহলে তার উত্তর দেয়া ওয়াজিবে
কেফায়া। তবে যদি সকলেই উত্তর দেয় তা হলে অতি উত্তম।
উত্তর দেয়ার সময় সালামের মত করে দেয়া ওয়াজিব। উত্তর যদি সালাম
থেকে বাড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে উত্তম, কিন্তু সালাম থেকে কম করা যাবে না।
যেমন কেউ সালাম দিতে গিয়ে বলল ―
السّلام عليكم ورحمة الله তাহলে এর ওয়াজিব উত্তর হবে
وعليكم السلام ورحمة الله যদি সে وبركاته বাড়িয়ে বলে তা হলে উত্তম, কিন্তু
وعليكم السلام বলে উত্তর সংক্ষেপে করা বৈধ নয়, কেননা এটি সালাম থেকে
কম করা হল যা অনুচিত এবং কোরআনের বিধানের লঙ্ঘন। যেমন পবিত্র
কোরআনে আল্লাহ্ বলেন―
[[ وَإِذَا حُيِّيتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا[ [النساء: ٨٦
আর তোমাদেরকে যদি কেউ দোয়া করে(সালাম দেয়), তাহলে তোমারও
তার জন্য দোয়া কর(সালামের উত্তর দাও)।
তার চেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই
মত ফিরিয়ে বল। (সূরা নিসা: ৮৬)
ইবনে কাসীর (রহ) বলেন :অর্থাৎ কোন মুসলমান সালাম দিলে উত্তর দেবে
তার চেয়ে উত্তমভাবে অথবা নিদেন পক্ষে তার মত করে। বাড়িয়ে বলা মোস্তাহাব, আর তার মত উত্তর দেয়া ফরয।
শরীয়তের দৃষ্টিতে ঐ উত্তর বৈধ নয়, যে উত্তরে বলা হয় أهلا و مرحبا
অথবা এর মত অন্য কিছু। কেননা এগুলো সালামের শরীয়ত সম্মত উত্তর নয়।
আর তাছাড়া অন্য উত্তরগুলো সালাম থেকে অনেক ত্র“টিপূর্ণ। কেননা তার কথা
১০৬ দারামি : ২৫২৬
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته কোন ব্যক্তি أهلا و مرحبا বলা থেকে
অনেক মহত্ত্বপূর্ণ অর্থ দেয়। কিন্তু أهلا و مرحبا সালামের উত্তর ছাড়া অন্য সময়
বলাতে দোষ নেই, সালামের উত্তর দেওয়ার পরে বলতে পারে রাসূল স.-এর
কথা দ্বারা এর প্রমাণ আছে : রাসূল উম্মে হানিকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন―
( مرحبا بأم هانىء. البخاري ( ٣٤٤
সালামের আদবসমূহ :
সালামের অনেক বিধান এবং আদব রয়েছে তার থেকে নিমেড়ব কিছু উলে−খ
করা হল।
১।
মানুষের মাঝে সালামের ব্যাপক প্রচার এবং প্রসার ঘটাতে হবে, যাতে
করে তা মুসলমানদের প্রকাশ্য প্রতীকে পরিনত হয়ে যায়। বিশেষ কোন দলকে
সালাম দেয়া হবে অন্য কাউকে নয় তা যেন না হয়, অনরূপ ভাবে বড়দেরকে
দিতে হবে ছোটদেরকে নয় বা যাকে চিনে তাকে দেবে যাকে চিনে না তাকে নয়
এমনও যাতে না হয়, রসূল(সঃ) বলেন―
( أفشوا السلام بينكم. الترمذي ( ٢٤٣٦ অর্থাৎ তোমাদের মাঝে সালামের প্রসার
ঘটাও। ? أي الإسلام خير (কোন সালাম উত্তম) প্ের শরড়ব উত্তরে রাসলূ বলেছিলেন
:―
( تقرأ السلام على من عرفت ومن لم تعرف. البخاري ( ٢٧
সালাম দেবে পরিচিত-অপরিচিত সকলকে।১০৭
আম্মার বিন ইয়াসির র. বলেন―
ثلاث من جمعهن فقد جمع الإيمان: الإنصاف من نفسه, وبذل السلام للعالم
والإنفاق من الإقتار.(رواه البخاري باب إفشاء السلام)
যে ব্যক্তি নিজের মাঝে তিনটি গুণ একত্রিত করল, সে পরিপূর্ণ ঈমান হাসিল
করল। নিজের উপর ইনসাফ করা, সালামের প্রচার করা, অভাব সত্ত্বেও খরচ
করা।
সালাম না দেওয়ার নিন্দায় রসুল(সঃ) বলেন:
( أبخل الناس من بخل با لسلام. أحمد ( ١٣٩٩٢
১০৭ বুখারী: ২৭
সবচেয়ে কৃপণ ব্যক্তি সেই যে সালাম দেওয়ার ব্যাপারে কৃপণতা করে।১০৮
২।
উচ্চস্বরে সালাম দেয়া এবং উত্তর দেয়া সুনড়বত। কেননা সালাম হলÑ
السلام عليكم উচ্চারণ করা। হাত দ্বারা ঈশারা ইত্যাদি সালাম বলে
বিবেচিত হবে না। আর উত্তর উচ্চস্বরে দিতে হবে এর কারণ হচ্ছে: যিনি সালাম
দাতাকে শুনিয়ে জবাব দিলেন না তিনি কেমন যেন তার জবাবই দিলেন না। তবে
উত্তর শুনতে কোন কিছু বাধা হলে সে ভিনড়ব কথা এর জন্য সে দায়ী হবে না।
৩।
অন্যের মাধ্যতে অপরের নিকট সালাম পৌঁছোনোর বিধান কে অনুমোদন
দেয়া হয়েছে। যাকে পৌঁছানো হবে তার উত্তর দেয়া দায়িত্ব। আয়েশা রা. থেকে
বর্ণিত রসুল(সঃ) তাকে বলেছেন―
إن جبريل يقرأ عليك السلام‘ فقالت: وعليه السلام ورحمة الله. البخاري
(٥٧٨٠)
জিবরাঈল তোমাকে সালাম দিয়েছেন,
তিনি বললেন―( (وعليه السلام ورحمة الله
তার উপর শান্তি এবং আল্লাহ্র রহমত বর্ষিত হোক।
৪।
উত্তম হল ছোট বড়কে প্রমে সালাম দেবে। পদচারণায় লিপ্ত উপবিষ্টকে
সালাম দেবে। আরোহণকারী পদচারণাকারীকে সালাম দেবে, কম লোক বেশি
লোককে সালাম দেবে। আবু হুরাইরা রা. বলেন―
( يسلم الصغير علي الكبير والمار علي القاعد والقليل علي الكثير. مسلم ( ٤٠١٩
অর্থাৎ ছোট বড়কে সালাম দেবে অতিμমকারী (চলন্ত ব্যক্তি)উপবিষ্টকে
সালাম দেবে, অল্প লোক বেশি লোককে সালাম দেবে।
৫।
সুনড়বত হল দুজন আলাদা হওয়ার পর পুনরায় সাক্ষাৎ হলে আবার সালাম
দেয়া ―প্রবেশের কারণে হতে পারে, আবার বাহির হওয়ার কারণেও হতে
পারে। অথবা চলতি পথে দু’জনের মাঝে কোন দেয়াল বা গাছ জাতিয় কিছুর
বাধার কারণে আলাদা হয়েছিল। অতপর সাক্ষাৎ ঘটল। রাসূল স.-এর বাণী দ্বারা
এমনই বুঝা যায় ।
إذا لقي أحدكم أخاه فليسلم عليه فإن حالت بينهما شجرة أو جدار أو حجر ثم
( لقيه فليسلم عليه أيضًا. مسلم ( ٤٥٢٤
১০৮ আহমাদ : ১৩৯৯২
অর্থাৎ : তোমাদের কেউ নিজ ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করলে তাকে সালাম
দেবে।অত:পর যদি দুজনের মাঝে কোন গাছ, দেয়াল অথবা পাথর ইত্যাদি
বাধার কারণে দু’জন বিচ্ছিনড়ব হয়ে যায়, খানিক পর পুনরায় সাক্ষাৎ হলে আবার
সালাম দেবে।
যার নামাজ শুদ্ধ হচ্ছিল না রসুল(সঃ) তাকে
বারবার নামাজ শুদ্ধ করতে বলছিলেন: সে যতবার যাচ্ছিল এবং আসছিল রাসূল
স.-কে সালাম দিচ্ছিল রাসূল স. তার উত্তর দিচ্ছিলেন। এরূপ তিন বার
করেছিলেন।
وقال أنس رضي الله عنه كان أصحاب رسول الله صلي الله عليه وسلم يتماشون
فاذا استقبلتهم شجرةً أو أكمة فتفرقوأ يمينا وشمالاً ثم التقو من ورائها سلّم
بعضهم علي بعض.
আনাস রা. বলেন রাসূলের সাহাবিরা হাঁটতেন যখন তাদের সামনে কোন
গাছ অথবা স্তূপ পড়ত, তাঁরা ডানে বামে আলাদা হয়ে যেতেন অতঃপর আবার
সাক্ষাৎ ঘটত তখন একে অন্যকে সালাম দিতেন।
৬।
সালাম শুধু মুমিনদের অভিবাদন, কাফেরদেরকে সালাম দেয়া বৈধ নয়।
রসুল(সঃ) বলেন :―
لا تبدؤوا اليهود ولا النصارى بالسلام, فإذا لقيتم أحدهم في طريق فاضطروه গ্ধ
( مسلم ( ٤٠٣٠ .্র إلى أضيقه
অর্থাৎ. ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের সাথে তোমরা প্রমে সালামের মাধ্যমে কথা
শুরু করবে না। তাদের কারও সাথে রাস্তায় সাক্ষাৎ হলে তাদেরকে সংকীর্ণ পথে
যেতে বাধ্য করবে।১০৯
এই কথার অর্থ হল তাদের জন্য বিনয় সম্মানের সাথে তাদের থেকে দুরে
সরে দাঁড়াবে না। এর অর্থ এই নয় যে, প্রশস্ত রাস্তায় তাদের সাথে সাক্ষাৎ হলে
তাদের জন্য সংকীর্ণ করে দেবে, কেননা এর দ্বারা তাদের কষ্ট দেওয়া হবে। আর
কোন কারণ ছাড়া তাদের কষ্ট দিতে নিষেধ করা হয়েছে। হ্যাঁ যদি এমন জায়গায়
উপস্থিত হয় যেখানে কাফের মুসলমান একত্রে মিশছে, তবে সালাম দেবে এবং
মুসলমান নিয়ত করবে।
১০৯ মুসলিম : ৪০৩০
عن أسامة بن زيد رضي الله عنهما: أن النبي صلي الله عليه وسلم مرّ علي
مجلس فيه أخلاط من المسلمين والمشركين عبدة الأوثان فسلم عليهم. البخاري
(٤٢٠٠)
অর্থাৎ : উসামা বিন যায়েদ রা.-এর ঐ হাদিসের কারণে যে রাসূলুল−াহ সা.
অতিμম করলেন এক মজলিসের পাশ দিয়ে যেখানে মুসলমান-মুশরিক-
পৌত্তলিক একত্রিত ছিল ; রাসূল স. তাদেরকে সালাম দিলেন।১১০
আর যদি অমুসলিম সালাম দেয় তাহলে তার উত্তর আনাস রা. থেকে বর্ণিত
হাদীসের পন্থা অনুযায়ী দিবে―
أن أصحاب النبي صلي الله عليه وسلم قالواللنبي صلي الله عليه وسلم: إن
أهل الكتاب يسلمون علينا فكيف نرد عليهم? قال قولوا: وعليكيم ولا يزيد علي
( ذالك. مسلم ( ٤٠٢٥
রাসূল স.-এর সাহাবীরা রাসূল স.-কে বললেন―আহলে কিতাবীগণ
আমাদেরকে সালাম দেয় তাদের উত্তর কীভাবে দেব ? রাসূল স. বললেন তোমরা
বলবে ( وعليكم ) এর চেয়ে বেশি বলবে না।১১১
৭।
কোন কোন আলেম অমুসলিমদেরকে বিশেষ প্রয়োজনে সালাম ব্যতীত
অন্য কিছু দ্বারা অভিবাদন জানানো বৈধ বলেছেন। যেমন শুভ সকাল বা শুভ রাত্রি
ইত্যাদি।
৮।
রক্তের সম্পর্কযুক্ত-মুহরিম নারীদেরকে সালাম দেয়া জায়েজ, বেগানা
নারীদেরকেও জায়েজ আছে যদি ফেতনা থেকে নিরাপদ হয়। নারীদের ক্ষেত্রে
বিষয়টি অবস্থাভেদে পৃক হয়ে থাকে। তাদের অবস্থা এবং অবস্থান বিবেচনার
প্রয়োজন রয়েছে। যুবতী নারী বৃদ্ধা নারীর মত নয়, কেউ নিজের ঘরে প্রবেশ
করে সেখানে অনেক নারী দেখতে পেল এবং তাদেরকে সালাম দিল, এই ব্যক্তি
ঐ ব্যক্তির মত নয় যে অনেক মহিলাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল যাদেরকে সে
চিনে না, এবং সালাম দিল। অপরিচিত নারীদের সাথে মুসাফাহা করা একেবারে
বৈধ নয়। এর প্রমাণ রসুল(সঃ) এর বাণী―
(ক) . لا أصافح النساء গ্ধ আমি মহিলাদের সাথে মুসাফাহা করি না।
১১০ বুখারী: ৪২০০
১১১ মুসলিম : ৪০২৫
(খ) আয়েশা রা.-এর বাণী―
.্র ما مسّت يد رسول الله صلى الله عليه وسلم يد امرأة, إلا امرأة يملكها গ্ধ
অর্থাৎ : নবী(সঃ) -এর হাত কখনও
কোন বেগানা নারীর হাত স্পর্শ করেনি।
যিয়ারতের বিধি-বিধান
যিয়ারতের প্রকারভেদ : যিয়ারত তিন প্রকার।
ক):বৈধ ও অনুমোদিত যিয়ারত : প্রত্যেক ঐ যিয়ারত যার মাধ্যমে শরয়ী
উপকার হয় অথবা যার মাঝে জাতির কল্যাণ নিহিত রয়েছে।এবং প্রত্যেক ঐ
যিয়ারত যা আলাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসার উদ্দেশ্যে হয়। কখনও তা ফরয হয়ে
থাকে যেমন নিকট আত্মীয়ের যিয়ারত ; আবার কখনও মোস্তাহাব যেমন
আলেমদের সাথে সাক্ষাৎ।
এই ধরনের সাক্ষাতের কিছু উদাহরণ রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম
এর হাদীসের মাঝে আমরা পাই যার দ্বারা এর মর্যাদা বুঝা যায়। আলাহর
সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যিয়ারতের ফযীলত সম্পর্কে রাসূল সালালাহু আলাইহি
ওয়াসালাম বলেন―
من عاد مريضا, أوزار أخًا له في الله, ناداه منادٍ أن طِبتَ وطاب ممشاك, وتبوأت গ্ধ
( الترمذي ( ١٩٣١ . من الجنة منزلا
অর্থাৎ : যে ব্যক্তি কোন রুগীকে দেখতে গেল অথবা আলাহর সন্তুষ্টির
উদ্দেশ্যে তার কোন ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করল কোন ঘোষণাকারী তখন ডেকে
বলতে থাকে তুমি ভাল কাজ করেছ তোমার চলা শুভ হোক এবং জানড়বাতের মাঝে
তুমি তোমার একটা ঘর বানিয়ে নিয়েছ।১১২
খ) অবৈধ যিয়ারত:
প্রত্যেক ঐ যিয়ারত যার মাধ্যমে ধর্মীয় অথবা চারিত্রিক ক্ষতি হয়। যেমন
কোন হারাম কাজের জন্য যিয়ারত করতে যাওয়া অথবা অহেতুক কোন খেলার
জন্য একত্রিত হওয়া এগুলি শরিয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ।
গ)মুবাহ যিয়ারত:
এ এমন যিয়ারত যার দ্বারা কোন ক্ষতি বা উপকার কিছুই হয় না এবং যার
মাধ্যমে কোন হারাম কাজও সঙ্ঘটিত হয় না। যেমন শুধু সময় কাটানোর জন্য
যিয়ারত করা অথবা মুবাহ কথাবার্তা বলার জন্য সাক্ষাৎ করা। কোন কোন
সাক্ষাৎ আছে যা প্রকৃত পক্ষে প্রশংসনীয় এবং জায়েয কিন্তু তার সাথে এমন কিছু
জড়িয়ে যায় যে তার মূল বিধানকেই পরিবর্তন করে দেয়। যেমন সাক্ষাতের সাথে
কোন অন্যায় কাজ যুক্ত হয়ে গেল। এখানে আবশ্যক হল ঐ নিষিদ্ধ কাজটি দূর
করা যাতে সাক্ষাৎ তার নিজের অবস্থানে নিজ অবস্থানে ঠিক থাকে। যদি সেই
নিষিদ্ধ কাজকে বাদ দেওয়া সম্ভব না হয় তখন উক্ত জায়েয সাক্ষাৎ নাজায়েযে
পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং সাক্ষাৎ কারীকে তা বাদ দেয়া জরুরী হয়ে যাবে।
১১২ তিরমিজি : ১৯৩১
যিয়ারতের আদব সমূহ :
যিয়ারতের অনেক আদব রয়েছে ,যেমন
১।
যিয়ারতের নিয়ত এবং উদ্দেশ্যকে সঠিক করতে হবে। যেমন
আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখার নিয়ত করা এবং তাদের অধিকার আদায় করা।
অথবা আলাহর সন্তুষ্টি লাভের নিয়ত করবে বা সাক্ষাতের দ্বারা যে পুণ্য লাভ হয়
তার নিয়ত করবে। অথবা পরস্পরে উপদেশ গ্রহণের নিয়ত বা সময়কে কাজে
লাগানোর নিয়ত করা―ইত্যাদি।
২।
সাক্ষাতের জন্য যথোপযুক্ত সময় নির্ধারণ করা।পানাহারের নির্ধারিত
সময়, আরাম অথবা ঘুমের সময় সাক্ষাৎ করা উচিত নয়।অনুরূপ ভাবে কারো
নির্ধারিত কোন সময় থাকে যখন কারো যিয়ারত সে পছন্দ করে না তখন
সাক্ষাতের মাধ্যমে তার উপর বোঝা চাপিয়ে দেওয়া এবং বিরক্ত করা ঠিক নয়।
৩।
যিয়ারতকারী অধিক সময় থেকে বা অন্য কোন মাধ্যমে যার সাথে
সাক্ষাৎ করতে এসেছে তাকে বিরক্ত করা ও তার কাজের ব্যঘাত ঘটানো উচিত
নয়। হ্যাঁ যদি সাক্ষাৎকারী জানতে পারে যে, তার সাথী অধিক সময় কাটানো
অপছন্দ করেন না ,তাহলে বিলম্ব করাতে দোষ নেই। সাক্ষাৎকারীকে তার সাথীর
অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। হয়ত সে কোন কাজে ব্যস্ত আছে বা কারো
সাথে অঙ্গীকারাবদ্ধ আছে। আর এগুলি ব্যক্তির অবস্থা দ্বারা প্রকাশ পায়, যেমন
চেহারায় বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠে অথবা বারবার ঘড়ির দিকে তাকায় বা বার বার
আসা যাওয়া করতে থাকে এবং কখনও প্রকাশ্যেই বলে যে আমি ব্যস্ত। তখন
সাক্ষাৎকারী অনুমতি নিয়ে বের হয়ে আসবে।
৪।
সাক্ষাৎকারী সাজ গোজ করে পরিপাটি হয়ে যিয়ারতে আসবে,সাথে
সাথে নিজ পোশাক-পরিচ্ছদ এবং বেশ-ভূসা বিন্যস্ত করে নিবে। সুগন্ধি ব্যবহার
করে নিজের দুর্গন্ধ দূর করবে। আবুল আলিয়া বলেন-
.্র إذا استأذن أحدكم ثلاثا فلَم يؤذَن له فليرجع গ্ধ
অর্থাৎ মুসলমানরা যখন সাক্ষাতে যেতেন তখন সাজগোজ করতেন।
৫।
স্বাক্ষাতপ্রার্থী অনুমতি প্রার্থনা করলে স্বাক্ষাতদাতার অনুমতি দেয়া ও না
দেয়া উভয়টিরই অধিকার রয়েছে।এখন যদি তিনি স্বাক্ষাতের অনুমতি না দিয়ে
অপারগতা প্রকাশ করেন তাহলে স্বাক্ষাতপ্রার্থীর সেটি সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহন করা ও
মনে কষ্ট নেয়া বা তার সম্পর্কে মনে বিরুপ ভাব পোষন করা ঠিক হবে
না।কারণ কখনো কখনো সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এরূপ করতে হয়।
আলাহ বলেন―
﴾ وَإِنْ قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ. ﴿النور: ٢٨
তোমাদেরকে যদি বলা হয় ফিরে যাও, তবে ফিরে যাবে। এটি তোমাদের
জন্য পবিত্রতর।১১৩
কাতাদাহ রা. বলেন: কোন কোন মুহাজির বলেছেন: সারা জীবন (অন্তত
একবারের হন্যে হলেও) এই আয়াতের উপর আমল করতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি;
আমার কোন ভাইয়ের নিকট প্রবেশের অনুমতি চেয়েছি অতঃপর তিনি বলেছেন
ফিরে যাও আমি ফিরে এসেছি আর আমার হৃদয় তার উপর সন্তুষ্ট ।
৬।
সাক্ষাৎকারীর কর্তব্য হল: ঘরে প্রবেশ করে দৃষ্টি সংযত রাখবে, কানের
হেফাজত করবে এবং অসংগত ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে প্রশড়ব করবে না।
বাড়িওয়ালা যেখানে বসতে বলবে সেখানে বসবে তার অনুমতি ছাড়া বের হবে
না। যখন বের হবে সালাম দেবে।
৭।
অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত অন্যের বাড়িতে প্রবেশ করা কারো পক্ষেই
জায়েয নেই। আলাহ তাআলা বলেন―
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى
﴾ أَهْلِهَا. ﴿النور : ٢٧
অর্থাৎ, হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্যদের গৃহে
গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ করো
না।১১৪
নবী(সঃ) বলেন,
( إذا استأذن أحدكم ثلاثا فلم يؤذن له فليرجع. البخاري ( ٥٧٧٦
তোমাদের কেউ তিনবার অনুমতি চাওয়ার পর অনুমতি না মিললে ফিরে
আসবে।১১৫
অনুমতি চাওয়ার এ বিধান আরোপের তাৎপর্য :
ক) ঐ সময় বাড়িতে কারও প্রবেশ করা হয়ত বাড়িওয়ালাদের জন্য কষ্টের
কারণ হতে পারে , তাই অনুমতি চাওয়ার এ বিধান দেয়া হয়েছে যাতে
বাড়িওয়ালা অবাঞ্চিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া থেকে বেঁেচ যেতে পারে।
খ) এর মাধ্যমে ঘরের গোপন বিষয়গুলি সংরক্ষিত থাকবে। ঘরের লোকদের
পর্দা হবে।
গ) অনুমতি প্রার্থনা দ্বারা, হঠাৎ প্রবেশের মাধ্যমে ঘরের লোকদের ঘাবড়ে
যাওয়া থেকে নিরাপত্তা লাভ হয়।
১১৩ নুর-২৮
১১৪ নুর ২৭
১১৫ বুখারী: ৫৭৭৬
৮।
অনুমতি প্রার্থনার গুরুত্ব অনেক আর তাই তার কিছু আদব এবং বিধান
রয়েছে :
ক) অনুমতি প্রার্থনার বৈধ পদ্ধতি হচ্ছে তিনবার প্রার্থনা করবে , যদি অনুমতি
দেয় তো প্রবেশ করবে অন্যথায় ফিরে আসবে। অনুমতি প্রার্থনার সময় একবার
অনুমতি চাওয়ার পর পাওয়া না গেলে সামান্য বিরতি দিয়ে পরের বার
চাইবে।অর্থাৎ মাঝখানে কিছু সময় বিরতি দিয়ে অনুমতি চাইবে।
খ) অনুমতি প্রার্থনাকারীর দরজায় কড়াঘাত বা শব্দকরে ডাক দেয়াটা অত্যন্ত
ভদ্রচিত ও কমলতার সাথে হওয়া বাঞ্চনিয়। রাসূলুলাহ স. বলেন :―
( مسلم( ٤٦٩٨ .্র إن الرفق لا يكون في شيء إلا زانه, ولا يُنزَع من شيء إلا شانه গ্ধ
কোমলতা ও নম্রতা যার সাথেই যুক্ত হবে সেই সুন্দর ও মর্যাদাবান হবে , আর
যার থেকে উঠিয়ে নেয়া হবে সেই অসুন্দর ও অসম্মানিত হবে।১১৬
গ) যখন বলা হবে: দরজায় কে ? বলবে! অমুকের পুত্র অমুক নিজের ঐ
নাম বলবে যার দ্বারা সহজে চেনা যায়। বলবে না ‘আমি’। কেননা এই শব্দ
প্রত্যেকের উপর বর্তায়। সে বুঝতে পারবে না যে কে দরজা নাড়া দিচ্ছে।
من ذا গ্ধ : وفي حديث جابر أنه طرق على النبي صلى الله عليه وسلم الباب, فقال
( كأنه كرهها. مسلم ( ٤٠١٢ ্র أنا أنا গ্ধ : فقلت: أنا, فقال
জাবের রা.-এর হাদীসে এসেছে তিনি নবীর দরজা নাড়া দিলেন নবী
বললেন―কে? আমি বললাম (আমি) নবীজী বললেন ‘আমি’ ‘আমি’। মনে হয়
তিনি অপছন্দ করলেন।১১৭
ঘ) অনুমতি প্রার্থনাকারী দরজার একেবারে সামনে দাঁড়াবে না, ডানে অথবা
বামে সরে দাঁড়াবে, দরজা খুললেই যাতে বাড়ির ভিতরের অবস্থা সামনে এসে না
পড়ে।
ঙ)অনুমতি প্রার্থনার বিষয়টি ব্যাপক, প্রত্যেকের জন্যেই সর্বাবস্থায় এটি
প্রযোজ্য। সুতরাং কেউ যদি নিজের পিতার ঘরে বা মায়ের ঘরে বা বোনের ঘরে
প্রবেশ করতে চায় তখনও অনুমতি নিতে হবে।
চ) অনুমতি প্রার্থনার ক্ষেত্রে নারীরাও পুরুষের মত, উভয়ের জন্যে একই
বিধান প্রযোজ্য।অনেক নারীরা এ ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করে থাকেন, ঘরে
অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করেন। এটি মানুষের মাঝে বহুল প্রচলিত ভুলের মধ্য
থেকে একটি।
১১৬ মুসলিম : ৪৬৯৮
১১৭ মুসলিম : ৪০১২
পানাহারের আদব
আল্লাহ্র বান্দাদের উপর যতগুলি অনুগ্রহ আছে তার মাঝে অন্যতম প্রধান
অনুগ্রহ হল পানাহার। মানুষের শরীর গঠন,বর্দ্ধন ও টিকে থাকার মূল উপাদান
হচ্ছে পানাহার। এই নেয়ামতের দাবি হল এর দাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
আর এ কৃতজ্ঞতা আল্লাহ্র প্রশংসা এবং তাঁর দেয়া বিধান পালন করার মাধ্যমে
আদায় করা যেতে পারে।এ নেয়ামতের আরো একটি দাবি হচ্ছে, এর সহায়তায়
আল্লাহ্র নাফরমানি করা যাবে না।
পানাহারের অনেকগুলো আদব ও বিধান রয়েছে, যাকে দুইভাবে ভাগ করা যেতে
পারে :
প্রমত : যে বিষয়গুলোর গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। যেমন:
১) খাদ্য এবং পানীয় জাতীয় জিনিসের এহতেরাম করা আর এই বিশ্বাস
রাখা যে এগুলি আল্লাহ্র নেয়ামত যা আল্লাহ্ তাআলা তাকে দিয়েছেন।
২) খাদ্য জাতীয় জিনিসকে অবহেলা-অসম্মান না করা ;ডাস্টবিন ও ময়লা
আবর্জনার ভিতরে না ফেলা।
৩) খাবার শুরুতে বিসমিল−াহ বলা। বিশুদ্ধ অভিমত হল: খাবার শুরুতে
বিসমিল−াহ বলা ওয়াজিব, কেননা অনেকগুলো সহীহ এবং সুস্পষ্ট হাদীস
এ নির্দেশই করে। আর এ নির্দেশের বিপরীত কোন হাদীস নেই। এ
মতের বিরুদ্ধে সর্বসম্মত ঐক্যমত্যও সৃষ্টি হয়নি যে, এর প্রকাশ্য অর্থ
থেকে বের করে দেবে। আর যে ব্যক্তি পানাহারের সময় বিসমিল−াহ
বলবে না তার পানাহারে শয়তান শরীক হবে।
বিসমিল্লাহ ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ সমূহ :―
يا غلام, سمّ اللهّ, وكل গ্ধ : عن عمر بن أبي سلمة أن النبي صلى الله عليه وسلم قال له
( البخاري ( ٤٩٥٨ .্র بيمينك, وكل مما يليك
আমর বিন আবু সালামা থেকে বর্ণিত, নবী(সঃ) তাকে বলেছেন:হে বৎস! বিসমিল−াহ বল এবং ডান হাত দিয়ে খাও।
আর খাবার পাত্রের যে অংশ তোমার সাথে লাগানো সে অংশ থেকে খাও।১১৮
إن গ্ধ : وفي حديث حذيفة −رضي الله عنه− أن النبي صلى الله عليه وسلم قال
( مسلم ( ٣٧٦١ .্র الشيطان يستحل الطعام أن لا يذكر اسم الله عليه
১১৮ বুখারী: ৪৯৫৮
অর্থাৎ, হুযাইফা রা. রসুল(সঃ) থেকে বর্ণনা
করেন, শয়তান ঐ খাবারকে নিজের জন্য হালাল মনে করে যার শুরুতে
বিসমিল−াহ বলা হয় নি।১১৯
(১) বান্দা খাবার পাত্রের যেদিক তার সাথে লাগানো সেদিক থেকে
খাবে । উপরে বর্ণিত উমর বিন আবু সালামা রা.-এর হাদীসের কারণে। আর
খাবার যদি বিভিনড়ব ধরনের হয় তা হলে অন্যদিক -যা তার সাথে লাগোয়া নয়-
থেকে খাওয়াতে কোন দোষ নেই।
(২) যদি খাবারের কোন লোকমা পড়ে যায় তবে উঠিয়ে খাবে, যদি
ময়লা লাগে ধুয়ে ময়লা মুক্ত করে খাবে। কারণ এটিই সুনড়বত এবং এর মাধ্যমেই
নবী(সঃ) নির্দেশের অনুসরণ করা হবে। নবী(সঃ) বলেন :―
إذا سقطت لقمة أحدكم فليُمِط عنها الأذى, وليأكلها, ولا يدَعْها গ্ধ
( مسلم( ٣٧٩٤ .্র للشيطان
অর্থাৎ, যদি তোমাদের কারো খাবারের লোকমা পড়ে যায় তবে তার থেকে
ময়লা দুর করবে এবং তা খেয়ে ফেলবে, শয়তানের জন্য রেখে দেবে না।১২০
(৩) খাবারের পে−ট পরিষ্কার করবে, তার ভিতর যা কিছু থাকবে মুছে
খাবে।
عن جابر رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم أمر بلعق الأصابع والصحفة,
( مسلم ( ٣٧٩٢ .্র إنكم لا تدرون في أيه البركة গ্ধ : وقال
জাবের রা. থেকে বর্ণিত যে রসূল(সঃ) আঙুল এবং
বর্তন চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন তোমরা জানো না কোনটায়
বরকত রয়েছে।١٢١
وفي حديث أنس رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم أمرنا أن نسلت
( الترمذي ( ١٧٢٥ .,্র فإنكم لا تدرون في أيّ طعامكم البركة গ্ধ : القصعة, قال
আনাস রা. রসূল(সঃ) থকে বর্ণনা করেন
রসুল(সঃ) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা
১১৯ মুসলিম : ৩৭৬১
১২০ মুসলিম : ৩৭৯৪
১২১ মুসলিম : ৩৭৯২
যেন বর্তন পরিষ্কার করে খাই। তিনি বলেন―তোমরা জানো না তোমাদের
খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে। বরকত দ্বারা উদ্দেশ্য হল যার দ্বারা
উপকার এবং পুষ্টি লাভ হয়।১২২
(৪) আঙুল ধোয়ার পূর্বে চেটে খাবে―
عن كعب بن مالك رضي الله عنه قال: رأيت رسول الله يأكل بثلاث أصابع, فإذا
( فرغ لعقها. مسلم ( ٣٧٩٠
কা’ব বিন মালেক রাদিয়াল−াহু আনহু বলেন : আমি রাসূলুল−াহ সাল−াল−াহু
আলাইহি ওয়াসাল−ামকে দেখেছি, তিনি তিন আঙুল দিয়ে খাচ্ছেন এবং খাওয়া
শেষে আঙুল চেটে খাচ্ছেন।১২৩
إذا أكل أحدكم فليلعق أصابعه, فإنه لا يدري গ্ধ : عن أبي هريرة رضي اللهّ عنه مرفوعاً
( مسلم ( ٣٧٩٣ ..্র في أيتهن البركة
আবু হুরাইরা রা. থেকে মারফু হাদীসে বর্ণিত, যখন তোমরা কেউ খাবার
খাবে তার উচিত আঙুল চেটে খাওয়া কেননা সে জানে না কোন আঙুলে বরকত
রয়েছে।১২৪
আলেমগণ বলেন : নির্বোধ-মূর্খ লোকদের আঙুল চেটে খাওয়াকে অপছন্দ
করা ও একে অভদ্রতা মনে করাতে কিছু যায় আসে না। তবে হ্যাঁ খাওয়ার
মাঝখানে আঙুল চেটে খাওয়া উচিত নয়। কেননা আঙুল আবার ব্যবহার করতে
হবে আর আঙুলে লেগে থাকা লালা ও থুতু পে−টের রয়ে যাওয়া খাবারের সাথে
লাগবে আর এটি এক প্রকার অপছন্দনীয়ই বটে।
(৫) খাবারের প্রশংসা করা মুস্তাহাব , কেননা এর মাধ্যমে খাবার
আয়োজন ও প্রস্তুত কারীর উপর একটা ভাল প্রভাব পড়বে। সাথে সাথে
আল্লাহ্র নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা হবে। রসূল(সঃ) আলাইহি
ওয়াসাল−াম কখনো কখনো এমন করতেন―
عن جابر رضي اللهّ عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم سأل أهلَه الأدُمَ, فقالوا: ما
نعم الأدُم الخلّ, نعم الأُدُم গ্ধ : عندنا إلا خلّ, فدعا به, فجعل يأكل به, ويقول
( مسلم ( ٣٨٢٤ .্র الخل
১২২ তিরমিজি : ১৭২৫
১২৩ মুসলিম : ৩৭৯০
১২৪ মুসলিম : ৩৭৯৩
জাবের (রাঃ) বর্ণনা করেন, রসূল(সঃ)
স্বীয় পরিবারের নিকট তরকারী চাইলেন। তারা বললেন, আমাদের কাছে সিরকা
ছাড়া আর কিছু নেই। তিনি সিরকা আনতে বললেন এবং তার দ্বারা খেতে
লাগলেন। অতঃপর বললেন, সিরকা কতইনা উত্তম তরকারী; সিরকা কতইনা
উত্তম তরকারী।
(৬) পানি পান কারীর জন্য সুনড়বত হল:তিন শ্বাসে পান করা। একটু
পান করার পর পাত্র মুখ থেকে দুরে সরিয়ে নিয়ে শ্বাস নিবে। অতঃপর দ্বিতীয়বার
এরপর একই ভাবে তৃতীয়বার। যেমন আনাস রা.-এর হাদীসে এসেছ―
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يتنفس في الشراب ثلاثا, وفي رواية
( البخاري ( ٥٢٠٠ ), مسلم ( ٣٧٨٢ .্র ويقول: إنه أروى وأبرأ وأمرأ গ্ধ : لمسلم
রসূল(সঃ) পান করার মাঝে তিনবার শ্বাস
নিতেন। মুসলিম শরীফের অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলতেন: এইভাবে
পান করা অধিক পিপাসা নিবারণকারী অধিক নিরাপদ অধিক তৃপ্তিদায়ক।
পানাহারের শেষে আল্লাহ্র নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ স্বরূপ তাঁর
প্রশংসা করবে। সর্বনিমড়ব স্তর হচ্ছে অন্তত আলহামদুলিল−াহ বলা।
إن الله ليرضى عن العبد أن يأكل الأكلة فيحمده عليها, أو يشرب الشربة فيحمده গ্ধ
.্র عليها
রসূল(সঃ) বলেন : যে ব্যক্তি খাবারের পর
আল্লাহ্র প্রশংসা করে।অনুরূপ পান করার পর আল্লাহ্র প্রশংসা করে। আল্লাহ্ সে
বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন।
আর যদি হাদীসে বর্ণিত কোন দোআ পড়ে তাহলে তাহবে সর্বোত্তম।
সবচেয়ে বিশুদ্ধ দোআ যা সাহাবী আবু উমামার হাদীসে এসেছে রসূল(সঃ)
আলাইহি ওয়াসাল−াম যখন দস্তরখান উঠাতেন তখন বলতেন:
্র الحمد لله كثيراً طيباً مباركاً فيه, غير مكفي ولا مودع, ولا مستغنى عنه ربّنا গ্ধ
(৭) যখন অনেক লোকের সাথে বসে পান করবে আর পান করার পর
কাউকে দিতে চাইবে তাহলে ডান পাশ্বে বসা ব্যক্তিকে দিবে, সে যদি বয়সে
ছোট হয় আর বাম পার্শ্বস্থজন তার থেকে বড়, তবুও। হ্যাঁ; যদি ছোট থেকে
অনুমতি নিয়ে বড়কে দেওয়া হয় তাহলে কোন দোষ নেই । আর যদি অনুমতি না
দেয় তাহলে তাকেই দিবে কারণ সেই আগে পাওয়ার বেশি অধিকার রাখে।
এর প্রমাণ হল সাহাবী সাহল বিন সা’দ রা.-এর হাদীস :―
أن النبي صلى الله عليه وسلم أتي بشراب فشرب منه وعن يمينه غلام, وعن يساره
فقال الغلام: لا والله! لا أوثر ্র? أتأذن لي أن أعطي هؤلاء গ্ধ : أشياخ, فقال للغلام
بنصيبي منك أحداً, قال: فتَلَّه رسول الله صلى الله عليه وسلم في يده. البخاري
(٢٤١٥)
রসূল(সঃ)-এর নিকট কিছু পানীয় আনা হল।
রসুল(সঃ) পান করলেন। রাসূলের ডান দিকে একটি
ছোট ছেলে বসা ছিল এবং বামদিকে বয়স্ক লোক। রসূল(সঃ)
ছেলেটিকে বললেন―তুমি কি আমাকে তোমার আগে তাদেরকে
দেয়ার অনুমতি দিবে ? তখন ছেলেটি বলল, না, কখনও নয়। আল্লাহ্ শপথ!
আমি আমার অংশের উপর আপনি ব্যতীত অন্য কাউকে প্রাধান্য দেব না।
বর্ণনাকারী বলেন―রসুল(সঃ) (পানপাত্র) ছেলেটির
হাতে দিয়ে দিলেন।১২৫
আর এক হাদিসে আনাস রা. বর্ণনা করেন :―
وفي حديث آخر: عن أنس رضي الله عنه أنه كان عن يمين النبي صلى الله عليه
وسلم أعرابي, وعن يساره أبو بكر, وعُمَرُ وُجَاهَه, فلما شرب النبي صلى الله عليه
وسلم قال عمر: يا رسول الله أعط أبا بكر, فأعطاه النبي صلى الله عليه وسلم
( مسلم ( ٣٧٨٤ . ,্র الأيمن فالأيمن গ্ধ: الأعرابي, وقال
এক মজলিসে রসূল(সঃ)-এর ডানে ছিলেন
এক বেদুঈন সাহাবী এবং বামে আবু বকর আর উমর ছিলেন তাঁর সোজাসুজি।
যখন নবী(সঃ) পান শেষ করলেন উমর বললেন, হে
আল্লাহ্র রাসূল আবু বকরকে দিন। রসুল(সঃ) ডানে
বসা উক্ত বেদুঈনকে দিলেন এবং বললেন: (নিয়ম হচ্ছে) আগে ডান অতঃপর
ডান। অর্থাৎ প্রমে ডান পাশের জন পাবে অত:পর তার ডান পাসের জন এবং
এভাবেই ।
قال أنس رضي اللهّ عنه: .্র الأيمنون, الأيمنون, الأيمنون গ্ধ : وفي رواية لمسلم قال
( فهي سنّة, فهي سنّة, فهي سنّة. البخاري ( ٢٣٨٣
১২৫ বুখারী: ২৪১৫
মুসলিম শরিফের এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, ডান দিকের লোক ডান
দিকের লোক ডান দিকের লোক। আনাস রা. বলেন : এটিই সুনড়বত, এটিই সুনড়বত,
এটিই সুনড়বত।১২৬
দ্বিতীয়ত : যে বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক :
১।
পানাহারে অহেতুক খরচ করা, আল্লাহ্ তাআলা বলেন―
﴾ كُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يحُِبُّ المُْسْرِفِينَ ﴿الاعراف : ٣١
অর্থাৎ : খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে
পছন্দ করেন না।১২৭
২।
প্রয়োজন ছাড়া বাম হাতে খাওয়া হারাম। বেশ কিছু হাদীস এর প্রমাণ
হিসাবে পেশ করা যেতে পারে।
(ক) বাম হাতে খাওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা―যেমন জাবের (রা.)-
এর হাদীসে মারফুতে এসেছে :―
(٣٧٦٣) .্র لا تأكلوا بالشمال, فإن الشيطان يأكل بالشمال গ্ধ
অর্থাৎ : তোমরা বাম হাতে খেয়ো না, কেননা শয়তান বাম হাতে খায়।
(খ) ডান হাতে খাওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশÑ যেমন ইবনে উমর রা.
কর্তৃক বর্ণিত মারফু হাদীসে এসেছে―
إذا أكل أحدكم فليأكل بيمينه, وإذا شرب فليشرب بيمينه, فإن الشيطان يأكل গ্ধ
( مسلم ( ٣٧٤٦ ..্র بشماله, ويشرب بشماله
অর্থাৎ: তোমরা কেউ যখন খাবে ডান হাতে খাবে যখন পান করবে ডান
হাতে পান করবে, কেননা শয়তান বাম হাতে খায়। বাম হাতে পান করে। ১২৮
এই ধরনের নির্দেশের অর্থ হল বাম হাতে খাওয়া হারাম।
(গ) বাম হাতে খেলে শয়তানের সাথে সাদৃশ্য হয়। যেমন পূর্বের হাদীসে
বর্ণিত হয়েছে। এবং অমুসলিমদের সাথেও সাদৃশ্য হয়। আর শরীয়তের নির্দেশ
মোতাবেক উভয়টিই নিষিদ্ধ ও হারাম।
(ঘ) বাম হাতে খাবার গ্রহন কারী জনৈক ব্যক্তিকে নবী(সঃ) এর বদ দোআ করা এবং এর কারণ বর্ণনা করা যে এটি অহংকার
মূলক কাজ।
১২৬ বুখারী: ২৩৮৩
১২৭ আল-আরাফ-৩১
১২৮ মুসলিম : ৩৭৬৩
عن سلمة بن الأكوع رضي الله عنه أن رجلاً أكل عند النبي صلى الله عليه وسلم
ما منعه إلا ,্র لا استطعت গ্ধ : قال: لا أستطيع, قال , গ্ধ ্র بشماله, فقال: كل بيمينك
( الكبر, قال: فما رفعها إلى فيه. مسلم ( ٣٧٦٦
অর্থাৎ সালামা বিন আকওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রসূল(সঃ)
এর সামনে বাম হাতে খাচ্ছিল। রসূল(সঃ)
বললেন, তুমি ডান হাতে খাও। সে বলল আমি পারব না। রসূল(সঃ) বললেন: আর কখনও পারবেও না। একমাত্র
অহংকারই তাকে ডান হাত দিয়ে খাওয়া থেকে বিরত রাখল। বর্ণনাকারী বলেন:
এরপর সে আর কখনো মুখের কাছে হাত উঠাতে পারেনি।১২৯
৩।
দাঁড়িয়ে পানাহার করা মাকরূহ, সুনড়বত হল বসে পানাহারকার্য সম্পনড়ব
করা।
عن أنس رضي الله عنه أن النبي نهى أن يشرب الرجل قائماً, قال قتادة: فقلنا:
( فالأكل? فقال (أنس): ذلك أشر وأخبث. . مسلم ( ٣٧٧٢
অর্থাৎ : আনাস (রাঃ)থেকে বর্ণিত, রসূল(সঃ) লোকদের দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। কাতাদাহ রা. বলেন
: আমরা বললাম তাহলে দাঁড়িয়ে খাওয়ার হুকুম কি ? আনাস বললেন সেটাতো
আরো বেশি খারাপ আরো বেশি দূষণীয়।১৩০
৪।
কোন কিছুর উপর হেলান দিয়ে আহার করা মাকরূহ। রসূল(সঃ)
বলেন―
إني لا آكل متكئاً আমি হেলান দিয়ে আহার করি না।
ইবনে হাজার রহ. বলেন : খাওয়ার জন্য বসার মোস্তাহাব পদ্ধতি হচ্ছে। দুই
হাটু গেড়ে ,দুই পায়ের পিঠের উপর বসা। অথবা ডান পা খাড়া করে বাম পা
বিছিয়ে তার উপর বসা।
৫।
খাওয়ার পাত্রে ফু দেয়া এবং তার ভিতর নি:শ্বাস ফেলা মাকরুহ।
..্র نهى أن يتنفس في الإناء, أو ينفخ فيه গ্ধ عن ابن عباس رضي الله عنهما أن النبي
( الترمذي ( ١٨١٠
১২৯ মুসলিম : ৩৭৬৬
১৩০ মুসলিম : ৩৭৭২
অর্থাৎ : ইবনে আব্বাস রা. রসূল(সঃ) থেকে বর্ণনা
করেন যে, রসুল(সঃ) খাবার পাত্রে ফু দেওয়া বা শ্বাস
ফেলতে নিষেধ করেছেন।১৩১
لا يمسكن أحدكم ذكره بيمينه وهو গ্ধ : وعن أبي قتادة رضي الله عنه مرفوعاً
( مسلم ( ٣٩٢ .্র يبول, ولا يتمسح من الخلاء بيمينه, ولا يتنفس في الإناء
আবু কাতাদাহ রা. রসূল(সঃ) থেকে বর্ণন
করছেন:তোমাদের কেউ যেন প্রস্রাব করার সময় পুরুষাঙ্গ ডান হাত দ্বারা স্পর্শ না
করে এবং ডান হাত দ্বারা যেন ইস্তেনজা না করে। অনুরূপ খাবার পাত্রে যেন শ্বাস
না ফেলে।১৩২
৬।
খাবারের দোষ বের করা ও বর্ণনা করা মাকরূহ। বরং আগ্রহ হলে
খাবে, মনে না চাইলে দোষ ধরা ব্যতীত বাদ দেবে।
طعاماً قط, كان إذا اشتهى شيئاً ρ قال أبو هريرة رضي الله عنه: ما عاب رسول الله
البخاري ( ٤٩٨ .্র أكله, وإن كرهه تركه
আবু হুরাইরা রা. বলেন : রসুল(সঃ) কখনও কোন
খাবারের দোষ বের ও বলাবলি করেননি , মনে চাইলে খেতেন। অপছন্দ হলে
রেখে দিতেন।
১৩১ তিরমিজি : ১৮১০
১৩২ মুসলিম : ৩৯২
ঘুমানো এবং জাগ্রত হওয়ার আদব
ঘুম আল্লাহ্ তাআলার একটি বিশাল নেয়ামত , এর মাধ্যমে তিনি নিজ
বান্দাদের উপর বিরাট অনুগ্রহ করেছেন। এবং তাদের জন্য সহজ করে
দিয়েছেন। আর নেয়ামতের দাবি হল শুকরিয়া আদায় করা তথা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করা। আল্লাহ্ তাআলা বলেন :
وَمِنْ رَحمَْتِهِ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا مِنْ فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ
( تَشْكُرُونَ ﴿ ٧٣ ﴾ (القصص ٧٣
তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন করেছেন যাতে তোমরা রাত্রে
বিশ্রাম গ্রহণ কর ও তার অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা
প্রকাশ কর।১৩৩
﴾ وقال سبحانه وَجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا. ﴿النبأ : ٩
আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন:তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী।১৩৪
দিনের ক্লান্তিকর চলাফেরার পর রাত্রে শরীরের প্রশান্তি শরীর সুস্থ থাকাকে
সাহায্য করে।অনুরূপ ভাবে শরীরের বর্ধন এবং কর্ম চাঞ্চল্যতেও সাহায্য করে।
যাতে করে ঐ দায়িত্ব পালন করতে পারে যার জন্য আল্লাহ্ তাআলা তাকে সৃষ্টি
করেছেন।
মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে যা কিছু অতি জরুরী ঘুম তার অন্যতম। মুমিন
বান্দা যদি ঘুমের মাধ্যমে দেহ ও মনকে আরাম দেওয়ার নিয়ত করে , যাতে করে
সে আল্লাহ্ তাআলার আনুগত্যের বিষয়ে আরো দৃঢ় হতে পারে। অতঃপর ঘুমের
সমস্ত সুনড়বত ও শরয়ী আদব পরিপূর্ণ রূপে পালন করার চেষ্টা করে , তবে তার
ঘুম এবাদত হিসাবে পরিগণিত হবে এবং সে পুণ্য লাভ করবে।
সাহাবী মুআয বিন জাবাল রা. বলতেন :―
( أما أنا فأنام وأقوم, فأحتسب نومتي كما أحتسب قومتي.البخاري ( ٣٩٩٨
আর আমি (রাতে) ঘুমাই এবং জাগ্রত হয়ে সালাত আদায় করি, জাগ্রত
থেকে সালাত আদায়ের মাধ্যমে যে ভাবে ছাওয়াবের আশা করি ঠিক তেমনি করে
ঘুমানোর মাধ্যমেও ছাওয়াবের আশা করি ।১৩৫
قال ابن حجر رحمه اللهّ: معناه أنه يطلب الثواب في الراحة كما يطلبه في التعب,
১৩৩ আল কাসাস : ৭৩
১৩৪ আন নাবা : ৯
১৩৫ বুখারী: ৩৯৯৮
ইবনে হাজার রহ. বলেন এর অর্থ হল: তিনি আরামের ভিতর পুণ্য আশা
করতেন যেমন কষ্টের ভিতর আশা করতেন।
কেননা, আরামের উদ্দেশ্য যদি এবাদত করার জন্য সাহায্য সঞ্চয় করা হয়,
তবে সে আরামের দ্বারা পুণ্য হবে। এখানে মুয়ায ইবনে জাবাল রা.-এর জাগ্রত
হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হল রাতের নামায।
ঘুমের কতিপয় আদব এবং বিধান:
(১) অধিক রাত্রি জাগরণ না করে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া মোস্তাহাব ―
রসূল(সঃ) এশার নামাযের পূর্বে ঘুমানো এবং
নামাযের পর অহেতুক গল্প-গুজব করাকে খুব অপছন্দ করতেন ।১৩৬
কিন্তু ভাল ও নেক কাজের জন্য এশার পরে জাগ্রত থাকাতে কোন ক্ষতি
নেই। যেমন মেহমানের সাথে কথা বলা অথবা ইলমী আলোচনা করা অথবা
পরিবারকে সময় দেওয়া ইত্যাদি। মোটকথা, যে জাগ্রত থাকা কোন ক্ষতির কারণ
হবে না যেমন ফজরের নামায নষ্ট হয়ে যাওয়া, সে জাগ্রত থাকাতে কোন ক্ষতি
নেই।
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপরকারিতা
ক) সুনড়বতের অনুসরণ।
খ) শরীরকে আরাম দেওয়া, কেননা দিনের ঘুম রাত্রের ঘুমের ঘাটতি পূরণ
করতে পারে না।
গ) ফজরের নামাযের জন্য খুব সহজে এবং পূর্ণ শক্তি ও চাঞ্চল্যতার সাথে
জাগ্রত হওয়া যায়।
ঘ) তাহাজ্জুদের নামাযের জন্য শেষ রাতে জাগ্রত হতে ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্য
এটি বড় সহায়ক ।
২।
প্রত্যেক মুসলমানকে সব সময় ওযু অবস্থায়ই ঘুমাতে চেষ্টা করা উচিত।
কেননা রসূল(সঃ) বারা ইবনে আযেব রা.-কে
বলেছিলেন―
( مسلم ( ٤٨٨٤ .্র إذا أخذت مضجعك فتوضأ وضوءك للصلاة গ্ধ
যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাযের ওযুর মত ওযু করবে।১৩৭
৩।
ডানদিকে পাশ ফিরে ঘুমাবে। কেননা রসূল(সঃ) বলেন :―
ثم أضطجع على شقك الأيمن.
১৩৬ বুখারী: ৫১৪
১৩৭ মুসলিম : ৪৮৮৪
অতঃপর ডান কাত হয়ে ঘুমাও।
৪।
উপুড় হয়ে ঘুমানো মাকরূহ। কেননা রসূল(সঃ)
বলেন :―
إنها ضجعة يبغضها الله عز وجل.
এটি এমন শয়ন, যাকে আল্লাহ্ তাআলা খুব অপছন্দ করেন।
৫।
ঘুমানোর সময় হাদীসে বর্ণিত আযকার ও দোয়া থেকে সাধ্যানুযায়ী
পড়ার চেষ্টা করবে। যিকির তথা আল্লাহ্র নাম নেয়া ব্যতীত ঘুমানো মাকরূহ।
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত―
্র ومن اضطجع مضجعا لم يذكر الله تعالى فيه إلا كان عليه من الله تِرَة يوم القيامة
( أبو داود ( ٤٤٠٠
যে ব্যক্তি আল্লাহ্র যিকির ছাড়া শুয়ে পড়বে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্
তাআলার পক্ষ থেকে আক্ষেপের বিষয় হবে।১৩৮
হাদীসে বর্ণিত (ঘুমানোর সময়ের) কিছু দোয়া:
ক) আয়াতুল কুরসী পড়া।
عن أبي هريرة قال: وكّلني رسول الله صلى الله عليه وسلم بحفظ زكاة
رمضان, فأتاني آت فجعل يحثو من الطعام… وذكر الحديث, وفيه أن هذا الآتي
قال له: إذا أويت إلى فراشك فاقرأ آية الكرسي, فإنه لن يزال معك من الله تعالى
صدقك, গ্ধ : حافظ, ولا يقربك شيطان حتى تصبح, فقال النبي صلى الله عليه وسلم
( البخاري ( ٣٠٣٣ .্র وهو كذوب, ذاك شيطان
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. বলেন : রসূল(সঃ)
আমাকে রমযানের ফিতরা সংরক্ষণের দায়িত্ব দিলেন। কোন এক আগন্তুক আমার
কাছে আসল, এবং অঞ্জলি ভরে খাবার (চুরি) সংগ্রহ করতে লাগল।… এরপর
পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। -তাতে আছে- আগন্তুক তাকে বলল : তুমি যখন
তোমার বিছানায় যাবে তো আয়াতুল কুরসী পড়বে, কেননা এর মাধ্যমে সর্বক্ষণ
তোমার সাথে আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে একজন হেফাজতকরী থাকবে এবং
সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে ঘেঁসতে পারবে না।
১৩৮ আবু দাউদ : ৪৪০০
রসুল(সঃ) বললেন: তোমাকে সত্য বলেছে অথচ
সে বড় মিথ্যাবাদী। সে হচ্ছে শয়তান।১৩৯
খ) সূরা এখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পড়া।
আয়েশা রা. বর্ণনা করেন:
أن النبي صلى الله عليه وسلم كان إذا أوى إلى فراشه− كل ليلة – جمع كفيه ثم
نفث فيهما, وقرأ فيهما [قل هو الله أحد] و [قل أعوذ برب الفلق] و [قل أعوذ برب
الناس], ثم مسح بهما ما استطاع من جسده, بدأ بهما على رأسه ووجهه وما أقبل
( من جسده, يفعل ذلك ثلاث مرات. . الترمذي ( ٣٣٢٤
নবী (সঃ) যখন প্রতি রাত্রিতে নিজ বিছানায় যেতেন
দুই হাতের কবজি পর্যন্ত একত্রিত করতেন অতঃপর তারমাঝে ফু দিতেন এবং
সূরা এখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়তেন । অতঃপর দুই হাত যথা সম্ভব
সমস্ত শরীরে মলে দিতেন। মাথা ,চেহারা এবং শরীরের সামনের অংশ থেকে
শুরু করতেন। এরূপ পরপর তিনবার করতেন।১৪০
গ) اللهم باسمك أموت وأحيا দোআটি পড়া।
অর্থাৎ হে আল্লাহ্ আপনার নামে মৃত্যবরণ করলাম এবং আপনার নামেই
জীবিত হব।
ঘ) নিমেড়বাক্ত দোআটি পড়া।
اللهم أسلمت نفسي إليك, وفوّضت أمري إليك, وألجأت ظهري إليك, গ্ধ
رغبة ورهبة إليك, لا ملجأ ولا مَنجى منك إلا إليك, آمنت بكتابك الذي أنزلت,
( البخاري ( ٥٨٣٦ .্র ونبيّك الذي أرسلت
―বলা। অর্থাৎ, হে আল্লাহ্ আমি নিজেকে আপনার কাছে সঁপে দিয়েছি।
আমার বিষয় আপনার কাছে সোপর্দ করেছি। আমার পিঠ আপনার সাহায্যে
দিয়েছি আপনার প্রতি আশা এবং ভয় নিয়ে, আশ্রয় নেয়ার ও আপনার শাস্তি
থেকে বাঁচার মত জায়গা আপনি ছাড়া আর কেউ নেই। আমি ঈমান এনেছি
আপনার অবতীর্ণ কিতাবের প্রতি এবং আপনার প্রেরিত নবীর প্রতি।১৪১
১৩৯ বুখারী: ৩০৩৩
১৪০ তিরমিজি : ৩৩২৪
১৪১ বুখারী: ৫৮৩৬
৬।
ঘুমের মাঝে অনাকাংখীত ও অপছন্দনীয় কিছু দেখলে রসূল(সঃ)
আলাইহি ওয়াসাল−াম পাঁচটি কাজ করতে বলেছেন।
ক) বাম দিকে তিন বার থুতু ফেলবে।
খ) أعوذ بالله من الشيطان الرجيم বলে আল্লাহ্ তাআলার কাছে আশ্রয়
চাইবে।
গ) এ স্বপেড়বর কথা কাউকে বলবে না।
ঘ) যে কাতে শোয়া ছিল সে কাত থেকে ঘুরে শোবে অর্থাৎ পার্শ্ব পরিবর্তন
করে শোবে।
ঙ) নামাজে দাঁড়িয়ে যাবে।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম র. এ পাঁচটি কাজ উলে−খ করে বলেন : যে এই
কাজগুলো করবে খারাপ স্বপড়ব তার ক্ষতি করতে পারবে না বরং এ কাজ তার
ক্ষতি দূর করে দেবে।
৭।
সন্তানদের বয়স দশ বছর হয়ে গেলে তাদের বিছানা আলাদা করে দেয়া
একান্ত আবশ্যক।রসূল(সঃ) বলেন:
مروا أولادكم بالصلاة وهم أبناء سبع سنين, واضربوهم عليها وهم أبناء গ্ধ
( أبوداود ( ٤١٨ .্র عشر, وفرّقوا بينهم في المضاجع
অর্থাৎ তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে নামাযের আদেশ দাও যখন তাদের
বয়স সাত বৎসর হবে এবং এর জন্য তাদেরকে শাস্তি দাও যখন তাদের বয়স
দশ বৎসর হবে এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।১৪২
৮।
মুসলমান অবশ্যই সর্বদা ফজরের নামাযের পূর্বে জাগ্রত হবে যেন নামায
সময় মত জামাতের সাথে ঠিকভাবে আদায় করতে পারে। এ ব্যাপারে চেষ্টা করা
এবং এতে সহায়তাকারী উপকরণাদি গ্রহন করা তার জন্য ওয়াজিব।
ذاك رجل بال الشيطان في গ্ধ : سئل النبي عن رجل نام حتى أصبَح? قال
( النسائي ( ١٥٩٠ .্র أذنيه
এক ব্যক্তি ফজর পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিল তার সম্পর্কে রসূল(সঃ) কে প্রশড়ব করা হল। রাসূল বললেন : ঐ ব্যক্তির কর্ণ-দ্বয়ে শয়তান প্রস্রাব
করে দিয়েছে।১৪৩
১৪২ আবু দাউদ : ৪১৮
১৪৩ নাসায়ী : ১৫৯০
৯।
মুসলমান ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর নিমেড়বাক্ত দোয়া পড়া
মোস্তাহাব:
الحمد لله الذي أحيانا بعد ما أماتنا وإليه النشور. গ্ধ :
,্র الحمد لله الذي ردّ علي روحي وعافاني في جسدي, وأذِن لي بذكره গ্ধ
সকল প্রশংসা ঐ আল্লাহ্র জন্য যিনি আমাকে মৃত্যু দেয়ার পর জীবিত করে
দিয়েছেন এবং তার কাছেই ফিরে যাব।
সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লার জন্য যিনি আমার আত্মাকে আমার নিকট ফিরিয়ে
দিয়েছেন , আমার শরীরেকে সুস্থ রেখেছেন এবং আমাকে তার স্মরণের অনুমতি
দিয়েছেন।
অতঃপর রসুল(সঃ)-এর অনুকরণে মিসওয়াক
করবে।
রসিকতা
সৃষ্টির শুরু থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত মানুষের জীবনাচারের প্রতি লক্ষ্য করলে
দেখা যায় যে তাদের জীবনের সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে মিশে আছে হাসি-তামাশা ও
আনন্দ-রসিকতা। এ μিড়া-কৌতুক ও আনন্দ-রসিকতা মানুষের জীবনে বয়ে
আনে এক অনাবিল প্রান চাঞ্চল্য ও উদ্যমতা। মানুষকে করে ঘনিষ্ঠ। তাদের
আবদ্ধ করে এক অকৃত্রিম ভালবাসার মায়াডোরে।
আনন্দ-রসিকতার এ মহোময় সম্পাদিত হয় সমবয়সী বন্ধু-বান্ধব,
সাথী-সঙ্গী, নিজ সন্তানাদি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মাঝে।বরং কোন
মানুষই এ আনন্দঘন কর্ম থেকে মুক্ত নয়। তবে কেউ কম আর কেউ বেশি।
মুসলমান আল্লাহ্ তাআলার বান্দা হিসাবে তার জীবনের প্রতিটি পর্বকে
সাজাতে হবে মহান আল্লাহ্ তাআলার নির্দিষ্ট রীতি অনুযায়ী। যাতে তার মধ্যে
আল্লাহ্ তাআলার উবূদিয়্যত (দাসত্ব) পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়িত হয়।
বর্তমানে মানুষের মাঝে হাসি-তামাশার প্রচলন একটু বেশি।তাই তার ধরণপ
্রকৃতি, হুকুম ও প্রকার এবং এ বিষয়ে শরয়ী দৃষ্টিকোণ কি সে সম্পর্কে জানা
আবশ্যক হয়ে দাড়িয়েছে। যাতে মুসলমানরা সেগুলো মেনে চলতে পারে ও
একঘেয়েমি দূরকারী এ সুন্দর পদ্ধতি পরিত্যাগ করতে না হয়। এবং এর শরয়ী
দিকনির্দেশনা অবলম্বন করে যেন পুণ্য অর্জন করতে পারে পাশাপাশি নিজেকে
গুনাহ থেকে বিরত রাখতে পারে।
রসিকতা তিন প্রকার:
(১)অনুমোদিত বরং প্রশংসাযোগ্য রসিকতা : আর সেটি হচ্ছে , যা ভাল
উদ্দেশ্যে, সৎ নিয়তে এবং শরয়ী নিয়ম নীতি অবলম্বন করে সম্পাদন করা হয়।
যেমন মাতা-পিতার সাথে আদবের সহিত রসিকতা করা অথবা স্ত্রী, সন্তানদের
সাথে অনুরূপ বন্ধু-বান্ধবদের সাথে তাদের অন্তরে আনন্দ-খুশির উপস্থিতির
জন্য। এগুলির দ্বারা রসিকতাকারীর পুণ্য লাভ হয়।
এই প্রকার রসিকতার অনুমোদনে প্রমাণাদি :
ক) হানযালাহ রা. এর হাদীস :
قلت: يا رسول اللهّ, نكون ্র? وما ذاك গ্ধ : وفيه أنه قال: نافق حنظلة يا رسول اللهّ, فقال
عندك تذكّرنا بالنار والجنة, حتى كأنا رأي عين, فإذا خرجنا من عندك عافسنا
الأزواج والأولاد والضيعات, نسينا كثيراً, فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم:
والذي نفسي بيده, إنْ لو تدومون على ما تكونون عندي, وفي الذكر, لصافحتكم গ্ধ
ثلاث مرات. ্র الملائكة على فرشكم, وفي طرقكم, ولكن يا حنظلة ساعة وساعة
( مسلم ( ٤٩٣٧
অর্থাৎ : -সে হাদীসে আছে- তিনি বলেন : হে আল্লাহ্র রসূল(সঃ)
হানযালাহ মুনাফেক হয়ে গেছে। রসূল(সঃ) আলাইহি
ওয়াসাল−াম বললেন: কীভাবে? আমি বললাম হে আল্লাহ্র রসূল(সঃ)
আলাইহি ওয়াসাল−াম আমরা যখন আপনার কাছে থাকি আর আপনি আমাদেরকে
বেহশত-দোযখের কথা স্মরণ করান, মনে হয় যেন চাক্ষুষ দেখতে পাচ্ছি। যখন
আপনার নিকট থেকে চলে যাই আর আমাদের স্ত্রী সন্তান সন্ততি এবং বিভিনড়ব
সাংসারিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তখন এর অনেক কিছুই ভুলে যাই। তখন
রসুল(সঃ) বললেন যার হাতে আমার জান তার শপথ:
আমার নিকট থাকা কালীন সময়ে তোমাদের অবস্থা যেমন হয় যদি তোমরা সর্বদা
ঐ অবস্থায় থাকতে এবং জিকিরের সাথে পূর্ণসময় অতিবাহিত করত, তাহলে
অবশ্যই ফেরেশতারা তোমাদের বিছানায় ও চলার রাস্তায় তোমাদের সাথে
করমর্দন করত। কিন্তু হে হানযালাহ কিছু সময় এভাবে কিছু সময় ঐ ভাবে।
কথাটি তিনবার বললেন।১৪৪
খ) যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. এর হাদীসে এসেছে :
قال: قلت: ্র? يا جابر, تزوجت গ্ধ : لما تزوّج, وسأله النبي صلى الله عليه وسلم
فهلا جارية গ্ধ : قال: قلت: بل ثيّب, يا رسول اللهّ, قال ্র? فبكر أم ثيّب গ্ধ : نعم, قال
( البخاري ( ٥٩٠٨ .্র تضاحكها وتضاحكك গ্ধ : أو قال ্র تلاعبها وتلاعبك
অর্থাৎ : যখন তিনি বিবাহ করলেন নবীজী (সঃ)
তাকে প্রশড়ব করলেন: হে যাবের তুমি কি বিবাহ করেছ? আমি বললাম: হ্যাঁ। নবীজী (সঃ)
বললেন: কুমারী না বিবাহিতা ? তিনি বলেন :
আমি বললাম: বিবাহিতা। নবীজী (সঃ)
বললেন : তুমি কুমারী মেয়ে বিবাহ করলে
না কেন? তাহলে তুমি তার সাথে খেলা করতে এবং সেও তোমার সাথে খেলা
করতো। অথবা রসুল(সঃ) বলেছেন: তুমি তার সাথে
হাসতে এবং সে তোমার সাথে হাসতো।১৪৫
গ) আয়েশা রা. এর হাদীসে এসেছে :―
১৪৪ মুসলিম : ৪৯৩৭
১৪৫ বুখারী: ৫৯০৮
أنها كانت مع النبي صلى الله عليه وسلم في سفر, قالت: فسابقته فسَبَقتُه على
أبوداود .্র هذه بتلك السبقة গ্ধ : رجلي, فلما حملت اللحم سابقته فسبقني, فقال
(٢٢١٤)
অর্থাৎ : কোন এক সফরে তিনি নবীজী (সঃ) এর
সাথে ছিলেন। আয়েশা রা. বলেন : আমি রাসূলের সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায়
প্রবৃত্ব হলাম এবং রসুল(সঃ) কে পিছনে ফেলে
দিলাম। অত:পর যখন আমার শরীর মোটা হয়ে গেল আবার প্রতিযোগিতা
করলাম রাসূল বিজয়ী হলেন। তখন বললেন: এই বিজয় ঐ বিজয়ের পরিবর্তে
(শোধ)।১৪৬
ঘ) আনাস রা. থেকে বর্ণিত:
قال أبو أسامة−أحد رواة ,্র يا ذا الأذنين গ্ধ : أن النبي صلى الله عليه وسلم قال له
( الخبر– يعني: يمازحه الترمذي ( ٣٥
নবীজী (সঃ)
একবার তাকে এ বলে সম্বোধন
করেছিলেন:(( হে দুই কান বিশিষ্ট ব্যক্তি)) হাদীসের একজন বর্ণনাকারী আবু
উসামা বলেন:অর্থাৎ রাসূল তার সাথে রসিকতা করছিলেন।১৪৭
ঙ)আনাস রা. থেকে বর্ণিত
عن أنس رضي اللهّ عنه أن رجلا استحمَلَ رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال:
فقال: يا رسول الله, ما أصنع بولد الناقة?! فقال: ,্র إني حاملك على ولد الناقة গ্ধ
{ البخاري: ١٩١٤ }.্র وهل تلد الإبل إلا النوق গ্ধ
কোন এক নবীজী (সঃ)
এর নিকট একটি
(ভারবাহী জন্তু) বাহন চাইলেন, রসুল(সঃ) বললেন
আমি তোমাকে একটি উটের বাচ্চার উপর চড়িয়ে দেব। সে বলল: হে আল্লাহ্র
রাসূল আমি উটের বাচ্চা দিয়ে কি করব? রসুল(সঃ)
বললেন: উটতো উটের বাচ্চা ছাড়া আর কিছু জন্ম দেয় না।১৪৮
(২) নিন্দাযোগ্য রসিকতা :
১৪৬ আবু দাউদ : ২২১৪
১৪৭ তিরমিজি : ৩৫
১৪৮ বুখারী: ১৯১৪
অর্থাৎ যে রসিকতা মন্দ উদ্দেশ্যে এবং অসৎ নিয়তে অথবা শরীয়তের
নির্ধারিত রীতি ভঙ্গ করে সম্পাদন করা হয় । এর উদাহরণ: যেমন মিথ্যা মিশ্রিত
রসিকতা, অথবা অন্যকে কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্যে কৃত রসিকতা।
(৩) মুবাহ রসিকতা : ঐ রসিকতা যার কোন সঠিক উদ্দেশ্য নেই, ভাল
নিয়তও নেই, কিন্তু শরীয়তের নির্ধারিত গণ্ডি থেকে বের হতে হয় না এবং নিয়মও
ভঙ্গ করা হয়না।পাশাপাশি অতিরিক্ত পরিমাণেও করে না যে অভ্যাসে পরিণত
হয়ে যাবে । এমন রসিকতা প্রশংসাযোগ্যও নয় আবার নিন্দাযোগ্যও নয়।
সুতরাং এর ভিতর কোন পুণ্য নেই। কারণ পুন্য পাওয়ার যে নীতিমালা অর্থাৎ
সঠিক উদ্দেশ্য এবং সৎ নিয়ত তা এখানে পাওয়া যায়নি অনুরূপভাবে কোন
গুনাহও হবেনা কারণ শরীয়তের বিরুদ্ধাচারণ করা হয়নি বা কোন নীতি ভাঙ্গা
হয়নি।
রসিকতার কতিপয় নীতিমালা ও আদব :
প্রমত : রসিকতা করার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোর প্রতি গুরত্ব দিতে হবে :
১।
ভাল নিয়ত অর্থাৎ রসিকতা করার সময় সংশি−ষ্ট ব্যক্তি মনে মনে এমন
ধারণা পোষন করবে যে সে আল্লাহ্ তাআলা পছন্দ করেন এমন একটি ভাল কাজ
করছে। যেমন রসিকতার মাধ্যমে নিজ ভাই, স্ত্রী, পিতা বা এমন কারো অন্তরে
খুশি-আনন্দ প্রবেশ করিয়ে তাদের কর্ম চঞ্চল করে তোলা। অথবা উক্ত তামাশা
করার মাধ্যমে কাউকে একটি ভাল কাজের নিকটবর্তী করে দেয়া।অথবা নিজ
আত্মাকে ভালকাজের জন্য শক্তি সঞ্চয়ের লক্ষ্যে প্রফুল− করা। বা এরূপ যে কোন
ভাল নিয়ত পোষন করা। আর এ মহান মূলনীতির প্রমাণ হল রসূল(সঃ)
নবীজী (সঃ)
এর বাণী
إنما الأعمال بالنيات
সমস্ত কাজের ফলাফল নিয়তে উপর ভিত্তি করে নিরোপিত হয়।
২।
রসিকতা করার ক্ষেত্রে সত্যকে অত্যাবশ্যকীয় করে নেয়া অর্থাৎ শুধুমাত্র
সত্য ও বাস্তবধর্মী রসিকতা করবে এবং মিথ্যা পরিহার করবে।
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال قالوا يا رسول الله: إنك تداعبنا? قال إني لا
( أقول إلا حقاً. الترمذي ( ١٩١٣
আবু হুরাইরা রা. বলেন: লোকেরা বলল: হে আল্লাহ্র রাসূল আপনি কি
আমাদের সাথে রসিকতা করছেন? নবীজী (সঃ)
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ
( أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهَِّ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللهََّ عَلِيمٌ خَبِيرٌ ﴿ ١٣ ﴾ (سورة الحجرات : ١٣
‘হে লোকসকল ! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী হতে সৃষ্টি
করেছি, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিনড়ব জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা
একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মাঝে যে অধিক মুত্তাকী সে-
ই আল্লাহ্র নিকট অধিক সম্মানিত। আল্লাহ্ তাআলা সবকিছু জানেন এবং
সবকিছুর খবর রাখেন।১
রসুল(সঃ) মক্কা বিজয়ে ঘোষণা করে বলেন, হে
কোরাইশ সম্প্রদায় ! আল্লাহ্ তাআলা জাহেলী অহমিকা ও বাপ-দাদার বড়াই
মিটিয়ে দিয়েছেন। সকল মানুষ আদম সন্তান, আর আদম মাটির সৃষ্টি।
আল্লাহ্ তাআলা মানুষ সৃষ্টি করে তাঁকে চেনার মত যোগ্যতা দিয়েছেন। সাথে
সাথে তিনি রব ও উপাস্য হওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন
করেছেন, যেগুলো মানুষের বিবেক, অনুভূতি ও আত্মাকে সম্বোধন করে।
মানুষকে তাঁর পরিচয় লাভ না করার কারণে শাস্তি প্রদানের জন্যে এতটুকুর
উপরই ক্ষান্ত হননি ; বরং রাসূল প্রেরণ করে কিতাব নাযিল করেছেন, যাতে
মানব প্রকৃতিকে সম্বোধন করে সঠিক ধারণার বীজ বপন করা যায়। এ বিষয়ে
প্রচুর আয়াত রয়েছে। এরশাদ হচ্ছে—
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا فِطْرَةَ اللهَِّ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لخَِلْقِ اللهَِّ ذَلِكَ
الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ﴿ ٣٠ ﴾ مُنِيبِينَ إِلَيْهِ وَاتَّقُوهُ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ
(٣١− وَلَا تَكُونُوا مِنَ المُْشْرِكِينَ ﴿ ٣١ ﴾.(الروم: ٣٠
তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত কর। আল্লাহ্ তাআলার
প্রকৃতির অনুসরণ কর, যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, আল্লাহ্
তাআলার সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটা সহজ-সরল দ্বীন, কিন্তু অধম মানুষ
জানে না। বিশুদ্ধ চিত্তে তার অভিমুখী হয়ে তাকে ভয় কর, তোমরা নামায কায়েম
কর, এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।২
১ হুজুরাত : ১৩
২ সূর আর Ñরূম : ৩০-৩১
আল্লাহ্ তাআলা মানুষের নিকট এরকমই চেয়েছেন। কিন্তু মানুষ সংকীর্ণ
বিবেক ও কুপ্রবৃত্তির কারণে এদিক-সেদিক ছুটোছুটি করে, বিভ্রান্ত হয়ে নানা পথ
ও পন্থা অবলম্বন করে। আল্লাহ্ তাআলা মানুষকে আকল-বুদ্ধি-বিবেক ও আত্মা
দিয়েছেন। যে ব্যক্তি এক দিককে অপরটির উপর প্রাধান্য দেবে, সে সঠিক রাস্তা
থেকে সরে যাবে।
ইসলামী ব্যক্তিত্বের গুণ-বৈশিষ্ট্য
আল্লাহ্ তাআলা মুসলমানের জন্য এমন কিছু গুণাবলী নির্ধারণ করেছেন,
যেগুলোর মাধ্যমে তাদের সহজেই অন্যদের থেকে পৃক করা যায়।
(১) মুসলমান আকীদা ও বিশ্বাসে দৃঢ় :—
মুসলিম আল্লাহ্কে প্রভু, ইসলামকে ধর্ম ও মোহাম্মদ (সঃ)
কে নবী ও রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করে। আল্লাহ্, তদীয় ফেরেশতাকুল,
কিতাব, রাসূলগণ, আখেরাত ও ভাল-মন্দ তাকদীরের উপর বিশ্বাস রাখে।
ঈমানের ভিত্তির উপর একজন মুসলমান জীবনকে পরিচালিত করে, যা তাকে
আচার-ব্যবহার, চলাফেরা, উদ্দেশ্য-লক্ষ্য ও লেনদেনে দিক নির্দেশনা দেবে। এর
উপরই প্রতিষ্ঠিত হবে তার জীবন-জীবিকা ও সময়। নির্ধারিত হবে তার দৃষ্টিভঙ্গি
এবং তার কাজকর্ম চলবে সুস্পষ্ট প্রামাণ্যতার উপর, যাতে কোন প্রকার
পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও চিন্তা-বিভ্রান্তি থাকবে না।
ইসলাম এ বিষয়টির উপরই বিশেষ জোর দিয়েছে ; কেননা এ জীবনে
মানুষের চলার সূচনা কি হবে সেটা একমাত্র ইসলামই নির্ধারণ করতে পারে।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهَُّ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالمُْؤْمِنَاتِ ﴿ ١٩ ﴾ (سورة
( محمد: ١٩
‘সুতরাং তুমি জেনে রাখ, আল্লাহ্ ছাড়া (প্রকৃত) কোন মাবুদ নেই, ক্ষমা
প্রার্থনা কর তোমার এবং মুমিন নর-নারীদের ত্র“টির জন্যে।’৩
আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
آَمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالمُْؤْمِنُونَ كُلٌّ آَمَنَ بِاللهَِّ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا
نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ المَْصِيرُ
( ٢٨٥ ﴾ (سورة البقرة : ٢٨٥ ﴿
৩ মুহাম্মদ : ১৯
‘রাসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তার পালনকর্তার পক্ষ
থেকে তার নিকট অবতীর্ণ হয়েছে, এবং মুসলমানরাও। সবাই বিশ্বাস রাখে
আল্লাহ্র প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, গ্রন্থসমূহের প্রতি এবং তার
পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে : আমরা তাঁর রাসূলগণের মাঝে কোন তারতম্য
করি না। তারা বলে : আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি, আমরা তোমার ক্ষমা
চাই হে আমাদের পালনকর্তা। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’৪
আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন—
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللهََّ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ فَمِنْهُمْ مَنْ هَدَى اللهَُّ
وَمِنْهُمْ مَنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلَالَةُ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ
( المُْكَذِّبِينَ ﴿ ٣٦ ﴾ (سورة النحل : ٣٦
‘আমি প্রত্যেক উম্মতের মাঝেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা
আল্লাহ্র এবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। অতঃপর তাদের মাঝে
কিছু সংখ্যককে আল্লাহ্ হেদায়েত দান করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্য
বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেছে।সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং
দেখ মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে।’৫
(২) মুসলমান এবাদতে দৃঢ়
আল্লাহ্র এবাদত করাই হল মুসলমানের জীবন, তাদের কাজকর্ম চলবে
নীতিবদ্ধতা, শৃঙ্খলা, ভারসাম্যের উপর। সে এ ধরনের এবাদতে অঙ্গীকারাবদ্ধ,
যাতে জীবনের সকল দিক অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
( وَمَا خَلَقْتُ الجِْنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ﴿ ٥٦ ﴾ (سورة الذاريات: ٥٦
‘আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি’।৬
আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন—
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمحَْيَايَ وَممََاتِي للهَِِّ رَبِّ الْعَالمَِينَ ﴿ ١٦٢ ﴾ لَا شَرِيكَ لَهُ
(١٦٣− وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ المُْسْلِمِينَ ﴿ ١٦٣ ﴾ ( سورة الأنعام : ١٦٢
‘হে নবী ! আপনি বলুন : আমার নামায, আমার কোরবানী এবং আমার
জীবন-মৃত্যু বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ্রই জন্য। তার কোন অংশীদার নেই। আমি
তা-ই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রম আনুগত্য পোষণকারী।’৭
৪ বাকারা : ২৮৫
৫ নাহল : ৩৬
৬ যারিয়াত : ৫৬
তার উপর ভিত্তি করেই মুসলমান একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্র এবাদত করে।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
( وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهََّ مخُْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ ﴿ ٥﴾ (سورة البينة : ٥
‘তাদেরকে এ ছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে
একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্র এবাদত করবে।’৮
আর তাতে রসুল(সঃ)-এর অনুসরণও থাকতে
হবে। যেমন হাদীসে রসুল(সঃ) বলেছেন—
( من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد. (رواه مسلم: ٣٢٤٣
যে ব্যক্তি এমন আমল করল যাতে আমার কোন নির্দেশ নেই তা
প্রত্যাখ্যাত।৯
(৩) মুমিন উত্তম চরিত্রের অধিকারী :—
একজন মুসলমানের ব্যক্তিত্বের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো উত্তম আখলাক ও
সুন্দর ব্যবহার। আর এ ক্ষেত্রে একমাত্র অনুসরণ করবে প্রম আদর্শ মহানবী
(সঃ)-এর, যার প্রশংসা করেছেন স্বয়ং রাব্বুল
আলামীন। এরশাদ হচ্ছে—
( وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ ﴿ ٤﴾ (سورة القلم : ٤
‘নিশ্চয় আপনি উত্তম চরিত্রের অধিকারী।’১০
আয়েশা সিদ্দীকা রা.-কে তাঁর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি
বলেন―
( كان خلقه القرآن. (رواه أحمد : ٢٣٤٦٠
‘কোরআনই ছিল তার চরিত্র।’১১
তিনি সর্বদাই উম্মতকে উত্তম চরিত্র গ্রহণ করার আদেশ দিতেন। তিনি
বলেন―
( أكمل المؤمنين إيمانا أحسنهم خلقاً. (رواه الترمذي : ١٠٨٢
‘সবচেয়ে পরিপূর্ণ মুমিন ঐ ব্যক্তি যে সবচেয়ে চরিত্রবান।’১২
৭ আনআম : ১৬২- ১৬৩
৮ বাইয়্যেনাহ : ৫
৯ মুসলিম : ৩২৪৩
১০ কলম : ৪
১১ মুসনাদে আহমদ : ২৩৪৬০
১২ তিরমিযী : ১০৮২
জনৈক ব্যক্তি তাঁর নিকট অসিয়ত তলব করলে তিনি বলেন―
اتق الله حيثما كنت, وأتبع السيئة الحسنة تمحها, وخالق الناس بخلق حسن. (رواه
( الترمذي : ١٩١٠
‘তুমি যেখানেই থাক আল্লাহ্কে ভয় কর। গুনাহ হয়ে গেলে সাথে সাথে
একটি নেক আমল করে ফেল, তা সেটি মিটিয়ে দিবে। আর মানুষের সাথে ভাল
ব্যবহার কর।’১৩
ইসলাম এবাদতের সাথে আখলাককে মিলিয়ে দিয়েছে। একজন প্রকৃত
আবেদ এবাদতের মাধ্যমে তার চরিত্র সংশোধন করে নিবে। এরশাদ হচ্ছে―
( إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالمُْنْكَرِ (سورة العنكبوت : ٤٥
‘নিশ্চয় সালাত অন্যায় ও অশালীন কাজ থেকে (আদায়কারীকে) বিরত
রাখে।’১৪
সিয়াম সম্পর্কে রসুল(সঃ) বলেন―
إذاكان يوم صوم أحدكم فلا يرفث ولا يصخب, فإن سابه أحد أوشاتمه فليقل إني
( صائم. (رواه البخاري : ١٧٨١
‘তোমরা সিয়াম পালনের দিনগুলোতে অশালীন কাজ ও শোরগোল কর না।
যদি কেউ গালি দেয় অথবা ঝগড়া করে, তাহলে বলবে―আমি রোজাদার।’১৫
হজের ব্যাপারে আল্লাহ্ তাআলা বলেন―
( فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الحَْجِّ. (سورة البقرة: ١٩٧
‘তবে সে হজের মাঝে সহবাস, দুষ্কর্ম ও কলহ করতে পারবে না।’১৬
‘এমনিভাবে উত্তম আখলাকের গুরুত্ব সম্পর্কে শরীয়তের অনেক দলীল
প্রমাণ রয়েছে। একজন প্রকৃত মুমিন উত্তম চরিত্র ও প্রশংসিত গুণাবলির অধিকারী
হবে―এটি স্বাভাবিক। উত্তম গুণসমূহ যেমন―সততা, বদান্যতা, বিনম্র আচরণ,
খারাপ বস্তু থেকে দৃষ্টি সংরক্ষণ, অশালীন কাজ থেকে দূরে থাকা, ধৈর্য,
লজ্জা―প্রভৃতি।’
১৩ তিরমিযী : ১৯১০
১৪ আনকাবুত : ৪৫
১৫ বুখারী : ১৭৮১
১৬ বাকারাহ্ : ১৯৭
(৪) মুসলমান ইলম ও প্রজ্ঞার উপর জীবন অতিবাহিত করে :―
সে অন্যদের সাথে এমন ব্যবহার করে, যেমন ব্যবহার অন্যদের থেকে আশা
করে। অন্যদের ভালোবাসে এবং তাদের কল্যাণ কামনা করে। তাদের জন্যে
দোয়া করে এবং আহ্বান করে এমন কাজের প্রতি যা তাদের জন্যে দুনিয়া ও
আখেরাতের কল্যাণ বয়ে আনে।
মুসলিম এমন স্বার্থপর হবে না যে, শুধু নিজের কল্যাণ কামনা করে, অন্যের
নেয়ামত কুক্ষিগত করার আশা করে। কখনও সে অন্যের অমঙ্গল চাইতে পারে
না। রসুল(সঃ) ও তার দাওয়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত
হয়েই একজন প্রকৃত মুসলিম মানুষকে হেদায়েত ও দিক-নির্দেশনা দেবে।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন―
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالمَْعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ المُْنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللهَِّ
( ١١٠ ﴾ (سورة آل عمران : ١١٠ ﴿
‘তোমরা সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। তোমাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্যে বের করা
হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে। এবং অসৎ কাজে বাধা
প্রদান করবে। আর আল্লাহ্র উপর ঈমান রাখবে।’১৭
আল্লাহ্ তাআলা কাজের উৎসাহ প্রদান লক্ষ্যে বলেন―
﴾ وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا ممَِّنْ دَعَا إِلَى اللهَِّ وَعَمِلَ صَالحًِا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ المُْسْلِمِينَ ﴿ ٣٣
( (سورة فصلت : ٣٣
‘ঐ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যিনি মানুষকে আল্লাহ্র
দিকে আহ্বান করে এবং নিজেও নেক আমল করে, আর বলে আমি মুসলমানদের
একজন।১৮
বিশেষত্বের ফলাফল :—
(১) অন্তরের প্রশান্তি ও অস্থিরতার ফলেই পার্থিব জীবনে প্রতিটি মানুষ সুখ-
দুঃখের সম্মুখীন হয়। মুসলিম সর্বাবস্থায় মানসিক শান্তিতে থাকে, সতত নিজেকে
আবিস্কার করে এক অনাবিল স্থিরতা ও প্রশান্তিতে।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন―
১৭ আলে ইমরান : ১১০
১৮ ফুসসিলাম : ৩৩
الَّذِينَ آَمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللهَِّ أَلَا بِذِكْرِ اللهَِّ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ ﴿ ٢٨ ﴾ (سورة
( الرعد : ٢٨
‘যারা মুমিন এবং যাদের অন্তর আল্লাহ্র জিকিরে প্রশান্তি লাভ করে। শোন!
আল্লাহ্র জিকিরেই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে থাকে।’১৯
আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন—
أَفَمَنْ شَرَحَ اللهَُّ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ فَهُوَ عَلَى نُورٍ مِنْ رَبِّهِ فَوَيْلٌ لِلْقَاسِيَةِ قُلُوبُهُمْ مِنْ ذِكْرِ
( اللهَِّ أُولَئِكَ فِي ضَلَالٍ مُبِينٍ ﴿ ٢٢ ﴾. (سورة الزمر : ٢٢
‘যে ব্যক্তির অন্তরকে আল্লাহ্ তাআলা ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দিয়েছেন
এবং সে রবের পক্ষ থেকে নূরের উপর রয়েছে।যাদের অন্তর আল্লাহ্র স্মরণের
ব্যাপারে কঠোর ,তাদের জন্যে দুর্ভোগ। তারা সুস্পষ্ট গোমরাহীতে রয়েছে’২০
অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে—
هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ السَّكِينَةَ فِي قُلُوبِ المُْؤْمِنِينَ لِيَزْدَادُوا إِيمَانًا مَعَ إِيمَانهِِمْ﴿ ٤﴾ (سورة
( الفتح : ٤
‘তিনি এমন সত্তা যিনি মুমিনগণের অন্তরে বিশেষ শান্তি দিয়েছেন। যেন
তাদের ঈমানের সাথে আরো ঈমান বেড়ে যায়।’২১
১৯ রা’দ : ২৮
২০ যুমার : ২২
২১ ফাতহ : ৪
(২) পৃথিবীতে আল্লাহ্র দাসত্বের বাস্তবায়ন :—
আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
( وَمَا خَلَقْتُ الجِْنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ﴿ ٥٦ ﴾ (الذاريات : ٥٦
‘আমি জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার এবাদতের লক্ষ্যে।’২২
তিনি আরো বলেন—
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمحَْيَايَ وَممََاتِي للهَِِّ رَبِّ الْعَالمَِينَ ﴿ ١٦٢ ﴾ لَا شَرِيكَ لَهُ
(١٦٣− وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ المُْسْلِمِينَ ﴿ ١٦٣ ﴾ (سورة الأنعام : ١٦٢
‘আপনি বলুন : আমার সালাত, কোরবানি, জীবন, মরণ সবই বিশ্ব
প্রতিপালক আল্লাহ্র জন্যে। তার কোন শরীক নেই। আমি এ মর্মেই আদিষ্ট
হয়েছি আর আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।’২৩
(৩) স্থিতিশীলতা : আল্লাহ্র পথে চলার মাধ্যমে নিরাপত্তা ও স্থিরতা অর্জিত
হয়। এরই মাধ্যমে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা যায়। আর বিপরীত পথে উল্টো ক্ষতি
হয়।
(৪) সম্মান, সাহায্য ও পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা লাভ : আল্লাহ্ বলেন—
( إِنْ تَنْصُرُوا اللهََّ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ ﴿ ٧﴾ (سورة محمد : ٧
যদি তোমরা আল্লাহ্কে সাহায্য কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে সাহায্য
করবেন এবং তোমাদের পদসমূহ দৃঢ় রাখবেন।২৪
(৫) চূড়ান্ত লক্ষ্যের বাস্তবায়ন : তা হচ্ছে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভ ও জানড়বাতে
প্রবেশ। আল্লাহ্ বলেন―
﴾ إِنَّ الَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالحَِاتِ كَانَتْ لهَُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا ﴿ ١٠٧
( (سورة الكهف : ١٠٧
‘নিশ্চয় যারা ঈমান এনে নেক আমল করে তাদের জন্য মেহমানদারিরূপে
রয়েছে জানড়বাতুল ফিরদাউস। ২৫
২২ যারিয়াত : ৫৬
২৩ আনআম : ১৬২-১৬৩
২৪ মুহাম্মদ : ৭
২৫ কাহাফ : ১০৭
সত্যবাদিতা
الصدق : আরবিতে صدق বলা হয়― مطابقة الخبر للواقع অর্থাৎ বাস্তব
অনুযায়ী সংবাদ দেয়া صدق তথা সত্যবাদিতা।
এর বিপরীতে রয়েছে الكذب তথা মিথ্যাবাদিতা। আর তা হলো বাস্তবতার
উল্টো সংবাদ দেয়া।
সত্যবাদিতার মর্যাদা :—এটি একটি মহৎ গুণ। শরিয়ত যে সকল চারিত্রিক
দিকের ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছে সেগুলোর মাঝে সত্যবাদিতা অন্যতম। এটি
একটি সুউচ্চ আদর্শ। মহামানবগণই এ গুণটি অর্জন করেন। আর অপদার্থরা এ
থেকে পিছিয়ে থাকে। এ কারণেই এটি ছিল সমস্ত নবীগণের অবিচ্ছিনড়ব গুণ। ঠিক
এর উল্টো ছিল মুনাফেকদের অবস্থা। এ বিষয়ে উৎসাহ দেয় এমন অনেক দলিল
প্রমাণ রয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন―
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللهََّ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ ﴿ ١١٩ ﴾. (سورة التوبة :
(١١٩
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।’র
আব্দুলহ ইবনে মাসঊদ থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল−াল−াহু আলাইহি
ওয়াসাল−াম বলেন―
عليكم بالصدق, فإن الصدق يهدي إلى البر, وإن البر يهدي إلى الجنة, وما
يزال الرجل يصدق ويتحرى الصدق حتى يكتب عند الله صديقاً, وإياكم والكذب,
فإن الكذب يهدي إلى الفجور, وإن الفجور يهدي إلى النار, وما يزال الرجل
( يكذب ويتحرى الكذب حتى يكتب عند الله كذاباً. (رواه مسلم : ٤٧٢١
‘তোমরা সত্যবাদিতা হও। কেননা সত্য মানুষকে পুণ্যের পথ দেখায় আর
পুণ্য জানড়বাতের পথ দেখায়। বান্দা সত্য কথাকে আঁকড়ে ধরলে এক সময় সে
আল্লাহ্র নিকট সিদ্দিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তোমরা মিথ্যা বর্জন কর।
কেননা মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে ধাবিত করে আর পাপ জাহানড়বামের দিকে
নিয়ে যায়। বান্দা মিথ্যার আশ্রয় নিতে থাকলে একসময় আল্লাহ্র দরবারে
মিথ্যাবাদী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।’
সত্যবাদিতার প্রকারভেদ :
সত্যবাদিতা তিন প্রকার।
( الصدق بالقلب ( ১ অন্তরের সততা : মোমিন বান্দা ঈমানের ক্ষেত্রে আন্ত
রিক ভাবে সত্যবাদী হবে, যাতে করে বাহ্যিক রূপ ভিতর গত অবস্থার বিপরীত
না হয় এবং আমল যেন দৃঢ় বিশ্বাসের বিপরীত না হয়।
( الصدق بالأفعال ( ২ কর্মের সততা : এটি বান্দা ও আল্লাহ্র মাঝে হতে
পারে, আবার বান্দা ও মাখলুকের মাঝেও হতে পারে। মোমিন ব্যক্তি আল্লাহ্
তাআলার হুকুমের বাস্তবায়ন ঘটাবে এবং ধোঁকা দেবে না। আর ওয়াদা করলে তা
ভঙ্গ করবে না। আল্লাহ্ বলেন―
مِنَ المُْؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللهََّ عَلَيْهِ ﴿ ٢٣ ﴾ (سورة الأحزاب :
(٢٣
মোমিনদের মাঝে এমন কতিপয় মহাপুরুষ রয়েছে যারা আল্লাহ্র সাথে কৃত
অঙ্গীকার বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।
( الصدق بالأقوال ( ৩ কথায় সততা : কোন ব্যক্তি বা¯ব— তার বিপরীত সংবাদ
না দেয়া, আর কথা ও কাজে অমিল না হওয়া। আল্লাহ্ বলেন―
﴾ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لمَِ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ ﴿ ٢
হে ঈমানদার বান্দাগণ, তোমরা যা কর না তা কেন বল ? আল্লাহ্র নিকট
কঠিন অপরাধ হলো যা তোমরা কর না, তা সম্পর্কে তোমাদের বলা।রর
সত্যের ফলাফল
সত্যের ফলাফল অনেক। তন্মধ্যে―
(১) সত্য নেক আমলের দিকে ধাবিত করে আর নেক আমল জানড়বাতের পথ
দেখায়।
(২) সত্যবাদী আল্লাহ্ তাআলা ও মানুষের নিকট প্রিয়।
(৩) সত্য মানুষকে ইহকাল ও পরকালের ক্ষতি থেকে সংরক্ষণ করে।
সত্যের বিপরীত মিথ্যা
মিথ্যা এমন একটি কাজ যা ইচ্ছাকৃত ও উপহাস―উভয় অবস্থাতেই
নিষিদ্ধ।
প্রকারভেদ : এটি বিভিনড়বভাবে হতে পারে। যেমন :―
(১) আল্লাহ্র উপর মিথ্যা-রোপ : যেমন―আল্লাহ্ তাআলার দ্বীনের ব্যাপারে
না জেনে কথা বলা, অথবা আল্লাহ্ বলেননি এমন কিছু সম্পর্কে একথা বলা যে
আল্লাহ্ তাআলা এটি বলেছেন। অথবা এভাবে বলা যে, আল্লাহ্ জানেন আমি এ
কাজটি করেছি অথচ সে কাজটি করেনি―ইত্যাদি ইত্যাদি। এহেন কাজ
মারাত্মক অপরাধ সন্দেহ নেই। আল্লাহ্ বলেন―
( قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ (سورة الأعراف: ٣٣
আপনি বলুন, আমার প্রভু প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সর্বপ্রকার অশালীন কাজ
হারাম করেছেন।ররর এরশাদ হয়েছে―
( وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللهَِّ مَا لَا تَعْلَمُونَ ﴿ ٣٣ ﴾ (سورة الأعراف : ٣٣
আর আল্লাহ্ সম্পর্কে তোমাদের না জেনে কথা বলা।’রা আল্লাহ্ তাআলা
অন্যত্র বলেন ―
( إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللهَِّ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ ﴿ ١١٦ ﴾. (سورة النحل : ١١٦
‘নিশ্চয় যারা আল্লাহ্র ওপর মিথ্যা-রোপ করে তারা সফল হবে না।’
(২) রাসূলের ওপর মিথ্যা-রোপ : এটিও মারাত্মক মিথ্যা। রসূল(সঃ)
আলাইহি ওয়াসাল−াম বলেন―
إنّ كذباً علي ليس ككذب على أحد, فمن كذب علي متعمداً فليتبوأ مقعده من
( النار. (رواه البخاري : ١٢٠٩
আমার ওপর মিথ্যা-রোপ করা অন্য সাধারণ লোকের উপর মিথ্যা-রোপ
করার মত নয়। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার ওপর মিথ্যা বলল সে যেন তার
ঠিকানা জাহানড়বামে স্থাপন করে নেয়।
(৩) মিথ্যা সাক্ষ্য : অতএব দৃঢ়তার সাথে না জেনে কোন ব্যাপারে সাক্ষ্য
প্রদান করা উচিত নয়।
( اليمين الغموس ( ৪ : ইয়ামিনে গুমুস বলা হয় অতীতের কোন ঘটনার
ব্যাপারে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়াকে।
(৫) ভিত্তিহীন কাহিনি তৈরি করা : অন্যকে হাসানো অথবা অবসর সময়
কাটানোর জন্য এ ধরনের কাহিনি তৈরি করা হয়। উলে−খিত উদ্দেশ্য হাসিলের
জন্যে সত্য ঘটনা বলাই যথেষ্ট।
(৬) না দেখে কোন কিছু দেখার দাবি করা। রাসূল (সঃ) বলেন―
إن أفرى الفرى أن يري الرجل عينيه ما لم تر.
সবচেয়ে কঠিন মিথ্যা হলো কোন ব্যক্তি স্বীয় চোখকে এমন কিছু দেখানোর চেষ্টা
করল যা চোখে দেখেনি।
(৭) স্বপড়ব না দেখে মিথ্যা স্বপেড়বর দাবি করা। নবী (সঃ) বলেন —
من تحلم بحلم لم يره كلف أن يعقد بين شعيرتين ولن يفعل.
যে ব্যক্তি কিছু না দেখে মিথ্যা স্বপেড়বর দাবি করে, পরকালে তাকে দুটি চুলের
মাঝে গিরা দিতে বলা হবে। অথচ সে তা পারবে না। এটি তার মিথ্যার শাস্তি।
ইমাম আহমদ রহ.-এর রেওয়ায়েতে আছে― عذب يوم القيامة কিয়ামতের
দিবসে তার শাস্তিস্বরূপ দুটি চুলকে গিরা দিতে বলা হবে। কিন্তু সে তা পারবে
না।
মিথ্যার শাস্তি : মিথ্যার শাস্তি প্রসঙ্গে অনেক প্রমাণ রয়েছে। সামুরা ইবনে
জুনদুব রা. রসুল(সঃ)-এর স্বপড়ব বর্ণনা করছেন। তার
বর্ণনা নিুরূপ—
إنه آتاني اللية آتيان, وإنهما قالا لي : انطلق … , قال : فانطلقنا فأتينا على
رجل مستلق لقفاه, وإذا آخر قائم عليه بكلوب من حديد, وإذا هو يأتي أحد شقي
وجهه فيشرشر شدقه إلى قفاه, ومنخره إلى قفاه, وعينه إلى قفاه ثم يتحول إلى
الجانب الآخر فيفعل به مثل ما فعل بالجانب الأول, فما يفرغ من ذلك الجانب
حتى يصح ذلك الجانب كما كان, ثم يعود عليه فيفعل مثل ما فعل في المرة
( الأولى. (رواه البخاري : ٦٥٢٥
রাত্রিকালে আমার নিকট দুইজন আগন্তুক এসে বললেন, চলুন। অতঃপর
আমরা চলতে চলতে চিৎ হয়ে শায়িত এক ব্যক্তির নিকট পৌঁছলাম, আরেক
ব্যক্তি তার কাছে লোহার হুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে শায়িত ব্যক্তির চেহারার
একপার্শ্বে এসে চোয়াল, নাক ও চক্ষু হুক দ্বারা ঘাড়ের পিছনে টেনে নিয়ে যায়।
অতঃপর অপর পার্শ্বে গিয়ে এমনটিই করে। অপর পার্শ্ব শেষ করার পূর্বেই প্রম
পার্শ্ব ঠিক হয়ে যায়। অতঃপর আগের মত আবার শুরু করে। নবিজি বলেন :
আমি বললাম ‘‘সুবহানাল−াহ’’ এরা দু’ জন কারা ? ফেরেশতারা বললেন : আমরা
অচিরেই এদের সম্পর্কে আপনাকে বলব। শুনুন―যে ব্যক্তির চোয়াল, নাক ও
চক্ষু টেনে উঠিয়ে ঘাড় পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয়েছে, সে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হয়ে
একটি মিথ্যা কথা প্রচার করে দেয়। ফলে তা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে।ার
يشرشر শব্দের অর্থ يقطع অর্থাৎ টুকরা টুকরা করে কেটে ফেলা।
মিথ্যার ভয়াল পরিণতি :
মিথ্যার খারাপ পরিণতি অনেক। তন্মধ্যে―
(১) মিথ্যা মোনাফেকদের খাসলত বা অভ্যাস।
(২) মিথ্যা যে ব্যক্তির অভ্যাসে পরিণত হয় আল্লাহ্র নিকট তার নাম
মিথ্যাবাদীদের কাতারে লেখা হয়। এটি অত্যন্ত খারাপ দিক। কোন ব্যক্তি তার
পরিবার অথবা সঙ্গীদের নিকট মিথ্যাবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হতে চায় না।
অতএব সে কীভাবে তার খালেকের নিকট এমনটি হতে চায় ?
(৩) মিথ্যাবাদীর সাক্ষ্য অগ্রহণযোগ্য।
(৪) কখনো কখনো দেখা সে সত্য বললেও তা গ্রহণ করা হয় না। কেননা
লোকজন তার কথার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। ইবনে মুবারক রহ. বলেন :
মিথ্যার সর্বপ্রম শাস্তি হলো তার সত্য কথাও গ্রহণ না করা।
মিথ্যা থেকে নিষ্কৃতির উপকরণ:
মিথ্যা থেকে মুক্তি লাভের অনেক পথ রয়েছে। নিমেড়ব কয়েকটি উলেখ করা
হল:
(১) এহেন মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্যে আল্লাহ্র নিকট সাহায্য
প্রার্থনা।
(২) মিথ্যাবাদীর ভয়ানক পরিণতির কথা চিন্তা করা।
(৩) আল্লাহ্ তাআলাকে পর্যবেক্ষক মনে করে এ কথা চিন্তা করা যে, তার
ফেরেশতা বান্দাদের সবকিছু লিপিবদ্ধ করেন।
(৪) ভবিষ্যতে মিথ্যাবাদীর সর্বপ্রকার কথা ও কাজ অগ্রহণযোগ্য বলে
বিবেচিত হওয়ার বিষয়টি অনুধাবন করা। সাথে সাথে মানুষের নিকট হেয়
প্রতিপনড়ব হওয়ার দিকটিও বিবেচনা করা।
(৫) একথা চিন্তা করা যে, প্রকৃত শান্তি ও মুক্তি একমাত্র সত্যের মাঝেই।
চাই তা দুনিয়াতে হোক কিংবা আখেরাতে, যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে মিথ্যার মাঝে
মুক্তি দেখা যায়।
(৬) মিথ্যার দিকে আহ্বানকারী সকল কাজ থেকে দূরে থাকা। সে কাজগুলো
নিুরূপ : অশালীন কাজে জড়িয়ে পড়া, যা তাকে মিথ্যা বলে ওজর পেশ করতে
বাধ্য করে। অধিক পরিমাণে অঙ্গীকার করা, যা তাকে অঙ্গীকার ভঙ্গ করার
ব্যাপারে সাহায্য করবে। মিথ্যাবাদী বন্ধুদের সাথে উঠা-বসা করা। অথবা ঐ
সকল লোকদের সাথে চলা যারা তাকে মিথ্যার প্রতি উৎসাহ দান করে অথবা
তার মিথ্যা কথা শুনে।
ধৈর্য
ধৈর্য ব্যতীত কোন ব্যক্তি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। ইহকাল ও
পরকালের কল্যাণ অর্জনে সে ধৈর্যের মুখাপেক্ষী। কেননা আমল অল্প হোক কিংবা
বেশি, তা আদায় করতে হলে উপযুক্ত ধৈর্যের প্রয়োজন। তাইতো এর প্রতি
উৎসাহ দিয়ে অনেক আয়াত ও হাদীস বর্ণিত হয়েছে ।
ইবনে মাসঊদ রা. বলেন—
الصبر نصف الإيمان.
ধৈর্য ঈমানের অর্ধেক।
আলেমগণ বলেন, ঈমানের অর্ধেক ধৈর্য ও বাকি অর্ধেক শুকরিয়া।
صبر শব্দের আভিধানিক অর্থ حبس (আটকানো) كف (ফিরানো) منع (বাধা
প্রদান)
শরিয়তের পরিভাষায় صبر (ধৈর্য) পাঁচ ভাগে বিভক্ত।
(১) ওয়াজিব ধৈর্য : এটি আবার তিন প্রকার।
(ক) আলাহর আনুগত্যে ধৈর্যধারণ। অর্থাৎ আলাহর হুকুম বাস্তবায়নে
নিজেকে নিবেদিত রাখা। যেমন, মুসলিমদের সাথে জামাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত
আদায় করা। যাকাত আদায় ও পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা।
(খ) গুনাহ থেকে ধৈর্যধারণ। অর্থাৎ পাপে জড়িত হওয়া থেকে নিজেকে
নিয়ন্ত্রণ করা। যেমন হারাম দৃষ্টি থেকে ধৈর্যধারণ, অবৈধ সম্পদ ছেড়ে দেয়া।
গীবত ও খারাপ বন্ধু-বান্ধব পরিত্যাগ―ইত্যাদি।
(গ) আলাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিপদাপদের উপর ধৈর্যধারণ। সর্ব সম্মতি
μমে এটি ওয়াজিব। অর্থাৎ হতাশা ও নৈরাশ্য প্রকাশ করা থেকে নিজেকে
সংরক্ষণ করা। কোন-রূপ অভিযোগ পেশ করা থেকে জিহ্বাকে এবং আলাহর
অসন্তুষ্টির কারণ হয় এমন কাজ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হেফাজত করা। যেমন―গাল
চাপটানো , জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলা প্রভৃতি। আত্মীয়Ñস্বজন কিংবা সম্পদ
হারানো এবং অসুস্থতার উপর ধৈর্যধারণ এ প্রকারের অন্তর্ভুক্ত, মানুষের কষ্ট
দেয়াও এর আওতাভুক্ত।
صبر তথা ধৈর্যের বিপরীত হলো― تسخط তথা রাগ প্রকাশ করা, অভিযোগ
করা, আলাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়া এবং উৎকন্ঠা ও নৈরাশ্য ব্যক্ত
করা। এর কারণে প্রতিদান নষ্ট হয়ে যায় , বিপদ Ñ মুসীবত আরো বেড়ে যায়
এবং ঈমান হ্রাস পায়।
নেক কাজ করা ও অন্যায় Ñ অসৎ কাজ থেকে ফিরে থাকা সম্পর্কিত ধৈর্য
বিপদ-আপদের উপর ধৈর্য থেকে উত্তম। এ অভিমত প্রকাশ করেছেন সাইদ
ইবনে জোবায়ের, মাইমূন ইবনে মেহরান প্রমুখ। ভাল কাজে ধৈর্যধারণ হারাম
থেকে বেঁচে থাকার ধৈর্য থেকে উত্তম।
(২) মোস্তাহাব ধৈর্য : এটি হচ্ছে মাকরূহ কাজ ছেড়ে দেয়া ও মোস্তাহাব
আমলের ধৈর্য। যেমন―অপরাধীর মোকাবেলায় তার অনুরূপ অপরাধ না করা।
(৩) হারাম ধৈর্য : যেমন―মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত খানা-পিনা পরিত্যাগ করা,
ধ্বংসাত্মক বস্তুর উপর ধৈর্যধারণ। যেমন―আগুন অথবা পরিবারের কেউ অশীল
কাজ করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ ।
(৪) মাকরূহ ধৈর্যধারণ: মাকরূহ কাজে অথবা মোস্তাহাব ছেড়ে দেয়ার উপর
ধৈর্যধারণ।
(৫) মুবাহ (জায়েজ) ধৈর্য : ক্ষতি হয় না এ পরিমাণ সময় খাবার গ্রহণ না
করা অথবা কিছু সময় ঠান্ডার উপর ধৈর্যধারণ।
ধৈর্যের ফযীলত :
ধৈর্য ধারণের ফজিলত অনেক। নিমেড়ব কয়েকটি উলেখ করা হল :―
(১) ধৈর্যের প্রতিদান অসীম। আলাহ তাআলা বলেন―
( إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ ﴿ ١٠ ﴾ (سورة الزمر : ١٠
‘একমাত্র ধৈর্যশীলদের প্রতিদান হিসাব ছাড়া দেয়া হবে।’২৬
যেহেতু সিয়াম ধৈর্যের অন্তর্ভুক্ত, তাই এর প্রতিদানও বিনা হিসেবে দেয়া
হবে।
নবী করিম সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন, বনী আদমের প্রতিটি
আমলের প্রতিদান দশগুণ থেকে সাত শত গুন দেয়া হবে। আলাহ বলেন: সিয়াম
ব্যতীত। কেননা সেটি আমার জন্যে, আর এর প্রতিদান আমিই দেব।
(২) ধৈর্যশীলদের জন্যে মহা সুসংবাদ : আলাহ বলেন―
وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ ﴿ ١٥٥ ﴾ الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا للهَِِّ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
﴾ ١٥٦ ﴾ أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحمَْةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ المُْهْتَدُونَ ﴿ ١٥٧ ﴿
١٥٧− (سورة البقرة : ١٥٥
‘আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন, যারা মুসীবতে আক্রান্ত হরে বলে― إنا
لله وإنا إليه راجعون অর্থাৎ আমরা আলাহর জন্যেই এবং পরিশেষে তার কাছেই
২৬ যুমার: ১০
ফিরে যাব। প্রভুর পক্ষ থেকে তাদের উপর শান্তি ও রহমত রয়েছে এবং তারাই
হেদায়েত প্রাপ্ত।’২৭
(৩) আলাহর বিশেষ সঙ্গ ও ভালোবাসা : আলাহ বলেন―
( وَاصْبِرُوا إِنَّ اللهََّ مَعَ الصَّابِرِينَ ﴿ ٤٦ ﴾ (سورة الأنفال: ٤٦
‘তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আলাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’২৮ মহান আলাহ
তাআলা আরো বলেন:
﴾ وَاللهَُّ يحُِبُّ الصَّابِرِينَ ﴿ ١٤٦
আলাহ তাআলা ধৈর্যশীলদের পছন্দ করেন।২৯
(৪) ধৈর্য উত্তম সম্পদ। আলাহ বলেন―
( وَلَئِنْ صَبَرْتُمْ لهَُوَ خَيْرٌ لِلصَّابِرِينَ ﴿ ١٢٦ ﴾ (سورة النحل : ١٢٦
আর যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর তাহলে তা ধৈর্যশীলদের জন্য উত্তম।৩০
রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন―
( وما أعطي أحد عطاء خيراً وأوسع من الصبر. (رواه البخاري : ١٣٧٦
কোন বান্দাকে ধৈর্যের মত উত্তম সম্পদ অন্য কিছু দেয়া হয়নি।৩১
(৫) আলাহ তাআলা ধৈর্যশীলদের উত্তম প্রতিদানের ওয়াদা করেছেন। তিনি
বলেন―
وَلَنَجْزِيَنَّ الَّذِينَ صَبَرُوا أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿ ٩٦ ﴾. (سورة
( النحل : ٩٦
অবশ্যই ধৈর্যশীলদের আমলের চেয়েও উত্তম প্রতিদান দেয়া হবে।৩২
সিয়াম সাধনায় ধৈর্যের অনুশীলন :
ধৈর্যের প্রকারসমূহের মাঝে সিয়াম সাধনা অন্যতম। কেননা এর মাঝে তিন
প্রকার ধৈর্যই বিদ্যমান। এটি আলাহর আনুগত্যের উপর ধৈর্য ধারণের প্রকৃত
স্বরূপ। আবার বান্দা নফ্সের চাহিদার বিপরীত অবস্থান নেয় ফলে এটি গুনাহ
থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে সবরের স্বরূপ।পাশাপাশি নির্ধারিত কষ্ট-মুসীবতের
উপর ধৈর্যধারণও এর মাঝে পাওয়া যায়। কেননা রোযাদারকে ক্ষুধা ও তৃষ্ণার
কষ্ট সহ্য করতে হয়। এ কারণে নবী সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম সিয়ামের
২৭ বাকারা : ১৫৫-১৫৭
২৮আনফাল : ৪৬
২৯ আল ইমরান : ১৪৬
৩০ নাহল : ১২৬
৩১ বুখারী : ১৩৭৬
৩২ নাহল : ৯৬
মাসকে সবরের মাস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত
নবী সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন―
صوم شهر الصبر وثلاثة أيام من كل شهر صوم الدهر. (رواه أبو داؤد :
(٢٠٧٣
‘সবর মাস তথা রমযান মাসের রোযা এবং প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখা পূর্ণ
এক বছর রোযার সমতুল্য।’ ৩৩
ধৈর্য অর্জনে মুজাহাদার প্রয়োজন :
ধৈর্যের জন্যে মোজাহাদা ও অনুশীলনের প্রয়োজন। ভাল কাজ করা, খারাপ
কাজ ছেড়ে দেয়া, দুঃখ-বেদনা ও মুসীবতের সময় এবং মানুষ কষ্টে আμান্ত
হলে―সর্বক্ষেত্রে এটি প্রয়োজন। অবশ্যই এ সমস্ত কাজে মানুষকে কষ্ট করতে
হয়। কিন্তু ধৈর্যের পথ অবলম্বন করার স্বরূপ আলাহ তাআলা তাকে সাহায্য
করেন। অতঃপর দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম পরিণতি লাভ করে। রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম বলেন―
( ومن يتصبر يصبره الله. (رواه البخاري : ١٣٧٦
যে ব্যক্তি ধৈর্যের অনুশীলন করে, আলাহ তাকে ধৈর্যধারণের তৌফিক দিয়ে
দেন।৩৪
ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্যে আলাহ তাআলার নিকট সাহায্য প্রার্থনা
করা প্রয়োজন। কেননা তিনি ধৈর্যদানকারী ও সাহায্যকারী। আলাহ বলেন―
( وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللهَِّ (سورة النحل : ١٢٧
তুমি ধৈর্যধারণ কর। আলাহর ইচ্ছাই তোমার ধৈর্যধারণের শক্তি। ৩৫
আলাহ তাআলা আপন জাতির প্রতি মুসা আ.-এর বক্তব্য নকল করে
বলেন—
( اسْتَعِينُوا بِاللهَِّ وَاصْبِرُوا ﴿ ١٢٨ ﴾ (سورة الأعراف : ١٢٨
‘তোমরা আলাহর সাহায্য কামনা কর এবং ধৈর্য ধারণ কর।’৩৬
ভাল মানুষের ধৈর্য ও মন্দ লোকের ধৈর্যের মাঝে পার্থক্য :
ভাল মানুষ আলাহর আনুগত্যে ধৈর্য ধারণকরে। আর মন্দ মানুষ শয়তানের
আনুগত্যে ধৈর্য ধরে। মন্দ লোকেরা কুপ্রবৃত্তির পিছনে অধিক ধৈর্য ধরে। আর
আলাহর আনুগত্যে খুব কম সময় ধৈর্য ধরে। তারা শয়তানের আনুগত্যে সবকিছু
৩৩ আবু দাউদ : ২০৭৩
৩৪ বুখারী : ১৩৭৬
৩৫ নহল : ১২৭
৩৬ আ’রাফ : ১২৮
প্রচুর পরিমাণে খরচ করে। কিন্তু আলাহর পথে সামান্য বস্তুও খরচ করার উপর
ধৈর্যধারণ করে না। নফ্সের চাহিদা পূরণ করতে অনেক কষ্ট সহ্য করে, কিন্তু
আলাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনে কোন কষ্ট করতে চায় না।
নেয়ামতের উপর ধৈর্যধারণ :
অনেকে মনে করে ধৈর্য কষ্টদায়ক বিষয়ের সাথেই সংশিষ্ট। এটি সম্পূর্ণ ভুল
ধারণা। যেভাবে কষ্টের উপর ধৈর্য ধরতে হয়, ঠিক তেমনিভাবে নেয়ামত ও
আনন্দদায়ক বিষয়ের উপর ধৈর্য ধারণ করতে হয়। বরং এ ব্যাপারে ধৈর্যধারণ
কষ্টের সময়ের ধৈর্যের চেয়ে বেশি কঠিন। আর এ কারণেই সত্যবাদীগণ এ গুণে
গুণান্বিত হয় এবং অন্যরা এর থেকে গাফেল থাকে। কারণ নেয়ামতের উপর
সবর করার বিষয়টি শক্তি সামর্থ্যরে সাথে সম্পৃক্ত। শায়খুল ইসলাম ইবনে
তাইমিয়া রহ. বলেন―
والعبد مأمور بالصبر في السراء أعظم من الصبر في الضراء
মানুষের সুসময়ে ধৈর্যধারণ মুসীবতে ধৈর্যধারণের চেয়ে আরো অধিক
গুরুত্বপূর্ণ। আলাহ তাআলা বলেন―
وَلَئِنْ أَذَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنَّا رَحمَْةً ثُمَّ نَزَعْنَاهَا مِنْهُ إِنَّهُ لَيَئُوسٌ كَفُورٌ ﴿ ٩﴾ وَلَئِنْ أَذَقْنَاهُ
نَعْمَاءَ بَعْدَ ضَرَّاءَ مَسَّتْهُ لَيَقُولَنَّ ذَهَبَ السَّيِّئَاتُ عَنِّي إِنَّهُ لَفَرِحٌ فَخُورٌ ﴿ ١٠ ﴾ إِلَّا الَّذِينَ
صَبَرُوا وَعَمِلُوا الصَّالحَِاتِ أُولَئِكَ لهَُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ ﴿ ١١ ﴾. (سورة هود :
(١١−٩
আমি মানুষকে অনুগ্রহ করার পর আবার তা ছিনিয়ে নিয়ে গেলে সে নিরাশ
ও অকৃতজ্ঞ হয়ে যায়। আর মুসীবতের পর নেয়ামত প্রদান করলে সে বলে, আমা
থেকে দূরাবস্থা চলে গেল। সে খুশি হয় এবং গর্ব করে। তবে যারা ধৈর্যধারণ
করে এবং নেক আমল করে তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহান প্রতিদান।৩৭
সুদিনে নেয়ামতের উপর ধৈর্যের দিক সমূহ :
(১) নেয়ামতের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না হওয়া এবং তা পেয়ে ধোঁকায়
না পড়া। গর্ব ও অহংকার না করা। অকৃতজ্ঞ না হওয়া এবং এমনভাবে খুশি না
হওয়া, যা দেখে আলাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হন।
৩৭ হুদ : ৯-১১
(২) নেয়ামত অর্জনে সম্পূর্ণ ডুবে না পড়া। যার ফলে অন্যান্য দিকসমূহ
থেকে গাফেল হয়ে হক ও বাতিলের পার্থক্য না করে তাতে ডুবে থাকা হয়।
(৩) আলাহ তাআলার হক আদায়ে ধৈর্যধারণ।
(৪) হারাম কাজে তা খরচ করা থেকে নিজেকে আঁকড়ে রাখা। নিজের
নফ্সকে এমনভাবে প্রবৃত্তির পিছনে ছেড়ে না দেয়া, যা তাকে হারাম পথে ধাবিত
করে।
ধৈর্যের আদব সমূহ :
ধৈর্যধারণের অনেক আদব রয়েছে।
(১) মুসীবত আসার প্রম ধাপেই ধৈর্যধারণ। নবী করিম সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম বলেন :―
( إنما الصبر عند الصدمة الأولى. (رواه البخاري : ١٢٠٣
প্রম আঘাতের ধৈর্যধারণই প্রকৃত ধৈর্যধারণ।৩৮
(২) মুসীবতের সময় “ইনড়বালিলাহ” পড়া। আলাহ তাআলা বলেন―
( ﴿الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا للهَِِّ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ ﴾ (سورة البقرة : ١٥٦
“যখন তাদের উপর মুসীবত আসে তখন তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আলাহর
জন্য এবং আমরা তার দিকেই ফিরে যাব।৩৯
উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত নবী করিম সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম
বলেন―কোন মুসলিম মুসীবতে পড়লে যদি আলাহর নিদের্শ অনযু ায়ী إنا لله وإنا
إليه راجعون এবং নিুোক্ত দোয়া পাঠ করে তাহলে আলাহ তাকে উত্তম বস্তু দান
করবেন। اللهم أجرني في مصيبتي واخلف لي خيراً منها উম্মে সালামা বলেন,
যখন আবু সালামা ইন্তেকাল করলেন তখন আমি বললাম মুসলিমদের মাঝে আবু
সালামার চেয়ে উত্তম আর কে-ই বা আছে ? অল্প সময়ের মাঝেই আলাহ তাআলা
আমার জন্যে রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামকে নির্ধারণ করলেন।
(৩) মুসীবতের সময় জবান ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ স্থির থাকা। তবে উঁচু আওয়াজ
ও চিৎকার-চেঁচামেচি না করে কাঁদা বৈধ।
১ বুখারী : ১২০৩
২ বাকারাহ্ : ১৫৬
সচ্চরিত্র
عفة অর্থ হারাম ও অসুন্দর কাজ থেকে নিজেকে সংরক্ষণ করা।
রসুল(সঃ) সাহাবাগণকে সচ্চরিত্রবান হওয়ার
আদেশ করতেন। আবু সুফিয়ান রা. থেকে বর্ণিত, হিরাক্ল বাদশা তাকে নবী
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, নবী তোমাদেরকে কি করার আদেশ দেয় ? আমি
বললাম তিনি বলেন―‘তোমরা এক আল্লাহ্র এবাদত কর, তার সাথে কাউকে
শরিক করো না। তোমাদের পূর্বপুরুষ যা বলতেন তোমরা তা ছেড়ে দাও। আর
আমাদেরকে সালাত, সততা ও সচ্চরিত্র ও আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার আদেশ
করেন।’
নবী করিম সাল−াল−াহু আলাইহি ওয়াসাল−াম প্রভুর নিকট দোয়া করতেন—
( اللهم إنى أسألك الهدى والتقى والعفاف والغنى. (رواه مسلم : ٤٨٩٨
হে আল্লাহ্ আমি আপনার নিকট হেদায়েত, তাকওয়া, সচ্চরিত্র ও অভাবমুি
ক্তর প্রার্থনা করছি।
সচ্চরিত্রের প্রকার সমূহ :
(১) হারাম খাওয়া থেকে বিরত থাকা : এটি ওয়াজিব। এর উপকারিতা
হলো জাহানড়বাম থেকে মুক্তি। কেননা, যে দেহ হারাম দ্বারা লালিত হয় তার জন্য
জাহানড়বামই উপযুক্ত স্থান। হারাম খাদ্য থেকে বেঁচে থাকলে দোয়া কবুল হয়।
এবং আল্লাহ্ বিশেষভাবে তাকে হেফাজত করেন।
(২) ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত থাকা : আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
( لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلحَْافًا (سورة البقرة : ٢٧٣
তারা মানুষের কাছে কাকুতি-মিনতি করে ভিক্ষা চায় না।াররর
আউফ ইবনে মালেক রহ. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল−াল−াহু আলাইহি
ওয়াসাল−াম তাকে সহ কয়েকজন সাহাবিকে বললেন : ? ألا تبايعون তোমরা
কেন বাইআত গ্রহণ করনা? সাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল আমরা তো
বাইআত গ্রহণ করেছি। নতুন করে কোন বিষয়ে আপনার হাতে বাইআত গ্রহণ
করব ? তিনি বললেন, তোমরা মানুষের নিকট কিছু চেওনা।
উপকারিতা :
ক্স আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো কাছে আশ্রয় না নেয়া।
ক্স তাঁর উপর সত্যিকারার্থে ভরসা করা।
ক্স নিজের সম্মান রক্ষা করা।
ক্স মাখলুকের নিকট ভিক্ষা করার লাঞ্ছনা থেকে নিজেকে হেফাজত করা।
এক্ষেত্রে মানুষ কয়েক ভাগে বিভক্ত।
সকলে এক পর্যায়ের নয়। কারো ক্ষেত্রে ভিক্ষা না করা ওয়াজিব। যেমন
প্রয়োজন না হলে সম্পদ না চাওয়া। রসুল(সঃ) বলেন,
যে ব্যক্তি সম্পদ বাড়ানোর জন্যে মানুষের নিকট ভিক্ষা চায়, সে যেন আগুনের
জ্বলন্ত কয়লা চাইল। অতএব, তা কম করুক বা বেশি করুক সেটা তার ইচ্ছা।
কারো কারো ক্ষেত্রে ভিক্ষা ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব নয়। তাদের ক্ষেত্রে ভিক্ষা
ছেড়ে দেয়া মর্যাদার বিষয়। যেমন ইতিপূর্বে উলে−খিত আউফ ইবনে মালেকের
রেওয়ায়েতে আছে―
فلقد رأيت بعض أولئك النفر يسقط سوط أحدهم فما يسأل أحداً يناوله إياه.
( (رواه مسلم : ١٧٢٩
আমি তাদের কাউকে কাউকে দেখেছি ঘোড়ায় আরোহিত অবস্থায় হাতের
লাঠি পড়ে গেলে, তা উঠিয়ে দেয়ার জন্যে অন্য কাউকে বলতেন না।রী
(৩) গোপনাঙ্গের পবিত্রতা : এর উদ্দেশ্য হচ্ছে অশ্লীল কাজ ও উপকরণ
থেকে গোপনাঙ্গ সংরক্ষণ করা। এটি ওয়াজিব। আল্লাহ্ বলেন―
( وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِينَ لَا يجَِدُونَ نِكَاحًا (سورة النور: ٣٣
যারা বিবাহ করতে পারে না, তারা যেন নিজেদেরকে হেফাজত করে।ী তিনি
আরো বলেন―
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيحَْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لهَُمْ إِنَّ اللهََّ
( خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ ﴿ ٣٠ ﴾ (سورة النور : ٣٠
(হে নবী) আপনি মোমিন পুরুষদের বলেন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি নিচু
করে রাখে এবং তাদের গোপনাঙ্গ হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্যে পবিত্র
পন্থা। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাআলা তাদের কর্ম সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত।ীর
উপকারিতা :
ক্স গোপনাঙ্গের হেফাজতকারীকে আল্লাহ্ তাআলা আরশের নীচে ছায়া
দেবেন : রসুল(সঃ) বলেন―
سبعة يظلهم الله في ظله يوم لا ظل إلا ظله …. ورجل دعته امرأة ذات منصب
( وجمال, فقال : إني أخاف الله. (رواه البخاري : ١٣٣٤
সাত প্রকার ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তাআলা আরশের নীচে ছায়া দেবেন। তাদের
মাঝে ঐ ব্যক্তিও অন্তর্ভুক্ত যাকে কোন সুন্দরী সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারী কু-কর্মের
দিকে আহ্বান করলে সে বলে, إني أخاف الله অর্থাৎ, আমি আল্লাহ্কে ভয়
করি।ীরর
ক্স জানড়বাতে প্রবেশের মাধ্যম : নবী করিম সাল−াল−াহু আলাইহি ওয়াসাল−াম
বলেন, যে ব্যক্তি দুই চোয়ালের মধ্যকার মুখ ও দুই পায়ের মধ্যকার গুপ্তাঙ্গ
হেফাজতের জিম্মাদার হলো, আমি তার জানড়বাতে প্রবেশের দায়িত্ব নিলাম।
গোপনাঙ্গ হেফাজতের উপকরণসমূহ :
ক্স দৃষ্টির হেফাজত।
ক্স যৌবনে পদার্পণের সাথে সাথে দ্রুত বিবাহ।
ক্স বিবাহে অপারগ হলে সিয়াম সাধনা।
ক্স নারীর পূর্ণ হিজাব গ্রহণ।
ক্স বেশির ভাগ সময় ঘরে অবস্থান। আল্লাহ্ তাআলা বলেন :―
( وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الجَْاهِلِيَّةِ الْأُولَى. (سورة الأحزاب : ٣٣
আর তোমরা (নারীরা) ঘরে অবস্থান কর এবং জাহেলী যুগের নারীদের মত
খোলামেলা চলাফেরা কর না। অপরিচিত নারীর সাথে নির্জনে অবস্থান না করা। রসূল(সঃ)
বলেন : إياكم والدخول على النساء “তোমরা নারীদের
নিকট প্রবেশ করার ব্যাপারে সতর্ক থাক।”
ক্স কোন নারীর সাথে মুসাফাহা না করা। রসূল(সঃ) আলাইহি
ওয়াসাল−াম বলেন : إني لا أصافح النساء “আমি নারীর সাথে মুসাফাহা করি
না।”
ক্স পুরুষ-নারী একসাথে মেলামেশা না করা।
ক্স অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করে এমন সকল কথা ও কাজ থেকে দূরে থাকা।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
( وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا. (سورة بني إسرائيل : ٣٢
‘আর তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না।’
অশ্লীল কথা বা কাজের কথা শোনা, অশালীন বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত, অশ্লীল
ছবি বা সিনেমা দেখা, অশ্লীল কিছু পাঠ করা―এ সবই আয়াতের নিষেধাজ্ঞার
আওতাভুক্ত।
পবিত্রতা দুর্বল হওয়ার কারণসমূহ :
(১) অভিভাবক ও মুরব্বীগনের তরবিয়ত ও নজরদারি দুর্বল হওয়া।
(২) হারাম বস্তুর প্রতি অবাধে দৃষ্টিপাত। এটি ফিতনার সবচেয়ে বড়
কারণ। রসুল(সঃ) বলেন : فزنا العينين النظر ‘চোখের
ব্যভিচার হলো দৃষ্টিপাত।’
জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন, আমি রসূল(সঃ) কে আকস্মিক দৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে
তাৎক্ষণিকভাবে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে বললেন।
বুরাইদা রা. থেকে বর্ণিত, রসূল(সঃ) বলেন :
হে আলী, তুমি প্রম দৃষ্টির পর দ্বিতীয়বার দৃষ্টি দিয়ো না। প্র মটি তোমার জন্যে
জায়েজ বটে, কিন্তু দ্বিতীয়টির অধিকার নেই।
(৩) যুবক-যুবতীদের দেরি করে বিবাহ দেয়া।
(৪) এমন দেশে ভ্রমণ করা, যেখানে বেহায়া ও উলঙ্গপনার সয়লাব
রয়েছে।
(৫) অপরিচিত নারীর সাথে মেলামেশা ও নির্জনবাসের ব্যাপারে অবহেলা
করা। পূর্বসুরীগণ এ ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক করতেন। উবাদা ইবনে সামেত রা.
ছিলেন একজন বয়োজ্যাষ্ঠ আনসারী সাহাবি। তিনি বলেন―তোমরা দেখ না
আমি অন্যের সাহায্য ব্যতীত দাঁড়াতে পারি না এবং নরম খাবার ব্যতীত খেতে
পারি না। আমার সাথি (পুরুষাঙ্গ) অনেকদিন হল মরে গিয়েছে। সারা পৃথিবীর
বিনিময়ে হলেও কোন অপরিচিত নারীর সাথে নির্জনে থাকা আমার পছন্দ হয়
না। কেননা শয়তান হয়তোবা আমার জিনিসটিকে নাড়া দিতে পারে।
(৬) যে ব্যক্তি নিজে পবিত্র থাকতে চায় না এবং সমাজকে কলুষমুক্ত
রাখতে চায় না এমন লোকের সাথে উঠা-বসা করা। অতএব, এ ধরনের
লোকদের সঙ্গ ত্যাগ করে ভালো লোকদের সঙ্গ তালাশ করা উচিত।
(৭) অধিক অবসর। তাই দ্বীন-দুনিয়ার উপকার হয়, এমন কাজে নিজেকে
সর্বদা নিয়োজিত রাখা উচিত। যাতে শয়তানি চিন্তা-ভাবনা আμমণ করতে না
পারে।
(৮) সর্বশেষ কথা হলো শরিয়তের হুকুম আহকাম ছেড়ে দেয়াই হলো
চারিত্রিক দুর্বলতার সবচেয়ে বড় কারণ।
গোপনাঙ্গ সংরক্ষণের সু-ফল :
(১) চরিত্রবান ব্যক্তির জানড়বাতে প্রবেশের দায়িত্ব রসূল(সঃ) এর।
(২) কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহ্ তাআলার ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ।
(৩) ব্যক্তির পবিত্রতা তার পরিবার ও মাহরাম আত্মীয়দের পবিত্রতার
কারণ। যে ব্যক্তি হারামে লিপ্ত হয়, তার নিজের ও পরিবারের উপর
যে কোন সময় এর খারাপ পরিণতি নেমে আসতে পারে।
(৪) ধ্বংসাত্মক রোগ, ফাসাদ, আপদ-বিপদ ও অনিষ্ট থেকে সমাজ
নিরাপদ থাকার বড় মাধ্যম হলো চারিত্রিক পবিত্রতা।
(৫) সাধারণ ও বিশেষ শাস্তি এবং আল্লাহ্র অসন্তুষ্টি থেকে দূরে থাকার
মাধ্যম পবিত্রতা।
বদান্যতা ও পরার্থপরতা
দান করার বিষয়টি উদার মনে সম্পদ ব্যয় করার উপরই সীমাবদ্ধ নয়। এটি
একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ, যার অনেক স্তর ও শ্রেণী বিন্যাস রয়েছে।
বদান্যতার সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে―আলাহর পথে নিজের জীবন উৎসর্গ করা। কবি
বলেন―
يجود بالنفس إذ ضن البخيل بها ! والجود بالنفس أقصى غاية الجود
তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করছেন, যদিও কৃপণ ব্যক্তি আপন জীবন দান
করতে চায় না, মূলত: জীবন উৎসর্গ করাই হলো উঁচু পর্যায়ের বদান্যতা।
বদান্যতার আরেকটি স্তর হচ্ছে মুমিনদের কল্যাণে সময় দান করা এবং
শিক্ষার্থী ও প্রশড়বকারীর জন্যে ইলম বণ্টন করা।
সকল মানুষের মাঝে সাহাবীগণই ছিলেন সবচেয়ে বেশি দানশীল।
সাহাবাদের জীবন উৎসর্গের নমুনা :
যে ব্যক্তি সাহাবীগণের জীবন−চরিত অধ্যয়ন করে, সে আলাহর রাহে
সাহাবীগণের জীবন উৎসর্গের অনেক বিস্ময়কর ঘটনা দেখতে পাবে। নিমেড়ব
কয়েকটি ঘটনা উলেখ করা হল।
(১) আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বদর
যুদ্ধে বলেন :―
قوموا إلي جنة عرضها السموات والأرض, فقال عمير بن الحمام الأنصاري رضي
الله عنه : يا رسول الله , جنة عرضها السموات و الأرض? قال : نعم, قال بخ بخ,
فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ما يحملك على قولك : بخ بخ , قال : لا
والله يا رسول الله إلا رجاء أن أكون من أهلها, قال : فإنك من أهلها, فأخرج
تمرات من قرنه , فجعل يأ كل منهن , ثم قال : لئن أنا حييت حتى آكل تمراتي
هذه إنها لحياة طويلة , قال : فرمى بما كان معه من التمر , ثم قاتلهم حتى قتل.
( (رواه مسلم : ٣٥٢٠
তোমরা উঠ এবং জানড়বাতের দিকে অগ্রসর হও, যার প্রশস্ততা আসমান ও
যমীন বরাবর বিস্তৃত। একথা শুনে উমাইর ইবনে হামাম রা. বললেন―হে আলাহর
রাসূল, জানড়বাতের প্রশস্ততা আসমান ও যমীন বরাবর ? রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম বললেন : হ্যাঁ। তিনি বললেন―বাখ! বাখ! রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম বললেন, তুমি কি জন্যে বাখ! বাখ! শব্দ উচ্চারণ করলে ?
বললেন, হে আলাহর রাসূল, আমি এ জানড়বাতের অধিবাসী হওয়ার আশায় এমনটি
বলেছি। রাসূল বললেন, তুমি জানড়বাতের অধিবাসী। তিনি তখন তার ব্যাগ থেকে
কয়েকটি খেজুর বের করলেন এবং খেতে শুরু করলেন। অতঃপর বললেন আমি
যদি সবগুলো খেজুর খাওয়া পর্যন্ত জীবিত থাকি তাহলে তা অনেক দীর্ঘ জীবন।
পরে তিনি অবশিষ্ট খেজুরগুলো নিক্ষেপ করে যুদ্ধে নেমে গেলেন এবং শহীদ হয়ে
গেলেন।৪০
(২) কোন এক যুদ্ধে আবু মূসা আশআরী রা. অংশগ্রহণ করেন। তিনি
বললেন―রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেছেন :
( إن أبواب الجنة تحت ظلال السيوف… (رواه مسلم : ٣٥٢١
‘নিশ্চয় জানড়বাতের দরজাসমূহ তলোয়ারের ছায়ার নীচে আছে।’ একথা শুনে
অগোছালো পোশাক নিয়ে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেল এবং বলল হে আবু মূসা ;
তুমি একথা রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম থেকে শুনেছ ? আবু মুসা রা.
বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর সে সঙ্গীদের নিকট ফিরে গেল এবং বলল أقرأ عليكم
السلام আমি তোমাদেরকে সালাম করছি। অতঃপর তরবারির খাপ উন্মুক্ত করে
শত্র“র উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং শহীদ হয়ে গেল।৪১
আলাহর রাহে সম্পদ উৎসর্গ করার দৃষ্টান্ত :
(১) উমর রা. ৪০০ (চার শত) দিনার হাতে নিয়ে তার গোলামকে বললেন,
এগুলো আবু উবাইদার নিকট নিয়ে যাও। অতঃপর দূরে সরে থেকে লক্ষ্য কর
তিনি সেগুলো কি করেন ? গোলাম সেগুলো নিয়ে তার নিকট গিয়ে বললেন,
আমীরুল মুমিনীন এগুলো গ্রহণ করতে বলেছেন। তিনি (আবু উবাইদা) বললেন,
আলাহ তার উপর দয়া করুক। অতঃপর তার বাঁদীকে বললেন, যাও সাতটি
দিনার নিয়ে অমুকের নিকট যাও, আর এই পাঁচটি অমুকের নিকট নিয়ে যাও। ঐ
মজলিসে বসেই তিনি সবগুলো দিনার শেষ করে ফেললেন। অতঃপর গোলাম
উমর রা. এর নিকট ফিরে আসল এবং পূর্ণ ঘটনা খুলে বলল। এদিকে উমর রা.
ঐ পরিমাণ দিনার মুয়ায ইবনে জাবাল রা.-এর জন্যে গণনা করে রাখলেন এবং
সেগুলোও পাঠিয়ে দিলেন। মুয়ায রা. বললেন, আলাহ তার সাথে সম্পর্ক ঠিক
রাখুক। হে বাঁদী অমুক ব্যক্তির ঘরে এ পরিমাণ নিয়ে যাও। আর অমুক ঘরেও
৪০ মুসলিম : ৩৫২০
৪১ মুসলিম : ৩৫২১
দিয়ে আস। মুয়ায রা.-এর স্ত্রী জানতে পেরে বললেন, আলাহর কসম আমরাও
মিসকীনÑদারিদ্রক্লিষ্ট। অতএব, আমাদেরও কিছু দিন। তখন পাত্রে মাত্র দুই
দিনার অবশিষ্ট ছিল। তিনি মাত্র দুই দিনারই স্ত্রীর হাতে তুলে দিলেন। গোলাম
এসে উমর রা.-কে ঘটনা শোনালে তিনি খুশি হলেন এবং বললেন তারা সকলে
ভাই ভাই। সবাই সবার উপকারে এগিয়ে আসে।
(২) তালহা ইবনে উবাইদুলাহ রা.-এর দানের কাহিনি উলেখযোগ্য। তাকে
বলা হত طلحة الجود (দানবীর তালহা) ও طلحة الفيّاض (পরোপকারী তালহা)
একবার হাযরামাওত থেকে তার নিকট কিছু মাল আসল। পরিমাণ সাত হাজার।
তিনি ঐ রাতে খুব পেরেশান অবস্থায় ছিলেন। তার স্ত্রী তাঁকে বললেন আপনার
কি হলো ? রাত থেকে কি যেন চিন্তা করছেন ? তালহা রা. বললেন : ঐ ব্যক্তির
রব সম্পর্কে তার কি ধারণা যে এতগুলো মাল ঘরে রেখে রাত্রিযাপন করে ? তার
স্ত্রী বললেন―আপনার বন্ধুদের পথ ধরে চলতে পারেন না ? যখন আপনি
সকালে উপনীত হবেন তখন মালগুলো বণ্টন করে ফেলবেন। তিনি স্ত্রীকে
বললেন আলাহ তোমাকে তৌফিক দান করুক। তুমি তৌফিক প্রাপ্তের মেয়ে
তৌফিকপ্রাপ্তা। (অর্থাৎ আবু বকরের মেয়ে উম্মে কুলছুম।) সকাল হলে তিনি সব
সম্পদ মুহাজির ও আনসারগণের মাঝে বণ্টন করে দিলেন। স্ত্রী তাকে
বললেন―আমরা কি এ মালের কোন অংশ পাই না ? তিনি বললেন তুমি
সারাদিন কোথায় ছিলে ? এখন যা বাকি আছে তা তুমি নিয়ে নাও। থলের মাঝে
তখন মাত্র এক হাজার দিরহাম অবশিষ্ট ছিল।
পরার্থপরতা ও অপরকে প্রাধান্য দেয়া :
إيثار এর মাঝে جود এর অর্থ বিদ্যমান। বরং তাতে দানের অর্থ আরো
বেশি লুক্কায়িত আছে। কেননা, إيثار এর অর্থ হচ্ছে নিজের প্রয়োজন থাকা
সত্ত্বেও অপরকে প্রাধান্য দেয়া। এর অনেকগুলো স্তর রয়েছে।
(১) সব কিছুর উপর আলাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেয়া। দুনিয়ার উপর
আখেরাতকে এবং ধ্বংসযোগ্য অস্থায়ী জিনিসের উপর স্থায়ী জিনিসকে প্রাধান্য
দেয়া। এটি সর্বোচ্চ স্তর।
(২) আলাহর সৃষ্টিকে প্রাধান্য দেয়া। অর্থাৎ নিজের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও
অন্যকে দান করা। আর এসব কিছুই হতে হবে আলাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করার
লক্ষ্যে। প্রশংসা কিংবা পদ-লাভের উদ্দেশ্যে নয়।
এ প্রকারের সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে―অপরের জন্যে নিজের জীবন উৎসর্গ করা।
কোন কোন সাহাবী রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামকে বলতেন―
نفسي فداك، ونحري دون نحرك.
আমার জীবন আপনার জন্যে উৎসর্গ করলাম। আরো একটি স্তর
হচ্ছে―সম্পদের দ্বারা অপরকে প্রাধান্য দেয়া। আলাহ আনসারদের প্রশংসা
করেছেন যখন তারা মুহাজির ভাইদেরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দিয়েছে―
وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يحُِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يجَِدُونَ فِي
صُدُورِهِمْ حَاجَةً ممَِّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ
( شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ المُْفْلِحُونَ ﴿ ٩﴾ (سورة الحشر : ٩
‘যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদিনায় বসবাস করেছিল এবং ঈমান
আনয়ন করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালোবাসে। মুহাজিরদের যা দেয়া হয়েছে
তজ্জন্যে তারা অন্তরে ঈর্ষা পোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও
তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত তারাই
সফলকাম।’৪২
নবী সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ও সাহাবাগণ অপরকে প্রাধান্য দেয়ার
ক্ষেত্রে সকল উম্মত অপেক্ষা অগ্রগামী ছিলেন।
(১) সাহল ইবনে সা’দ রা. বলেন : নবী কারীম সালালাহু আলাইহি
ওয়াসালাম-এর নিকট একজন মহিলা একটি চাদর নিয়ে আসল। এসে বলল :
হে আলাহর রাসূল ! আপনাকে আমি এই চাদরটি পরাতে চাই। রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম খুব আগ্রহ সহকারে চাদরটি গ্রহণ করে পরিধান করলেন।
এক সাহাবী রাসূলের গায়ে চাদরটি দেখে বললেন―চাদরটি কতই না সুন্দর।
এটি আমাকে পরিয়ে দিন। নবী কারীম সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বললেন,
নাও। নবী করিম সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম মজলিস থেকে চলে গেলে
উপস্থিত সাহাবীগণ লোকটিকে তিরস্কার করতে লাগলেন। তারা বললেন, তুমি
যখন দেখলে রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম আগ্রহ সহকারে চাদরটি
পরিধান করেছেন তখন তোমার জন্যে তাঁর চাদরটি চাওয়া ঠিক হয়নি। তুমি তো
ভাল করেই জান কেউ কিছু চাইলে তিনি কখনও না বলেন না। তিনি বললেন,
আমি রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম-এর পরিধেয় বস্ত্রের বরকত অর্জন
করতে চেয়েছি, আমার আশা এটি যেন আমার কাফন হয়।
(২) আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল সালালাহু আলাইহি
ওয়াসালাম-এর নিকট এসে বলল, হে আলাহর রাসূল ক্ষুধার কারণে আমার খুব
কষ্ট হচ্ছে। রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বিবিগণের নিকট পাঠিয়ে কিছুই
৪২ হাশর-৯
পেলেন না। অতঃপর রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বললেন, এমন কে
আছে, যিনি আজকের রাতে এ ব্যক্তির মেহমানদারী করতে পারবে ? আলাহ তার
উপর রহম করুক। একজন আনসারী সাহাবী দাঁড়িয়ে বললেন, আমি পারব।
তিনি ঐ ব্যক্তিকে নিজ বাড়িতে নিয়ে গেলেন এবং স্ত্রীকে বললেন রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম-এর মেহমান। অতএব কোন কিছু তাকে না দিয়ে রেখে
দিও না। স্ত্রী বললেন, আমার নিকট বাচ্চাদের খাবার ব্যতীত অতিরিক্ত কিছুই
নেই। সাহাবী বললেন, রাতে যখন বাচ্চারা খাবার চাইবে তখন তাদেরকে ঘুম
পাড়িয়ে দেবে। আর তুমি বাতি নিভিয়ে ফেলবে। আমরা আমাদের পেট আজ
রাতে বেধে রাখব। স্ত্রী তা-ই করলেন। সাহাবী সকাল বেলা রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম-এর নিকট উপস্থিত হলে রাসূল সালালাহু আলাইহি
ওয়াসালাম বললেন, আলাহ তাআলা অমুক স্বামী ও স্ত্রীর কাজ দেখে আশ্চর্য
হয়েছেন অথবা হেসেছেন।
মসজিদের আদব
মসজিদের অবস্থান
মানুষের জীবনে মসজিদের গুরুত্ব অপরিসীম, তার অবস্থান অনেক উপরে ,
এর সংক্ষিপ্ত কিছু বিষয় নিমেড়ব উলেখ করছি।
১. মসজিদ আলাহ তাআলার ঘর, রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম
বলেন—
( ما اجتمع قوم فى بيت من بيوت الله… (رواه مسلم : ٤٨٦٧
কোন সম্প্রদায় যখন আলাহর ঘর সমূহের মধ্য থেকে কোন এক ঘরে
একত্রিত হয়…।
আলাহ তাআলা বলেন—
( وَأَنَّ المَْسَاجِدَ للهَِِّ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللهَِّ أَحَدًا. (سورة الجن : ١٨
এবং এই যে মসজিদসমূহ আলাহরই জন্য। সুতরাং আলাহর সাথে তোমরা
অন্য কাউকে ডেকো না।
উলামায়ে কেরাম বলেন : উলেখিত হাদীস ও আয়াতে মসজিদকে আলাহর
দিকে সম্বন্ধযুক্ত করে উলেখ করার মাধ্যমে মূলত মসজিদের মর্যাদা ও গুরুত্ব
ফুটে উঠেছে।
২. মসজিদ পৃথিবীতে সর্বোত্তম জায়গা এবং আলাহ তাআলার সবচেয়ে প্রিয়
স্থান। রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন―
أحب البلاد إلى الله مساجدها, وأبغض البلاد إلى الله أسواقها. (رواه مسلم :
(١٠٧٦
আলাহর নিকট সর্বোত্তম জায়গা মসজিদ এবং সর্ব-নিকৃষ্ট জায়গা বাজার।ীার
৩. মসজিদ ইসলামের দ্বিতীয় ভিত্তি ফরজ নামাজ আদায়ের স্থান ।
৪. মসজিদ মুসলমানদের সমবেত হওয়া , পরিচয় লাভ করা এবং সম্পর্ক
তৈরি করার স্থান। সেখানে কোরআন পাঠের ক্লাস হয় এবং জ্ঞান-শিক্ষার পাঠ
দান করা হয়।
৫. মসজিদের গুরুত্ব এবং মর্যাদার আরো একটি প্রমাণ হল, রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম হিজরত করার পর সর্বপ্রম মসজিদ বানানোর দিকে
দৃষ্টি দিয়েছেন। আর মদিনাতে আগমনের পর সেটাই তার সর্বপ্রম কাজ।
মসজিদ আবাদ করার ফজিলত:
মসজিদ আবাদ দুই প্রকার:
(ক) বাহ্যিক আবাদ তথা নির্মাণ করা, আর এর অনেক ফজিলত রয়েছে।
আলাহর রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন―
من بنى مسجدا يبتغي به وجه الله بنى الله له مثله فى الجنة. (رواه الترمذي :
(٢٩٢
যে আলাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ তৈরি করবে, আলাহ তাআলা জানড়বাতে
তার জন্য অনুরূপ একটি ঘর তৈরি করে দেবেন।
হাদীসে সঠিক নিয়তে মসজিদ নির্মাণকারীর জন্যে জানড়বাতে প্রবেশের শুভ
সংবাদ আছে।কারণ জানড়বাতে আলাহ তাআলার ঘর নির্মাণ করাই প্রমাণ করে যে
সে ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে।
(খ)এতো গেল বাহ্যিকভাবে মসজিদ আবাদের কথা। মসজিদ আবাদের
আরেকটি দিক রয়েছে যা প্রকৃত অর্থে আবাদ করা ,আর সেটি এভাবে যে,
সেখানে নামাজ পড়া, জিকির করা, কোরআন তেলাওয়াত করা এবং অন্যান্য
এবাদত করা ; এর জন্য অগণিত পুরস্কার আছে মর্মে বহু আয়াত ও হাদীস বর্ণিত
হয়েছে।
যেমন রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন :
من غدا إلى المسجد أو راح أعدّ الله له في الجنة نزلا كلما غدا أو راح.
যে সকাল বিকাল মসজিদে গমনাগমন করবে, প্রত্যেকবার যাতায়াতের
বিনিময়ে আলাহ তাআলা তার জন্য জানড়বাতে মেহমানদারির ব্যবস্থা করবেন।
আবাদের উভয় দিক শামিল হয় আলাহ তাআলার নিমেড়বাক্ত বাণী: এরশাদ
হচ্ছে―
إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهَِّ مَنْ آَمَنَ بِاللهَِّ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآَتَى الزَّكَاةَ وَلمَْ
( يخَْشَ إِلَّا اللهََّ فَعَسَى أُولَئِكَ أَنْ يَكُونُوا مِنَ المُْهْتَدِينَ ﴿ ١٨ ﴾. (سورة التوبة : ١٨
নি:সন্দেহে তারাইতো আলাহর মসজিদ আবাদ করবে, যারা ঈমান আনে
আলাহ ও আখেরাতের প্রতি এবং সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আলাহ
ব্যতীত অন্য কাউকেই ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা
সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
মসজিদ সম্পর্কিত বিধানাবলী:
মসজিদের অনেক আদব ও বিধান রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিমেড়ব উলেখ
করা হল :
১. কারুকার্য বাদ দিয়ে সুন্দর করে বিল্ডিং বানানো, কেননা কারুকার্য করা
বেদআত। এতে নামাজির মনোযোগ নষ্ট হয় এবং প্রতিযোগিতা ও অহংকারের
দরজা খুলে যায়। ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুলাহ সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম এরশাদ করেন, আমাকে মসজিদ সাজাতে নির্দেশ দেয়া
হয়নি। ইবনে আব্বাস বলেন, তারা অবশ্যই মসজিদসমূহ সাজাবে, যেমন ইহুদি
ও খ্রিস্টানরা সাজাতো।
ইমাম বোখারি রহ. বলেন, উমর রা. মসজিদ বানাতে নির্দেশ দিলেন এবং
বললেন, আমি মানুষকে বৃষ্টি থেকে হেফাজত করছি। সাবধান! লাল ও হলুদ রং
ব্যবহার করবে না। মানুষ ধাঁধাঁয় পড়ে যাবে। আনাস রা. বলেন, মসজিদ নিয়ে
মানুষ গর্ব ও প্রতিযোগিতা করবে, কিন্তু খুব কম লোকই মসজিদ আবাদ করবে।
২. কবরের উপর মসজিদ তৈরি করা কিংবা মসজিদে কবর বানানো
হারাম। কেননা এটি মূলত কবরের সম্মান প্রদর্শণ এবং আলাহ তাআলা ব্যতীত
কবরের এবাদত করার মাধ্যমে শিরকের রাস্তা তৈরি করে ।
রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম এরশাদ করেন:
( لعن الله اليهود والنصارى, اتخذوا قبور أنبيائهم مساجد. (رواه مسلم : ٨٢٥
ইহুদি ও খ্রিস্টানদের উপর আলাহ তাআলার অভিশাপ। তারা তাদের
নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে। জুন্দুব রা. রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি
ওয়াসালামের মৃত্যুর পূর্বে পাঁচটি অসিয়ত শুনেছেন, তিনি রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালামকে বলতে শুনেছেন:―
…وإن من كان قبلكم كانوا يتخذون قبور أنبيائهم وصالحيهم مساجد, ألا فلا
( تتخذوا القبور مساجد, فإني أنهاكم عن ذلك. (رواه مسلم : ٨٢٧
…তোমাদের পূর্ববর্তীরা নবী ও সৎ লোকদের কবরকে মসজিদ বানাতো।
সাবধান! তোমরা কবরকে মসজিদ বানিও না। আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে
নিষেধ করছি। কবরস্থানে জানাযার নামাজ ছাড়া অন্য কোন নামাজ বৈধ নয়।
৩. মসজিদ সর্বদা পরিচ্ছনড়ব রাখা। অপবিত্র করা বা কষ্টদায়ক জিনিস
সেখানে রাখা হারাম। রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম এরশাদ
করেন―
( البصاق فى المسجد خطيئة وكفارتها دفنها. (رواه النسائي : ٧١٥
মসজিদে থুতু ফেলা অন্যায়, তার কাফ্ফারা হল পুতে ফেলা।ীীর
পুতে ফেলা সম্ভব না হলে, অন্যভাবে পরিষ্কার করতে হবে। যেমন, রাসূল
সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম মসজিদের দেয়াল থেকে থুতু সরিয়ে
ফেলেছিলেন।
৪. মসজিদে নম্রতা ও স্থিরতার সাথে যাওয়া। তাড়াতাড়ি বা দৌঁড়িয়ে না
যাওয়া। রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম এরশাদ করেন—
وإذا أتيتم الصلاة فعليكم بالسكينة, فما أدركتم فصلوا وما فاتكم فأتموا.
( (رواه البخاري : ٥٩٩
যখন তোমরা নামাজে আসবে অবশ্যই ধীর-স্থিরতার সাথে আসবে। যতটুকু
পাবে, আদায় করবে। আর যতটুকু ছুটে যাবে, পূর্ণ করবে।
৫. মসজিদে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা ও বাম পা দিয়ে বের হওয়া। আনাস
রা. বলেন―সুনড়বত হল যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, ডান পা দিয়ে প্রবেশ
করবে। আর যখন বের হবে বাম পা দিয়ে বের হবে।
প্রবেশ এবং বের হবার দোয়া পড়বে। রাসূলের নির্দেশ :―
إذا دخل أحدكم المسجد فليقل اللهم افتح لي أبواب رحمتك, وإذا خرج
فليقل اللهم إنى أسألك من فضلك.
যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে তখন বলবে :
اللهم افتح لي أبواب رحمتك.
আর যখন বের হবে তখন বলবে : اللهم إني أسألك من فضلك
৬.মসজিদে আগে আগে যাওয়া এবং প্রম কাতারে নামাজ পড়ার প্রতি
আগ্রহী থাকা―রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম-এর প্রতি উদ্বুদ্ধ
করেছেন। তিনি বলেন―
لو يعلم الناس ما في النداء والصف الأول ثم لم يجدوا إلا أن يستهموا عليه
لاستهموا على ذلك, ولو يعلمون ما في التهجير لا سبقوا إليه. (رواه البخاري :
(٥٨٠
যদি মানুষ জানতে পারত, আজান দেয়া এবং প্রম কাতারে নামাজ পড়ার
মাঝে কি আছে, আর লটারি ব্যতীত সেটি পাওয়া সম্ভব হত না, তাহলে অবশ্যই
তার জন্য লটারির ব্যবস্থা করত। এবং যদি জানতে পারত মসজিদে আগে
আসার মাঝে কি ফজিলত আছে, তাহলে তার জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও
আসত।
আর যিনি মসজিদে আগে আসবেন, কোন কারণ ছাড়া তার প্রম কাতার
বাদ দিয়ে পিছনে বসা উচিত নয়। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, ‘যে
ব্যক্তি আগে আসল এবং কোর ওজর ব্যতীতই প্রম কাতার ছাড়া অন্য জায়গায়
বসল, সে শরীয়তের বিধান লঙ্ঘন করল। পিছনে হটে থাকার দরুন সে অনেক
গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করল। রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি
ওয়াসালাম এরশাদ করেন―
تقدموا, فائتموا بي, وليأتم بكم من بعدكم, لا يزال قوم يتأخرون حتى
( يؤخرهم الله. (رواه مسلم : ٦٦٢
তোমরা সামনের দিকে অগ্রসর হও এবং আমার এক্তেদা কর। আর
তোমাদের পরবর্তীগণ তোমাদের এক্তেদা করবে। একটি সম্প্রদায় সব সময়
পিছনে থাকবে এক পর্যায়ে আলাহ তাআলা তাদেরকে পিছনে ঠেলে দেবেন।ীীরা
মসজিদে আগে আসার মাঝে অনেক উপকার। যথা―জামাতের শুরু থেকে
অংশগ্রহণ, কোরআন পড়ার সুযোগ, নফল আদায় করার সুযোগ, ফেরেশতারা
তার জন্য ক্ষমার দোয়া করতে থাকে।যতক্ষন নামাজের অপেক্ষায় থাকবে
ততক্ষন নামাজরত আছে বলে ধরা হবে এবং প্রম কাতার পাওয়া―ইত্যাদি।
৭.মসজিদে প্রবেশকারী দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় ব্যতীত
বসবে না। আবু কাতাদাহ আনসারী রা. বলেন, রাসূল সালালাহু আলাইহি
ওয়াসালাম এরশাদ করেন,
إذا دخل أحدكم المسجد فلا يجلسنّ حتى يصلي ركعتين. (رواه البخاري :
(١٠٩٧
তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দুই রাকাত না পড়া ব্যতীত
কখনোই বসবে না।ইমাম সাহেব জুমার নামাজে খুতবা দানরত থাকা অবস্থায়
প্রবেশ করলেও এ’দুই রাকাত আদায় করবে তবে একটু সংক্ষিপ্তাকারে আদায়
করবে। জাবের রা. রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম থেকে বর্ণনা করেন―
إذا جاء أحدكم يوم الجمعة والإمام يخطب فليصل ركعتين ويتجوز فيهما.
( (رواه أبو داؤد : ٩٤٢
ইমামের খুতবা চলা অবস্থায় তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে,
তখন সংক্ষেপে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে।
৮. মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বলা, নামাজি বা তেলাওয়াতকারীকে বিরক্ত করা
মাকরূহ। চাই তা সাধারণ কথা হোক বা উচ্চস্বরে কোরআর পাঠ করা হোক।
পাশের লোককে কষ্ট দেয়া নিষেধ। রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম এরশাদ
করেন,
إن المصلي يناجي ربه فلينظر بما يناجيه, ولا يجهر بعضكم على بعض
( بالقرآن. (رواه مالك في المؤطأ : ١٦٣
নামাজি ব্যক্তি তার প্রভুর সাথে গোপনে কথা বলে। তার খেয়াল রাখা উচিত
যে, সে কি বলছে। তোমরা কোরআন শরীফ তেলাওয়াতের মাধ্যমে একে অন্যের
উপর শব্দ কর না।
৯. মুক্তাদী সর্বদা ইমামের অনুসরণ করবে, প্রত্যেক আমল তার পর পরই
সাথে সাথে আদায় করবে। ইমামের আদায়ের আগে করবে না, সাথেও
করবে না। আবার ইমাম থেকে অনেক দেরিতেও না। রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম এরশাদ করেন―
إنما جعل الإمام ليؤتم به, فلا تختلفوا عليه, فإذا كبر فكبروا, وإذا ركع
فاركعوا, وإذا قال سمع الله لمن حمده فقولوا -اللهم ربنا ولك الحمد―وإذا
سجد فاسجدوا, وإذا صلى جالسا فصلوا جلوسا أجمعون. (رواه البخاري :
(٦٨٠
ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে তাঁর অনুসরণের জন্য, তোমরা তার সাথে বিরোধ
কর না। তিনি যখন আলাহু আকবার বলবেন, তখন তোমরা আলাহু আকবার
বলবে, আর যখন রুকু করবেন, তোমরা রুকু করবে, যখন سمع الله لمن حمده
বলবেন, তোমরা اللهم ربنا ولك الحمد বলবে, যখন সেজদা করবেন, তোমরা
সেজদা করবে, যখন তিনি বসে নামাজ আদায় করবেন তখন তোমরা সবাই বসে
নামাজ আদায় করবে। ইমামের পূর্বে কোন কাজ করা হারাম হওয়া সম্পর্কে
রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন―
أما يخشى الذي يرفع رأسه قبل الإمام أن يحول الله رأسه رأس حمار أو
( صورته صورة حمار. (رواه أبو داؤد : ٥٢٨
যে ব্যক্তি নামাজে ইমামের পূর্বে মাথা উঠায় তার কি ভয় হয় না যে, আলাহ
তাআলা তার মাথাকে গাধার মাথা বানিয়ে দেবেন কিংবা তার আকৃতিকে গাধার
আকৃতি বানিয়ে দেবেন।
মাতা-পিতার অধিকার
মাতা-পিতার অনেক অধিকার রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু অধিকার নিমেড়ব উলেখ করা
হল :
১. মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার : আলাহ তাআলা তাদের সাথে ভাল
আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আলাহ বলেন―
( وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا. (سورة بني إسرائيل : ٢٣
তোমার পালনকর্তা আদেশ করছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারো এবাদত
করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর।৪৩
রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম পিতা-মাতার আনুগত্যকে সর্বোত্তম
আমল এবং আলাহর নিকট অধিক প্রিয় আমলের মাঝে গণ্য করেছেন। সাহাবি
ইবনে মাসঊদ রা. নবী করিম সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামকে জিজ্ঞেস
করলেন―
أيّ العمل أحب إلى الله? قال الصلاة على وقتها, قال ثم أيّ? قال بر الوالدين قال
( ثم أيّ? قال الجهاد في سبيل الله. (رواه البخاري : ٥٥١٣
আলাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল কোনটি? তিনি বললেন, সময় মত
নামাজ পড়া। তিনি বললেন, অত:পর কোনটি? বললেন, পিতা-মাতার আনুগত্য
করা। তিনি আবার প্রশড়ব করলেন, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, আলাহর রাস্তায় জিহাদ করা। পবিত্র কোরআন এবং রাসূলের হাদিস পিতা-মাতার প্রতি
সুন্দর আচরণের নির্দেশ দেয়। আলাহ তাআলা এরশাদ করেন―
( وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا. (سورة لقمان : ١٥
এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহ অবস্থান করবে। ৪৫ নবী সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালামকে প্রশড়ব করা হল―
من أحق الناس بحسن صحابتي? قال أمّك قال ثم من? قال أمّك, قال ثم من? قال
( أمّك, قال ثم من? قال أبوك. (رواه البخاري : ٥٥١٤
আমার উত্তম ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি কে ? তিনি বললেন,
তোমার মা। অত:পর কে ? তিনি বললেন, তোমার মা। তারপর কে ? তিনি
৪৩ আল-ইসরা : ২৩
৪৪ বুখারী: ৫৫১৩
৪৫ লুকমান : ১৫
বললেন: তোমার মা, তিনি আবারো জিজ্ঞেস করলেন : তারপর কে? রাসূলুলাহ
বললেন: তোমার পিতা।৪৬
নবী সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম মাতা-পিতার অবাধ্য হতে বারণ
করেছেন এবং বলেছেন এটি কবিরা গোনাহ। নবী সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম
বলেন:―
ألا أنبئكم بأكبر الكبائر? قلنا بلى يا رسول الله, قال الإشراك بالله, وعقوق
الوالدين وكان متكئاً فجلس فقال: ألا وقول الزور، وشهادة الزور… (رواه
( البخاري : ٥٥١٩
আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে সংবাদ দেব না ?
আমরা বললাম, হে আলাহর রাসূল ! বলুন। তিনি বললেন, আলাহর সাথে শরিক
করা এবং মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া। রাসূল এতক্ষণ হেলান দিয়ে বসা ছিলেন।
অতঃপর সোজা হয়ে বসে বললেন, সাবধান ! আর মিথ্যা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য
দেয়া…।৪৭
পিতা-মাতার অবাধ্যতা যেমন তাদের উপর রাগ করা, তাদের আনুগত্য না
করা, তাদের কথায় মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, তাদেরকে ধমক দেওয়া, তাদের
প্রয়োজন প্রকাশ করলে এবং কোন কথা বললে উফ বলে বিরক্তি প্রকাশ করা।
২. তাদের আনুগত্য করা :
তাদের আদেশ-নিষেধ মানা। কিন্তু তা নিুোক্ত শর্তসাপেক্ষে :
ক) আলাহর অবাধ্য হওয়ার নির্দেশ না দেয়া।
খ) আদেশ মান্য করার উপর সন্তানের সামর্থ্য এবং শক্তি থাকা।
৩. তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বলা :
কোন অবস্থায় চিৎকার-চেচামেচি করা যাবে না। যখন তারা কথা বলবে অথবা
কিছু চাইবে তখন উঁহু বলা যাবে না। পিতা-মাতা বার্ধক্যে উপনীত হলে এই
অধিকারটির প্রতি বিশেষ যতড়ববান হতে হয়। আলাহ বলেন—
﴿إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهمَُا أَوْ كِلَاهمَُا فَلَا تَقُلْ لهَُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهمَُا وَقُلْ
( لهَُمَا قَوْلًا كَرِيمًا ﴾ (سورة الإسراء : ٢٣
৪৬ বুখারী: ৫৫১৪
৪৭ বুখারী: ৫৫১৯
তাদের মধ্য কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত
হয়, তবে তাদেরকে উফ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিওনা বরং
তাদেরকে শিষ্টচার পূর্ণ কথা বল ।৪৮
৪. পিতা-মাতার সাথে নম্র ব্যবহার এবং তাদের সামনে সংযত আচরণ :
কোন বিশেষ জ্ঞান, সম্পদ অথবা কোন পদ লাভ করার কারণে নিজেকে
তাদের থেকে উঁচু মনে না করা। বরং সর্বদা মনে করবে আমি সেই ছোট সন্তান
যাকে তারা কোলে তুলে নিত এবং যার ময়লা পরিষ্কার করত এবং যাকে
খাওয়াত যখন সে নিজে খেতে পারত না। সে কি করে তাদের উপর বড়ত্বের
দাবি করতে পারে? আলাহ তাআলা এরশাদ করেন—
( ﴿وَاخْفِضْ لهَُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحمَْةِ ﴾ (سورة الإسراء : ٢٤
তাদের সামনে ভালোবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও।৪৯
৫. পিতা-মাতার জন্য দোয়া করা :
সন্তানের কর্তব্য হল তাঁদের জন্য জীবিত অবস্থায় এবং মৃত্যুর পর দোয়া
করা। আলাহ বলেন―
( وَقُلْ رَبِّ ارْحمَْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا. (سورة الإسراء : ٢٤
এবং বল : হে পালনকর্তা! তাঁদের উভয়ের প্রতি রহম কর যেমন তারা
আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।৫০ আর নবী সালালাহু আলাইহি
ওয়াসালাম বলেন―
إذا مات الإنسان انقطع عنه عمله إلا من ثلاثة: إلا من صدقة جارية, أو علم ينتفع
( به, أو ولد صالح يدعو له. (رواه مسلم : ٣٠٨٤
মানুষ যখন মারা যায় তিনটি আমল ছাড়া সমস্ত আমলের পথ বন্ধ হয়ে যায়।
চলমান দান, অথবা উপকারী ইলম, অথবা সৎ সন্তান―যে তার জন্য দোয়া
করতে থাকে।৫১
৬. পিতা-মাতাকে অভিশপ্তকরনের কারণ না হওয়া :
কাউকে অভিশাপ দেয়া এমনিতেই হারাম ও অবৈধ আর এ অবৈধতার মাত্রা
আরো বেড়ে যায় যদিএ অভিশাপ প্রদান , পিতা- মাতাকে অভিশপ্ত করণের
কারণ হয়। নবী করিম সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন―
إن من أكبر الكبائر أن يلعن الرجل والديه, قيل يا رسول الله كيف يلعن الرجل
والديه? قال يسب أبا الرجل فيسب أباه و يسب أمه فيسب أمه. (رواه البخاري :
(٥٥١٦
৪৮ আল-ইসরা : ২৩
৪৯ আল-ইসরা : ২৪
৫০ আল-ইসরা : ২৪
৫১ মুসলিম : ৩০৮৪
সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হল কোন ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অভিশাপ
দেওয়া। বলা হল, হে আলাহর রাসূল ! কোন ব্যক্তি কীভাবে নিজ পিতা-মাতাকে
অভিশাপ দেয় ? রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন, কারো পিতাকে
গালি দিল , আর সে তার পিতাকে গালি দিল । কারো মাতাকে গালি দিল আর
সে তার মাকে গালি দিল।৫২
এ যদি হয় অবস্থা তাহলে সে ব্যক্তির অবস্থা কত মারাত্মক, যে সরাসরি নিজ
পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেয়। আলাহ তাআলা আমাদেরকে হেফাজত করুন।
৭. পিতা-মাতার আত্মীয়-স্বজন এবং সাথিদের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখা,
আর তাদেরকে সম্মান করা। পিতা-মাতার জীবদ্দশায় এবং তাদের মৃত্যুর পর:
নবী সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন―
( إن من أبر البر صلة الولد أهل ود أبيه. (رواه مسلم : ٤٦٣١
সবচেয়ে বড় সৎকর্ম হল সন্তান তার পিতার বন্ধুর সাথে সুসম্পর্ক বজায়
রাখে।৫৩
৮. তাদেরকে দাওয়াত দেওয়া এবং প্রয়োজনে শিক্ষা দেওয়া :
মানুষের মাঝে পিতা-মাতা সবচেয়ে বেশি অধিকার রাখে উপদেশ এবং
সাহায্য পাওয়ার। তাদের কোন অন্যায় যে দেখবে, সে নম্রতা ও আদবের সাথে
তাদেরকে সাবধান করবে। কেননা এর দ্বারা তারা শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে।
ইমাম আহমদ রহ. বলেন, যখন কোন সন্তান তার পিতাকে অপছন্দনীয়
কোন কাজে দেখবে, তাকে কঠোরতা এবং খারাপ ব্যবহার ছাড়া বোঝাবে এবং
কঠিন ভাষায় কথা বলবে না। নতুবা তিনি সন্তানের কথা শুনবেন না। তার সাথে
অপরিচিত ব্যক্তির ন্যায় আচরণ করা চলবে না।
তারপরও পিতা সন্তানের উপদেশ কখনও কখনও গ্রহণ না-ও করতে পারেন,
সে জন্যে উত্তম হল, পরোক্ষভাবে অন্যের মাধ্যমে উপদেশ দেওয়া। যেমন,
মসজিদের ইমামকে ঐ নির্দিষ্ট বিষয়ে কথা বলতে অনুরোধ করবে , যার প্রয়োজন
তার পিতার রয়েছে। অথবা পিতাকে এমন কিতাবের সন্ধান দেবে, যার মাঝে
তার ভুল শুধরে দেবার উপাদান রয়েছে। অথবা বইটি তার সামনে মেলে ধরবে,
কিন্তু তাকে সতর্ক করার কথা বুঝতে দেবে না। তাহলে তিনি হয়তো তা পড়া
এবং গ্রহণ করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। এছাড়া অন্য যে কোন মাধ্যম
অবলম্বন করতে পারে, যার দ্বারা তার উপকার হয়। কোন অবস্থায় সরাসরি তাকে
উদ্দেশ্য করবে না। কেননা এর দ্বারা হতে পারে তিনি দূরে সরে যাবেন।
৫২ বুখারী: ৫৫১৬
১ মুসলিম : ৪৬৩১
৯. তাদের সংগ ও সাহচর্য লাভ করা :
এটা সন্তান এবং পিতা-মাতার মাঝে সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির জন্যে কাম্য।
এর অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে। তার কিছু নিমেড়ব উলেখ করা হল।
ক) সর্বদা তাদের সাথে পরামর্শ করা এবং তাদের মতামত গ্রহণ করা।
খ) তাদেরকে উপহার দেওয়া। রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন,
( تهادوا تحابوا. (رواه مالك في المؤطأ : ١٤١٣
তোমরা পরস্পর উপহার বিনিময় কর, তাতে ভালোবাসা সুদৃঢ় হবে।৫৪
গ) ভ্রমণে তাদের সঙ্গ দেবে―ইত্যাদি। আর এটা আলাহ তাআলার এই
নির্দেশের মাঝে শামিল―
( وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا. (سورة لقمان : ١٥
এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহ অবস্থান করবে।৫৫
১০. কতিপয় জরুরি আদব :
সন্তানের উচিত পিতা-মাতার কাউকে নাম ধরে না ডাকা। তাঁদের বসার পূর্বে
না বসা, তাদের সামনে দিয়ে না হাঁটা। তবে যদি তারা সামনে বাড়িয়ে দেয়
তাদের কোন কষ্ট দূর করার জন্য, তাহলে কোন ক্ষতি নেই।
তাদের সেবা করবে, তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে, তাদের সাথে নম্রভাবে
কথা বলবে। তারা কথা বলার সময় কথা বলবে না, তাদের ভুল ধরবে না অথবা
বলবে না আপনি জানেন না। প্রত্যেক শরিয়তসম্মত এবং বৈধ বিষয়ে সর্বদা
পিতা-মাতাকে খুশী রাখার চেষ্টা করা উচিত। তারা সন্তানদেরকে নামাজি এবং
সৎ হিসাবে ভালোবাসবে এবং সৎ লোকদের সঙ্গী হিসাবে ভালোবাসবে এবং সন্ত
ানের শিক্ষা এবং উপরে উঠার মনোভাবকে ভালোবাসবে। বরং সন্তানকে নিয়ে
গর্ববোধ করবে। অতএব, উলেখিত গুণাবলি অর্জন করা পিতা-মাতার অনুগত
হওয়ার শামিল।
মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়ার পরিণতি
অবাধ্য সন্তানের দুনিয়া আখেরাত দুটিই ধ্বংস হয়ে যায়।
১. মাতা-পিতার অবাধ্যতা দোজখে প্রবেশের কারণ।
২. এতে দুনিয়া এবং আখেরাতের জীবন সংকটাপনড়ব হয়ে যায়।
৩. নিজ সন্তানও অনুরূপ অবাধ্য হয়।
৪. সমস্ত কাজে ও নিজ বয়সের বরকত নষ্ট হয়ে যায়।
৫৪ মুয়াত্তা মালেক : ১৪১৩
৫৫ লুকমান : ১৫
আত্মীয়তার সম্পর্ক
আল্লাহ্ তাআলা আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এরশাদ
হচ্ছে :―
( وَالَّذِينَ يَصِلُونَ مَا أَمَرَ اللهَُّ بِهِ أَنْ يُوصَلَ. (سورة الرعد : ٢١
এবং যারা বজায় রাখে ঐ সম্পর্ক, যা বজায় রাখতে আল্লাহ্ আদেশ
দিয়েছেন।ীীরী তিনি নিকট আত্মীয়দের অধিকার আদায়ে উৎসাহিত করেছেন।
আল্লাহ্ বলেন :
( وَآَتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ. (سورة الإسراء : ٢٦
আত্মীয়-স্বজনকে তার হক দান কর। আল্লাহ্ তাআলা হাদিসে কুদসীতে
‘সম্পর্ক’-কে লক্ষ্য করে বলেন :―
( من وصلك وصلته, ومن قطعك قطعته. (رواه البخاري : ٥٥٢٩
যে ব্যক্তি তোমাকে ঠিক রাখবে, আমি তাকে মিলিয়ে রাখব আর যে
তোমাকে ছিনড়ব করবে, আমি তাকে ছিনড়ব করব।আর সম্পর্ক ছিনড়ব করা থেকে খুব
সর্তক করেছেন এবং একে পৃথিবীতে বিঃশৃংখলা সৃষ্টি বলে সাব্যস্ত করেছেন ।
আল্লাহ্ বলেন:
( فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ (محمد: ٢٢
ক্ষমতা লাভ করলে সম্ভবত : তোমরা পৃথিবীতে বি:শৃংখলা সৃষ্টি করবে এবং
আত্মীয়তার বন্ধন ছিনড়ব করবে । (সূরা মুহাম্মাদ: ২২)
নবী করিম সাল−াল−াহু আলাইহি ওয়াসাল−াম বলেন :―
( لا يدخل الجنة قاطع. (رواه البخاري : ٥٥٢٥
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিনড়বকারী জানড়বাতে প্রবেশ করবে না।
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার ফজিলত :
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার অনেক ফজিলত রয়েছে। তন্মধ্যে কিছু
উলে−খ করা হল।
১. সম্পর্ক বজায় রাখা রিজিক বৃদ্ধি এবং দীর্ঘজীবী হবার কারণ এবং
উভয়ের মাঝে বরকতের কারণ। আনাস রা. রসূল(সঃ)
থেকে বর্ণনা করে বলেন—
من أحب أن يبسط له فى رزقه وينسأ له فى أثره فليصل رحمه. (رواه البخاري :
(٥٥٢٧
যে ব্যক্তি তার রিজিক প্রশস্ত হওয়া এবং মৃত্যুর সময় পিছিয়ে দেয়া কামনা
করে, তার উচিত আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা । (বোখারি: ৫৫২৭)
২. এ কাজ জানড়বাতে প্রবেশের কারণ হবে। আবু আইয়ুব আনসারী রা.
থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রসূল(সঃ) কে বলল, হে
আল্লাহ্র রাসূল ! আমাকে এমন আমল বলে দিন যা আমাকে জানড়বাতে প্রবেশ
করাবে। তখন রাসূল বললেন―
تعبد الله ولا تشرك به شيئاً وتقيم الصلوة وتؤتي الزكاة وتصل الرحم. (رواه
( البخاري : ١٣٠٩
আল্লাহ্র এবাদত কর, তার সাথে কোন কিছু শরিক করো না। নামাজ ভাল
করে আদায় কর এবং জাকাত দাও। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণড়ব রাখ।
৩. দুনিয়া এবং আখেরাতে সৌভাগ্য এবং তাওফীক পাওয়ার কারণ হল
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।
সম্পর্কের স্তর :
এ সম্পর্ক বজায় রাখার কিছু স্তর রয়েছে। সর্বোচ্চ স্তর হল : জান-মাল দ্বারা
সাহায্য করা। এবং কল্যাণ কামনা করা। আর সর্বনিু স্তর হল, সালাম দেয়া।
এই দুইটির মাঝখানে আরো অনেক স্তর রয়েছে। রসূল(সঃ) এরশাদ করেন—
بلوا أرحامكم ولو بالسلام.
সালাম-এর মাধ্যমে হলেও তোমরা তোমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ।
আর অপর দিকে এর উঁচু স্তর হল, যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিনড়ব করবে,
তুমি তার সাথে সম্পর্ক জুড়বে। রসূল(সঃ)
বলেন―
ليس الواصل بالمكافئ ولكن الواصل الذي إذا قطعت رحمه وصلها. (رواه
( البخاري : ٥٥٣٢
সমান সমান আচরণ দ্বারা সম্পর্ক স্থাপনকারী হওয়া যায় না। কিন্তু, তার
সাথে সম্পর্ক ছিনড়ব করা হলে, তখনও যদি সে সম্পর্ক ঠিক রাখে, তাহলেই তাকে
প্রকৃত সম্পর্ক স্থাপনকারী বলা যাবে। অর্থাৎ, আত্মীয়তার সম্পর্ক পূর্ণ বজায় রাখা
তখনই হবে, যখন কোন সম্পর্ক ছিনড়ব করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক জুড়ে
রাখা হবে।
সম্পর্কের সীমারেখা বা সংজ্ঞা :
আত্মীয়তার সম্পর্কের কোন নির্দিষ্ট সীমানা বা সংজ্ঞা নেই। প্রচলিত রীতি
অনুযায়ী তা নির্ধারিত হয়। প্রচলিত রীতি যেটাকে সম্পর্ক বজায় রাখা মনে করে
সেটা ধর্তব্য। আর যেটাকে সম্পর্ক ছিনড়ব করা মনে করে সেটা বর্জনীয়।
আত্মীয়তার পার্থক্য ও মর্যাদা অনুযায়ী সম্পর্কের মাঝে পার্থক্য হয়ে থাকে,
পিতার সম্পর্ক আর দূর সম্পর্কের চাচাত ভাইয়ের সম্পর্ক এক হয় না।
অবস্থা অনুযায়ী এ সম্পর্কের পার্থক্য ঘটে। রুগি এবং মুখাপেক্ষীর সম্পর্ক
ধনী এবং সুস্থের সমান হয় না। বড়-ছোটর সম্পর্কও এক হয় না। অনুরূপভাবে
স্থান অনুযায়ী সম্পর্কের মাঝে পার্থক্য ঘটে। যে দেশের মাঝে আছে আর যে
দেশের বাইরে আছে, তাদের সম্পর্ক এক রকম হয় না।
সম্পর্কের নিদর্শন হল পরস্পর সাক্ষাৎ এবং অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ খবর
নেয়া, সালাম দেয়া, ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা, পত্র লেখা ইত্যাদি।
স্বামী-স্ত্রীর অধিকার
বিবাহ স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একটি সুদৃঢ় বন্ধন। আল্লাহ্ তাআলা এর চির স্থায়িত্ব
পছন্দ করেন, বিচ্ছেদ অপছন্দ করেন। এরশাদ হচ্ছে―
وَكَيْفَ تَأْخُذُونَهُ وَقَدْ أَفْضَى بَعْضُكُمْ إِلَى بَعْضٍ وَأَخَذْنَ مِنْكُمْ مِيثَاقًا غَلِيظًا. ﴿النساء
﴾٢٠:
‘তোমরা কীভাবে তা (মোহরানা) ফেরত নিবে ? অথচ তোমরা পরস্পর
শয়ন সঙ্গী হয়েছ। সাথে সাথে তারা তোমাদের থেকে চির বন্ধনের সুদৃঢ়
অঙ্গিকারও নিয়েছে।’৫৬
এ চুক্তিপত্র ও মোহরানার কারণে ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে কতক
দায়দায়িত্ব ও অধিকার নিশ্চিত করেছে। যা বাস্তবায়নের ফলে দাম্পত্য জীবন
সুখী ও স্থায়ী হবে—সন্দেহ নেই। সে সব অধিকারের প্রায় সবগুলোই সংক্ষেপ
আকারে বর্ণিত হয়েছে কোরআনের নিুোক্ত আয়াতে—
وَلهَُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالمَْعْرُوفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ وَاللهَُّ عَزِيزٌ حَكِيمٌ. ﴿البقرة
﴾٢٢٧ :
‘যেমন নারীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমন তাদের জন্যও অধিকার
রয়েছে ন্যায্য-যুক্তিসংগত ও নীতি অনুসারে। তবে নারীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব
পুরুষদের। আল্লাহ্ পরাμমশালী, প্রজ্ঞাময়।’৫৭
আল্লাহ্ তাআলা এই আয়াতে বর্ণনা করেছেন যে, প্রত্যেকের উপর প্রত্যেকের
অধিকার রয়েছে। যদিও আনুগত্য এবং রক্ষনা-বেক্ষন ও অভিভাবকত্বের
বিবেচনায় শ্রেষ্ঠত্ব পুরুষদের।
এখানে আমরা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে বিরাজমান কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধিকার
স্তর ও মানের ভিত্তিতে উলে−খ করছি।
প্রমত: যে সব অধিকারের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সমান। দাম্পত্য জীবনে
পারস্পরিক সততা, বিশ্বস্ততা ও সদ্ভাব প্রদর্শন করা। যাদের মাঝে নিবিড় বন্ধুত্ব,
অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক, অধিক মেলামেশা, সবচেয়ে বেশি আদান-প্রদান তারাই স্বামী
এবং স্ত্রী। এ সম্পর্কের চিরস্থায়ী রূপ দিতে হলে ভাল চরিত্র, পরস্পর সম্মান,
নম্র-ভাব, হাসি-কৌতুক এবং অহরহ ঘটে যাওয়া ভুলচুক ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে
দেখা অবশ্যম্ভাবী। এবং এমন সব কাজ, কথা ও ব্যবহার পরিত্যাগ করা, যা
উভয়ের সম্পর্কে চির ধরে কিংবা মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। আল্লাহ্ বলেন—
৫৬ নিসা : ২০
৫৭ বাকারা : ২২৭
﴾ وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ سورة النساء. ﴿النساء : ١٨
‘তাদের সাথে তোমরা সদ্ভাবে আচরণ কর।’৫৮ রসূল(সঃ)
বলেন—
( خيركم خيركم لأهله وأنا خيركم لأهلي. ابن ماجه ( ١٩٦٧
‘তোমাদের মাঝে যে নিজের পরিবারের কাছে ভাল, সেই সর্বোত্তম। আমি
আমার পরিবারের কাছে ভাল।’৫৯ পরস্পর সদ্ভাবে জীবন যাপন একটি ব্যাপক
শব্দ। এর মাঝে সমস্ত অধিকার বিদ্যমান।
দ্বিতীয়ত: পরস্পর একে অপরকে উপভোগ করা। এর জন্য আনুষঙ্গিক
যাবতীয় প্রস্তুতি ও সকল উপকরণ গ্রহণ করা। যেমন সাজগোজ, সুগন্ধি ব্যবহার
এবং পরিষ্কার পরিচ্ছনড়বতাসহ দুর্গন্ধ ও ময়লা কাপড় পরিহার ইত্যাদি। স্বামীÑস্ত্রী
প্রত্যেকের এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা। অধিকন্তু এগুলো সদ্ভাবে জীবন
যাপনেরও অংশ। ইবনে আব্বাস রা. বলেন—
إني لأحب أن أتزين للمرأة كما أحب أن تتزين لي.
‘আমি যেমন আমার জন্য স্ত্রীর সাজগোজ কামনা করি, অনুরূপ তার জন্য
আমার নিজের সাজগোজও পছন্দ করি।’ তবে পরস্পর এ অধিকার নিশ্চিত
করার জন্য উভয়কেই হারাম সম্পর্ক ও নিষিদ্ধ বস্তু হতে বিরত থাকতে হবে।
তৃতীয়ত : বৈবাহিক সম্পর্কের গোপনীয়তা রক্ষা করা। সাংসারিক সমস্যা
নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা না করাই শ্রেয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে উপভোগ্য
বিষয়গুলো গোপন করা। রসুল(সঃ) বলেন—
إنّ من أشرّ الناس عند الله منزلة يوم القيامة: الرجل يفضي إلى امرأته و تفضي إليه ثم
( ينشر سرها. مسلم ( ٢٥٩٧
কিয়ামতের দিন আল্লাহ্র দরবারে সর্ব-নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে নিজের স্ত্রীর
সাথে মিলিত হয় এবং যার সাথে তার স্ত্রী মিলিত হয়, অতঃপর সে এর
গোপনীয়তা প্রকাশ করে বেড়ায়।৬০
চর্তুত : পরস্পর শুভ কামনা করা, সত্য ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়া। আল্লাহ্র
আনুগত্যের ব্যাপারে একে অপরকে সহযোগিতা করা। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একে
অপর থেকে উপদেশ পাওয়ার অধিক হকদার। দাম্পত্য জীবন রক্ষা করা
৫৮ নিসা : ১৮
৫৯ ইবনে মাজাহ : ১৯৬৭
৬০ মুসলিম : ২৫৯৭
উভয়েরই কর্তব্য।আর এর অন্তরভূক্ত হচ্ছে, পরস্পর নিজ আত্মীয়দের সাথে
সদ্ভাব বজায় রাখার ক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতা করা ।
সন্তানদের লালন-পালন ও সুশিক্ষার ব্যাপারে উভয়েই সমান, একে অপরের
সহযোগী। আল্লাহ্ তাআলা বলেন –
﴾ وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى. ﴿المائدة : ٢
‘তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ব্যপারে পরস্পরকে সহযোগিতা কর।’৬১
দ্বিতীয়ত : স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য। সুখকর দাম্পত্য জীবন, সুশৃঙ্খল
পরিবার, পরার্থপরতায় ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম
জীবন সঙ্গিনী স্ত্রীর উপর কতিপয় অধিকার আরোপ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি
এখানে প্রদত্ত হল।
১. স্বামীর আনুগত্য : স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর কর্তব্য। তবে যে কোন
আনুগত্যই নয়, বরং যেসব ক্ষেত্রে আনুগত্যের নিমড়ব বর্ণিত তিন শর্ত বিদ্যমান
থাকবে।
(ক) ভাল ও সৎ কাজ এবং আল্লাহ্র বিধান বিরোধী নয় এমন সকল বিষয়ে
স্বামীর আনুগত্য করা। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্র অবাধ্যতায় কোন সৃষ্টির আনুগত্য বৈধ
নয়।
(খ) স্ত্রীর সাধ্য ও সামর্থ্যরে উপযোগী বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা। কারণ
আল্লাহ্ তাআলা মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্বারোপ করেন না।
(গ) যে নির্দেশ কিংবা চাহিদা পূরণে কোন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, সে
ব্যাপারে স্বামীর আনুগত্য করা। আনুগত্য আবশ্যক করে পবিত্র কোরআনে
আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
﴾ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ. ﴿ البقرة : ٢٢٧
‘নারীদের উপর পুরুষগণ শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকারী।’৬২ আল্লাহ্ তাআলা
আরো বলেন—
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ
﴾ أَمْوَالِهِمْ. ﴿النساء : ٣٤
‘পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বকারী। কারণ আল্লাহ্ তাআলা-ই তাদের
মাঝে তারতম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের বিধান রেখেছেন। দ্বিতীয়ত পুরুষরাই ব্যয়-ভার গ্রহণ
৬১ মায়েদা : ২
৬২ বাকারা : ২২৭
করে।’৬৩ উপরন্তু এ আনুগত্যের দ্বারা বৈবাহিক জীবন স্থায়িত্ব পায়, পরিবার চলে
সঠিক পথে। নবী করিম সাল−াল−াহু আলাইহি ওয়া সাল−াম স্বামীর আনুগত্যকে
এবাদতের স্বীকৃতি প্রদান করে বলেন—
إذا صلت المرأة خمسها, وصامت شهرها, وحصنت فرجها, وأطاعت بعلها,
( دخلت من أى من أبواب الجنة شاءت. مسند أحمد ( ١٥٧٣
যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজান মাসের রোজা রাখে এবং নিজের
লজ্জাস্থান হেফাজত করে ও স্বীয় স্বামীর আনুগত্য করে, সে, নিজের ইচ্ছানুযায়ী
জানড়বাতের যে কোন দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবে।৬৪
স্বামীর কর্তব্য, এ সকল অধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে আল্লাহ্র বিধানের
অনুসরণ করা। স্ত্রীর মননশীলতা ও পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে সত্য-কল্যাণ ও
উত্তম চরিত্রের উপদেশ প্রদান করা কিংবা হিতাহিত বিবেচনায় বারণ
করা।উপদেশ প্রদান ও বারণ করার ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ ও উনড়বত মননশীলতার
পরিচয় দেয়া । এতে সানন্দ চিত্তে ও স্বাগ্রহে স্ত্রীর আনগত্য পেয়ে যাবে।
২. স্বামী-আলয়ে অবস্থান:
নেহায়েত প্রয়োজন ব্যতীত ও অনুমতি ছাড়া স্বামীর বাড়ি থেকে বের হওয়া
অনুচিত।মহান আল্লাহ্ তাআলা পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নারীদের ঘরে অবস্থানের
নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তাঁর রসূল(সঃ) আলাইহি ওয়া সাল−াম-এর স্ত্রীদের
সম্বোধন করে বলেন—সকল নারীই এর অন্তর্ভুক্ত—
﴾ وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى. ﴿الأحزاب : ٣٣
‘তোমরা স্ব স্ব গৃহে অবস্থান কর, প্রাচীন যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শনের মত
নিজেদের কে প্রদর্শন করে বেড়িও না। ’৬৫
স্ত্রীর উপকার নিহিত এবং যেখানে তারও কোন ক্ষতি নেই, এ ধরনের কাজে
স্বামীর বাধা সৃষ্টি না করা। যেমন পর্দার সাথে, সুগন্ধি ও সৌন্দর্য প্রদর্শন পরিহার
করে বাইরে কোথাও যেতে চাইলে বারণ না করা। ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেন,
রসূল(সঃ) আলাইহি ওয়া সাল−াম বলেছেন—
( لاتمنعوا إماء الله مساجد الله. البخاري ( ٨٤٩
আল্লাহ্র বান্দিদেরকে তোমরা আল্লাহ্র ঘরে যেতে বাধা দিয়ো না।৬৬
৬৩ নিসা : ৩৪
৬৪ আহমাদ : ১৫৭৩
৬৫ আহজাব : ৩৩
৬৬ বুখারী: ৮৪৯
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা: এর স্ত্রী যয়নব সাকাফী রা. বলেন, রাসূল(সঃ)
আমাদেরকে বলতেন—
( إذا شهدت إحداكن المسجد فلا تمس طيبا. مسلم ( ٦٧٤
তোমাদের কেউ মসজিদে যাওয়ার ইচ্ছে করলে সুগন্ধি ব্যবহার করবে না।৬৭
২. নিজের ঘর এবং সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখা। স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ
করা। স্বামীর সাধ্যের অতীত এমন কোন আবদার কিংবা প্রয়োজন পেশ না করা।
রসূল(সঃ)বলেন—
( والمرأة راعية فى بيت زوجها ومسؤولة عن رعيتها. البخاري ( ٢٥٤٦
‘স্ত্রী স্বীয় স্বামীর ঘরের জিম্মাদার। এ জিম্মাদারির ব্যাপারে তাকে
জবাবদেহিতার সম্মুখীন করা হবে।’৬৮
৩. নিজের সতীত্ব ও সম্মান রক্ষা করা। পূর্বের কোন এক আলোচনায়
আমরা রসূল(সঃ) আলাইহি ওয়া সাল−াম-এর একটি হাদিস এ মর্মে উলে−খ
করেছি যে, নিজেকে কখনো পরীক্ষা কিংবা ফেতনার সম্মুখীন না করা।
৪. স্বামীর অপছন্দনীয় এমন কাউকে তার ঘরে প্রবেশের অনুমতি না দেয়া।
হোক না সে নিকট আত্মীয় কিংবা আপনজন। যেমন ভাই-বেরাদার। রাসূল(সঃ)
বলেছেন―
( …ولكم عليهن أن لا يؤطئن فرشكم أحداً تكرهونه. مسلم ( ٢١٣٧
‘তোমাদের অপছন্দনীয় কাউকে বিছানায় জায়গা না দেয়া স্ত্রীদের কর্তব্য।’৬৯
স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত নফল রোজা না রাখা। কারণ,
রোজা নফল—আনুগত্য ফরজ। রসূল(সঃ) বলেন—
لا يحل للمرأة أن تصوم و زوجها شاهد إلا بأذنه, ولا تأذن فى بيته إلا باذنه.
( البخاري ( ٤٧٩٦
নারীর জন্য স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমতি ছাড়া রোজা রাখা বৈধ নয়। অনুরূপ
ভাবে অনুমতি ব্যতীত তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়াও বৈধ নয়।৭০
তৃতীয়ত : স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য, সুখকর দাম্পত্য জীবন, সুশৃঙ্খল পরিবার,
পরার্থপরতায় ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম জীবন
৬৭ মুসলিম : ৬৭৪
৬৮ বুখারী: ২৫৪৬
৬৯ মুসলিম : ২১৩৭
৭০ বুখারী : ৪৭৬৯
সঙ্গী স্বামীর উপর কতিপয় অধিকার আরোপ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এখানে
প্রদত্ত হল।
১. দেন মোহর
নারীর দেন মোহর পরিশোধ করা ফরজ। এ হক তার নিজের, পিতা-মাতা
কিংবা অন্য কারো নয়। আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
﴾ وَآَتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً. ﴿النساء : ٤
‘তোমরা প্রফুল− চিত্তে স্ত্রীদের মোহরানা দিয়ে দাও।’৭১
২. ভরন পোষণ:
সামর্থ্য ও প্রচলিত প্রা অনুযায়ী স্ত্রীর ভরন-পোষণ করা স্বামীর কর্তব্য। স্বামীর
সাধ্য ও স্ত্রীর মর্তবার ভিত্তিতে এ ভরন-পোষণ কম বেশি হতে পারে।অনুরূপ
ভাবে সময় ও স্থান ভেদে এর মাঝে তারতম্য হতে পারে।আল্লাহ্ তাআলা
বলেন—
لِيُنْفِقْ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنْفِقْ مِمَّا آَتَاهُ اللَّهُ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ
﴾ نَفْسًا إِلَّا مَا آَتَاهَا. ﴿الطلاق : ٧
বিত্তশালী স্বীয় বিত্তানুযায়ী ব্যয় করবে। আর যে সীমিত সম্পদের মালিক সে
আল্লাহ্ প্রদত্ত সীমিত সম্পদ হতেই ব্যয় করবে। আল্লাহ্ যাকে যে পরিমাণ
দিয়েছেন, তারচেয়ে’ বেশি ব্যয় করার আদেশ কাউকে প্রদান করেন না।৭২
৩. স্ত্রীর প্রতি øেহশীল ও দয়া-পরবশ থাকা। স্ত্রীর প্রতি রূঢ় আচরণ না
করা। তার সহনীয় ভুলচুকে ধৈর্যধারণ করা। স্বামী হিসেবে সকলের জানা উচিত,
নারীরা মর্যাদার সম্ভাব্য সবকটি আসনে অধিষ্ঠিত হলেও, পরিপূর্ণ রূপে সংশোধিত
হওয়া সম্ভব নয়। রসূল(সঃ) বলেন :
((… واستوصوا بالنساء خيرا , فإنهن خلقن من ضلع , وإن أعوج شيء في الضلع
أعلاه , فإن ذهبت تقيمه كسرته , وإن تركته لم يزل أعوج , فاستوصوا بالنساء خيرا
.((
তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী। কারণ, তারা পাঁজরের হাড় দ্বারা
সৃষ্ট। পাঁজরের উপরের হাড়টি সবচে’ বেশি বাঁকা। (যে হাড় দিয়ে নারীদের সৃষ্টি
করা হয়েছে) তুমি একে সোজা করতে চাইলে, ভেঙে ফেলবে। আবার এ অবস্থায়
৭১ নিসা : ৪
৭২ তালাক : ৭
রেখে দিলে, বাঁকা হয়েই থাকবে। তাই তোমরা তাদের কল্যাণকামী হও, এবং
তাদের ব্যাপারে সৎ-উপদেশ গ্রহণ কর।
৪. স্ত্রীর ব্যাপারে আত্মমর্যাদাশীল হওয়া। হাতে ধরে ধরে তাদেরকে
হেফাজত ও সুপথে পরিচালিত করা। কারণ, তারা সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল, স্বামীর যে
কোন উদাসীনতায় নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এ কারণে রসূল(সঃ) আলাইহি ওয়া সাল−াম নারীর ফেতনা হতে খুব
যতড়ব সহকারে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন—
( ما تركت بعد فتنة أضر على الرجال من النساء. البخاري ( ٤٧٠٦
‘আমার অবর্তমানে পুরুষদের জন্য নারীদের চে’ বেশি ক্ষতিকর কোন
ফেতনা রেখে আসিনি।’৭৩ নারীদের ব্যাপারে আত্মম্ভরিতার প্রতি লক্ষ্য করে রসূল(সঃ)বলেন—
( أتعجبون من غيرة سعد, أنا أغير منه, والله أغير منى. مسلم ( ٢٧٥٥
‘তোমরা সা’আদ এর আবেগ ও আত্মসম্মানবোধ দেখে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ।
আমি তার চে’ বেশি আত্মসম্মানবোধ করি, আবার আল্লাহ্ আমারচে’ বেশি
অহমিকা সম্পনড়ব।’৭৪
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, যার মাঝে আত্মমর্যাদাবোধ
নেই সে দাইয়ূছ (অসতী নারীর স্বামী, যে নিজ স্ত্রীর অপকর্ম সহ্য করে)। হাদিসে
এসেছে—
( لا يدخل الجنة ديوث. الدارمي ( ٣٣٩٧
‘দাইয়ূছ জানড়বাতে প্রবেশ করবে না।’৭৫
মানুষের সবচেয়ে বেশি আত্মমর্যাদার বিষয় নিজের পরিবার। এর ভেতর
অগ্রাধিকার প্রাপ্ত স্বীয় স্ত্রী। অতঃপর অন্যান্য আত্মীয়Ñস্বজন এবং অধীনস্থগণ।
পরিশেষে নির্ঘাত বাস্তবতার কথা স্বীকার করে বলতে হয়, কোন পরিবার
সমস্যাহীন কিংবা মতবিরোধ মুক্ত নয়। এটাই মানুষের প্রকৃতি ও মজ্জাগত
স্বভাব। এর বিপরীতে কেউ স্বীয় পরিবারকে নিষ্কণ্টক অথবা ঝামেলা মুক্ত কিংবা
ফ্রেশ মনে করলে, ভুল করবে। কারণ, এ ধরাতে সর্বোত্তম পরিবার কিংবা সুখী
ফ্যামিলির একমাত্র উদাহরণ আমাদের রসূল(সঃ) -এর
পরিবার ও ফ্যামিলি। সেখানেও আমরা মানবিক দোষ-ত্র“টির চিত্র দেখতে পাই,
অন্য পরিবারের পবিত্রতা কোথায় ?
৭৩ বুখারী:৪৭০৬
৭৪ মুসলিম : ২৭৫৫
৭৫ দারামি : ৩৩৯৭
জ্ঞানী-গুণীজনের স্বভাব ভেবে-চিন্তে কাজ করা, ত্বরা প্রবণতা পরিহার করা,
ক্রোধ ও প্রবৃত্তিকে সংযমশীলতার সাথে মোকাবিলা করা। কারণ, তারা জানে যে
কোন মুহূর্তে ক্রোধ ও শয়তানের প্ররোচনায় আত্মমর্যাদার ছদ্মাবরণে মারাত্মক ও
কঠিন গুনাহ হয়ে যেতে পারে। যার পরিণতি অনুসূচনা বৈকি? আবার এমনও নয়
যে, আল্লাহ্ তাআলা সমস্ত কল্যাণ ও সুপথ বান্দার নখদর্পে করে দিয়েছেন। তবে
অবশ্যই তাকে মেধা, কৌশল ও বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হবে।
ইসলামে নারীর অবস্থান
ইসলামে নারীর মর্যাদা , অবস্থান এবং নারীর অধিকার সম্পর্কে পুরোপুরি
ধারণা নিতে হলে ইসলাম পূর্বযুগে নারীর অবস্থা সম্পর্কে কিছু আলোচনা
জরুরি।
ইসলাম পূর্বযুগে নারী
আমাদের নবী (সঃ)-এর নবুওয়্যত লাভের
পূর্বে ধরা-পৃষ্ঠ ছিল মূর্খতা ও ঘোর অন্ধকারাচ্ছনড়ব। প্রতিটি বিষয় ও স্থানে ছিল
বিশৃঙ্খলার জয়জয়কার। আকীদা-বিশ্বাস, অভ্যাস-আচরণ, চরিত্র-মাধুর্য সকল
ক্ষেত্রেই ছিল অরাজকতা বিরাজমান । তথাকথিত কতিপয় প্র া, ব্যক্তি স্বার্থ বৈ
এমন কোন নীতি-আদর্শ বিদ্যমান ছিল না, যার উপর নির্ভরশীল হতে পারে
একটি সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা মানব গোষ্ঠী।
যার কিছু নগড়ব চিত্র, বাস্তব প্রতিচ্ছবি: নারীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের
ভেতরদিয়ে আমাদের গোচরীভূত হয়। দেখতে পাই নারীরা কেমন বেদনাদায়ক
পরিবেশে দিনাতিপাত করত। কোন অধিকার নেই, দায়িত্ব নেই, সামর্থ্যরে বাইরে
সামান্য প্রাপ্যও নেই। এরই কতিপয় নমুনা আমরা এখানে তুলে ধরছি।
(ক) জন্মের পর থেকেই নারী অপয়া। জন্মের পূর্বে পিতা অধীর আগ্রহে
অপেক্ষা করত, বিভিনড়ব পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত থাকত, পুত্র সন্তানের আগমনে
কীভাবে আনন্দ করবে, কোন ধরনের উৎসবের আয়োজন করবে ইত্যাদি বিষয়ে।
হঠাৎ কন্যা সন্তানের সংবাদ শুনলে মাথা নত হয়ে যেত। মন সংকীর্ণ হয়ে
আসতো। বিবর্ণ হয়ে যেত চেহারা। অন্ধকার মনে হত সূর্যালোকিত এ পৃথিবী।
অপমান আর লজ্জার গ−ানিতে লোকালয় পরিত্যাগ করত।
(খ) কেউ কেউ কন্যাসন্তান জনিত গ্লানী মুছতে জীবিত দাফন করে দিত
তাকে। আবার বাঁচিয়ে রাখলেও অপমান আর লাঞ্ছনার সাথে। স্বয়ং আল্লাহ্
তাআলা যার উলে−খ করছেন পবিত্র কুরআনে। এরশাদ হচ্ছে-
دا وَهُوَ كَظِيمٌ ﴿ ٥٨ ﴾ يَتَوَارَى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِالْأُنْثَى ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَ
﴾ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ أَيُمْسِكُهُ عَلَى هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ أَلَا سَاءَ مَا يحَْكُمُونَ ﴿ ٥٩
তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের শুভসংবাদ প্রদান করা হয়, তখন সাথে
সাথে তার মুখাবয়ব কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে।
প্রাপ্ত অশুভ সংবাদ শুনে স্বজাতি হতে মাথা লুকিয়ে নেয়। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে
যায় স্বীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে—কি করবে একে নিয়ে। অপমানসহ বাঁচিয়ে রাখবে, না
মাটির নীচে পূতে ফেলবে। জেনে নাও, তারা নেহায়েত নির্মম, নিষ্ঠুর ও অসুন্দর
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।৭৬ আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন-
﴾ وَإِذَا المَْوْءُودَةُ سُئِلَتْ ﴿ ٨
‘স্মরণ কর, যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কি অপরাধে
তাকে হত্যা করা হল?’৭৭
(গ) নারীর অর্থনৈতিক অধিকার ? সেও ছিল তথৈবচ। উত্তরাধিকার বলতে
কোন জিনিসই ছিল না তাদের ক্ষেত্রে।ব্যাপারটি এপর্যন্ত সীমিত থাকলে কথা ছিল
কিন্তু বাস্তব অবস্থা ছিল আরো অমানবিক আরো করুন ,স্বামীর মৃত্যুর পর তাকেই
বরং উত্তরাধিকার ও ভোগ্যপণ্য গণ্য করা হত ।
(ঘ) নারী যখন জায়া তখন সে কি তার দাম্পত্য অধিকার নিয়ে ভাবার প্রয়াস
পেত? এ চিন্তা ছিল কল্পনারও অতীত কারণ স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী ছিল
উত্তরাধিকার, স্বামীর অন্য পক্ষের সন্তান অথবা কোন নিকট আত্মীয় তাকে
উত্তরাধিকার হিসেবে নিয়ে নিত , যার ইচ্ছা বিয়ে করত আবার কেউ এমনিই
আবদ্ধ করে রেখে দিত। অন্যত্র বিবাহের কোন কল্পনা করাও ছিল নিষিদ্ধ। বরং
বাধার সৃষ্টি করত অন্যত্র বিবাহ করতে। শান্তির ধর্ম ইসলাম এসে তাদের এ
অবস্থা হতে মুক্ত করে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا يحَِلُّ لَكُمْ أَنْ تَرِثُوا النِّسَاءَ كَرْهًا وَلَا تَعْضُلُوهُنَّ لِتَذْهَبُوا
بِبَعْضِ مَا آَتَيْتُمُوهُنّ.
হে ঈমানদারগণ! জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকার হিসেবে গ্রহণ করা
তোমাদের জন্য বৈধ নয়। তোমাদের প্রদত্ত কিয়দংশ সম্পদ নিয়ে যাবে বলে,
তাদের আবদ্ধ করে রেখো না।৭৮ আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন-
وَلَا تَنْكِحُوا مَا نَكَحَ آَبَاؤُكُمْ مِنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَمَقْتًا وَسَاءَ
﴾ سَبِيلًا. ﴿النساء : ٢٢
যে সকল নারীদের তোমাদের পিতা-পিতামহ বিবাহ করেছে, তোমরা তাদের
বিবাহ করো না। তবে অতীত তো অতীতই। এটা অশ্লীল, শাস্তিযোগ্য ও নিকৃষ্ট
আচরণ।৭৯
৭৬ নাহাল : ৫৯
৭৭ তাকওয়ীর : ৮
৭৮ নিসা : ১৯
৭৯ নিাসাা : ২২
(ঙ) শ্রদ্ধা ও সম্মান এবং এ জাতীয় বিষয় নিয়ে নারীরা চিন্তাও করত
না।তাদের ক্ষেত্রে এগুলো ছিল কল্পনা বিলাস। নারী সে সময়ে! জীবন্ত প্রোথিত
হত শৈশবে, নাহয় -বেচে থাকলে- লাঞ্ছনার জীবন ও পণ্যত্ব বরণ। তার কোন
অধিকারই স্বীকৃত ছিল না।তাহলে ঐ নারী কেমন জীবন যাপন করত?!
ইসলামে নারী
নারীর এ হীনতর অবস্থায় ইসলাম জীবন তরী হয়ে আগমন করল। টেনে
তুলল ক্লান্ত-হাবুডুবুরত নারীকে বিস্তৃত-গহিন সমুদ্র হতে। উপহার দিল সুখকর
স্বাচ্ছন্দ্যময় একটি বর্নীল-কাংখিত জীবন। যেখানে রয়েছে শিশু-কিশোরীদের
স্নেহ-মমতা-আদর আর আদর। সাবালকত্বে রয়েছে পছন্দ-অপছন্দের সব
অধিকার। পূর্ণ বয়স্কাদের জন্য আছে বোনের মর্যাদা কিংবা স্ত্রীর সম্মান। অতঃপর
পরম শ্রদ্ধার্হ একজন মা।
নারীর ন্যায্য-যোগ্য-প্রাপ্য সব অধিকারই প্রদান করল ইসলাম। জন্ম থেকে
মৃত্যু পর্যন্ত সকল অধিকার নিশ্চিতও করল।এমনকি মৃত্যুর পরও। নিচে তার
সামান্য চিত্র প্রদত্ত হল।
(ক) আল্লাহ্ তাআলা মানবজাতি সৃষ্টি করেছেন সাথে সাথে তার আনুগত্য-
এবাদতের দায়িত্বও অর্পণ করেছেন। বিধান রেখেছেন জবাবদিহিতারও। নারীপুরু
ষ সকলেই সমান। শিষ্টের লালন-দুষ্টের দমন, ভালোর প্রতিদান এবং মন্দের
শাস্তির বিধানও রেখেছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন-
لَيْسَ بِأَمَانِيِّكُمْ وَلَا أَمَانِيِّ أَهْلِ الْكِتَابِ مَنْ يَعْمَلْ سُوءًا يجُْزَ بِهِ وَلَا يجَِدْ لَهُ مِنْ دُونِ
يا وَلَا نَصِيرًا ﴿ ١٢٣ ﴾ وَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالحَِاتِ مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ اللهَِّ وَلِ
{١٢٤− فَأُولَئِكَ يَدْخُلُونَ الجَْنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ نَقِيرً.{النساء: ١٢٣
‘যে মন্দ কাজ করবে, সে তার শাস্তি ভোগ করবে। আল্লাহ্ ছাড়া সে কোন
বন্ধু কিংবা সাহায্যকারীরও সন্ধান পাবে না। পুরুষ কিংবা নারী যে কেউ ঈমান
এনে সৎকর্ম করবে, সে জানড়বাতে প্রবেশ করবে। তারা তিল পরিমাণও প্রাপ্য হতে
বঞ্চিত হবে না।’
(খ) আল্লাহ্ তাআলা স্বীয় সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। সে জ্ঞান ও হিকমতের
ভিত্তিতে কতক জিনিসের ভেতর আলাদা বিশেষত্ব প্রদান করেছেন। যা তার
দায়িত্ব ও কাজ-কর্মে বিকশিত হয়। তেমনি কতক বিশেষত্বের অধিকারী নারী।
যেমন কোমলতা, নমনীয়তা ও দ্রুত প্রতিμিয়াশীলতা। এগুলো তাদের সৃষ্টিগত
স্বভাব। এর ভিত্তিতেই তার দায়িত্ব ও কর্তব্য বণ্টন করেছে মানুষিক স্বভাবের ধর্ম
ইসলাম। এজন্য আল্লাহ্ তাআলা তাদের সৃষ্টিগত বৈশিষ্টের সাথে সঙ্গতি রেখেই
দায়িত্ব দিয়েছেন, এমন কোন দায়িত্ব দেননি যা তার সাধ্যের বাইরে। আর
পুরুষকে নারীর উপর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দিয়েছেন,তার দায়িত্বের চাহিদা ও ঐ
বৈশিষ্টের কারণে যা তাকে আলাদা স্বাতন্ত্র দিয়েছে। আল্লাহ্ই সুউচ্চ কৌশলের
মালিক ।
(গ) মেয়েদেরকে ছোট অবস্থায় আদরের সাথে লালন পালন করার প্রতিদান
অধিক।
ইমাম মুসলিম র. আনাস রা. থেকে বর্ণনা করেন নবী করিম (সঃ)বলেন:
যে ব্যক্তি দুটি মেয়েকে পূর্ণ বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত ভালভাবে লালনÑপালন
করল, কেয়ামতের দিন সে আর আমি একত্রে আসব। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল
স. আঙুল একত্রে মিলিয়ে দেখালেন।
(ঘ) ইসলাম নারীদেরকে ছোট অবস্থা থেকেই ধর্মীয় শিক্ষা, উত্তম চরিত্র,
পবিত্রতা, সতীত্বরক্ষা… শিক্ষা দেওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার পথ দেখিয়েছে
। রসূল(সঃ) এরশাদ করেন―
مروا أولادكم بالصلاة لسبع, واضربوهم عليها لعشر, وفرقوا بينهم فى
المضاجع. أبو داود : ٤١٨
তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে উপনীত হলে নামাযের
আদেশ কর আর দশ বছর হয়ে গেলে তার জন্যে শাস্তি প্রয়োগ কর এবং বিছানা
আলাদা করে দাও।৮০
(ঙ) নারীকে স্বামীর সাথে জীবন যাপন করতে হবে এদিকের গুরুত্ব বিবেচনা
করে ইসলাম আদেশ দিয়েছে যে ইতিপূর্বে যারা তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছে
এদের মধ্যে কাকে তার জন্যে নির্বাচন করা যায় এবিষয়ে তার সাথে পরামর্শ
করতে হবে।সাথে সাথে কোন কোন গুনের বিবেচনায় পাত্র নির্বাচন করা হবে
তারও একটি দিকনির্দেশনা দিয়েছে। যেমন দ্বীনদারী এবং ভাল চরিত্র। নবী করিম (সঃ)এরশাদ করেন―
إذا أتاكم من ترضون دينه و خلقه فزوجوه إلا تفعلوا تكن فتنة في الأرض و فساد
عريض . أخرجه ابن ماجة : ١٩٥٧
যখন তোমাদের কাছে বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে আসে এমন লোক যার দ্বীন
এবং চরিত্র নিয়ে তোমরা সন্তুষ্ট, তাহলে তার সাথে বিবাহ দিয়ে দাও। এবং
ব্যতিμম করলে পৃথিবীতে অশান্তি এবং অধিক বিশৃঙ্খলা হবে।৮১
৮০ আবু দাউদ : ৪১৮
(চ)আল্লাহ্ তাআলা স্বামীকে স্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তার যতড়ব নেয়া এবং
সুন্দরভাবে দেখা-শোনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন হাদীসে নবী করিম (সঃ) এরশাদ করেন―
( خياركم خياركم لأهله, وأنا خياركم لأهلي. ابن ماجه ( ١٩٦٧
তোমাদের সর্বোত্তম সে যে তার পরিবারের কাছে সর্বোত্তম। আর আমি
আমার পরিবারের কাছে সর্বোত্তম।৮২ আল্লাহ্র রাসূল আরো বলেন―
( استوصوا بالنساء خيرا, فإن المرأة خلقت من ضلع أعوج. مسلم ( ٢٦٧١
তোমরা নারীর ব্যাপারে কল্যাণ কামী হও। কেননা, নারীকে সৃষ্টি করা
হয়েছে পাঁজরের বμ হাড় থেকে।৮৩
(ছ) নারী মা, এদিকটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইসলাম তার জন্যে এমন কিছু
অধিকার নিশ্চিত করেছে যে সম্পর্কে প্রাচীন বা আধুনিক মানব রচিত কোন
বিধানই কখনো চিন্তা করেনি।
তার সম্মানের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, আল্লাহ্ তাআলা নিজের অধিকারের
পর মাতাÑপিতার অধিকারকে স্থান দিয়েছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন―
وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهمَُا أَوْ
كِلَاهمَُا فَلَا تَقُلْ لهَُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهمَُا وَقُلْ لهَُمَا قَوْلًا كَرِيمًا ﴿ ٢٣ ﴾وَاخْفِضْ لهَُمَا
﴾ جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحمَْةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحمَْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا. ﴿الإسراء : ٢٢
আপনার পালনকর্তা আদেশ করছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত
করো না এবং মাতাÑপিতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মাঝে কেউ অথবা
উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের কে উফ
শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। এবং বল তাদেরকে শিষ্টচার
পূর্ণ কথা। তাদের সামনে নম্রতার সাথে মাথা পেতে দাও। এবং বল হে
পালনকর্তা ! তাঁদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবে
লালনÑপালন করেছে।৮৪
৮১ ইবনে মাজাহ : ১৯৫৭
৮২ ইবনে মাাজাহ : ১৯৬৭
৮৩ মুসলিম : ২৬৭১
৮৪ আল-ইসরা : ২২
মুসলিম নারীর বৈশিষ্ট্য:
ইসলাম নারীকে মর্যাদা দিয়েছে, দান করেছে তাদের এমন বৈশিষ্ট্য যার
মাধ্যমে তাদেরকে অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সেগুলো
সংরক্ষণের আদেশ দিয়েছে। সে বৈশিষ্টাবলীর কিছু নিমেড়ব প্রদান করা হল:
ক) নারীকে পর্দার বিধান দেয়া হয়েছে যে, নারীরা তাদের সমস্ত শরীর
অপরিচিত পুরুষ হতে ঢেকে রাখবে, যাতে করে তাকে গোপন তীর আঘাত
করতে না পারে। এবং তার সতীত্ব ও পবিত্রতা কালিমা যুক্ত না হয়ে যায়।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন―
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ المُْؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ
﴾ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللهَُّ غَفُورًا رَحِيمًا ﴿الأحزاب : ٥٩
হে নবী ! আপনি আপনার পতড়বী, কন্যা এবং মোমিনদের স্ত্রী-গণ কে বলুন,
তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে
চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম
দয়ালু।৮৫ আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন-
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيحَْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا
﴾ ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ. ﴿النور : ٣١
এবং ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে
এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।আর সাধারণত: যা প্রকাশমান, তাছাড়া তাদের
সৌন্দর্য যেন প্রদর্শন না করে। এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ-দেশে
ফেলে রাখে।৮৬
খ) ইসলাম পুরুষকে রক্তের সম্পর্কবিহীন নারীর সাথে একাকিত্বে সাক্ষাৎ
নিষিদ্ধ করেছে, যদিও সে নিকট আত্মীয় হয়। যেমন চাচাত ভাই, মামাত ভাই,
দেবর ইত্যাদি। রসুল(সঃ) বলেন―
( إياكم والدخول على النساء . الترمذي ( ١٠٩١
মহিলাদের নিকট প্রবেশ করা থেকে সাবধান!৮৭
আনসারদের একজন বললেন
৮৫ আল আহজাব : ৫৯
৮৬ নূর : ৩১
৮৭ তিরমিজি : ১০৯১
হে আল্লাহ্র রাসূল ! আপনি কি দেবরের কথা বলছেন ? নবী করিম (সঃ) বলেন-
( الحمو الموت. البخاري ( ٤٨٣١
দেবর হল মৃত্যু সমতুল্য।৮৮
গ) নারীর স্থান তার ঘরে। ঘরই তার কাজের ময়দান। ঘরই তার
দায়বদ্ধতার জায়গা, সেখানে তার দৃষ্টির হেফাজত হবে। সন্তানদেরকে
লালনÑপালন করবে। নিজ স্বামীর বিষয়াদি দেখবে।সহীহ হাদীসে এসেছে―
كلكم راع, وكلكم مسؤول عن رعيته , فالإمام راع ومسؤول عن رعيته ……
والمرأة فى بيت زوجها راعية ومسؤولة عن رعيتها, والخادم فى مال سيده راع و
( مسؤول عن رعيته. البخاري ( ٢٣٨٩
তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল, প্রত্যেককে তার অধিনস্ত সম্পর্কে প্রশড়ব করা
হবে। ইমাম দায়িত্বশীল এবং তাকে তার অধিনস্ত সম্পর্কে প্রশড়ব করা হবে।
…….নারী তার স্বামীর ঘরে দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশড়ব করা
হবে। সেবক তার মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশড়ব
করা হবে।৮৯ এবং আল্লাহ্ বলেন−
﴾ وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الجَْاهِلِيَّةِ الْأُولَى. ﴿الأحزاب : ٣٣
তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে, মূর্খতার যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে
প্রদর্শন করে বেড়াবে না।৯০
এর অর্থ এই নয় যে, নারীদের জন্য কোন কর্মই বৈধ নয় বরং তাদের নিজস্ব
পরিমন্ডলে সভ্রম বজায় রেখে কাজ করাতে কোন দোষ নেই। যেমন মেয়েদের
শিক্ষকতা করা, তাদের চিকিৎসা করা এবং সামাজিকভাবে তাদের দেখাশোনা
করা। এবং শরীয়তের নিয়মের ভিতরে থেকে এ জাতীয় যা করা যায়।
ঘ) নিজের ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সংশি−ষ্ট আদব রক্ষা করে বের হবে।
যেমন পর্দা রক্ষা করা, শরীর ভালভাবে ঢেকে নেয়া, গাম্ভির্য রক্ষা করা ইত্যাদি।
প্রয়োজন ছাড়া বের হবে না, সুগন্ধি লাগিয়ে সাজসজ্জা করে বের হবে না।
আবু দাউদ শরীফে এসেছে, রসূল(সঃ)
বলেন-
৮৮ বুখারী: ৪৮৩১
৮৯ বুখারী: ২৩৮৯
৯০ আল-আহজাব : ৩৩
إن المرأة إذا استعطرت فمرت بالمجلس فهى كذا وكذا.
নারী যখন সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন মজলিশের পাশ দিয়ে যায়, তখন
(তার সম্পর্কে বলাবলি হতে থাকে) সে এমন, এমন। অর্থাৎ ব্যভিচারিণী।৯১
আর এই সতর্কতা এই জন্যে যে, শয়তান যেন তার কিংবা পুরুষদের অন্তরে
প্রবেশ করতে না পারে।
ঙ) বেগানা পুরুষের সাথে অতি প্রয়োজন ছাড়া কোন কথা না বলা , যদি
কিছু বলার প্রয়োজন হয় তাহলে যথাযথ আদব ও সম্মানের সাথে নম্র ও
কোমলতা ছাড়া কথা বলবে। আল্লাহ্ বলেন-
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تخَْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي
﴾ قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا. ﴿الأحزاب : ٣٢
নবী পতড়বীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও, যদি তোমরা আল্লাহ্কে ভয়
কর, তবে পর-পুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। ফলে
সেই ব্যক্তি যার অন্তরে ব্যাধি আছে কু-বাসনা করে বসবে,এবং তোমরা সংগত
কথা বলবে।৯২
নারী-পুরুষের অবাধে মেলামেশার ক্ষতি
মুসলিম নারীর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বের ক্ষতি সাধন করার জন্য যতগুলি মাধ্যম
আছে, তার মাঝে সবচেয়ে ক্ষতিকর মাধ্যম হল, পর-পুরুষের সাথে অবাধে
মেলামেশা করা। বিশেষ করে নির্জনে মেলামেশা করা। বর্তমান যুগে অমুসলিম
নারীরা অবাধ মেলামেশার এই ফাসাদে এমন ভাবে পতিত হয়েছে যে মানুষ
নামের নেকড়ের সামনে এরা সস্তা পণ্যে পরিণত হয়েছে। মানব জাতীয় সম্মানকে
কর্দমাক্ত করে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রচার মাধ্যম হিসাবে নিজেদের প্রচার
করছে। নিজের পবিত্রতাকে শিল্পকারখানার ধুয়া দ্বারা কলুষিত করেছে। এমনকি
নিজের সতীত্বকে পয়সার বিনিময়ে বিলিয়ে দিয়েছে।
এই হল অমুসলিম নারীর সংক্ষিপ্ত অবস্থা। এর মূল কারণ হল আল্লাহ্র নিয়ম
পদ্ধতি থেকে দূরে থাকা এবং পর-পুরুষের সাথে কর্মস্থলে, কারখানায়, দোকানে
মেলামেশা করা। সংক্ষেপে অবাধে মেলামেশা অপকার এবং ক্ষতি এভাবে
নিরূপণ করতে পারি।
ক) আল্লাহ্ তাআলার বেধে দেয়া পথ ও পন্থা হতে বেন হয়ে আসা। কারণ
মহান আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নিজস্ব প্রজ্ঞানুযায়ী মানুষদের ভিনড়ব ভিনড়ব বৈশিষ্ট দিয়ে
৯২ আল-আহজাব : ৩২
নারী ও পুরুষ করে সৃষ্টি করেছেন । পুরুষ বাহিরে কাজ করবে ও নারী অন্দরে ।
এখন যদি নারী পুরুষ অবাধে মেলামেশা শুরু করে তাহলে প্রত্যেককে এমন
দায়িত্ব মাথায় নিতে হবে যা মূলত তার ক্ষমতার বাইরে। আর এতে করে
জীবনের গতি-শৃংখলাই ব্যহত হবে ।
খ) এতে কোন সন্দেহ নেই যে, নারী পুরুষ অবাধে মেলামেশার দ্বারা
যৌবনের তপ্ত বাসনা জাগ্রত হয়। খারাপ কামনার আগুনকে বাড়িয়ে দেয়। একে
অন্যকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে, তখন পাশবিকতার লাগাম এমনভাবে বিস্তার
লাভ করে যে তার কোন পরিসীমা থাকে না। তখন দুজনই কামনা বাসনা পূরণ
করার কাজে বন্দি হয়ে যায়।
গ) মানুষ যখনই অবৈধভাবে যৌন বাসনা পুরা করার পিছনে পড়ে যায়,
তখন তার চিন্তাশক্তি এবং বুদ্ধিলোপ পায়। এবং ভাল গুণাবলি ধ্বংস হয়ে যায়।
যেমন ধৈর্য, সহনশীলতা ইত্যাদি।
ঘ) অবাধে মেলামেশা নারী-পুরুষকে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের দিকে নিয়ে
যায়। আর এর থেকে সৃষ্টি হয় কঠিন রোগ এইডস, যার কোন চিকিৎসা নেই।
ঙ) মানুষ তার কামনার পিছনে দৌঁড়ালে যার সৃষ্টি সাধারণত: নারী-পুরুষের
অবাধে মেলামেশার দ্বারা হয়, সমাজ তখন আনন্দ-ফুর্তি, খেলাধুলা এবং অহেতুক
কাজের সমাজ হয়ে যায়।
চ) স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিরোধ এবং তালাকের প্রবনতা বৃদ্ধি পায়। কেননা
প্রত্যেকে অন্যত্র তার যৌন চাহিদা পূরণ করতে পারে। এতে কারো কোন দু:খ ও
মনস্তাপ হয়না কারন প্রত্যেকেরতো বিকল্প হিসাবে বন্ধু বান্ধবী আছে ।
ছ) অধিক হারে জারজ সন্তান জন্ম নেয়। এবং সমাজে এর খারাপ প্রভাব
পড়ে।
জ) পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হয়ে যায়, সন্তানের ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যায়,
তাদেরকে সুন্দরভাবে লালন-পালন করা যায় না। তাদের প্রতি কর্তব্যগুলি
সঠিকভাবে পালন করা হয় না।
সবশেষে মহান রাব্বুল আলামিনের প্রশংসা করি যিনি মুসলমানদেরকে সুন্দর
পথ প্রদর্শন করেছেন, যে পথে মান-সম্মান, ধর্ম, চরিত্র, বংশ মর্যাদা, সমস্ত কিছু
রক্ষা হয় এবং জীবনের সকল ক্ষেত্র সহজ-সরল হয়।
প্রতিবেশীর অধিকার
প্রতিবেশী মূলত বাড়ির আশে পাশে বসবাসকারীকে বলা হয়। কখনও
কখনও সফর অথবা কাজের সঙ্গীকে ও প্রতিবেশী বলা হয়। প্রতিবেশীই হচ্ছে
মানুষের সবচে নিকট জন , যিনি তার খবরা-খবর সম্পর্কে অন্যদের তুলনায়
বেশি জানেন।ইসলামী শরীয়ত প্রতিবেশীর অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছে এবং তার
অধিকারকে খুব বড় করে দেখেছে। মহান আলাহ তাআলা বলেন―
وَاعْبُدُوا اللهََّ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى
وَالمَْسَاكِينِ وَالجَْارِ ذِي الْقُرْبَى وَالجَْارِ الجُْنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالجَْنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ.
﴾ ﴿النساء : ٣٦
অর্থাৎ: উপাসনা কর আলাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে।
পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং সদয় ব্যবহার কর নিকটাত্মীয়,
এতীম- মিসকীন, এবং আত্মীয়-সম্পর্কীয় প্রতিবেশী, আত্মীয়তা বিহীন প্রতিবেশী
ও পার্শ্ববর্তী সহচরদের সাথে, এবং অসহায় মুসাফিরের সাথে ।৯৩
রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন :―
( مازال جبريل يوصيني بالجار حتى ظننت إنه سيورثه . البخاري ( ٥٥٥٥
জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে অনবরত অসীয়ত
করছিলেন,যে এক পর্যায়ে আমার ধারণা হয়েছিল যে, আলাহ তাআলা
প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী করে দেবেন।৯৪
শরীয়ত প্রতিবেশীকে এত অধিক গুরুত্ব দেওয়ার কারণ সম্ভবত এই হতে
পারে।
(১) যাতে করে মুসলমানদের মাঝে ভালোবাসা এবং মমত্ববোধের প্রসার
ঘটে, এর জন্য সর্বোত্তম মানুষ হল প্রতিবেশী।
(২) প্রতিবেশী সকলের চেয়ে অধিক সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার দাবী
রাখে, কারণ প্রতিবেশীই তার অতি নিকটে বসবাস করে এবং সে তার যাবতীয়
সমস্যা ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে অন্যদের চেয়ে বেশি জানে।
(৩) যাতে মুসলমানের নিজ জীবন, সন্তান, পরিবার এবং সম্পদের নিরাপত্তা
লাভ হয় ।
প্রতিবেশী কারা ? যাদের সম্পর্কে কোরআন হাদিসে গুরুত্ব দিতে বলা
হয়েছে, সেটি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে উলামাদের বিভিনড়ব মতামত রয়েছে।কেউ
৯৩ নিসা : ৩৬
৯৪ বুখারী: ৫৫৫৫
বলেছেন: প্রতিবেশীর সীমানা হল, চতুর দিক দিয়ে চলিশ ঘর, কেউ বলেন: যে
তোমার সাথে ফজর পড়ল সেই তোমার প্রতিবেশী, ইত্যাদি। আর এই সমস্ত
কথার মনে হয় কোন গ্রহণযোগ্য প্রমাণ নেই । সর্বোত্তম এবং সর্বাধিক
গ্রহণযোগ্য মতামত হচ্ছে ―প্রতিবেশী সে-ই, তার বাড়ির কাছাকাছি যার বাড়ি।
এবং যার বাড়ির সাথে তার বাড়ি মেলানো।সীমানা নির্ধারিত হবে প্রচলিত ধারা
অনুযায়ী, যে ব্যক্তি মানুষের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী প্রতিবেশী, সেই প্রতিবেশী।
আর এটা এই জন্য যে, শরীয়ত যে সমস্ত নামের উলেখ করেছে এবং তার অর্থ
নির্ধারণ করে দেয়নি, তার অর্থ জানার জন্য সঠিক প্রচলিত রীতির দিকেই
প্রত্যাবর্তন করতে হয়।
প্রতিবেশীর গুরুত্বের ভিনড়বতা আসবে নিকটবর্তী এবং দূরবতী প্রতিবেশী
হওয়ার দিক বিবেচনায়। নিকটবর্তী প্রতিবেশী কল্যাণ এবং সাহায্য পাওয়ার
ক্ষেত্রে দূরবর্তী প্রতিবেশীর চেয়ে অধিক গুরুত্ব পাবে, এর প্রমাণ হল: আয়েশা
রাদিয়ালাহু আনহা প্রশড়ব করেছিলেন―
فقالت : إن لي جارتين فإلى أيهما أهدي? قال صلى الله عليه وسلم: إلي
( أقربهمامنك باباً. البخاري ( ٢٠٩٩
তিনি বলেন : আমার দুইজন প্রতিবেশী আছে। তাদের মধ্য থেকে কাকে
আমি উপঢৌকন দেব? রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন: তোমার
দরজার অধিক নিকটবর্তী জনকে।৯৫
তাদের শ্রেণী ও মর্যাদার বিভিনড়বতার কারণেও গুরুত্বে ভিনড়বতা আসবে:
(১) এক ধরনের প্রতিবেশী আছে যার অধিকার হচ্ছে তিনটি, তিনি হলেন
নিকটাত্মীয়-মুসলমান প্রতিবেশী। তার অধিকার তিনটি হচ্ছে: আত্মীয়তা, ইসলাম
এবং প্রতিবেশিত্ব।
(২) আরেক প্রকার প্রতিবেশী যার অধিকার দুইটি: তিনি হলেন অনাত্মীয়
মুসলিম প্রতিবেশী, তার অধিকার দু’টি হচ্ছে: প্রতিবেশিত্ব ও ইসলাম ।
(৩) আর এক ধরনের প্রতিবেশী, যার অধিকার মাত্র একটি, তিনি হলেন
অমুসলিম প্রতিবেশী, তার অধিকার শুধু প্রতিবেশিত্বের।
প্রতিবেশী নির্বাচনের গুরুত্ব :
মুসলমানের কর্তব্য হল সব সময় সৎ প্রতিবেশী বেছে নেয়ার দিকে দৃষ্টি
দেবে, যে তার অধিকারগুলো আদায় করবে, এবং তাকে কষ্ট দেবে না, তার
হেফাজত করবে এবং তাকে সব কাজে সাহায্য করবে, মানুষ বলে
৯৫ বুখারী: ২০৯৯
اختر الجار قبل الدار) ) বাড়ি বানানোর পূর্বে প্রতিবেশী নির্বা চন করা, প্রকতৃ
পক্ষে এটাই সঠিক জিনিস। এর সপক্ষে পবিত্র কোরআন শরিফের ঐ আয়াত
পেশ করা যেতে পারে। যেখানে আলাহ তাআলা ফেরআউনের স্ত্রী সম্পর্কে
বলেছেন :―
﴾ رَبِّ ابْنِ ليِ عِنْدَكَ بَيْتًا فِي الجَْنَّةِ. ﴿التحريم : ١١
অর্থাৎ : হে আমার পালনকর্তা, আপনার সনিড়বকটে জানড়বাতে আমার জন্য
একটি গৃহ নির্মাণ করুন।৯৬
সঠিক প্রতিবেশী নির্বাচন করার গুরুত্ব একথা জানা থাকার মাধ্যমেও স্পষ্ট
হয় যে, প্রতিবেশী তার প্রতিবেশী এবং সন্তানদের মাঝে প্রভাব বিস্তার করে,
পরস্পর মেলা-মেশার কারণে, সে যদি সৎ হয়, তা হলে প্রতিবেশী তার ঘর এবং
পরিবারের ব্যাপারে নিরাপদ হয়ে যায়। আর যদি অসৎ হয়, তাহলে সে নিরাপদ
হতে পারে না।
ভাল প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীর গোপন বিষয় অবহিত হলে গোপন রাখে।
অসৎ প্রতিবেশী বরং সেটিকে প্রকাশ এবং প্রচার করে বেড়ায়। ভাল প্রতিবেশী
ভাল কাজে সাহায্য করে, তাকে সৎ উপদেশ দেয়। অসৎ প্রতিবেশী ধোঁকা দিয়ে
বিপদে ফেলার চেষ্টা করে।
প্রতিবেশীর অধিকারসমূহ :
প্রতিবেশীর অনেক অধিকার রয়েছে তার মধ্য থেকে নিমেড়ব কিছু উলেখ করা
হল।
(১) তাকে কষ্ট না দেওয়া :
হোক সে কষ্ট কথার মাধ্যমে, যেমন অভিশাপ দেওয়া, গালী দেওয়া, তার
গীবত করা, এমন কিছু তার সম্পর্কে বলা যার দ্বারা সে কষ্ট পায়, ইত্যাদি।
অথবা কাজের মাধ্যমে : যেমন তার বাড়ির সামনে আবর্জনা ফেলা, তাকে
বিরক্ত করা, ছেলে মেয়েদেরকে তার ঘরের জিনিস নষ্ট করতে উদ্বুদ্ধ করা বা বাধা
না দেওয়া। রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন :―
والله لا يؤمن‘ والله لا يؤمن والله لا يؤمن‘ قيل : من يا رسول الله? قال: والذي لا
( يأمن جاره بوائقه. البخاري ( ٥٥٥٧
অর্থাৎ : আলাহর কসম সে মুমিন নয়, আলাহর কসম সে মুমিন নয়, আলাহর
কসম সে মুমিন নয়, বলা হল কে সে হে আলাহর রাসূল ? তিনি বললেন :ঐ
৯৬ তাহরিম : ১১
ব্যক্তি যার কষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।৯৭ নবী সাললাহু আলাইহি
ওয়াসালাম আরও বলেন :
( لا يدخل الجنة من لا يأمن جاره بوائقه. أحمد ( ٨٥٠٠
অর্থাৎ : সে ব্যক্তি জানড়বাতে প্রবেশ করবে না যার প্রতিবেশী তার কষ্ট থেকে
মুক্ত নয়।৯৮ রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম অন্যত্র বলছেন :―
( من كان يؤمن بالله واليوم الأخر فلا يؤذ جاره. البخاري ( ٥٥٥٩
যে আলাহর প্রতি এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে
কষ্ট না দেয়।৯৯
প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়ার সবচেয়ে কঠিন প্রকার হল : তার সম্মান-সম্ভ্রম-এ
আঘাত আসে এমন বিষয়ে কষ্ট দেওয়া, যেমন প্রতিবেশীর স্ত্রী বা পর্দা করার মত
কারও খিয়ানত করা, দৃষ্টি দেয়ার মাধ্যমে হোক বা সরাসরি কথা বলার মাধ্যমে
অথবা অসৎ উদ্দেশ্যে ফোনে কথা বলার মাধ্যমে, অথবা যে কোন অশীল কাজের
মাধ্যমে ।
عن عبدالله بن مسعود رضي الله عنه قال : سألت النبي صلي الله عليه وسلم:
أي الذنب عندالله أكبر? قال: أن تجعل لله ندًا وهو خلقك. قلت : ثم أيّ? قال أن
تقتل ولدك خشية أن يطعم معك‘ قلت : ثم أيٌّ? قال أن تزاني بحليلة جارك.
( البخاري. ( ٥٥٤٣
অর্থাৎ : আব্দুলহ বিন মাসঊদ রাদিয়ালাহু আনহু বলেন : আমি রাসূলুলাহ
সাললাহু আলাইহি ওয়াসালামের নিকট জানতে চেয়েছি: আলাহ তাআলার নিকট
সব চেয়ে বড় গুনাহ কোনটি ? তিনি বললেন― কাউকে আলাহর সমকক্ষ নির্ধরণ
করা অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমি বললাম তার পরে কি ? বললেন
: তুমি তোমার সন্তানকে হত্যা করা তোমার সাথে খাওয়ার ভয়ে। আমি বললাম
এর পর কি ? তিনি বললেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে সম্মতির ভিত্তিতে
ব্যভিচার করা। অর্থাৎ তার প্রতিবেশীর স্ত্রীকে ফুসলিয়ে তাকে নিজের দিকে
আকৃষ্ট করে তার সাথে ব্যভিচার করা। কারো অসম্মতিতে জোর পূর্বক তার সাথে
ব্যভিচার করা থেকে এটা আরো বেশি অপরাধ।১০০
৯৭ বুখারী : ৫৫৫৭
৯৮ আহমাদ : ৫৮০০
৯৯ বুখারী: ৫৫৫৯
১০০ বুখারী: ৫৫৪৩
وفي حديث المقداد بن الأسود رضي الله عنه أن النبي صلي الله عليه وسلم قال : لأن
( يزني الرجل بعشر نسوة أيسر عليه من أن يزني بامرأة جاره. أحمد ( ٢٢٧٣٤
অর্থাৎ : মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রাদিয়ালাহু আনহু রাসূলুলাহ সাললাহু
আলাইহি ওয়াসালাম থেকে বর্ণনা করে বলেন: কোন ব্যক্তি তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর
সাথে ব্যভিচার করা দশ জন মহিলার সাথে ব্যভিচার করা থেকেও কঠিন
পাপ।১০১
প্রতিবেশীর এ বিষয়টি বড় করে দেখার কারণ :
(ক) এক প্রতিবেশী অপর প্রতিবেশীর নিকট আমানত স্বরূপ , এর সাথে
ব্যভিচার করা উক্ত আমানতের খিয়ানত।
(খ) প্রতিবেশী অপর প্রতিবেশীর যাবতীয় অবস্থা এবং তার উপস্থিতিঅনুপি
স্থতির সময় সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞাত, কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ
আলাদা।
(গ) সে যেহেতু তার নিকটেই থাকে এবং তার সাথে উঠা-বসা করে তাই
তার কষ্ট প্রতিবেশীর নিকট খুবদ্রুত এবং সহজেই পৌঁছে ।
(ঘ) আরেকটি কারণ হচ্ছে কেউ তাকে সন্দেহ করবে না।
প্রতিবেশীর প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করা :
নবী কারীম সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন :―
( من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليكرم جاره. البخاري ( ٥٥٥٩
অর্থাৎ : যে আলাহর প্রতি এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার
প্রতিবেশীকে সম্মান করে।
আর এটি ব্যাপক ভিত্তিক অধিকার, এর সাথে অনেকগুলো অধিকার এবং
বিষয় জড়িত।
(ক) তার প্রয়োজনে সাহায্য করা, ব্যবহারের জিনিস চাইলে দেয়া। কেননা
প্রতিবেশী কখনও প্রতিবেশীর কাছে মুখাপেক্ষী নয় এমন হতে পারে না। আলাহ
তাআলা ঐ সমস্ত লোকদের নিন্দা করেছেন যারা নিত্য ব্যবহার্য জিনিস চাইলে
বিমুখ করে। তাদের নিন্দা করে আলাহ বলেন :
﴾ وَيَمْنَعُونَ المَْاعُونَ ﴿الماعون : ٧
তারা নিত্য ব্যবহার্য জিনিস অন্যকে দেয় না।১০২
(খ) প্রতিবেশীকে হাদিয়া দেওয়া।তার বাড়িতে খাবার ইত্যাদি প্রেরণ করা।
১০১ আহমাদ : ২২৭৩৪
১০২ আল-মাউন : ৭
আবু যব রাদিয়ালাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়াসালাম আমাকে অসীয়ত করেছেন :
إذا طبخت مرقًا فأكثر ماءه, ثم انظر أهل بيت من جيرانك فأصبهم منها بمعروف.
( مسلم ( ٤٧٥٩
অর্থাৎ. যখন তুমি তরকারী রানড়বা করবে তাতে বেশি করে পানি দেবে
অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর খবর নিয়ে তার থেকে তাদেরকে কিছু দেবে।১০৩
(গ) প্রতিবেশী ঋণ চাইলে তাকে ঋণ দেয়া, তার প্রয়োজনে তাকে সাহায্য
সহযোগিতা করে তার রক্ষনাবেক্ষণ করা।
রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন :―
ليس المؤمن الذي يشبع وجاره جائع
অর্থাৎ : সে মুমিন নয় যে পেট ভরে খায় অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।
(ঘ) প্রতিবেশীর ভাল কোন সংবাদ পেলে তাকে মোবারকবাদ জানানো,
এবং খুশি প্রকাশ করা, বিবাহ করলে অথবা সন্তান জন্ম নিলে, অথবা তার
সন্তান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে এবং এ জাতীয় উপলক্ষে তাকে মোবারকবাদ
জানানো এবং বরকতের দোয়া করা।
(৩) মুসলমানদের মাঝে পরস্পরে যে অধিকারগুলো আছে সেগুলো
প্রতিবেশীর ব্যাপারে আদায় করবে। কেননা সে-ই এর অধিকার বেশি রাখে,
যেমন তাকে সালাম দেওয়া, সালামের উত্তর দেয়া, অসুস্থ হলে তার সুস্রষা করা,
তার দাওয়াত গ্রহণ করা। তার সাথে সাক্ষাৎ হলে আলাহর প্রদত্ব ফরযগুলি
সংক্ষেপে স্মরণ করিয়ে দেয়া―ইত্যাদি।
১০৩ মুসলিম : ৪৭৫৯
ইসলামে অভিবাদন পদ্ধতি ও সালামের বিধান
আরবী ( التحية ) আত্ তাহিয়্যাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ হায়াতের জন্য
দোয়া করা―যেমন বলা হয়― حيّاك الله অর্থাৎ আল্লাহ্ তোমাকে জীবিত রাখুক।
অতঃপর তাহিয়্যাহ শব্দটি ব্যাপক ভাবে প্রত্যেক ঐ অর্থে ব্যবহৃত হয় যা মানুষ
দোআর জন্য ব্যবহার হয়।
তাহিয়্যাহ সালাম থেকে ব্যাপক। তাহিয়্যাহর অনেকগুলি পদ্ধতির একটি
হচ্ছে সালাম।
আল্লাহ্ এবং তার রাসূল আমাদের জন্য অভিবাদন জানানোর এমন একটি
পদ্ধতি অনুমোদন ও নির্ধারণ করে দিয়েছেন যা আমাদেরকে অন্যদের থেকে
স্বতন্ত্র করে দেয় এবং যা করলে আমাদের জন্য সাওয়াব লেখা হয়। বরং সেটিকে
এক মুসলমান ভাইয়ের প্রতি অপর মুসলমান ভাইয়ের অধিকার বানিয়ে
দিয়েছেন। এই অভিবাদন পদ্ধতিটি নিছক অভ্যাস থেকে একটি এমন আমলে
পরিবর্তিত হয়েছে যা বান্দা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভ এবং রাসূলের নির্দেশ পালনার্থে
করে। তাই এই মহান বরকতময় অভিবাদনকে পরিবর্তন করে অন্য কোন
সমঅর্থপূর্ণ শব্দাবলী দ্বারা অভিবাদন জানানো মুসলমানের জন্য কোনভাবেই শুদ্ধ
ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যেমন সু-প্রভাত, শুভ সন্ধ্যা, স্বাগতম―ইত্যাদি।
ইসলামের বরকতপূর্ণ অভিবাদন দ্বারা যা আদায় হয় অন্য কিছু দ্বারা তা আদায়
হবে না। অনেকে না জেনে অথবা ইচ্ছাকৃত ভাবে ইসলামের নির্ধারিত পদ্ধতির
অভিবাদন বাদ দিয়ে উপরোক্ত শব্দগুলি ব্যবহার করে থাকে যা কোন ভাবেই ঠিক
নয়।
ইসলামের অভিবাদন হলো :
السّلام عليكم ورحمة الله وبركاته
এটিই হল অভিবাদনের পরিপূর্ণরূপ। আর ন্যূনতম রূপ হচ্ছে
السّلام عليكم
ইসলামের এই অভিবাদনের অনেক ফজিলত রয়েছে।
১।
এটি ইসলামের উত্তম জিনিসের মধ্য থেকে একটি―হাদীসে এসেছে
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما أن رجلاً سأل رسول الله صلى
الله عليه وسلم أي الإسلام خير? قال إطعام الطعام وتقرأ السلام علي من عرفت
( ومن لم تعرف. البخاري ( ٢٧
অর্থাৎ : আব্দুল−াহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি
রসূল(সঃ)-কে প্রশড়ব করলেন ইসলামের কোন
কাজটি সবচে ভাল ? রসুল(সঃ) বললেন: খাবার
খাওয়ানো এবং সালাম দেয়া পরিচিত-অপরিচিত সকলকে।১০৪
২।
সালাম মুসলমানদের মাঝে ভালোবাসা এবং হৃদ্যতা সৃষ্টি ও বৃদ্ধির
কারণ, রসূল(সঃ) বলেন―
لا تدخلون الجنة حتى تؤمنوا ولا تؤمنوا حتى تحابوا‘ أولا أدلكم على شيء إذا
( فعلتموه تحاببتم? أفشوا السّلام بينكم. مسلم ( ٨١
অর্থাৎ : তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জানড়বাতে প্রবেশ করতে পারবে না,
আর ঈমানদার হতে পারবে না পরস্পরে ভালোবাসা না হলে, তোমাদেরকে কি
এমন একটি বিষয়ের কথা বলে দেব না, যা করলে তোমাদের পরস্পরে
ভালোবাসা সৃষ্টি হবে ? তোমরা পরস্পরের মাঝে সালামের প্রসার ঘটাও।১০৫
৩।
সালামের প্রত্যেক বাক্যে দশ নেকী, সালামে মোট তিনটি বাক্য আছে,
সুতরাং যে পূর্ণ সালাম দেবে তার ত্রিশটি নেকী অর্জন হবে।
عن عمران بن حصين رضي الله عنهما قال : جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه
وسلم فقال: السلام عليكم فرد عليه, ثم جلس, فقال النبي صلي الله عليه
وسلم(عشر), ثم جاء رجل آخر فقال: السلام عليكم ورحمة الله, فرد عليه, ثم
جلس فقال: (عشرون) ثم جاء آخر فقال: السلام عليكم ورحمة الله وبركاته فرد
( عليه وجلس فقال (ثلاثون). الدارمي ( ٢٥٢٦
অর্থাৎ : ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: এক ব্যক্তি
নবী করিম (সঃ)-এর নিকট আসল অতঃপর বলল:
আস্সালামু আলাইকুম, রাসূল তার উত্তর দিলেন, অতঃপর সে বসল। রাসূলুল−াহ
১০৪ বুখারী: ২৭
১০৫ মুসলিম : ৮১
স. বললেন ((দশ নেকী)), অতঃপর অন্য এক ব্যক্তি আসল, সে বলল:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, রাসূল স. উত্তর দিলেন, অতঃর সে
বসল। রাসূল স. বললেন ((বিশ নেকী))।
অতঃপর আর একজন আসল। সে
বলল : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। রাসূল স.
উত্তর দিলেন এবং সে বসল। রাসূল স. বললেন―(ত্রিশ নেকী)।১০৬
সালামের বিধান এবং তার পদ্ধতি
প্রমে সালাম দেয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সুনড়বত। উত্তর দেয়া ওয়াজিব, যখন
সালামের দ্বারা শুধুমাত্র এক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করা হয়। আর যদি সালামের দ্বারা
কোন দল বা জামাআতকে উদ্দেশ্য করা হয় তাহলে তার উত্তর দেয়া ওয়াজিবে
কেফায়া। তবে যদি সকলেই উত্তর দেয় তা হলে অতি উত্তম।
উত্তর দেয়ার সময় সালামের মত করে দেয়া ওয়াজিব। উত্তর যদি সালাম
থেকে বাড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে উত্তম, কিন্তু সালাম থেকে কম করা যাবে না।
যেমন কেউ সালাম দিতে গিয়ে বলল ―
السّلام عليكم ورحمة الله তাহলে এর ওয়াজিব উত্তর হবে
وعليكم السلام ورحمة الله যদি সে وبركاته বাড়িয়ে বলে তা হলে উত্তম, কিন্তু
وعليكم السلام বলে উত্তর সংক্ষেপে করা বৈধ নয়, কেননা এটি সালাম থেকে
কম করা হল যা অনুচিত এবং কোরআনের বিধানের লঙ্ঘন। যেমন পবিত্র
কোরআনে আল্লাহ্ বলেন―
[[ وَإِذَا حُيِّيتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا[ [النساء: ٨٦
আর তোমাদেরকে যদি কেউ দোয়া করে(সালাম দেয়), তাহলে তোমারও
তার জন্য দোয়া কর(সালামের উত্তর দাও)।
তার চেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই
মত ফিরিয়ে বল। (সূরা নিসা: ৮৬)
ইবনে কাসীর (রহ) বলেন :অর্থাৎ কোন মুসলমান সালাম দিলে উত্তর দেবে
তার চেয়ে উত্তমভাবে অথবা নিদেন পক্ষে তার মত করে। বাড়িয়ে বলা মোস্তাহাব, আর তার মত উত্তর দেয়া ফরয।
শরীয়তের দৃষ্টিতে ঐ উত্তর বৈধ নয়, যে উত্তরে বলা হয় أهلا و مرحبا
অথবা এর মত অন্য কিছু। কেননা এগুলো সালামের শরীয়ত সম্মত উত্তর নয়।
আর তাছাড়া অন্য উত্তরগুলো সালাম থেকে অনেক ত্র“টিপূর্ণ। কেননা তার কথা
১০৬ দারামি : ২৫২৬
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته কোন ব্যক্তি أهلا و مرحبا বলা থেকে
অনেক মহত্ত্বপূর্ণ অর্থ দেয়। কিন্তু أهلا و مرحبا সালামের উত্তর ছাড়া অন্য সময়
বলাতে দোষ নেই, সালামের উত্তর দেওয়ার পরে বলতে পারে রাসূল স.-এর
কথা দ্বারা এর প্রমাণ আছে : রাসূল উম্মে হানিকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন―
( مرحبا بأم هانىء. البخاري ( ٣٤٤
সালামের আদবসমূহ :
সালামের অনেক বিধান এবং আদব রয়েছে তার থেকে নিমেড়ব কিছু উলে−খ
করা হল।
১।
মানুষের মাঝে সালামের ব্যাপক প্রচার এবং প্রসার ঘটাতে হবে, যাতে
করে তা মুসলমানদের প্রকাশ্য প্রতীকে পরিনত হয়ে যায়। বিশেষ কোন দলকে
সালাম দেয়া হবে অন্য কাউকে নয় তা যেন না হয়, অনরূপ ভাবে বড়দেরকে
দিতে হবে ছোটদেরকে নয় বা যাকে চিনে তাকে দেবে যাকে চিনে না তাকে নয়
এমনও যাতে না হয়, রসূল(সঃ) বলেন―
( أفشوا السلام بينكم. الترمذي ( ٢٤٣٦ অর্থাৎ তোমাদের মাঝে সালামের প্রসার
ঘটাও। ? أي الإسلام خير (কোন সালাম উত্তম) প্ের শরড়ব উত্তরে রাসলূ বলেছিলেন
:―
( تقرأ السلام على من عرفت ومن لم تعرف. البخاري ( ٢٧
সালাম দেবে পরিচিত-অপরিচিত সকলকে।১০৭
আম্মার বিন ইয়াসির র. বলেন―
ثلاث من جمعهن فقد جمع الإيمان: الإنصاف من نفسه, وبذل السلام للعالم
والإنفاق من الإقتار.(رواه البخاري باب إفشاء السلام)
যে ব্যক্তি নিজের মাঝে তিনটি গুণ একত্রিত করল, সে পরিপূর্ণ ঈমান হাসিল
করল। নিজের উপর ইনসাফ করা, সালামের প্রচার করা, অভাব সত্ত্বেও খরচ
করা।
সালাম না দেওয়ার নিন্দায় রসুল(সঃ) বলেন:
( أبخل الناس من بخل با لسلام. أحمد ( ١٣٩٩٢
১০৭ বুখারী: ২৭
সবচেয়ে কৃপণ ব্যক্তি সেই যে সালাম দেওয়ার ব্যাপারে কৃপণতা করে।১০৮
২।
উচ্চস্বরে সালাম দেয়া এবং উত্তর দেয়া সুনড়বত। কেননা সালাম হলÑ
السلام عليكم উচ্চারণ করা। হাত দ্বারা ঈশারা ইত্যাদি সালাম বলে
বিবেচিত হবে না। আর উত্তর উচ্চস্বরে দিতে হবে এর কারণ হচ্ছে: যিনি সালাম
দাতাকে শুনিয়ে জবাব দিলেন না তিনি কেমন যেন তার জবাবই দিলেন না। তবে
উত্তর শুনতে কোন কিছু বাধা হলে সে ভিনড়ব কথা এর জন্য সে দায়ী হবে না।
৩।
অন্যের মাধ্যতে অপরের নিকট সালাম পৌঁছোনোর বিধান কে অনুমোদন
দেয়া হয়েছে। যাকে পৌঁছানো হবে তার উত্তর দেয়া দায়িত্ব। আয়েশা রা. থেকে
বর্ণিত রসুল(সঃ) তাকে বলেছেন―
إن جبريل يقرأ عليك السلام‘ فقالت: وعليه السلام ورحمة الله. البخاري
(٥٧٨٠)
জিবরাঈল তোমাকে সালাম দিয়েছেন,
তিনি বললেন―( (وعليه السلام ورحمة الله
তার উপর শান্তি এবং আল্লাহ্র রহমত বর্ষিত হোক।
৪।
উত্তম হল ছোট বড়কে প্রমে সালাম দেবে। পদচারণায় লিপ্ত উপবিষ্টকে
সালাম দেবে। আরোহণকারী পদচারণাকারীকে সালাম দেবে, কম লোক বেশি
লোককে সালাম দেবে। আবু হুরাইরা রা. বলেন―
( يسلم الصغير علي الكبير والمار علي القاعد والقليل علي الكثير. مسلم ( ٤٠١٩
অর্থাৎ ছোট বড়কে সালাম দেবে অতিμমকারী (চলন্ত ব্যক্তি)উপবিষ্টকে
সালাম দেবে, অল্প লোক বেশি লোককে সালাম দেবে।
৫।
সুনড়বত হল দুজন আলাদা হওয়ার পর পুনরায় সাক্ষাৎ হলে আবার সালাম
দেয়া ―প্রবেশের কারণে হতে পারে, আবার বাহির হওয়ার কারণেও হতে
পারে। অথবা চলতি পথে দু’জনের মাঝে কোন দেয়াল বা গাছ জাতিয় কিছুর
বাধার কারণে আলাদা হয়েছিল। অতপর সাক্ষাৎ ঘটল। রাসূল স.-এর বাণী দ্বারা
এমনই বুঝা যায় ।
إذا لقي أحدكم أخاه فليسلم عليه فإن حالت بينهما شجرة أو جدار أو حجر ثم
( لقيه فليسلم عليه أيضًا. مسلم ( ٤٥٢٤
১০৮ আহমাদ : ১৩৯৯২
অর্থাৎ : তোমাদের কেউ নিজ ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করলে তাকে সালাম
দেবে।অত:পর যদি দুজনের মাঝে কোন গাছ, দেয়াল অথবা পাথর ইত্যাদি
বাধার কারণে দু’জন বিচ্ছিনড়ব হয়ে যায়, খানিক পর পুনরায় সাক্ষাৎ হলে আবার
সালাম দেবে।
যার নামাজ শুদ্ধ হচ্ছিল না রসুল(সঃ) তাকে
বারবার নামাজ শুদ্ধ করতে বলছিলেন: সে যতবার যাচ্ছিল এবং আসছিল রাসূল
স.-কে সালাম দিচ্ছিল রাসূল স. তার উত্তর দিচ্ছিলেন। এরূপ তিন বার
করেছিলেন।
وقال أنس رضي الله عنه كان أصحاب رسول الله صلي الله عليه وسلم يتماشون
فاذا استقبلتهم شجرةً أو أكمة فتفرقوأ يمينا وشمالاً ثم التقو من ورائها سلّم
بعضهم علي بعض.
আনাস রা. বলেন রাসূলের সাহাবিরা হাঁটতেন যখন তাদের সামনে কোন
গাছ অথবা স্তূপ পড়ত, তাঁরা ডানে বামে আলাদা হয়ে যেতেন অতঃপর আবার
সাক্ষাৎ ঘটত তখন একে অন্যকে সালাম দিতেন।
৬।
সালাম শুধু মুমিনদের অভিবাদন, কাফেরদেরকে সালাম দেয়া বৈধ নয়।
রসুল(সঃ) বলেন :―
لا تبدؤوا اليهود ولا النصارى بالسلام, فإذا لقيتم أحدهم في طريق فاضطروه গ্ধ
( مسلم ( ٤٠٣٠ .্র إلى أضيقه
অর্থাৎ. ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের সাথে তোমরা প্রমে সালামের মাধ্যমে কথা
শুরু করবে না। তাদের কারও সাথে রাস্তায় সাক্ষাৎ হলে তাদেরকে সংকীর্ণ পথে
যেতে বাধ্য করবে।১০৯
এই কথার অর্থ হল তাদের জন্য বিনয় সম্মানের সাথে তাদের থেকে দুরে
সরে দাঁড়াবে না। এর অর্থ এই নয় যে, প্রশস্ত রাস্তায় তাদের সাথে সাক্ষাৎ হলে
তাদের জন্য সংকীর্ণ করে দেবে, কেননা এর দ্বারা তাদের কষ্ট দেওয়া হবে। আর
কোন কারণ ছাড়া তাদের কষ্ট দিতে নিষেধ করা হয়েছে। হ্যাঁ যদি এমন জায়গায়
উপস্থিত হয় যেখানে কাফের মুসলমান একত্রে মিশছে, তবে সালাম দেবে এবং
মুসলমান নিয়ত করবে।
১০৯ মুসলিম : ৪০৩০
عن أسامة بن زيد رضي الله عنهما: أن النبي صلي الله عليه وسلم مرّ علي
مجلس فيه أخلاط من المسلمين والمشركين عبدة الأوثان فسلم عليهم. البخاري
(٤٢٠٠)
অর্থাৎ : উসামা বিন যায়েদ রা.-এর ঐ হাদিসের কারণে যে রাসূলুল−াহ সা.
অতিμম করলেন এক মজলিসের পাশ দিয়ে যেখানে মুসলমান-মুশরিক-
পৌত্তলিক একত্রিত ছিল ; রাসূল স. তাদেরকে সালাম দিলেন।১১০
আর যদি অমুসলিম সালাম দেয় তাহলে তার উত্তর আনাস রা. থেকে বর্ণিত
হাদীসের পন্থা অনুযায়ী দিবে―
أن أصحاب النبي صلي الله عليه وسلم قالواللنبي صلي الله عليه وسلم: إن
أهل الكتاب يسلمون علينا فكيف نرد عليهم? قال قولوا: وعليكيم ولا يزيد علي
( ذالك. مسلم ( ٤٠٢٥
রাসূল স.-এর সাহাবীরা রাসূল স.-কে বললেন―আহলে কিতাবীগণ
আমাদেরকে সালাম দেয় তাদের উত্তর কীভাবে দেব ? রাসূল স. বললেন তোমরা
বলবে ( وعليكم ) এর চেয়ে বেশি বলবে না।১১১
৭।
কোন কোন আলেম অমুসলিমদেরকে বিশেষ প্রয়োজনে সালাম ব্যতীত
অন্য কিছু দ্বারা অভিবাদন জানানো বৈধ বলেছেন। যেমন শুভ সকাল বা শুভ রাত্রি
ইত্যাদি।
৮।
রক্তের সম্পর্কযুক্ত-মুহরিম নারীদেরকে সালাম দেয়া জায়েজ, বেগানা
নারীদেরকেও জায়েজ আছে যদি ফেতনা থেকে নিরাপদ হয়। নারীদের ক্ষেত্রে
বিষয়টি অবস্থাভেদে পৃক হয়ে থাকে। তাদের অবস্থা এবং অবস্থান বিবেচনার
প্রয়োজন রয়েছে। যুবতী নারী বৃদ্ধা নারীর মত নয়, কেউ নিজের ঘরে প্রবেশ
করে সেখানে অনেক নারী দেখতে পেল এবং তাদেরকে সালাম দিল, এই ব্যক্তি
ঐ ব্যক্তির মত নয় যে অনেক মহিলাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল যাদেরকে সে
চিনে না, এবং সালাম দিল। অপরিচিত নারীদের সাথে মুসাফাহা করা একেবারে
বৈধ নয়। এর প্রমাণ রসুল(সঃ) এর বাণী―
(ক) . لا أصافح النساء গ্ধ আমি মহিলাদের সাথে মুসাফাহা করি না।
১১০ বুখারী: ৪২০০
১১১ মুসলিম : ৪০২৫
(খ) আয়েশা রা.-এর বাণী―
.্র ما مسّت يد رسول الله صلى الله عليه وسلم يد امرأة, إلا امرأة يملكها গ্ধ
অর্থাৎ : নবী(সঃ) -এর হাত কখনও
কোন বেগানা নারীর হাত স্পর্শ করেনি।
যিয়ারতের বিধি-বিধান
যিয়ারতের প্রকারভেদ : যিয়ারত তিন প্রকার।
ক):বৈধ ও অনুমোদিত যিয়ারত : প্রত্যেক ঐ যিয়ারত যার মাধ্যমে শরয়ী
উপকার হয় অথবা যার মাঝে জাতির কল্যাণ নিহিত রয়েছে।এবং প্রত্যেক ঐ
যিয়ারত যা আলাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসার উদ্দেশ্যে হয়। কখনও তা ফরয হয়ে
থাকে যেমন নিকট আত্মীয়ের যিয়ারত ; আবার কখনও মোস্তাহাব যেমন
আলেমদের সাথে সাক্ষাৎ।
এই ধরনের সাক্ষাতের কিছু উদাহরণ রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম
এর হাদীসের মাঝে আমরা পাই যার দ্বারা এর মর্যাদা বুঝা যায়। আলাহর
সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যিয়ারতের ফযীলত সম্পর্কে রাসূল সালালাহু আলাইহি
ওয়াসালাম বলেন―
من عاد مريضا, أوزار أخًا له في الله, ناداه منادٍ أن طِبتَ وطاب ممشاك, وتبوأت গ্ধ
( الترمذي ( ١٩٣١ . من الجنة منزلا
অর্থাৎ : যে ব্যক্তি কোন রুগীকে দেখতে গেল অথবা আলাহর সন্তুষ্টির
উদ্দেশ্যে তার কোন ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করল কোন ঘোষণাকারী তখন ডেকে
বলতে থাকে তুমি ভাল কাজ করেছ তোমার চলা শুভ হোক এবং জানড়বাতের মাঝে
তুমি তোমার একটা ঘর বানিয়ে নিয়েছ।১১২
খ) অবৈধ যিয়ারত:
প্রত্যেক ঐ যিয়ারত যার মাধ্যমে ধর্মীয় অথবা চারিত্রিক ক্ষতি হয়। যেমন
কোন হারাম কাজের জন্য যিয়ারত করতে যাওয়া অথবা অহেতুক কোন খেলার
জন্য একত্রিত হওয়া এগুলি শরিয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ।
গ)মুবাহ যিয়ারত:
এ এমন যিয়ারত যার দ্বারা কোন ক্ষতি বা উপকার কিছুই হয় না এবং যার
মাধ্যমে কোন হারাম কাজও সঙ্ঘটিত হয় না। যেমন শুধু সময় কাটানোর জন্য
যিয়ারত করা অথবা মুবাহ কথাবার্তা বলার জন্য সাক্ষাৎ করা। কোন কোন
সাক্ষাৎ আছে যা প্রকৃত পক্ষে প্রশংসনীয় এবং জায়েয কিন্তু তার সাথে এমন কিছু
জড়িয়ে যায় যে তার মূল বিধানকেই পরিবর্তন করে দেয়। যেমন সাক্ষাতের সাথে
কোন অন্যায় কাজ যুক্ত হয়ে গেল। এখানে আবশ্যক হল ঐ নিষিদ্ধ কাজটি দূর
করা যাতে সাক্ষাৎ তার নিজের অবস্থানে নিজ অবস্থানে ঠিক থাকে। যদি সেই
নিষিদ্ধ কাজকে বাদ দেওয়া সম্ভব না হয় তখন উক্ত জায়েয সাক্ষাৎ নাজায়েযে
পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং সাক্ষাৎ কারীকে তা বাদ দেয়া জরুরী হয়ে যাবে।
১১২ তিরমিজি : ১৯৩১
যিয়ারতের আদব সমূহ :
যিয়ারতের অনেক আদব রয়েছে ,যেমন
১।
যিয়ারতের নিয়ত এবং উদ্দেশ্যকে সঠিক করতে হবে। যেমন
আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখার নিয়ত করা এবং তাদের অধিকার আদায় করা।
অথবা আলাহর সন্তুষ্টি লাভের নিয়ত করবে বা সাক্ষাতের দ্বারা যে পুণ্য লাভ হয়
তার নিয়ত করবে। অথবা পরস্পরে উপদেশ গ্রহণের নিয়ত বা সময়কে কাজে
লাগানোর নিয়ত করা―ইত্যাদি।
২।
সাক্ষাতের জন্য যথোপযুক্ত সময় নির্ধারণ করা।পানাহারের নির্ধারিত
সময়, আরাম অথবা ঘুমের সময় সাক্ষাৎ করা উচিত নয়।অনুরূপ ভাবে কারো
নির্ধারিত কোন সময় থাকে যখন কারো যিয়ারত সে পছন্দ করে না তখন
সাক্ষাতের মাধ্যমে তার উপর বোঝা চাপিয়ে দেওয়া এবং বিরক্ত করা ঠিক নয়।
৩।
যিয়ারতকারী অধিক সময় থেকে বা অন্য কোন মাধ্যমে যার সাথে
সাক্ষাৎ করতে এসেছে তাকে বিরক্ত করা ও তার কাজের ব্যঘাত ঘটানো উচিত
নয়। হ্যাঁ যদি সাক্ষাৎকারী জানতে পারে যে, তার সাথী অধিক সময় কাটানো
অপছন্দ করেন না ,তাহলে বিলম্ব করাতে দোষ নেই। সাক্ষাৎকারীকে তার সাথীর
অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। হয়ত সে কোন কাজে ব্যস্ত আছে বা কারো
সাথে অঙ্গীকারাবদ্ধ আছে। আর এগুলি ব্যক্তির অবস্থা দ্বারা প্রকাশ পায়, যেমন
চেহারায় বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠে অথবা বারবার ঘড়ির দিকে তাকায় বা বার বার
আসা যাওয়া করতে থাকে এবং কখনও প্রকাশ্যেই বলে যে আমি ব্যস্ত। তখন
সাক্ষাৎকারী অনুমতি নিয়ে বের হয়ে আসবে।
৪।
সাক্ষাৎকারী সাজ গোজ করে পরিপাটি হয়ে যিয়ারতে আসবে,সাথে
সাথে নিজ পোশাক-পরিচ্ছদ এবং বেশ-ভূসা বিন্যস্ত করে নিবে। সুগন্ধি ব্যবহার
করে নিজের দুর্গন্ধ দূর করবে। আবুল আলিয়া বলেন-
.্র إذا استأذن أحدكم ثلاثا فلَم يؤذَن له فليرجع গ্ধ
অর্থাৎ মুসলমানরা যখন সাক্ষাতে যেতেন তখন সাজগোজ করতেন।
৫।
স্বাক্ষাতপ্রার্থী অনুমতি প্রার্থনা করলে স্বাক্ষাতদাতার অনুমতি দেয়া ও না
দেয়া উভয়টিরই অধিকার রয়েছে।এখন যদি তিনি স্বাক্ষাতের অনুমতি না দিয়ে
অপারগতা প্রকাশ করেন তাহলে স্বাক্ষাতপ্রার্থীর সেটি সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহন করা ও
মনে কষ্ট নেয়া বা তার সম্পর্কে মনে বিরুপ ভাব পোষন করা ঠিক হবে
না।কারণ কখনো কখনো সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এরূপ করতে হয়।
আলাহ বলেন―
﴾ وَإِنْ قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ. ﴿النور: ٢٨
তোমাদেরকে যদি বলা হয় ফিরে যাও, তবে ফিরে যাবে। এটি তোমাদের
জন্য পবিত্রতর।১১৩
কাতাদাহ রা. বলেন: কোন কোন মুহাজির বলেছেন: সারা জীবন (অন্তত
একবারের হন্যে হলেও) এই আয়াতের উপর আমল করতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি;
আমার কোন ভাইয়ের নিকট প্রবেশের অনুমতি চেয়েছি অতঃপর তিনি বলেছেন
ফিরে যাও আমি ফিরে এসেছি আর আমার হৃদয় তার উপর সন্তুষ্ট ।
৬।
সাক্ষাৎকারীর কর্তব্য হল: ঘরে প্রবেশ করে দৃষ্টি সংযত রাখবে, কানের
হেফাজত করবে এবং অসংগত ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে প্রশড়ব করবে না।
বাড়িওয়ালা যেখানে বসতে বলবে সেখানে বসবে তার অনুমতি ছাড়া বের হবে
না। যখন বের হবে সালাম দেবে।
৭।
অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত অন্যের বাড়িতে প্রবেশ করা কারো পক্ষেই
জায়েয নেই। আলাহ তাআলা বলেন―
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى
﴾ أَهْلِهَا. ﴿النور : ٢٧
অর্থাৎ, হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্যদের গৃহে
গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ করো
না।১১৪
নবী(সঃ) বলেন,
( إذا استأذن أحدكم ثلاثا فلم يؤذن له فليرجع. البخاري ( ٥٧٧٦
তোমাদের কেউ তিনবার অনুমতি চাওয়ার পর অনুমতি না মিললে ফিরে
আসবে।১১৫
অনুমতি চাওয়ার এ বিধান আরোপের তাৎপর্য :
ক) ঐ সময় বাড়িতে কারও প্রবেশ করা হয়ত বাড়িওয়ালাদের জন্য কষ্টের
কারণ হতে পারে , তাই অনুমতি চাওয়ার এ বিধান দেয়া হয়েছে যাতে
বাড়িওয়ালা অবাঞ্চিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া থেকে বেঁেচ যেতে পারে।
খ) এর মাধ্যমে ঘরের গোপন বিষয়গুলি সংরক্ষিত থাকবে। ঘরের লোকদের
পর্দা হবে।
গ) অনুমতি প্রার্থনা দ্বারা, হঠাৎ প্রবেশের মাধ্যমে ঘরের লোকদের ঘাবড়ে
যাওয়া থেকে নিরাপত্তা লাভ হয়।
১১৩ নুর-২৮
১১৪ নুর ২৭
১১৫ বুখারী: ৫৭৭৬
৮।
অনুমতি প্রার্থনার গুরুত্ব অনেক আর তাই তার কিছু আদব এবং বিধান
রয়েছে :
ক) অনুমতি প্রার্থনার বৈধ পদ্ধতি হচ্ছে তিনবার প্রার্থনা করবে , যদি অনুমতি
দেয় তো প্রবেশ করবে অন্যথায় ফিরে আসবে। অনুমতি প্রার্থনার সময় একবার
অনুমতি চাওয়ার পর পাওয়া না গেলে সামান্য বিরতি দিয়ে পরের বার
চাইবে।অর্থাৎ মাঝখানে কিছু সময় বিরতি দিয়ে অনুমতি চাইবে।
খ) অনুমতি প্রার্থনাকারীর দরজায় কড়াঘাত বা শব্দকরে ডাক দেয়াটা অত্যন্ত
ভদ্রচিত ও কমলতার সাথে হওয়া বাঞ্চনিয়। রাসূলুলাহ স. বলেন :―
( مسلم( ٤٦٩٨ .্র إن الرفق لا يكون في شيء إلا زانه, ولا يُنزَع من شيء إلا شانه গ্ধ
কোমলতা ও নম্রতা যার সাথেই যুক্ত হবে সেই সুন্দর ও মর্যাদাবান হবে , আর
যার থেকে উঠিয়ে নেয়া হবে সেই অসুন্দর ও অসম্মানিত হবে।১১৬
গ) যখন বলা হবে: দরজায় কে ? বলবে! অমুকের পুত্র অমুক নিজের ঐ
নাম বলবে যার দ্বারা সহজে চেনা যায়। বলবে না ‘আমি’। কেননা এই শব্দ
প্রত্যেকের উপর বর্তায়। সে বুঝতে পারবে না যে কে দরজা নাড়া দিচ্ছে।
من ذا গ্ধ : وفي حديث جابر أنه طرق على النبي صلى الله عليه وسلم الباب, فقال
( كأنه كرهها. مسلم ( ٤٠١٢ ্র أنا أنا গ্ধ : فقلت: أنا, فقال
জাবের রা.-এর হাদীসে এসেছে তিনি নবীর দরজা নাড়া দিলেন নবী
বললেন―কে? আমি বললাম (আমি) নবীজী বললেন ‘আমি’ ‘আমি’। মনে হয়
তিনি অপছন্দ করলেন।১১৭
ঘ) অনুমতি প্রার্থনাকারী দরজার একেবারে সামনে দাঁড়াবে না, ডানে অথবা
বামে সরে দাঁড়াবে, দরজা খুললেই যাতে বাড়ির ভিতরের অবস্থা সামনে এসে না
পড়ে।
ঙ)অনুমতি প্রার্থনার বিষয়টি ব্যাপক, প্রত্যেকের জন্যেই সর্বাবস্থায় এটি
প্রযোজ্য। সুতরাং কেউ যদি নিজের পিতার ঘরে বা মায়ের ঘরে বা বোনের ঘরে
প্রবেশ করতে চায় তখনও অনুমতি নিতে হবে।
চ) অনুমতি প্রার্থনার ক্ষেত্রে নারীরাও পুরুষের মত, উভয়ের জন্যে একই
বিধান প্রযোজ্য।অনেক নারীরা এ ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করে থাকেন, ঘরে
অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করেন। এটি মানুষের মাঝে বহুল প্রচলিত ভুলের মধ্য
থেকে একটি।
১১৬ মুসলিম : ৪৬৯৮
১১৭ মুসলিম : ৪০১২
পানাহারের আদব
আল্লাহ্র বান্দাদের উপর যতগুলি অনুগ্রহ আছে তার মাঝে অন্যতম প্রধান
অনুগ্রহ হল পানাহার। মানুষের শরীর গঠন,বর্দ্ধন ও টিকে থাকার মূল উপাদান
হচ্ছে পানাহার। এই নেয়ামতের দাবি হল এর দাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
আর এ কৃতজ্ঞতা আল্লাহ্র প্রশংসা এবং তাঁর দেয়া বিধান পালন করার মাধ্যমে
আদায় করা যেতে পারে।এ নেয়ামতের আরো একটি দাবি হচ্ছে, এর সহায়তায়
আল্লাহ্র নাফরমানি করা যাবে না।
পানাহারের অনেকগুলো আদব ও বিধান রয়েছে, যাকে দুইভাবে ভাগ করা যেতে
পারে :
প্রমত : যে বিষয়গুলোর গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। যেমন:
১) খাদ্য এবং পানীয় জাতীয় জিনিসের এহতেরাম করা আর এই বিশ্বাস
রাখা যে এগুলি আল্লাহ্র নেয়ামত যা আল্লাহ্ তাআলা তাকে দিয়েছেন।
২) খাদ্য জাতীয় জিনিসকে অবহেলা-অসম্মান না করা ;ডাস্টবিন ও ময়লা
আবর্জনার ভিতরে না ফেলা।
৩) খাবার শুরুতে বিসমিল−াহ বলা। বিশুদ্ধ অভিমত হল: খাবার শুরুতে
বিসমিল−াহ বলা ওয়াজিব, কেননা অনেকগুলো সহীহ এবং সুস্পষ্ট হাদীস
এ নির্দেশই করে। আর এ নির্দেশের বিপরীত কোন হাদীস নেই। এ
মতের বিরুদ্ধে সর্বসম্মত ঐক্যমত্যও সৃষ্টি হয়নি যে, এর প্রকাশ্য অর্থ
থেকে বের করে দেবে। আর যে ব্যক্তি পানাহারের সময় বিসমিল−াহ
বলবে না তার পানাহারে শয়তান শরীক হবে।
বিসমিল্লাহ ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ সমূহ :―
يا غلام, سمّ اللهّ, وكل গ্ধ : عن عمر بن أبي سلمة أن النبي صلى الله عليه وسلم قال له
( البخاري ( ٤٩٥٨ .্র بيمينك, وكل مما يليك
আমর বিন আবু সালামা থেকে বর্ণিত, নবী(সঃ) তাকে বলেছেন:হে বৎস! বিসমিল−াহ বল এবং ডান হাত দিয়ে খাও।
আর খাবার পাত্রের যে অংশ তোমার সাথে লাগানো সে অংশ থেকে খাও।১১৮
إن গ্ধ : وفي حديث حذيفة −رضي الله عنه− أن النبي صلى الله عليه وسلم قال
( مسلم ( ٣٧٦١ .্র الشيطان يستحل الطعام أن لا يذكر اسم الله عليه
১১৮ বুখারী: ৪৯৫৮
অর্থাৎ, হুযাইফা রা. রসুল(সঃ) থেকে বর্ণনা
করেন, শয়তান ঐ খাবারকে নিজের জন্য হালাল মনে করে যার শুরুতে
বিসমিল−াহ বলা হয় নি।১১৯
(১) বান্দা খাবার পাত্রের যেদিক তার সাথে লাগানো সেদিক থেকে
খাবে । উপরে বর্ণিত উমর বিন আবু সালামা রা.-এর হাদীসের কারণে। আর
খাবার যদি বিভিনড়ব ধরনের হয় তা হলে অন্যদিক -যা তার সাথে লাগোয়া নয়-
থেকে খাওয়াতে কোন দোষ নেই।
(২) যদি খাবারের কোন লোকমা পড়ে যায় তবে উঠিয়ে খাবে, যদি
ময়লা লাগে ধুয়ে ময়লা মুক্ত করে খাবে। কারণ এটিই সুনড়বত এবং এর মাধ্যমেই
নবী(সঃ) নির্দেশের অনুসরণ করা হবে। নবী(সঃ) বলেন :―
إذا سقطت لقمة أحدكم فليُمِط عنها الأذى, وليأكلها, ولا يدَعْها গ্ধ
( مسلم( ٣٧٩٤ .্র للشيطان
অর্থাৎ, যদি তোমাদের কারো খাবারের লোকমা পড়ে যায় তবে তার থেকে
ময়লা দুর করবে এবং তা খেয়ে ফেলবে, শয়তানের জন্য রেখে দেবে না।১২০
(৩) খাবারের পে−ট পরিষ্কার করবে, তার ভিতর যা কিছু থাকবে মুছে
খাবে।
عن جابر رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم أمر بلعق الأصابع والصحفة,
( مسلم ( ٣٧٩٢ .্র إنكم لا تدرون في أيه البركة গ্ধ : وقال
জাবের রা. থেকে বর্ণিত যে রসূল(সঃ) আঙুল এবং
বর্তন চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন তোমরা জানো না কোনটায়
বরকত রয়েছে।١٢١
وفي حديث أنس رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم أمرنا أن نسلت
( الترمذي ( ١٧٢٥ .,্র فإنكم لا تدرون في أيّ طعامكم البركة গ্ধ : القصعة, قال
আনাস রা. রসূল(সঃ) থকে বর্ণনা করেন
রসুল(সঃ) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা
১১৯ মুসলিম : ৩৭৬১
১২০ মুসলিম : ৩৭৯৪
১২১ মুসলিম : ৩৭৯২
যেন বর্তন পরিষ্কার করে খাই। তিনি বলেন―তোমরা জানো না তোমাদের
খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে। বরকত দ্বারা উদ্দেশ্য হল যার দ্বারা
উপকার এবং পুষ্টি লাভ হয়।১২২
(৪) আঙুল ধোয়ার পূর্বে চেটে খাবে―
عن كعب بن مالك رضي الله عنه قال: رأيت رسول الله يأكل بثلاث أصابع, فإذا
( فرغ لعقها. مسلم ( ٣٧٩٠
কা’ব বিন মালেক রাদিয়াল−াহু আনহু বলেন : আমি রাসূলুল−াহ সাল−াল−াহু
আলাইহি ওয়াসাল−ামকে দেখেছি, তিনি তিন আঙুল দিয়ে খাচ্ছেন এবং খাওয়া
শেষে আঙুল চেটে খাচ্ছেন।১২৩
إذا أكل أحدكم فليلعق أصابعه, فإنه لا يدري গ্ধ : عن أبي هريرة رضي اللهّ عنه مرفوعاً
( مسلم ( ٣٧٩٣ ..্র في أيتهن البركة
আবু হুরাইরা রা. থেকে মারফু হাদীসে বর্ণিত, যখন তোমরা কেউ খাবার
খাবে তার উচিত আঙুল চেটে খাওয়া কেননা সে জানে না কোন আঙুলে বরকত
রয়েছে।১২৪
আলেমগণ বলেন : নির্বোধ-মূর্খ লোকদের আঙুল চেটে খাওয়াকে অপছন্দ
করা ও একে অভদ্রতা মনে করাতে কিছু যায় আসে না। তবে হ্যাঁ খাওয়ার
মাঝখানে আঙুল চেটে খাওয়া উচিত নয়। কেননা আঙুল আবার ব্যবহার করতে
হবে আর আঙুলে লেগে থাকা লালা ও থুতু পে−টের রয়ে যাওয়া খাবারের সাথে
লাগবে আর এটি এক প্রকার অপছন্দনীয়ই বটে।
(৫) খাবারের প্রশংসা করা মুস্তাহাব , কেননা এর মাধ্যমে খাবার
আয়োজন ও প্রস্তুত কারীর উপর একটা ভাল প্রভাব পড়বে। সাথে সাথে
আল্লাহ্র নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা হবে। রসূল(সঃ) আলাইহি
ওয়াসাল−াম কখনো কখনো এমন করতেন―
عن جابر رضي اللهّ عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم سأل أهلَه الأدُمَ, فقالوا: ما
نعم الأدُم الخلّ, نعم الأُدُم গ্ধ : عندنا إلا خلّ, فدعا به, فجعل يأكل به, ويقول
( مسلم ( ٣٨٢٤ .্র الخل
১২২ তিরমিজি : ১৭২৫
১২৩ মুসলিম : ৩৭৯০
১২৪ মুসলিম : ৩৭৯৩
জাবের (রাঃ) বর্ণনা করেন, রসূল(সঃ)
স্বীয় পরিবারের নিকট তরকারী চাইলেন। তারা বললেন, আমাদের কাছে সিরকা
ছাড়া আর কিছু নেই। তিনি সিরকা আনতে বললেন এবং তার দ্বারা খেতে
লাগলেন। অতঃপর বললেন, সিরকা কতইনা উত্তম তরকারী; সিরকা কতইনা
উত্তম তরকারী।
(৬) পানি পান কারীর জন্য সুনড়বত হল:তিন শ্বাসে পান করা। একটু
পান করার পর পাত্র মুখ থেকে দুরে সরিয়ে নিয়ে শ্বাস নিবে। অতঃপর দ্বিতীয়বার
এরপর একই ভাবে তৃতীয়বার। যেমন আনাস রা.-এর হাদীসে এসেছ―
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يتنفس في الشراب ثلاثا, وفي رواية
( البخاري ( ٥٢٠٠ ), مسلم ( ٣٧٨٢ .্র ويقول: إنه أروى وأبرأ وأمرأ গ্ধ : لمسلم
রসূল(সঃ) পান করার মাঝে তিনবার শ্বাস
নিতেন। মুসলিম শরীফের অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলতেন: এইভাবে
পান করা অধিক পিপাসা নিবারণকারী অধিক নিরাপদ অধিক তৃপ্তিদায়ক।
পানাহারের শেষে আল্লাহ্র নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ স্বরূপ তাঁর
প্রশংসা করবে। সর্বনিমড়ব স্তর হচ্ছে অন্তত আলহামদুলিল−াহ বলা।
إن الله ليرضى عن العبد أن يأكل الأكلة فيحمده عليها, أو يشرب الشربة فيحمده গ্ধ
.্র عليها
রসূল(সঃ) বলেন : যে ব্যক্তি খাবারের পর
আল্লাহ্র প্রশংসা করে।অনুরূপ পান করার পর আল্লাহ্র প্রশংসা করে। আল্লাহ্ সে
বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন।
আর যদি হাদীসে বর্ণিত কোন দোআ পড়ে তাহলে তাহবে সর্বোত্তম।
সবচেয়ে বিশুদ্ধ দোআ যা সাহাবী আবু উমামার হাদীসে এসেছে রসূল(সঃ)
আলাইহি ওয়াসাল−াম যখন দস্তরখান উঠাতেন তখন বলতেন:
্র الحمد لله كثيراً طيباً مباركاً فيه, غير مكفي ولا مودع, ولا مستغنى عنه ربّنا গ্ধ
(৭) যখন অনেক লোকের সাথে বসে পান করবে আর পান করার পর
কাউকে দিতে চাইবে তাহলে ডান পাশ্বে বসা ব্যক্তিকে দিবে, সে যদি বয়সে
ছোট হয় আর বাম পার্শ্বস্থজন তার থেকে বড়, তবুও। হ্যাঁ; যদি ছোট থেকে
অনুমতি নিয়ে বড়কে দেওয়া হয় তাহলে কোন দোষ নেই । আর যদি অনুমতি না
দেয় তাহলে তাকেই দিবে কারণ সেই আগে পাওয়ার বেশি অধিকার রাখে।
এর প্রমাণ হল সাহাবী সাহল বিন সা’দ রা.-এর হাদীস :―
أن النبي صلى الله عليه وسلم أتي بشراب فشرب منه وعن يمينه غلام, وعن يساره
فقال الغلام: لا والله! لا أوثر ্র? أتأذن لي أن أعطي هؤلاء গ্ধ : أشياخ, فقال للغلام
بنصيبي منك أحداً, قال: فتَلَّه رسول الله صلى الله عليه وسلم في يده. البخاري
(٢٤١٥)
রসূল(সঃ)-এর নিকট কিছু পানীয় আনা হল।
রসুল(সঃ) পান করলেন। রাসূলের ডান দিকে একটি
ছোট ছেলে বসা ছিল এবং বামদিকে বয়স্ক লোক। রসূল(সঃ)
ছেলেটিকে বললেন―তুমি কি আমাকে তোমার আগে তাদেরকে
দেয়ার অনুমতি দিবে ? তখন ছেলেটি বলল, না, কখনও নয়। আল্লাহ্ শপথ!
আমি আমার অংশের উপর আপনি ব্যতীত অন্য কাউকে প্রাধান্য দেব না।
বর্ণনাকারী বলেন―রসুল(সঃ) (পানপাত্র) ছেলেটির
হাতে দিয়ে দিলেন।১২৫
আর এক হাদিসে আনাস রা. বর্ণনা করেন :―
وفي حديث آخر: عن أنس رضي الله عنه أنه كان عن يمين النبي صلى الله عليه
وسلم أعرابي, وعن يساره أبو بكر, وعُمَرُ وُجَاهَه, فلما شرب النبي صلى الله عليه
وسلم قال عمر: يا رسول الله أعط أبا بكر, فأعطاه النبي صلى الله عليه وسلم
( مسلم ( ٣٧٨٤ . ,্র الأيمن فالأيمن গ্ধ: الأعرابي, وقال
এক মজলিসে রসূল(সঃ)-এর ডানে ছিলেন
এক বেদুঈন সাহাবী এবং বামে আবু বকর আর উমর ছিলেন তাঁর সোজাসুজি।
যখন নবী(সঃ) পান শেষ করলেন উমর বললেন, হে
আল্লাহ্র রাসূল আবু বকরকে দিন। রসুল(সঃ) ডানে
বসা উক্ত বেদুঈনকে দিলেন এবং বললেন: (নিয়ম হচ্ছে) আগে ডান অতঃপর
ডান। অর্থাৎ প্রমে ডান পাশের জন পাবে অত:পর তার ডান পাসের জন এবং
এভাবেই ।
قال أنس رضي اللهّ عنه: .্র الأيمنون, الأيمنون, الأيمنون গ্ধ : وفي رواية لمسلم قال
( فهي سنّة, فهي سنّة, فهي سنّة. البخاري ( ٢٣٨٣
১২৫ বুখারী: ২৪১৫
মুসলিম শরিফের এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, ডান দিকের লোক ডান
দিকের লোক ডান দিকের লোক। আনাস রা. বলেন : এটিই সুনড়বত, এটিই সুনড়বত,
এটিই সুনড়বত।১২৬
দ্বিতীয়ত : যে বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক :
১।
পানাহারে অহেতুক খরচ করা, আল্লাহ্ তাআলা বলেন―
﴾ كُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يحُِبُّ المُْسْرِفِينَ ﴿الاعراف : ٣١
অর্থাৎ : খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে
পছন্দ করেন না।১২৭
২।
প্রয়োজন ছাড়া বাম হাতে খাওয়া হারাম। বেশ কিছু হাদীস এর প্রমাণ
হিসাবে পেশ করা যেতে পারে।
(ক) বাম হাতে খাওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা―যেমন জাবের (রা.)-
এর হাদীসে মারফুতে এসেছে :―
(٣٧٦٣) .্র لا تأكلوا بالشمال, فإن الشيطان يأكل بالشمال গ্ধ
অর্থাৎ : তোমরা বাম হাতে খেয়ো না, কেননা শয়তান বাম হাতে খায়।
(খ) ডান হাতে খাওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশÑ যেমন ইবনে উমর রা.
কর্তৃক বর্ণিত মারফু হাদীসে এসেছে―
إذا أكل أحدكم فليأكل بيمينه, وإذا شرب فليشرب بيمينه, فإن الشيطان يأكل গ্ধ
( مسلم ( ٣٧٤٦ ..্র بشماله, ويشرب بشماله
অর্থাৎ: তোমরা কেউ যখন খাবে ডান হাতে খাবে যখন পান করবে ডান
হাতে পান করবে, কেননা শয়তান বাম হাতে খায়। বাম হাতে পান করে। ১২৮
এই ধরনের নির্দেশের অর্থ হল বাম হাতে খাওয়া হারাম।
(গ) বাম হাতে খেলে শয়তানের সাথে সাদৃশ্য হয়। যেমন পূর্বের হাদীসে
বর্ণিত হয়েছে। এবং অমুসলিমদের সাথেও সাদৃশ্য হয়। আর শরীয়তের নির্দেশ
মোতাবেক উভয়টিই নিষিদ্ধ ও হারাম।
(ঘ) বাম হাতে খাবার গ্রহন কারী জনৈক ব্যক্তিকে নবী(সঃ) এর বদ দোআ করা এবং এর কারণ বর্ণনা করা যে এটি অহংকার
মূলক কাজ।
১২৬ বুখারী: ২৩৮৩
১২৭ আল-আরাফ-৩১
১২৮ মুসলিম : ৩৭৬৩
عن سلمة بن الأكوع رضي الله عنه أن رجلاً أكل عند النبي صلى الله عليه وسلم
ما منعه إلا ,্র لا استطعت গ্ধ : قال: لا أستطيع, قال , গ্ধ ্র بشماله, فقال: كل بيمينك
( الكبر, قال: فما رفعها إلى فيه. مسلم ( ٣٧٦٦
অর্থাৎ সালামা বিন আকওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রসূল(সঃ)
এর সামনে বাম হাতে খাচ্ছিল। রসূল(সঃ)
বললেন, তুমি ডান হাতে খাও। সে বলল আমি পারব না। রসূল(সঃ) বললেন: আর কখনও পারবেও না। একমাত্র
অহংকারই তাকে ডান হাত দিয়ে খাওয়া থেকে বিরত রাখল। বর্ণনাকারী বলেন:
এরপর সে আর কখনো মুখের কাছে হাত উঠাতে পারেনি।১২৯
৩।
দাঁড়িয়ে পানাহার করা মাকরূহ, সুনড়বত হল বসে পানাহারকার্য সম্পনড়ব
করা।
عن أنس رضي الله عنه أن النبي نهى أن يشرب الرجل قائماً, قال قتادة: فقلنا:
( فالأكل? فقال (أنس): ذلك أشر وأخبث. . مسلم ( ٣٧٧٢
অর্থাৎ : আনাস (রাঃ)থেকে বর্ণিত, রসূল(সঃ) লোকদের দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। কাতাদাহ রা. বলেন
: আমরা বললাম তাহলে দাঁড়িয়ে খাওয়ার হুকুম কি ? আনাস বললেন সেটাতো
আরো বেশি খারাপ আরো বেশি দূষণীয়।১৩০
৪।
কোন কিছুর উপর হেলান দিয়ে আহার করা মাকরূহ। রসূল(সঃ)
বলেন―
إني لا آكل متكئاً আমি হেলান দিয়ে আহার করি না।
ইবনে হাজার রহ. বলেন : খাওয়ার জন্য বসার মোস্তাহাব পদ্ধতি হচ্ছে। দুই
হাটু গেড়ে ,দুই পায়ের পিঠের উপর বসা। অথবা ডান পা খাড়া করে বাম পা
বিছিয়ে তার উপর বসা।
৫।
খাওয়ার পাত্রে ফু দেয়া এবং তার ভিতর নি:শ্বাস ফেলা মাকরুহ।
..্র نهى أن يتنفس في الإناء, أو ينفخ فيه গ্ধ عن ابن عباس رضي الله عنهما أن النبي
( الترمذي ( ١٨١٠
১২৯ মুসলিম : ৩৭৬৬
১৩০ মুসলিম : ৩৭৭২
অর্থাৎ : ইবনে আব্বাস রা. রসূল(সঃ) থেকে বর্ণনা
করেন যে, রসুল(সঃ) খাবার পাত্রে ফু দেওয়া বা শ্বাস
ফেলতে নিষেধ করেছেন।১৩১
لا يمسكن أحدكم ذكره بيمينه وهو গ্ধ : وعن أبي قتادة رضي الله عنه مرفوعاً
( مسلم ( ٣٩٢ .্র يبول, ولا يتمسح من الخلاء بيمينه, ولا يتنفس في الإناء
আবু কাতাদাহ রা. রসূল(সঃ) থেকে বর্ণন
করছেন:তোমাদের কেউ যেন প্রস্রাব করার সময় পুরুষাঙ্গ ডান হাত দ্বারা স্পর্শ না
করে এবং ডান হাত দ্বারা যেন ইস্তেনজা না করে। অনুরূপ খাবার পাত্রে যেন শ্বাস
না ফেলে।১৩২
৬।
খাবারের দোষ বের করা ও বর্ণনা করা মাকরূহ। বরং আগ্রহ হলে
খাবে, মনে না চাইলে দোষ ধরা ব্যতীত বাদ দেবে।
طعاماً قط, كان إذا اشتهى شيئاً ρ قال أبو هريرة رضي الله عنه: ما عاب رسول الله
البخاري ( ٤٩٨ .্র أكله, وإن كرهه تركه
আবু হুরাইরা রা. বলেন : রসুল(সঃ) কখনও কোন
খাবারের দোষ বের ও বলাবলি করেননি , মনে চাইলে খেতেন। অপছন্দ হলে
রেখে দিতেন।
১৩১ তিরমিজি : ১৮১০
১৩২ মুসলিম : ৩৯২
ঘুমানো এবং জাগ্রত হওয়ার আদব
ঘুম আল্লাহ্ তাআলার একটি বিশাল নেয়ামত , এর মাধ্যমে তিনি নিজ
বান্দাদের উপর বিরাট অনুগ্রহ করেছেন। এবং তাদের জন্য সহজ করে
দিয়েছেন। আর নেয়ামতের দাবি হল শুকরিয়া আদায় করা তথা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করা। আল্লাহ্ তাআলা বলেন :
وَمِنْ رَحمَْتِهِ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا مِنْ فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ
( تَشْكُرُونَ ﴿ ٧٣ ﴾ (القصص ٧٣
তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন করেছেন যাতে তোমরা রাত্রে
বিশ্রাম গ্রহণ কর ও তার অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা
প্রকাশ কর।১৩৩
﴾ وقال سبحانه وَجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا. ﴿النبأ : ٩
আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন:তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী।১৩৪
দিনের ক্লান্তিকর চলাফেরার পর রাত্রে শরীরের প্রশান্তি শরীর সুস্থ থাকাকে
সাহায্য করে।অনুরূপ ভাবে শরীরের বর্ধন এবং কর্ম চাঞ্চল্যতেও সাহায্য করে।
যাতে করে ঐ দায়িত্ব পালন করতে পারে যার জন্য আল্লাহ্ তাআলা তাকে সৃষ্টি
করেছেন।
মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে যা কিছু অতি জরুরী ঘুম তার অন্যতম। মুমিন
বান্দা যদি ঘুমের মাধ্যমে দেহ ও মনকে আরাম দেওয়ার নিয়ত করে , যাতে করে
সে আল্লাহ্ তাআলার আনুগত্যের বিষয়ে আরো দৃঢ় হতে পারে। অতঃপর ঘুমের
সমস্ত সুনড়বত ও শরয়ী আদব পরিপূর্ণ রূপে পালন করার চেষ্টা করে , তবে তার
ঘুম এবাদত হিসাবে পরিগণিত হবে এবং সে পুণ্য লাভ করবে।
সাহাবী মুআয বিন জাবাল রা. বলতেন :―
( أما أنا فأنام وأقوم, فأحتسب نومتي كما أحتسب قومتي.البخاري ( ٣٩٩٨
আর আমি (রাতে) ঘুমাই এবং জাগ্রত হয়ে সালাত আদায় করি, জাগ্রত
থেকে সালাত আদায়ের মাধ্যমে যে ভাবে ছাওয়াবের আশা করি ঠিক তেমনি করে
ঘুমানোর মাধ্যমেও ছাওয়াবের আশা করি ।১৩৫
قال ابن حجر رحمه اللهّ: معناه أنه يطلب الثواب في الراحة كما يطلبه في التعب,
১৩৩ আল কাসাস : ৭৩
১৩৪ আন নাবা : ৯
১৩৫ বুখারী: ৩৯৯৮
ইবনে হাজার রহ. বলেন এর অর্থ হল: তিনি আরামের ভিতর পুণ্য আশা
করতেন যেমন কষ্টের ভিতর আশা করতেন।
কেননা, আরামের উদ্দেশ্য যদি এবাদত করার জন্য সাহায্য সঞ্চয় করা হয়,
তবে সে আরামের দ্বারা পুণ্য হবে। এখানে মুয়ায ইবনে জাবাল রা.-এর জাগ্রত
হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হল রাতের নামায।
ঘুমের কতিপয় আদব এবং বিধান:
(১) অধিক রাত্রি জাগরণ না করে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া মোস্তাহাব ―
রসূল(সঃ) এশার নামাযের পূর্বে ঘুমানো এবং
নামাযের পর অহেতুক গল্প-গুজব করাকে খুব অপছন্দ করতেন ।১৩৬
কিন্তু ভাল ও নেক কাজের জন্য এশার পরে জাগ্রত থাকাতে কোন ক্ষতি
নেই। যেমন মেহমানের সাথে কথা বলা অথবা ইলমী আলোচনা করা অথবা
পরিবারকে সময় দেওয়া ইত্যাদি। মোটকথা, যে জাগ্রত থাকা কোন ক্ষতির কারণ
হবে না যেমন ফজরের নামায নষ্ট হয়ে যাওয়া, সে জাগ্রত থাকাতে কোন ক্ষতি
নেই।
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপরকারিতা
ক) সুনড়বতের অনুসরণ।
খ) শরীরকে আরাম দেওয়া, কেননা দিনের ঘুম রাত্রের ঘুমের ঘাটতি পূরণ
করতে পারে না।
গ) ফজরের নামাযের জন্য খুব সহজে এবং পূর্ণ শক্তি ও চাঞ্চল্যতার সাথে
জাগ্রত হওয়া যায়।
ঘ) তাহাজ্জুদের নামাযের জন্য শেষ রাতে জাগ্রত হতে ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্য
এটি বড় সহায়ক ।
২।
প্রত্যেক মুসলমানকে সব সময় ওযু অবস্থায়ই ঘুমাতে চেষ্টা করা উচিত।
কেননা রসূল(সঃ) বারা ইবনে আযেব রা.-কে
বলেছিলেন―
( مسلم ( ٤٨٨٤ .্র إذا أخذت مضجعك فتوضأ وضوءك للصلاة গ্ধ
যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাযের ওযুর মত ওযু করবে।১৩৭
৩।
ডানদিকে পাশ ফিরে ঘুমাবে। কেননা রসূল(সঃ) বলেন :―
ثم أضطجع على شقك الأيمن.
১৩৬ বুখারী: ৫১৪
১৩৭ মুসলিম : ৪৮৮৪
অতঃপর ডান কাত হয়ে ঘুমাও।
৪।
উপুড় হয়ে ঘুমানো মাকরূহ। কেননা রসূল(সঃ)
বলেন :―
إنها ضجعة يبغضها الله عز وجل.
এটি এমন শয়ন, যাকে আল্লাহ্ তাআলা খুব অপছন্দ করেন।
৫।
ঘুমানোর সময় হাদীসে বর্ণিত আযকার ও দোয়া থেকে সাধ্যানুযায়ী
পড়ার চেষ্টা করবে। যিকির তথা আল্লাহ্র নাম নেয়া ব্যতীত ঘুমানো মাকরূহ।
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত―
্র ومن اضطجع مضجعا لم يذكر الله تعالى فيه إلا كان عليه من الله تِرَة يوم القيامة
( أبو داود ( ٤٤٠٠
যে ব্যক্তি আল্লাহ্র যিকির ছাড়া শুয়ে পড়বে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্
তাআলার পক্ষ থেকে আক্ষেপের বিষয় হবে।১৩৮
হাদীসে বর্ণিত (ঘুমানোর সময়ের) কিছু দোয়া:
ক) আয়াতুল কুরসী পড়া।
عن أبي هريرة قال: وكّلني رسول الله صلى الله عليه وسلم بحفظ زكاة
رمضان, فأتاني آت فجعل يحثو من الطعام… وذكر الحديث, وفيه أن هذا الآتي
قال له: إذا أويت إلى فراشك فاقرأ آية الكرسي, فإنه لن يزال معك من الله تعالى
صدقك, গ্ধ : حافظ, ولا يقربك شيطان حتى تصبح, فقال النبي صلى الله عليه وسلم
( البخاري ( ٣٠٣٣ .্র وهو كذوب, ذاك شيطان
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. বলেন : রসূল(সঃ)
আমাকে রমযানের ফিতরা সংরক্ষণের দায়িত্ব দিলেন। কোন এক আগন্তুক আমার
কাছে আসল, এবং অঞ্জলি ভরে খাবার (চুরি) সংগ্রহ করতে লাগল।… এরপর
পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। -তাতে আছে- আগন্তুক তাকে বলল : তুমি যখন
তোমার বিছানায় যাবে তো আয়াতুল কুরসী পড়বে, কেননা এর মাধ্যমে সর্বক্ষণ
তোমার সাথে আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে একজন হেফাজতকরী থাকবে এবং
সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে ঘেঁসতে পারবে না।
১৩৮ আবু দাউদ : ৪৪০০
রসুল(সঃ) বললেন: তোমাকে সত্য বলেছে অথচ
সে বড় মিথ্যাবাদী। সে হচ্ছে শয়তান।১৩৯
খ) সূরা এখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পড়া।
আয়েশা রা. বর্ণনা করেন:
أن النبي صلى الله عليه وسلم كان إذا أوى إلى فراشه− كل ليلة – جمع كفيه ثم
نفث فيهما, وقرأ فيهما [قل هو الله أحد] و [قل أعوذ برب الفلق] و [قل أعوذ برب
الناس], ثم مسح بهما ما استطاع من جسده, بدأ بهما على رأسه ووجهه وما أقبل
( من جسده, يفعل ذلك ثلاث مرات. . الترمذي ( ٣٣٢٤
নবী (সঃ) যখন প্রতি রাত্রিতে নিজ বিছানায় যেতেন
দুই হাতের কবজি পর্যন্ত একত্রিত করতেন অতঃপর তারমাঝে ফু দিতেন এবং
সূরা এখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়তেন । অতঃপর দুই হাত যথা সম্ভব
সমস্ত শরীরে মলে দিতেন। মাথা ,চেহারা এবং শরীরের সামনের অংশ থেকে
শুরু করতেন। এরূপ পরপর তিনবার করতেন।১৪০
গ) اللهم باسمك أموت وأحيا দোআটি পড়া।
অর্থাৎ হে আল্লাহ্ আপনার নামে মৃত্যবরণ করলাম এবং আপনার নামেই
জীবিত হব।
ঘ) নিমেড়বাক্ত দোআটি পড়া।
اللهم أسلمت نفسي إليك, وفوّضت أمري إليك, وألجأت ظهري إليك, গ্ধ
رغبة ورهبة إليك, لا ملجأ ولا مَنجى منك إلا إليك, آمنت بكتابك الذي أنزلت,
( البخاري ( ٥٨٣٦ .্র ونبيّك الذي أرسلت
―বলা। অর্থাৎ, হে আল্লাহ্ আমি নিজেকে আপনার কাছে সঁপে দিয়েছি।
আমার বিষয় আপনার কাছে সোপর্দ করেছি। আমার পিঠ আপনার সাহায্যে
দিয়েছি আপনার প্রতি আশা এবং ভয় নিয়ে, আশ্রয় নেয়ার ও আপনার শাস্তি
থেকে বাঁচার মত জায়গা আপনি ছাড়া আর কেউ নেই। আমি ঈমান এনেছি
আপনার অবতীর্ণ কিতাবের প্রতি এবং আপনার প্রেরিত নবীর প্রতি।১৪১
১৩৯ বুখারী: ৩০৩৩
১৪০ তিরমিজি : ৩৩২৪
১৪১ বুখারী: ৫৮৩৬
৬।
ঘুমের মাঝে অনাকাংখীত ও অপছন্দনীয় কিছু দেখলে রসূল(সঃ)
আলাইহি ওয়াসাল−াম পাঁচটি কাজ করতে বলেছেন।
ক) বাম দিকে তিন বার থুতু ফেলবে।
খ) أعوذ بالله من الشيطان الرجيم বলে আল্লাহ্ তাআলার কাছে আশ্রয়
চাইবে।
গ) এ স্বপেড়বর কথা কাউকে বলবে না।
ঘ) যে কাতে শোয়া ছিল সে কাত থেকে ঘুরে শোবে অর্থাৎ পার্শ্ব পরিবর্তন
করে শোবে।
ঙ) নামাজে দাঁড়িয়ে যাবে।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম র. এ পাঁচটি কাজ উলে−খ করে বলেন : যে এই
কাজগুলো করবে খারাপ স্বপড়ব তার ক্ষতি করতে পারবে না বরং এ কাজ তার
ক্ষতি দূর করে দেবে।
৭।
সন্তানদের বয়স দশ বছর হয়ে গেলে তাদের বিছানা আলাদা করে দেয়া
একান্ত আবশ্যক।রসূল(সঃ) বলেন:
مروا أولادكم بالصلاة وهم أبناء سبع سنين, واضربوهم عليها وهم أبناء গ্ধ
( أبوداود ( ٤١٨ .্র عشر, وفرّقوا بينهم في المضاجع
অর্থাৎ তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে নামাযের আদেশ দাও যখন তাদের
বয়স সাত বৎসর হবে এবং এর জন্য তাদেরকে শাস্তি দাও যখন তাদের বয়স
দশ বৎসর হবে এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।১৪২
৮।
মুসলমান অবশ্যই সর্বদা ফজরের নামাযের পূর্বে জাগ্রত হবে যেন নামায
সময় মত জামাতের সাথে ঠিকভাবে আদায় করতে পারে। এ ব্যাপারে চেষ্টা করা
এবং এতে সহায়তাকারী উপকরণাদি গ্রহন করা তার জন্য ওয়াজিব।
ذاك رجل بال الشيطان في গ্ধ : سئل النبي عن رجل نام حتى أصبَح? قال
( النسائي ( ١٥٩٠ .্র أذنيه
এক ব্যক্তি ফজর পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিল তার সম্পর্কে রসূল(সঃ) কে প্রশড়ব করা হল। রাসূল বললেন : ঐ ব্যক্তির কর্ণ-দ্বয়ে শয়তান প্রস্রাব
করে দিয়েছে।১৪৩
১৪২ আবু দাউদ : ৪১৮
১৪৩ নাসায়ী : ১৫৯০
৯।
মুসলমান ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর নিমেড়বাক্ত দোয়া পড়া
মোস্তাহাব:
الحمد لله الذي أحيانا بعد ما أماتنا وإليه النشور. গ্ধ :
,্র الحمد لله الذي ردّ علي روحي وعافاني في جسدي, وأذِن لي بذكره গ্ধ
সকল প্রশংসা ঐ আল্লাহ্র জন্য যিনি আমাকে মৃত্যু দেয়ার পর জীবিত করে
দিয়েছেন এবং তার কাছেই ফিরে যাব।
সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লার জন্য যিনি আমার আত্মাকে আমার নিকট ফিরিয়ে
দিয়েছেন , আমার শরীরেকে সুস্থ রেখেছেন এবং আমাকে তার স্মরণের অনুমতি
দিয়েছেন।
অতঃপর রসুল(সঃ)-এর অনুকরণে মিসওয়াক
করবে।
রসিকতা
সৃষ্টির শুরু থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত মানুষের জীবনাচারের প্রতি লক্ষ্য করলে
দেখা যায় যে তাদের জীবনের সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে মিশে আছে হাসি-তামাশা ও
আনন্দ-রসিকতা। এ μিড়া-কৌতুক ও আনন্দ-রসিকতা মানুষের জীবনে বয়ে
আনে এক অনাবিল প্রান চাঞ্চল্য ও উদ্যমতা। মানুষকে করে ঘনিষ্ঠ। তাদের
আবদ্ধ করে এক অকৃত্রিম ভালবাসার মায়াডোরে।
আনন্দ-রসিকতার এ মহোময় সম্পাদিত হয় সমবয়সী বন্ধু-বান্ধব,
সাথী-সঙ্গী, নিজ সন্তানাদি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মাঝে।বরং কোন
মানুষই এ আনন্দঘন কর্ম থেকে মুক্ত নয়। তবে কেউ কম আর কেউ বেশি।
মুসলমান আল্লাহ্ তাআলার বান্দা হিসাবে তার জীবনের প্রতিটি পর্বকে
সাজাতে হবে মহান আল্লাহ্ তাআলার নির্দিষ্ট রীতি অনুযায়ী। যাতে তার মধ্যে
আল্লাহ্ তাআলার উবূদিয়্যত (দাসত্ব) পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়িত হয়।
বর্তমানে মানুষের মাঝে হাসি-তামাশার প্রচলন একটু বেশি।তাই তার ধরণপ
্রকৃতি, হুকুম ও প্রকার এবং এ বিষয়ে শরয়ী দৃষ্টিকোণ কি সে সম্পর্কে জানা
আবশ্যক হয়ে দাড়িয়েছে। যাতে মুসলমানরা সেগুলো মেনে চলতে পারে ও
একঘেয়েমি দূরকারী এ সুন্দর পদ্ধতি পরিত্যাগ করতে না হয়। এবং এর শরয়ী
দিকনির্দেশনা অবলম্বন করে যেন পুণ্য অর্জন করতে পারে পাশাপাশি নিজেকে
গুনাহ থেকে বিরত রাখতে পারে।
রসিকতা তিন প্রকার:
(১)অনুমোদিত বরং প্রশংসাযোগ্য রসিকতা : আর সেটি হচ্ছে , যা ভাল
উদ্দেশ্যে, সৎ নিয়তে এবং শরয়ী নিয়ম নীতি অবলম্বন করে সম্পাদন করা হয়।
যেমন মাতা-পিতার সাথে আদবের সহিত রসিকতা করা অথবা স্ত্রী, সন্তানদের
সাথে অনুরূপ বন্ধু-বান্ধবদের সাথে তাদের অন্তরে আনন্দ-খুশির উপস্থিতির
জন্য। এগুলির দ্বারা রসিকতাকারীর পুণ্য লাভ হয়।
এই প্রকার রসিকতার অনুমোদনে প্রমাণাদি :
ক) হানযালাহ রা. এর হাদীস :
قلت: يا رسول اللهّ, نكون ্র? وما ذاك গ্ধ : وفيه أنه قال: نافق حنظلة يا رسول اللهّ, فقال
عندك تذكّرنا بالنار والجنة, حتى كأنا رأي عين, فإذا خرجنا من عندك عافسنا
الأزواج والأولاد والضيعات, نسينا كثيراً, فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم:
والذي نفسي بيده, إنْ لو تدومون على ما تكونون عندي, وفي الذكر, لصافحتكم গ্ধ
ثلاث مرات. ্র الملائكة على فرشكم, وفي طرقكم, ولكن يا حنظلة ساعة وساعة
( مسلم ( ٤٩٣٧
অর্থাৎ : -সে হাদীসে আছে- তিনি বলেন : হে আল্লাহ্র রসূল(সঃ)
হানযালাহ মুনাফেক হয়ে গেছে। রসূল(সঃ) আলাইহি
ওয়াসাল−াম বললেন: কীভাবে? আমি বললাম হে আল্লাহ্র রসূল(সঃ)
আলাইহি ওয়াসাল−াম আমরা যখন আপনার কাছে থাকি আর আপনি আমাদেরকে
বেহশত-দোযখের কথা স্মরণ করান, মনে হয় যেন চাক্ষুষ দেখতে পাচ্ছি। যখন
আপনার নিকট থেকে চলে যাই আর আমাদের স্ত্রী সন্তান সন্ততি এবং বিভিনড়ব
সাংসারিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তখন এর অনেক কিছুই ভুলে যাই। তখন
রসুল(সঃ) বললেন যার হাতে আমার জান তার শপথ:
আমার নিকট থাকা কালীন সময়ে তোমাদের অবস্থা যেমন হয় যদি তোমরা সর্বদা
ঐ অবস্থায় থাকতে এবং জিকিরের সাথে পূর্ণসময় অতিবাহিত করত, তাহলে
অবশ্যই ফেরেশতারা তোমাদের বিছানায় ও চলার রাস্তায় তোমাদের সাথে
করমর্দন করত। কিন্তু হে হানযালাহ কিছু সময় এভাবে কিছু সময় ঐ ভাবে।
কথাটি তিনবার বললেন।১৪৪
খ) যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. এর হাদীসে এসেছে :
قال: قلت: ্র? يا جابر, تزوجت গ্ধ : لما تزوّج, وسأله النبي صلى الله عليه وسلم
فهلا جارية গ্ধ : قال: قلت: بل ثيّب, يا رسول اللهّ, قال ্র? فبكر أم ثيّب গ্ধ : نعم, قال
( البخاري ( ٥٩٠٨ .্র تضاحكها وتضاحكك গ্ধ : أو قال ্র تلاعبها وتلاعبك
অর্থাৎ : যখন তিনি বিবাহ করলেন নবীজী (সঃ)
তাকে প্রশড়ব করলেন: হে যাবের তুমি কি বিবাহ করেছ? আমি বললাম: হ্যাঁ। নবীজী (সঃ)
বললেন: কুমারী না বিবাহিতা ? তিনি বলেন :
আমি বললাম: বিবাহিতা। নবীজী (সঃ)
বললেন : তুমি কুমারী মেয়ে বিবাহ করলে
না কেন? তাহলে তুমি তার সাথে খেলা করতে এবং সেও তোমার সাথে খেলা
করতো। অথবা রসুল(সঃ) বলেছেন: তুমি তার সাথে
হাসতে এবং সে তোমার সাথে হাসতো।১৪৫
গ) আয়েশা রা. এর হাদীসে এসেছে :―
১৪৪ মুসলিম : ৪৯৩৭
১৪৫ বুখারী: ৫৯০৮
أنها كانت مع النبي صلى الله عليه وسلم في سفر, قالت: فسابقته فسَبَقتُه على
أبوداود .্র هذه بتلك السبقة গ্ধ : رجلي, فلما حملت اللحم سابقته فسبقني, فقال
(٢٢١٤)
অর্থাৎ : কোন এক সফরে তিনি নবীজী (সঃ) এর
সাথে ছিলেন। আয়েশা রা. বলেন : আমি রাসূলের সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায়
প্রবৃত্ব হলাম এবং রসুল(সঃ) কে পিছনে ফেলে
দিলাম। অত:পর যখন আমার শরীর মোটা হয়ে গেল আবার প্রতিযোগিতা
করলাম রাসূল বিজয়ী হলেন। তখন বললেন: এই বিজয় ঐ বিজয়ের পরিবর্তে
(শোধ)।১৪৬
ঘ) আনাস রা. থেকে বর্ণিত:
قال أبو أسامة−أحد رواة ,্র يا ذا الأذنين গ্ধ : أن النبي صلى الله عليه وسلم قال له
( الخبر– يعني: يمازحه الترمذي ( ٣٥
নবীজী (সঃ)
একবার তাকে এ বলে সম্বোধন
করেছিলেন:(( হে দুই কান বিশিষ্ট ব্যক্তি)) হাদীসের একজন বর্ণনাকারী আবু
উসামা বলেন:অর্থাৎ রাসূল তার সাথে রসিকতা করছিলেন।১৪৭
ঙ)আনাস রা. থেকে বর্ণিত
عن أنس رضي اللهّ عنه أن رجلا استحمَلَ رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال:
فقال: يا رسول الله, ما أصنع بولد الناقة?! فقال: ,্র إني حاملك على ولد الناقة গ্ধ
{ البخاري: ١٩١٤ }.্র وهل تلد الإبل إلا النوق গ্ধ
কোন এক নবীজী (সঃ)
এর নিকট একটি
(ভারবাহী জন্তু) বাহন চাইলেন, রসুল(সঃ) বললেন
আমি তোমাকে একটি উটের বাচ্চার উপর চড়িয়ে দেব। সে বলল: হে আল্লাহ্র
রাসূল আমি উটের বাচ্চা দিয়ে কি করব? রসুল(সঃ)
বললেন: উটতো উটের বাচ্চা ছাড়া আর কিছু জন্ম দেয় না।১৪৮
(২) নিন্দাযোগ্য রসিকতা :
১৪৬ আবু দাউদ : ২২১৪
১৪৭ তিরমিজি : ৩৫
১৪৮ বুখারী: ১৯১৪
অর্থাৎ যে রসিকতা মন্দ উদ্দেশ্যে এবং অসৎ নিয়তে অথবা শরীয়তের
নির্ধারিত রীতি ভঙ্গ করে সম্পাদন করা হয় । এর উদাহরণ: যেমন মিথ্যা মিশ্রিত
রসিকতা, অথবা অন্যকে কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্যে কৃত রসিকতা।
(৩) মুবাহ রসিকতা : ঐ রসিকতা যার কোন সঠিক উদ্দেশ্য নেই, ভাল
নিয়তও নেই, কিন্তু শরীয়তের নির্ধারিত গণ্ডি থেকে বের হতে হয় না এবং নিয়মও
ভঙ্গ করা হয়না।পাশাপাশি অতিরিক্ত পরিমাণেও করে না যে অভ্যাসে পরিণত
হয়ে যাবে । এমন রসিকতা প্রশংসাযোগ্যও নয় আবার নিন্দাযোগ্যও নয়।
সুতরাং এর ভিতর কোন পুণ্য নেই। কারণ পুন্য পাওয়ার যে নীতিমালা অর্থাৎ
সঠিক উদ্দেশ্য এবং সৎ নিয়ত তা এখানে পাওয়া যায়নি অনুরূপভাবে কোন
গুনাহও হবেনা কারণ শরীয়তের বিরুদ্ধাচারণ করা হয়নি বা কোন নীতি ভাঙ্গা
হয়নি।
রসিকতার কতিপয় নীতিমালা ও আদব :
প্রমত : রসিকতা করার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোর প্রতি গুরত্ব দিতে হবে :
১।
ভাল নিয়ত অর্থাৎ রসিকতা করার সময় সংশি−ষ্ট ব্যক্তি মনে মনে এমন
ধারণা পোষন করবে যে সে আল্লাহ্ তাআলা পছন্দ করেন এমন একটি ভাল কাজ
করছে। যেমন রসিকতার মাধ্যমে নিজ ভাই, স্ত্রী, পিতা বা এমন কারো অন্তরে
খুশি-আনন্দ প্রবেশ করিয়ে তাদের কর্ম চঞ্চল করে তোলা। অথবা উক্ত তামাশা
করার মাধ্যমে কাউকে একটি ভাল কাজের নিকটবর্তী করে দেয়া।অথবা নিজ
আত্মাকে ভালকাজের জন্য শক্তি সঞ্চয়ের লক্ষ্যে প্রফুল− করা। বা এরূপ যে কোন
ভাল নিয়ত পোষন করা। আর এ মহান মূলনীতির প্রমাণ হল রসূল(সঃ)
নবীজী (সঃ)
এর বাণী
إنما الأعمال بالنيات
সমস্ত কাজের ফলাফল নিয়তে উপর ভিত্তি করে নিরোপিত হয়।
২।
রসিকতা করার ক্ষেত্রে সত্যকে অত্যাবশ্যকীয় করে নেয়া অর্থাৎ শুধুমাত্র
সত্য ও বাস্তবধর্মী রসিকতা করবে এবং মিথ্যা পরিহার করবে।
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال قالوا يا رسول الله: إنك تداعبنا? قال إني لا
( أقول إلا حقاً. الترمذي ( ١٩١٣
আবু হুরাইরা রা. বলেন: লোকেরা বলল: হে আল্লাহ্র রাসূল আপনি কি
আমাদের সাথে রসিকতা করছেন? নবীজী (সঃ)
বললেন: আমি সত্য ছাড়া বলি না।১৪৯
১৪৯ তিরমিজি : ১৯১৩
৩।
রসিকতা করার ক্ষেত্রে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান বোধ থাকতে হবে,
মানুষকে তার যোগ্য মর্যাদা দিতে হবে এবং প্রতিপক্ষের মন-মানুষিকতা বুঝতে
হবে। সকল মানুষ ঠাট্টা-রসিকতা পছন্দ করে না।
বলা হয়: ছোটদের সাথে ঠাট্টা-মশকরা করো না তোমার মাথায় চড়বে এবং
বয়স্কদের সাথে না সে তোমার প্রতি হিংসা করবে।
ليس منا مَن لم يرحم صغيرنا, ويوقّر গ্ধ : عن أنس− رضي الله عنه− مرفوعا
كبيرنا
যে ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং বড়দেরকে সম্মান করে না সে আমার
দলভুক্ত নয় ।
দ্বিতীয়ত: রসিকতার সময় যে সমস্ত বিষয় থেকে বেচে থাকতে হবে।
১।
মিথ্যা, ঠাট্টার ছলে হোক আর উদ্দেশ্য মূলক ভাবেই হোক মিথ্যা
সর্বাবস্থায়ই হারাম এবং শরীয়তের দৃষ্টিকোন থেকে খুবই নিকৃষ্ট কাজ। মানুষকে
হাসানোর জন্য যে মিথ্যা বলে তার প্রতি বিশেষ শাস্তির কথা এসেছে। আর এটা
এই জন্য যে এটি খুবই বিপদজনক, সাথীদেরকে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি এর
ভিতর খুব সহজেই জড়িয়ে পড়া যায় , এবং এর মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করা
যায়।
الترمذي .্র ويل للذي يحدث بالحديث ليضحك به القوم فيكذب, ويل له, ويل له গ্ধ
(٢٢٣٧)
রসুল(সঃ) বলেন: ধ্বংস ঐ ব্যক্তির জন্য যে
মানুষকে হাসানোর জন্য কথা বলে অতঃপর মিথ্যা বলে, তার ধ্বংস অনিবার্য,
তার ধ্বংস অনিবার্য।১৫০
শরীয়ত এ অভ্যাসকে শুধু এখানে নিষিদ্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং নবীজী (সঃ)
ঠাট্টা-রসিকতার মত বিষয়েও এটি পরিত্যাগ
করতে সকলকে দারুন ভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন। বলেছেন:
أبوداود ্র أنا زعيم… ببيت في وسط الجنة لمن ترك الكذب وإن كان مازحاً গ্ধ
٤١٦٧)
আমি জানড়বাতের মধ্যবর্তী স্থানে একটি বিশেষ ঘরের জিম্মাদারী গ্রহনকরছি ঐ
ব্যক্তির জন্যে যে সর্বোত ভাবে মিথ্যা পরিহার করেছে এমনকি রসিকতার
মাঝেও।১৫১
১৫০ তিরমিজি : ২২৩৭
২।
হাসি-রসিকতার ক্ষেত্রে বাড়া-বাড়ি এবং পরিমাণে এত অধিক করা যে
মজলিসটিই হাসি-তামাশার মজলিসে রূপান্তরিত হয়ে যায় এবং মূল লক্ষ-উদ্দেশ্য
ও প্রয়োজনীয় বিষয়াদি চাপা পড়ে যায়। আর এটি ব্যক্তির পরিচয় ও বৈশিষ্টে
পরিনত হয়। এরূপ পর্যায়ের মজা-রসিকতা নিন্দনীয় ।কেননা এতে সময় নষ্ট
হয়। ব্যক্তিত্বের প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়, বৈশিষ্ট্য পূর্ণ ইসলামী ব্যক্তিত্ব শেষ হয়ে
যায়, অবশ্যই ইহা মিথ্যায় পতিত করে। অন্যকে ছোট করা হয়, ছোটরা বড়দের
উপর সাহসী হয়ে উঠে। অন্তর মরে যায় এবং মুসলমান যে ধরনের বাস্তব ও
উপকারী গুনাগুন দ্বারা অলংকৃত থাকার কথা তা তার থেকে দূরে সরে যায়।
৩।
বেগানা নারীদের সাথে ঠাট্টা করা। কেননা এটা ফিতনা ও অশ্লীলতায়
পড়ার কারণ এবং অন্তর হারামের দিকে ধাবিত করে।
৪।
অন্যের ক্ষতি সাধন করা, কষ্ট দেওয়া বা অধিকার হরণ করা, অথবা
এমন আঘাত করা যা সীমা লঙ্ঘন করে অথবা এমন জিনিস দ্বারা ঠাট্টা করা যার
দ্বারা ক্ষতি হতে পারে যেমন পাথর বা অস্ত্র।
এ ধরনের ঠাট্টা হিংসা বিদ্বেষ তৈরি করে বরং কখনও ঝগড়ার পর্যায়ে পৌঁছে
যায়। ঠাট্টাকে তখন আর ঠাট্টা মনে করা হয়না বাস্তব মনে করা হয় আর
ভালোবাসা পরিবর্তিত হয়ে যায় হিংসায় । পছন্দ মোড় নেয় অপছন্দের দিকে ।
﴾ وَقُلْ لِعِبَادِي يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْ. ﴿الاسراء : ٥٣
অর্থাৎ : আমার বান্দাদেরকে বলে দিন তারা যেন যা উত্তম এমন কথাই
বলে। শয়তান তাদের মাঝে সংঘর্ষ বাধায়।
ينزغ শব্দের অর্থ প্ররোচনা, হাফেজ ইবনে কাসীর র. বলেন : আলহ তাআলা
তার মুমিন বান্দাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন পরস্পরে কথা বলার সময় নরম এবং
ভাল কথা বলবে। তারা যদি এমন না করে তাহলে শয়তান তাদের মাঝে ঝগড়া
বাঁধিয়ে দেবে।
عن عبد الله بن السائب عن أبيه عن جده, أنه سمع النبي صلى الله عليه وسلم
, لا يأخذن أحدكم متاع أخيه لاعباً ولا جاداً, من أخذ عصا أخيه فليردها গ্ধ : يقول
( الترمذي ( ٢٠٨٦
আব্দুলহ ইবনে সায়েব তার পিতা থেকে তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা
করেন। তিনি রসুল(সঃ) কে বলতে শুনেছেন :
তোমরা তোমাদের ভায়ের জিনিস-পত্র, মাল-সামানা খেলার ছলে হোক বা প্রকৃত
১৫১ আব দাউদ : ৪১৬৭
অর্থে কোন ভাবেই ধরবে না। যে ব্যক্ত নিজ মুসলমান ভাইয়ের লাঠি (এর মত
নগন্য জিনিস ও) নিয়েছে তার উচিত ফেরত দেওয়া।
তাহলে যে ব্যক্তি টাকা পয়সা বা মূল্যবান ধন-সম্পদ না বলে নিয়ে নেয় তার
অবস্থা কি হবে?।
৫।
শরীয়তের বিষয়াদি নিয়ে রসিকতা করা, এসব বিষয়ে রসিকতা করা কে
উপহাস ও বিদ্রুপ হিসাবে ধরা হয় যা মূলত: কুফরী এবং এগুলো সংশি−ষ্ট
ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে রক্ষা
করুন।
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللهَِّ وَآَيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ
﴾ تَسْتَهْزِئُونَ. لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ. ﴿التوبه ٦٥ ٦٦
অর্থাৎ : তার যদি তুমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস কর তবে তারা বলবে
আমরাতো কথার কথা বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম। আপনি বলুন :
তোমরা কি আল্লাহ্র সাথে তার হুকুম আহকামের সাথে এবং তার রাসূলের সাথে
ঠাট্টা করছিলে, ছলনা করো না, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ, ঈমান প্রকাশ
করার পর।
অনুরূপ ভাবে দ্বীনের ধারক বাহক তথা সাহাবা , উলামা, সালেহীন প্রমুখদের
হুকুমও তাই। অর্থাৎ তাদের চাল চলন কথা বার্তা আচার আচরন ফতোয়া
ইত্যাদি নিয়ে কেউ ঠাট্টা বিদ্রুপ করলে তারও ঈমান থাকবে না।
১৪৯ তিরমিজি : ১৯১৩
৩।
রসিকতা করার ক্ষেত্রে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান বোধ থাকতে হবে,
মানুষকে তার যোগ্য মর্যাদা দিতে হবে এবং প্রতিপক্ষের মন-মানুষিকতা বুঝতে
হবে। সকল মানুষ ঠাট্টা-রসিকতা পছন্দ করে না।
বলা হয়: ছোটদের সাথে ঠাট্টা-মশকরা করো না তোমার মাথায় চড়বে এবং
বয়স্কদের সাথে না সে তোমার প্রতি হিংসা করবে।
ليس منا مَن لم يرحم صغيرنا, ويوقّر গ্ধ : عن أنس− رضي الله عنه− مرفوعا
كبيرنا
যে ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং বড়দেরকে সম্মান করে না সে আমার
দলভুক্ত নয় ।
দ্বিতীয়ত: রসিকতার সময় যে সমস্ত বিষয় থেকে বেচে থাকতে হবে।
১।
মিথ্যা, ঠাট্টার ছলে হোক আর উদ্দেশ্য মূলক ভাবেই হোক মিথ্যা
সর্বাবস্থায়ই হারাম এবং শরীয়তের দৃষ্টিকোন থেকে খুবই নিকৃষ্ট কাজ। মানুষকে
হাসানোর জন্য যে মিথ্যা বলে তার প্রতি বিশেষ শাস্তির কথা এসেছে। আর এটা
এই জন্য যে এটি খুবই বিপদজনক, সাথীদেরকে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি এর
ভিতর খুব সহজেই জড়িয়ে পড়া যায় , এবং এর মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করা
যায়।
الترمذي .্র ويل للذي يحدث بالحديث ليضحك به القوم فيكذب, ويل له, ويل له গ্ধ
(٢٢٣٧)
রসুল(সঃ) বলেন: ধ্বংস ঐ ব্যক্তির জন্য যে
মানুষকে হাসানোর জন্য কথা বলে অতঃপর মিথ্যা বলে, তার ধ্বংস অনিবার্য,
তার ধ্বংস অনিবার্য।১৫০
শরীয়ত এ অভ্যাসকে শুধু এখানে নিষিদ্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং নবীজী (সঃ)
ঠাট্টা-রসিকতার মত বিষয়েও এটি পরিত্যাগ
করতে সকলকে দারুন ভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন। বলেছেন:
أبوداود ্র أنا زعيم… ببيت في وسط الجنة لمن ترك الكذب وإن كان مازحاً গ্ধ
٤١٦٧)
আমি জানড়বাতের মধ্যবর্তী স্থানে একটি বিশেষ ঘরের জিম্মাদারী গ্রহনকরছি ঐ
ব্যক্তির জন্যে যে সর্বোত ভাবে মিথ্যা পরিহার করেছে এমনকি রসিকতার
মাঝেও।১৫১
১৫০ তিরমিজি : ২২৩৭
২।
হাসি-রসিকতার ক্ষেত্রে বাড়া-বাড়ি এবং পরিমাণে এত অধিক করা যে
মজলিসটিই হাসি-তামাশার মজলিসে রূপান্তরিত হয়ে যায় এবং মূল লক্ষ-উদ্দেশ্য
ও প্রয়োজনীয় বিষয়াদি চাপা পড়ে যায়। আর এটি ব্যক্তির পরিচয় ও বৈশিষ্টে
পরিনত হয়। এরূপ পর্যায়ের মজা-রসিকতা নিন্দনীয় ।কেননা এতে সময় নষ্ট
হয়। ব্যক্তিত্বের প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়, বৈশিষ্ট্য পূর্ণ ইসলামী ব্যক্তিত্ব শেষ হয়ে
যায়, অবশ্যই ইহা মিথ্যায় পতিত করে। অন্যকে ছোট করা হয়, ছোটরা বড়দের
উপর সাহসী হয়ে উঠে। অন্তর মরে যায় এবং মুসলমান যে ধরনের বাস্তব ও
উপকারী গুনাগুন দ্বারা অলংকৃত থাকার কথা তা তার থেকে দূরে সরে যায়।
৩।
বেগানা নারীদের সাথে ঠাট্টা করা। কেননা এটা ফিতনা ও অশ্লীলতায়
পড়ার কারণ এবং অন্তর হারামের দিকে ধাবিত করে।
৪।
অন্যের ক্ষতি সাধন করা, কষ্ট দেওয়া বা অধিকার হরণ করা, অথবা
এমন আঘাত করা যা সীমা লঙ্ঘন করে অথবা এমন জিনিস দ্বারা ঠাট্টা করা যার
দ্বারা ক্ষতি হতে পারে যেমন পাথর বা অস্ত্র।
এ ধরনের ঠাট্টা হিংসা বিদ্বেষ তৈরি করে বরং কখনও ঝগড়ার পর্যায়ে পৌঁছে
যায়। ঠাট্টাকে তখন আর ঠাট্টা মনে করা হয়না বাস্তব মনে করা হয় আর
ভালোবাসা পরিবর্তিত হয়ে যায় হিংসায় । পছন্দ মোড় নেয় অপছন্দের দিকে ।
﴾ وَقُلْ لِعِبَادِي يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْ. ﴿الاسراء : ٥٣
অর্থাৎ : আমার বান্দাদেরকে বলে দিন তারা যেন যা উত্তম এমন কথাই
বলে। শয়তান তাদের মাঝে সংঘর্ষ বাধায়।
ينزغ শব্দের অর্থ প্ররোচনা, হাফেজ ইবনে কাসীর র. বলেন : আলহ তাআলা
তার মুমিন বান্দাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন পরস্পরে কথা বলার সময় নরম এবং
ভাল কথা বলবে। তারা যদি এমন না করে তাহলে শয়তান তাদের মাঝে ঝগড়া
বাঁধিয়ে দেবে।
عن عبد الله بن السائب عن أبيه عن جده, أنه سمع النبي صلى الله عليه وسلم
, لا يأخذن أحدكم متاع أخيه لاعباً ولا جاداً, من أخذ عصا أخيه فليردها গ্ধ : يقول
( الترمذي ( ٢٠٨٦
আব্দুলহ ইবনে সায়েব তার পিতা থেকে তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা
করেন। তিনি রসুল(সঃ) কে বলতে শুনেছেন :
তোমরা তোমাদের ভায়ের জিনিস-পত্র, মাল-সামানা খেলার ছলে হোক বা প্রকৃত
১৫১ আব দাউদ : ৪১৬৭
অর্থে কোন ভাবেই ধরবে না। যে ব্যক্ত নিজ মুসলমান ভাইয়ের লাঠি (এর মত
নগন্য জিনিস ও) নিয়েছে তার উচিত ফেরত দেওয়া।
তাহলে যে ব্যক্তি টাকা পয়সা বা মূল্যবান ধন-সম্পদ না বলে নিয়ে নেয় তার
অবস্থা কি হবে?।
৫।
শরীয়তের বিষয়াদি নিয়ে রসিকতা করা, এসব বিষয়ে রসিকতা করা কে
উপহাস ও বিদ্রুপ হিসাবে ধরা হয় যা মূলত: কুফরী এবং এগুলো সংশি−ষ্ট
ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে রক্ষা
করুন।
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللهَِّ وَآَيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ
﴾ تَسْتَهْزِئُونَ. لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ. ﴿التوبه ٦٥ ٦٦
অর্থাৎ : তার যদি তুমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস কর তবে তারা বলবে
আমরাতো কথার কথা বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম। আপনি বলুন :
তোমরা কি আল্লাহ্র সাথে তার হুকুম আহকামের সাথে এবং তার রাসূলের সাথে
ঠাট্টা করছিলে, ছলনা করো না, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ, ঈমান প্রকাশ
করার পর।
অনুরূপ ভাবে দ্বীনের ধারক বাহক তথা সাহাবা , উলামা, সালেহীন প্রমুখদের
হুকুমও তাই। অর্থাৎ তাদের চাল চলন কথা বার্তা আচার আচরন ফতোয়া
ইত্যাদি নিয়ে কেউ ঠাট্টা বিদ্রুপ করলে তারও ঈমান থাকবে না।
আমাদের পুরো পৃথিবীটাই হল একটা সমাজ বা সংসার। এই সংসারের ক্ষুদ্র একক হল পরিবার। পৃথিবীতে এত অশান্তি, ঝামেলা, বিশৃঙ্খলা দূর করতে হলে আমাদের পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে। আমাদের সমাজে এখনো পরিবার টিকে আছে। পশ্চিমি দেশ গুলোতে পরিবার বলে কিছু নেই। মামা নেই, কাকা নেই, ফুফু বা খালাও নেই। বিয়ের আগেই ছেলেরা মা বাবাকে ছেড়ে অন্য জায়গায় থাকে। পরিবারের পরেই আসে প্রতিবেশি। একজন মুসলমানকে প্রতিবেশির সাথে কেমন ব্যবহার করা উচিত সে ব্যাপারে আলোকপাত করতে চাই। রাসুলুল্লাহ(সা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের উপর ইমান রাখে তার কর্তব্য হল সে যেন নিজ প্রতিবেশির সাথে একরামের ব্যবহার করে। সাহাবায়ে কেরাম(রা) জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ(সা) প্রতিবেশির হক কি? নবীজী(সা) বললেন, ‘যদি সে তোমার কাছে কিছু চাই তাহলে তাকে সাহায্য কর, যদি সে নিজের প্রয়োজনে ধার চাই তাকে ধার দাও, যদি সে তোমাকে দাওয়াত করে তা কবুল কর, সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে যাও, যদি তার ইন্তেকাল হয়ে যায় তাহলে তার জানাযায় শামিল হও, যদি সে কোন মুসিবতে পড়ে তাকে শান্তনা দাও,নিজের পাতিলে গোস্ত রান্নার খুশবু দিয়ে তাকে কষ্ট দিয় না (কেননা হতে পারে অভাবের কারণে সে গোস্ত রান্না করতে পারে না)বরং কিছু মাংস তার ঘরে পৌছে দাও, আপন বাড়ীর ইমারত তার বাড়ীর ইমারত হতে এতটা উচু কর না যাতে তার ঘরে বাতাস বন্ধ হইয়ে যায় অবশ্য তার অনুমতিক্রমে হলে ভিন্ন কথা” (তারগিব)। একজন মুসলমানের উপর তার প্রতিবেশির কতটা হক তা উপরের হাদিসটা থেজেই বোঝা যাচ্ছে। একবার একব্যক্তি রাসুল(সা) কে বললেন, ‘হে আল্লাহর নবী(সা) অমুক মহিলা অধিক পরিমানে নামায, রোজা ও দান-খয়রাত করে কিন্তু আপন প্রতিবেশিদেরকে নিজের জবানের দ্বারা কষ্ট দেয় অর্থাৎ গালিগালাজ করে। রাসুল(সা) বললেন সে দোজখে যাবে। আতঃপর সে ব্যক্তি আরজ করলেন হে আল্লাহর নবী(সা)! অমুক মহিলা নফল নামায, নফল রোজা ও দান-খয়রাত কম করে, বরং তার দান-খয়রাত পনীরের একটি টুকরোর থেকে বেশি নয়, কিন্তু নিজের প্রতিবেশিদেরকে জবানের দ্বারা কষ্ট দেয় না। রাসুল(সা) বললেন সে জান্নাতে যাবে” (মুসনাদে আহমাদ)। একজন মুসলমান যদি নামায রোজা করে অথচ তার প্রতিবাশির সাথে উত্তম ব্যবহার না করে বা প্রতিবেশির খেয়াল রাখে না রাখে তাহলে সে ভালো মুসলমান হতে পারবে না। এই ব্যাপারটা এই হাদিসটি থেকে পরিস্কার হয়ে যাবে। রাসুল(সা) বলেছেন, ‘ঐ ব্যক্তি (পুর্ণ) মুমিন হতে পারবে না যে নিজে পেট ভরে খায় অথচ তার প্রতিবেশি ক্ষুধার্ত থাকে” (তাবারানী, আবু ইয়ালা, মাজমায়ে যাওয়ায়েদ)। প্রতিবেশির সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে, তাকে কোন ভাবেই পরিশান করা চলবে না। নবীজী(সা) বলেছেন, ‘ঐ ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না, যার উপদ্রব থেকে তার প্রতিবেশি নিরাপদে থাকতে পারে না’ (মুসলিম)। রাসুল(সা) আরও বলেছেন, ‘তোমরা যখন তরকারি পাকাও তখন তাতে জল দাও এবং ঝোল বাড়াও এবং কিছু অংশ তোমার প্রতিবেশির কাছে পৌছে দাও’ (তিরমিযী)। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রা) হতে বর্নিত একবার একব্যক্তি রাসুল(সা)কে জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ(সা)! আমি কিভাবে জানতে পারব এই কাজটি ভালো করেছি বা এই কাজটি খারাপ করেছি? রাসুল(সা) বললেন, ‘যখন তোমার প্রতিবেশিকে বলতে শুনবে তোমার কাজকর্ম ভালো তখন নিশ্চয় তোমার কাজকর্ম ভালো। আর যখন তোমার প্রতিবেশি বলবে তোমার কাজকর্ম খারাপ তখন নিশ্চয় তোমার কাজকর্ম খারাপ’ (তাবারানী, মাযমায়ে যাওয়ায়েদ)। আল্লাহ তা’আলা সুরা নিসার মধ্যে বলেছেন, “তোমরা সকলেই আল্লাহ তা’আলার সাথে কোন জিনিসকে শরিক করিও না এবং মা বাবার সাথে ভালো ব্যবহার কর এবং আত্মীয় স্বজনদের সাথেও এবং এতিমদের সাথেও মিশকিনদের সাথেও এবং নিকটবর্তী ও দুরবর্তী প্রতিবেশিদের সাথেও এবং নিকটে যারা বসে তাদের সাথেও (অর্থাৎ যারা দৈনিক আসা যাওয়া ও সঙ্গে উঠা বসা করে) এবং মুসাফিরের সাথেও এবং ঐ গোলাম (দাস) দের সাথেও যারা তোমাদের অধিনে আছে। নিসন্দেহে আল্লাহ এমন লোকদের পছন্দ করেন না যারা নিজেদেরকে বড় মনে করে ও অহংকার করে”।
No comments:
Post a Comment
ভাল একটি মন্তব্য করার জন্য শুকরিয়া